মুহাম্মাদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

স্থানাঙ্ক: ২৪°২৮′০৩.২২″ উত্তর ০৩৯°৩৬′৪১.১৮″ পূর্ব / ২৪.৪৬৭৫৬১১° উত্তর ৩৯.৬১১৪৩৮৯° পূর্ব / 24.4675611; 39.6114389 (Green Dome)
এটি একটি ভালো নিবন্ধ। আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
এই পাতাটি স্থানান্তর করা থেকে সুরক্ষিত।
এই পাতাটি অর্ধ-সুরক্ষিত। শুধুমাত্র নিবন্ধিত ব্যবহারকারীরাই সম্পাদনা করতে পারবেন।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
[পরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
"আল্লাহই ভালো জানেন" – এসব কথা কারণ হিসেবে দেওয়া যায় না। চাইলে "সম্ভবত" ব্যবহার করতে পারেন।
ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
MdaNoman (আলোচনা | অবদান)
→‎আরও দেখুন: সরাসরি সংযোগ
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
২৮৯ নং লাইন: ২৮৯ নং লাইন:
* [[আব্দুল্লাহ]]
* [[আব্দুল্লাহ]]
* [[আমিনা]]
* [[আমিনা]]
* [[হালিমা]]
* [[হালিমা আস সাদিয়া|হালিমা]]
* [[আব্দুল মুত্তালিব]]
* [[আব্দুল মুত্তালিব]]
* [[আবু তালিব]]
* [[আবু তালিব]]

১৯:৪১, ১৫ জুন ২০২২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ


মুহাম্মাদ
مُحَمَّد

মুহাম্মাদ, আল্লাহর রাসুল
মদিনায় মসজিদে নববী এর দরজায় খোদাই করা
জন্ম
মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ

(৫৭০-০৮-২৯)২৯ আগস্ট ৫৭০[৩]
মৃত্যু৮ জুন ৬৩২(632-06-08) (বয়স ৬২),
১২ রবিউল আউয়াল, ১১ হিজরি
মৃত্যুর কারণঅসুস্থতা (প্রবল জ্বর)
সমাধিমসজিদে নববির, সবুজ গম্বুজের নিচের সমাধিক্ষেত্র
স্থান: মদিনা, সৌদি আরব
অন্যান্য নামআহমদ, আবুল কাসিম, রাসুল, নবি
পরিচিতির কারণইসলামের নবি
দাম্পত্য সঙ্গী
সন্তানকাসিম
আবদুল্লাহ
ইবরাহিম
জয়নব
রুকাইয়াহ
উম্মে কুলসুম
ফাতিমা
পিতা-মাতাআব্দুল্লাহ (পিতা)
আমিনা (মাতা)
আত্মীয়হাসান (নাতি)
হুসাইন (নাতি)
মুহসিন (নাতি)
জয়নব (নাতলি)
উম্মে কুলসুম (নাতনি)
আবদুল মুত্তালিব (দাদা)
আলী (জামাতা)
উসমান (জামাতা)
আবু বকর (শ্বশুর)
উমর (শ্বশুর)
আবু সুফিয়ান
হুয়াই ইবনে আখতাব
আব্বাস (চাচা)
হামজা (চাচা)
আবু তালিব
আবু লাহাব
প্রথম মুয়াবিয়া (শ্যালক)
স্বাক্ষর

মুহাম্মাদের সিলমোহর

মুহাম্মাদ[টীকা ১] (আরবি: مُحَمَّد; মোহাম্মদ এবং মুহম্মদ নামেও পরিচিত) ছিলেন একজন আরবের ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতা এবং ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা।[৪] ইসলামি মতবাদ অনুসারে, তিনি হলেন ঐশ্বরিকভাবে প্রেরিত ইসলামের সর্বশেষ নবী (আরবি: النبي; আন-নাবিয়্যু) তথা ‘বার্তাবাহক’ ও রাসুল (আরবি: الرسول; আল-রাসুল), যার উপর ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ হয়। আদম, ইব্রাহিম, মূসা, ইসা (যিশু) এবং অন্যান্য নবিদের মতোই মুহাম্মদ একেশ্বরবাদী শিক্ষা প্রচার করার জন্য প্রেরিত।[৪][৫][৬] অমুসলিমদের মতে, তিনি ইসলামি জীবনব্যবস্থার প্রবর্তক।[৭] অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে,[৮][৯] মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা।[১০][১১][১২][১৩][১৪] তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন।[১৫] তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল ছিলেন, তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও।[১৫] সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য;[১৬] বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সাফল্য।[১৭][১৮] কুরআনের পাশাপাশি তার শিক্ষা এবং অনুশীলনগুলো ইসলামি ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করে।

আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে (হস্তিবর্ষ) মক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া মুহাম্মাদ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন পিতা হারা হন। শৈশবে মাতাকে হারিয়ে এতিম হন এবং প্রথমে তার পিতামহ আবদুল মুত্তালিব ও পরে পিতৃব্য আবু তালিবের নিকট লালিত-পালিত হন। হেরা পর্বতের গুহায় ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করেন। জিবরাঈল ফেরেশতা এই পর্বতের গুহায় আল্লাহর তরফ থেকে তার নিকট ওহী নিয়ে আসেন।[১৯] ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে[২০] মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ওহী প্রচার করেন[২১] এবং ঘোষণা দেন, "আল্লাহ্ এক" ও তার নিকট নিজেকে সমর্পিত করে দেওয়ার মধ্যেই জাগতিক কল্যাণ নিহিত।[২২][২৩][২৪]

মুহাম্মাদের অনুসারীরা প্রাথমিকভাবে সংখ্যায় খুব কম ছিল এবং ১৩ বছর ধরে মক্কার বহুখোদাবাদীদের (বহু দেব-দেবীর উপাসনাকারী) নিকট শত্রুতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তাদের উপর চলমান নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য তিনি ও তার অনুসারীরা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন এবং তিনি ৬১৫ সালে আবিসিনিয়াতে তার কিছু অনুসারীকে পাঠান। এই ঘটনার সময়কালকে গণনার আওতাভুক্ত করে ইসলামি বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করা হয়, যা হিজরি সন নামেও পরিচিত। মুহাম্মাদ মদিনার সনদ প্রবর্তন করে মদিনার সকল সাম্প্রদায়িক উপজাতিদের একত্রিত করেন। ৬২৯ সালের ডিসেম্বরে, মক্কার উপজাতিদের সাথে আট বছরের লাগামহীন যুদ্ধের পর মুহাম্মাদ বিজয় লাভ করেন। তিনি মুসলিম ধর্মান্তরিতদের নিয়ে একটি সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন এবং মক্কা শহরের দিকে যাত্রা করেন। মুহাম্মাদের বিজয় সুনিশ্চিত হলে যুদ্ধটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে যায় এবং মুহাম্মাদ সামান্য রক্তপাতের মাধ্যমে শহরটি দখল করে নেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে বিদায় হজ্জ থেকে ফিরে আসার কয়েক মাস পর, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর সময়, আরব উপদ্বীপের বেশিরভাগ অংশ ইসলাম ধর্মের আওতায় আসে।[২৫][২৬]

মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মাদের নিকট আসা ওহীসমূহ কুরআনের আয়াত হিসেবে রয়ে যায় এবং মুসলমানরা এই আয়াতসমূহকে "আল্লাহর বাণী" বলে বিবেচনা করেন। এই কুরআনের উপর ইসলাম ধর্মের মূল নিহিত। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস ও সিরাত (জীবনী) থেকে প্রাপ্ত মুহাম্মাদের শিক্ষা ও অনুশীলন (সুন্নাহ) ইসলামি আইন (শরিয়াহ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কুরআনে মুহাম্মাদের নাম ও উপাধি

"মুহাম্মাদ" সুলুস-এ লিখিত, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি

মুহাম্মাদ (/mʊˈhæməd, -ˈhɑːməd/)[২৭] নামের বাংলা অর্থ "প্রশংসনীয়" এবং এই নামটি পবিত্র কুরআন শরীফে মোট চারবার এসেছে।[২৮] পবিত্র কুরআনে মুহাম্মাদকে বিভিন্ন উপাধির মাধ্যমে সম্বোধন করা হয়েছে। উপাধিগুলো হলো- নবী, রাসূল, আল্লাহর বান্দা ('আবদ'), ঘোষক ('বশির'),[কুরআন ২:১১৯] সাক্ষী ('শহীদ'),[কুরআন ৩৩:৪৫] সুসংবাদদাতা ('মুবাশ্শীর'), সতর্ককারী ('নাথির'),[কুরআন ১১:২] স্মরণকারী ('মুধাক্কির'),[কুরআন ৮৮:২১] সৃষ্টিকর্তার বার্তাবাহক ('দাওয়াহ')[কুরআন ১২:১০৮] নিষ্পাপ ব্যক্তি ('নূর'),[কুরআন ০৫:১৫] এবং আলো-প্রদানকারী বাতি ('সিরাজ মুনির')।[কুরআন ৩৩:৪৬]

মুহাম্মাদের জীবনের উপর তথ্যসূত্র

কুরআন

কুফী লিপিতে লিখিত প্রাথমিক কুরআন থেকে একটি ফোলিও (আব্বাসীয় যুগ, ৮ম-৯ম শতাব্দী)

কুরআন ইসলাম ধর্মের কেন্দ্রীয় ধর্মীয় গ্রন্থ। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে এটি আল্লাহ ফেরেশতা জিবরাঈল এর দ্বারা মুহাম্মাদের নিকট নাজিল করেছে।[২৯][৩০][৩১] পবিত্র কুরআনে মুহাম্মাদের জীবনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকলেও বেশিরভাগ কুরআনের আয়াতগুলোতে এ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নেই।[৩২][৩৩]

প্রারম্ভিক জীবনী

মুহাম্মাদের জীবন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো মুসলিম যুগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর (খ্রিস্টীয় ৮ম ও ৯ম শতাব্দী) লেখকদের ঐতিহাসিক রচনায় পাওয়া যায়।[৩৪] এর মধ্যে রয়েছে মুহাম্মাদের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম জীবনী। এই গ্রন্থে মুহাম্মাদের জীবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংকলিত রয়েছে।[৩৫]

প্রাচীনতম লিখিত 'সিরা' (মুহাম্মাদের জীবনী এবং তাঁর উদ্ধৃতি), ইবনে ইসহাক "আল্লাহর রসূলের জীবন" ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে (১৫০ হিজরি) রচনা করে। যদিও মূল কাজটি হারিয়ে যায়, তবে এই সিরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবনীগ্রন্থ হিসেবে প্রচলিত রয়েছে।[৩৬][৩৭] এই গ্রন্থের সংকলনকারী ইবনে হিশাম মুহাম্মাদের জীবনীর প্রস্তাবনায় লিখেছেন যে তিনি ইবনে ইসহাকের জীবনী থেকে বিষয়গুলো বাদ দেন।[৩৮] আরেকটি প্রারম্ভিক ইতিহাসের উৎস হল আল-ওয়াকিদীর দ্বারা রচিত মুহাম্মদের প্রচারাভিযানের ইতিহাস এবং ওয়াকিদির সচিব ইবনে সা'দ আল-বাগদাদির কাজ।[৩৪]

অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি এই প্রাথমিক জীবনীগুলো খাঁটি হিসাবে গ্রহণ করলেও এই জীবনীগ্রন্থগুলোর নির্ভুলতা নিখুঁত হিসেবে বিবেচিত নয়।[৩৬]

হাদিস

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে হাদিস সংগ্রহ। এগুলো মুহাম্মাদের মৌখিক ও শারীরিক শিক্ষার বিবরণের সংগ্রহ হিসেবে বিবেচিত। মুহাম্মাদের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর মুহাম্মাদ আল-বুখারী, মুসলিম ইবনে আল-হাজ্জাজ, মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি, আবদুর রহমান আল-নাসাই, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মালিক ইবনে আনাস, আল-দারাকুতনী সহ আরও অনেক মুসলমানদের দ্বারা হাদিস সংকলিত হয়।[৩৯][৪০]

কিছু পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদ হাদিস সংগ্রহগুলোকে ইসলামি বিষয়াবলীর এক নিখুঁত গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে বিবেচনা করে।[৩৯] যেহেতু হাদিসগুলোকে সংকলনের সময় একটি শৃঙ্খল বজায় রেখে সংকলন করা হয়েছে, তাই মুসলিম পন্ডিতরা সাধারণত জীবনীমূলক সাহিত্যের পরিবর্তে হাদিস সাহিত্যের উপর বেশি জোর দেন। অন্যদিকে জীবনীমূলক সাহিত্যের জন্য এই ধরনের শৃঙ্খলের অভাব থাকায় তারা এটি যাচাইযোগ্য বলে বিবেচনা করে না।[৪১]

প্রাক-ইসলামি আরব

৬০০ শতকে ইসলামের উত্থানের পূর্বমুহূর্তে আরব উপদ্বীপ, বাইজান্টাইন ও সাসানীয়-পারস্য সাম্রাজ্য

আরব উপদ্বীপ ছিল মূলত শুষ্ক ও আগ্নেয়গিরিপূর্ণ, ফলে মরুদ্যান বা নদী তীরবর্তী অঞ্চল ছাড়া কৃষিকাজ খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। আরব বলতে এখানে মক্কামদিনা এবং এদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো নিয়ে গড়ে উঠা অংশকে বুঝানো হয়েছে। মদিনা ছিল কৃষিকাজের উপযোগী বৃহৎ নগরী, অন্যদিকে মক্কা ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসতিপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র।[৪২] এই দুই অংশের সাথেই মুহাম্মাদের জীবনের সম্পৃক্ততা ছিল।

তৎকালীন আরব অর্থনীতির ভিত্তি ছিল ব্যবসাপশুপালন। স্থানীয় আরবরা যাযাবর ও গৃহী দুই শ্রেণিরই ছিল। যাযাবররা পানি ও খাদ্যের জন্য তাদের লোকজন নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াত। অন্যদিকে গৃহীরা একই স্থানে বসবাস করত এবং বাণিজ্য ও কৃষিকাজে মনোনিবেশ করত। যাযাবররা মরুপথে যাত্রীবাহী গাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে তাদের থেকে মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের ভরণপোষণ করত। তারা এই কাজকে অপরাধ বলে মনে করত না।[৪৩][৪৪]

প্রাক-ইসলামি আরবে, বিভিন্ন উপজাতিরা তাদের রক্ষাকর্তা হিসাবে পৃথক দেবতা বা দেবীদের পূজা করত। এমনকি গোত্রভেদে আলাদা আলাদা সৃষ্টিকর্তারও পূজা করত। তারা সেইসাথে গাছ, পাথর, ঝর্ণা এবং কূপের পূজায় লিপ্ত ছিল। তারা পবিত্র কাবা ঘরকে বার্ষিক তীর্থযাত্রার স্থানে পরিণত করে এবং পবিত্র কাবার মধ্যে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করে। তারা প্রধানত তিনজন দেব-দেবীর উপাসনা করত। কিছু অঞ্চলে মহান আল্লাহর কন্যা হিসেবে মানাত এবং আল-উজ্জা নামক দেবীর উপাসনা করা হত। তবে ইসলামপূর্ব আরবে একেশ্বরবাদী ধর্মীয় সম্প্রদায়ও বিদ্যমান ছিল, যার মধ্যে খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা ছিল অন্যতম।[৪৫] হানিফ - স্থানীয় প্রাক-ইসলামী আরবরা যারা " কঠোর একেশ্বরবাদ মেনে চলত"[৪৬] কখনও কখনও প্রাক-ইসলামী আরবে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের একই ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়, যদিও এ সম্পর্কে ভিন্ন মতবাদ ও বিতর্ক রয়েছে।[৪৭][৪৮] মুসলিম হাদিস অনুসারে, মুহাম্মাদ ইব্রাহীমের পুত্র ইসমাইলের বংশধর ছিলেন।[৪৯] তবে এক শতাব্দী ধরে বিস্তৃত প্রত্নতাত্ত্বিক তদন্তের পরে, এই সম্পর্কে কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[৫০]

ষষ্ঠ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিরতার চরম পর্যায়ে পৌছে এবং এই অঞ্চলের যোগাযোগের পথগুলো অনিরাপদ হয়ে পড়ে।[৫১] মূলত ধর্মীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে এই সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[৫২] যখন খ্রিস্টধর্ম পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে, তখন ইহুদিধর্ম ইয়েমেনের প্রভাবশালী ধর্ম হয়ে ওঠে।[৫২] প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাসে এই অঞ্চলটি বহুদেববাদী সংস্কৃতির অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।[৫২]

মুহাম্মাদের জীবনের প্রথম দিকের বছরগুলোতে, কুরাইশ বংশ (তিনি এই বংশের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন) পশ্চিম আরবে একটি প্রভাবশালী সম্প্রদায় হয়ে ওঠে।[৫৩] তারা হামসের কাল্ট নামক সমিতি গড়ে তুলে পশ্চিম আরবের অনেক উপজাতি সদস্যদের পবিত্র কাবা ঘরে আটকে রাখে।[৫৪] নৈরাজ্যকর অবস্থা মোকাবেলার জন্য কুরাইশরা ঐ অঞ্চলের সমস্ত সহিংসতা নিষিদ্ধ করে এবং নিরাপদে তীর্থযাত্রা ও অন্যান্য মিলনমেলায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করে।[৫৪] যদিও হামসের কাল্ট সমিতি প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় থাকলেও পরবর্তীতে এটি ঐ অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।[৫৪]

জীবনী

জন্ম

মুহাম্মাদ বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন[৫৫][৫৬]। প্রচলিত ধারণা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট বা আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন।[৫৭] প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সাল উল্লেখ করেছেন; তবে প্রকৃত তারিখ উদ্‌ঘাটন সম্ভব হয়নি। তাছাড়া মুহাম্মাদ নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি; এজন্যই এটি নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি মাস নিয়েও ব্যাপক মতবিরোধ পাওয়া যায়। যেমন, একটি বর্ণনায় এটি ৫৭১ সালের ২৬ এপ্রিল বা রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ হবে; সাইয়েদ সুলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তার জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে[৫৮][৫৯] এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহণের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।

শৈশব ও কৈশোর কাল

মুহাম্মাদ এর পিতা আব্দুল্লাহ তার জন্মের প্রায় ছয় মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন।[৬০] তৎকালীন আরবের রীতি ছিল, তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ , সুঠাম গঠন এবং বিশুদ্ধ আরবিভাষী[টীকা ২] হওয়ার জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন।[৬১][৬২] এই রীতি অনুসারে মুহাম্মাদকেও হালিমার (অপর নাম হালিমা আস-সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেওয়া হয়।[৬৩] হালিমা ছিলেন বনি সা'দ গোত্রের। আর তৎকালীন আরব বনি সা'দ গোত্র ছিল সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল আরবিভাষী।[৬২] শিশুকে ঘরে আনার পর হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালন-পালন করতে সমর্থ হন। তখনকার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য: শিশু মুহাম্মাদ কেবল হালিমার একটি স্তন থেকেই দুধ পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর লালন-পালনের পর হালিমা শিশু মুহাম্মাদকে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু মুহাম্মাদকে পুনরায় হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল। ইসলামি বিশ্বাস মতে, এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে -- একদিন শিশু নবির বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেন ফেরেশতা জিবরাইল ও ফেরেশতা মিকাইল। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে বক্ষ বিদারণের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।

এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন মা আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদিনায় যাবেন। সম্ভবত কোনো আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। মা আমিনা, ছেলে, শ্বশুর এবং সঙ্গী উম্মে আয়মানকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌঁছেন। তিনি মদিনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আবওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।[৬৩][৬৪] মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মুত্তালিব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদা-ই মুহাম্মাদের দেখাশোনা করতে থাকেন[৫৯][৬৩]। মুহাম্মাদ এর বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মুহাম্মাদ এর দায়িত্ব দিয়ে যান।[৫৯]

আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদ এর বয়স যখন ১২ বৎসর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেন না। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সেসময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস নামক এক খ্রিষ্টান পাদ্রি ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গির্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ নবি হিসেবে চিহ্নিত করেন।[৬৫]ফিজারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন মুহাম্মাদের বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। অর্থাৎ, তিনি সরাসরি যুদ্ধ না করে নিজ গোত্রের লোকদের অস্ত্রের যোগান দেয়া সহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কিন্তু তার কিছু করার ছিল না। সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। তার উত্তম চরিত্র ও সদাচরণের কারণে পরিচিত মহলের সবাই তাকে "আল-আমিন" (আরবি :الامين; অর্থ: "বিশ্বস্ত, বিশ্বাসযোগ্য, আস্থাভাজন") এবং "আল-সিদ্দিক" (অর্থ: "সত্যবাদীl") বলে সম্বোধন করতেন।[৮][৫৬][৬৬][৬৭]

নবুয়ত-পূর্ব জীবন

ইসলাম ধর্ম প্রচারের প্রাথমিক দশায় আরবের মানচিত্র

আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মাদ এতে যোগদান করেন ও এই সংঘকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, তরুণ বয়সে মুহাম্মাদের তেমন কোনো পেশা ছিল না। তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনু সা'দ গোত্রের। কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন। মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই এ কাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। ব্যবসায় উপলক্ষে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন।[৬৮] মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসায়ের জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান। মুহাম্মাদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদিজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।

খাদিজা মাইসারার মুখে মুহাম্মাদের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভূয়সী প্রশংসা শুনে অভিভূত হন। এছাড়া ব্যবসায়ের সফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপারে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনে মুহাম্মাদ বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানাবেন। মুহাম্মাদ তার চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদিজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫ বছর।[৬৮] খাদিজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোনো বিয়ে করেননি। খাদিজার গর্ভে মুহাম্মাদের ছয় জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে, যার মধ্যে চার জন মেয়ে এবং দুই জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসিম, জয়নব, রুকাইয়াহ, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা এবং আব্দুল্লাহ। ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায়। মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামি যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করে ও একমাত্র ফাতিমা ব্যতীত সকলেই তার জীবদ্দশায়ই মৃত্যুবরণ করে।

মুহাম্মাদ এর বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা'বা গৃহের পুনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে পুনঃনির্মাণের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল কোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে এটি এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি নামক এক ব্যক্তি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে। পরদিন মুহাম্মাদ সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়। আর তার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল। যা হোক, এই দায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মাদ অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন এবং তারা তা-ই করে। এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।[৬৯][৭০]

নবুওয়ত প্রাপ্তি

একাদশ শতাব্দীর পারসিয়ান কুরআনের একটি পৃষ্ঠা

ইসলামিক তথ্যসূত্রানুসারে চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ নবুওয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ এই সময়েই সৃষ্টিকর্তা তার কাছে বাণী প্রেরণ করেন। আজ-জুহরি বর্ণিত হাদিস অনুসারে, মুহাম্মাদ সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তার স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাকে খাবার দিয়ে আসতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এমনি একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাঈল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত বাণী নিয়ে আসেন[৭১] এবং তাকে এই পঙ্‌ক্তি কয়টি পড়তে বলেন:

উত্তরে মুহাম্মাদ জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিবরাঈল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পঙ্‌ক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু এবারও মুহাম্মাদ নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনবার চাপ দেওয়ার পর মুহাম্মাদ পঙ্‌ক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী এটিই কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচ আয়াত। বর্ণনায় আরও উল্লেখ আছে, প্রথম বাণী লাভের পর মুহাম্মাদ এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গৃহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাকেন, "আমাকে আবৃত কর"। খাদিজা মুহাম্মাদের এর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাকে নবি হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফলের কাছে যান[৭৩]। নওফল তাকে শেষ নবি হিসেবে আখ্যায়িত করে।[৭৪][৭৪] ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন নবি। তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য। একটি লম্বা বিরতির পর তার কাছে দ্বিতীয় বারের মতো স্রষ্টার বাণী আসে। এবার অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্‌সির-এর কয়েকটি আয়াত। এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ।

মক্কি জীবন

মুহাম্মাদের জীবনের ঘটনাপঞ্জি
মুহাম্মদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ এবং স্থান
তারিখ বয়স ঘটনা
আনু. ৫৭০ তার পিতা আবদুল্লাহ-এর মৃত্যু
আনু. ৫৭০ সম্ভাব্য জন্ম তারিখ: ১২ বা ১৭ রবিউল আউয়াল: মক্কা, আরব
আনু. ৫৭৭ তার মাতা আমিনা-এর মৃত্যু
আনু. ৫৮৩ ১২–১৩ তার দাদা তাকে সিরিয়ায় স্থানান্তরিত করেন
আনু. ৫৯৫ ২৪–২৫ খাদিজা-এর সাথে পরিচিত হন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন
আনু. ৫৯৯ ২৮–২৯ তার প্রথম কন্যা জয়নাবের জন্মের পর পরই জন্ম নেন রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম এবং ফাতিমা
৬১০ ৪০ মক্কার নিকটে অবস্থিত "আলোর পর্বত" খ্যাত জাবালে নূর নামক পর্বতের হেরা গুহায় কুরআনের ওহি (ঐশীবাণী) অবতরণ শুরু হয়। ৪০ বছর বয়সে ফেরেশতা জিব্রাইল উক্ত পর্বতে মুহাম্মাদ-কে আল্লাহর রাসূল বলে সম্বোধন করেন
মক্কায় গোপনে অনুসারী জড়ো করতে শুরু করেন
আনু. ৬১৩ ৪৩ মক্কাবাসীর নিকট ইসলামের বার্তা প্রকাশ্যে প্রচার করতে শুরু করেন।
আনু. ৬১৪ ৪৩–৪৪ মুসলিমদের উপর প্রচন্ড অত্যাচার শুরু হয়
আনু. ৬১৫ ৪৪–৪৫ একদল মুসলমানদের ইথিওপিয়া-তে অভিবাসন
আনু. ৬১৬ ৪৫–৪৬ বনু হাশিম গোত্রের বয়কট শুরু হয়
৬১৯ ৪৯ বনু হাশিম গোত্রের বয়কট শেষ হয়
শোকের বছর: খাদিজা (তার স্ত্রী) এবং আবু তালিব (তার চাচা) মারা যান।
আনু. ৬২০ ৪৯–৫০ লাইলাতুল মেরাজ (আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য স্বর্গে আরোহণের ঘটনা)
৬২২ ৫১–৫২ মদিনায় হিজরত
৬২৪ ৫৩–৫৪ বদরের যুদ্ধ
৬২৫ ৫৪–৫৫ উহুদের যুদ্ধ
৬২৭ ৫৬–৫৭ খন্দকের যুদ্ধ (মদিনা অবরোধ নামেও পরিচিত)
৬২৮ ৫৭–৫৮ মক্কার কুরাইশ গোত্র এবং মদিনার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে একটি ১০ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
৬৩০ ৫৯–৬০ মক্কা বিজয়
৬৩২ ৬১–৬২ বিদায় হজ্জ, গাদীর খুমের ঘটনা এবং মৃত্যু, যা এখন সৌদি আরবে অবস্থিত
হেরা গুহা, এখানেই মুহাম্মাদ প্রথম প্রত্যাদেশ পান

গোপন প্রচার

প্রত্যাদেশ অবতরণের পর মুহাম্মাদ বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে; কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোনো উপায় ছিল না। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদ এর আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তার সহধর্মিণী খাদিজা[৭৫] এরপর মুসলিম হন মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী, ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য নবি নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন; এই সভায় কেউই তার আদর্শ মেনে নেয় নি, এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো আলী[৭১] ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবির অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর[৭৫] এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।

প্রকাশ্য দাওয়াত

তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরনের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। মুহাম্মাদ সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, "আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল"। কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায়।[৭৬] বেশিরভাগ মক্কাবাসী তাকে অবজ্ঞা করে, তবে তার অল্প সংখ্যক অনুসারীও হয়। মূলত তিন শ্রেণীর লোকজন তার অনুসারী হয় এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে: ছোট ভাইগণ ও বৃহৎ সওদাগরদের পুত্ররা; যেসব ব্যক্তি তাদের সম্প্রদায়ের শীর্ষ স্থান থেকে চ্যুত হয়েছেন বা শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে পারেননি এবং দুর্বল ব্যক্তিরা, বিশেষ করে নিরাপত্তাহীন বিদেশিরা।[৭৭]

মক্কায় বিরোধিতার সম্মুখীন

মুহাম্মাদের বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে তার উপর নির্যাতন শুরু করে: প্রথমত উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কূটতর্ক এবং বিপরীত যুক্তি।[৭৫] এগুলোতেও কাজ না হওয়াতে এক সময় ইসলামের প্রচারকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং তা পরিচালনা করার জন্য একটি অপপ্রচার গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়। একই সাথে তৎকালীন আরব কবি ও চাটুকারদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় মনোরঞ্জক সাহিত্য ও গান-বাজনার দল, এমনকি এক পর্যায়ে মুহাম্মাদের সাথে আপোসেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মাদ তা মেনে নেন নি; কারণ আপোসের শর্ত ছিল প্রচারবিহীনভাবে ইসলাম পালন করা অথবা বহুঈশ্বরবাদী পৌত্তলিকতাকে সমর্থন করে ইসলাম প্রচার করা, অথচ প্রতিমাবিহীন একেশ্বরবাদের দিকে মানুষকে ডাকাই ছিল তার ধর্ম প্রচারের সর্বপ্রথম ঐশী দ্বায়িত্ব।[৭৮]

ইথিওপিয়ায় হিজরত

ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন নবি কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান। সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশির কারণে তা সফল হয়নি।[৮][৭৮]

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ

এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হলো, মুহাম্মাদ এর চাচা হামজা এবং কুরাইশ নেতা উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। মুহাম্মাদকে তার চাচা হামজা খুব পছন্দ করতেন এবং তাকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। আবু জাহল কাবা প্রাঙ্গণে মুহাম্মাদের সাথে কঠোর ভাষায় বিরূপ আচরণ করেন। এ ঘটনা জানতে পেরে মুহাম্মাদের চাচা হামজা তার প্রতিবাদস্বরূপ আবু জাহলকে মারধর করেন এবং মুহাম্মাদের সমর্থনে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়। আবু জাহলের সঙ্গী হিসেবে কুরাইশ বলশালী যুবক উমরও মুসলিমদের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিতেন। মুহাম্মাদ সবসময় প্রার্থনা করতেন যেন আবু জাহল ও উমরের মধ্যে যে কোনো একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। উমরের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তার এই প্রার্থনা পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবেচিত হচ্ছিল। তবুও উমরের ইসলাম গ্রহণে মুসলিমদের আধিপত্য আরও মজবুত হয় এবং মুহাম্মাদসহ মুসলিমগণ উমরের কাছ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা দানের আশ্বাস পেয়ে তখন থেকে উমরের সাথে কাবা প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে উপাসনা করা শুরু করেন।[৭৯]

নির্বাসন

এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছিল তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ ও তার অনুসারী সহ বনু হাশিম গোত্রকে একঘরে ও অবরোধ করে। তিন বছর অবরুদ্ধ থাকার পর তারা মুক্তি পায়।[৮০][৮১]

দুঃখের বছর ও তায়েফ গমন

মুক্তির পরের বছর ছিল মুহাম্মাদের জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে মুহাম্মাদ মক্কায় ইসলামের প্রসারের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান (তায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন। এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদের পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে তাকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি; বরং সেখানেও তিনি ইসলাম প্রসারের সম্ভবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।[৮১]

মি'রাজ বা উর্দ্ধারোহণ

ইসলামি ভাষ্যমতে মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইসলামে ইসরা নামে পরিচিত। পবিত্র হাদিস শরীফ ও সাহাবা-আজমাঈ'নদের বর্ণনানুযায়ী, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি বুরাক (একটি ঐশ্বরিক বাহন বিশেষ)'এ করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন। এসময় তিনি বেহেশ্‌তদোজখ অবলোকন করেন এবং ইব্রাহিম, মূসাঈসা নবিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।[৮২] এই যাত্রা মুসলমানদের কাছে মি'রাজ নামে পরিচিত। ইসলামি সূত্রানুসারে, এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোনো সময়ই অতিবাহিত হয় নি বলে ধারণা করা হয়। মুহাম্মাদের প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাক ঘটনাটি আধ্যাত্মিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন, অন্যদিকে পরবর্তী সময়ে আল-তাবারিইবনে কাসিরদের মত যুক্তিবাদী ইসলামী ইতিহাসবেত্তাদের মতে মি'রাজে মুহাম্মাদ সশরীরে উর্দ্ধারোহণ করেছিলেন বলে যুক্তি দেখান।[৮২]

মদিনায় হিজরত

মুহাম্মাদের আহ্বানে মক্কায় বেশকিছু লোক ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। তারা মূলত হজ্জ করতে এসে ইসলামে দাওয়াত পেয়েছিল। এরা আকাবা নামক স্থানে মুহাম্মাদের কাছে শপথ করে যে তারা যে কোনো অবস্থায় তাদের নবি মুহাম্মাদকে রক্ষা করবে এবং ইসলাম প্রসারে কাজ করবে। এই শপথগুলো আকাবার শপথ নামে সুপরিচিত। এই শপথগুলোর মাধ্যমেই মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং একসময় মদিনার ১২টি গোত্রের নেতারা একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের মাধ্যমে মুহাম্মাদকে মদিনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়।[৮৩][৮৪] মদিনা তথা ইয়াসরিবে অনেক আগে থেকে প্রায় ৬২০ সাল পর্যন্ত গোত্র গোত্র এবং ইহুদিদের সাথে অন্যদের যুদ্ধ লেগে থাকে। বিশেষত বুয়াছের যুদ্ধে সবগুলো গোত্র যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় প্রচুর রক্তপাত ঘটে।[৮৩] এ থেকে মদিনার লোকেরা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল যে, রক্তের বিনিময়ে রক্ত নেওয়ার নীতিটি এখন আর প্রযোজ্য হতে পারে না। এজন্য তাদের একজন নেতা দরকার যে সবাইকে একতাবদ্ধ করতে পারবে। এ চিন্তা থেকেই তারা মুহাম্মাদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল,[৮] যদিও আমন্ত্রণকারী অনেকেই তখনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। এই আমন্ত্রণে মুসলিমরা মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে যায়। সবশেষে মুহাম্মাদ ও আবু বকর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন।[৮৫][৮৬] তাদের হিজরতের দিনেই কুরাইশরা মুহাম্মাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, যদিও তা সফল হয় নি। এভাবেই মক্কি যুগের সমাপ্তি ঘটে। যারা মুহাম্মাদের সাথে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল তারা "মুহাজিরুন" নামে পরিচিত হয়ে উঠল।[৮]

মাদানি জীবন

মদীনায় মুহাম্মদের জীবনের ঘটনাপঞ্জি
আনু. ৬২২ মদিনায় হিজরত
৬২৩ কাফেলা আক্রমণের সূচনা
৬২৩ আল কুদর আক্রমণ
৬২৪ বদরের যুদ্ধ: মুসলিমগণ মক্কাবাসীদেরকে পরাজিত করেন
৬২৪ সাওকিকের যুদ্ধ, আবু সুফিয়ান বন্দী হন
৬২৪ বনু কায়নুকা গোত্রকে বহিষ্কার
৬২৪ থি আমিরের আক্রমণ, মুহাম্মাদ গাতাফান গোত্রের ওপর আক্রমণ করেন
৬২৪ খালেদ বিন সুফিয়ান ও আবু রাফির গুপ্তহত্যা
৬২৫ উহুদের যুদ্ধ: মক্কাবাসী মুসলিমদের পরাজিত করে
৬২৫ বির মাওনা ও আল রাজির শোকগাঁথা
৬২৫ হামরা আল-আসাদের আক্রমণ, শত্রুপক্ষ ভীত হয়ে পশ্চাদপসরণ করে
৬২৫ বনু নাদির গোত্র আক্রমণ এবং বহিষ্কার
৬২৫ নজদ আক্রমণ, বদর আক্রমণ এবং দুমাতুল জান্দাল আক্রমণ
৬২৭ খন্দকের যুদ্ধ
৬২৭ বনু কুরায়জা গোত্র আক্রমণ, সফল অবরোধ
৬২৮ হুদায়বিয়ার সন্ধি, কাবায় প্রবেশাধিকার লাভ
৬২৮ খায়বার বিজয়
৬২৯ প্রথম হজ্জ
৬২৯ বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণে ব্যর্থতা: মুতার যুদ্ধ
৬৩০ রক্তপাতবিহীন মক্কা বিজয়
৬৩০ হুনাইনের যুদ্ধ
৬৩০ তায়েফ অবরোধ
৬৩১ আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ স্থানের শাসনক্ষমতা লাভ
৬৩২ ঘাসসানীয় সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ: তাবুক যুদ্ধ
৬৩২ বিদায় হজ্জ
৬৩২ মৃত্যু, ৮ই জুনে মদিনায়
মসজিদ-এ-নববী

নিজ গোত্র ছেড়ে অন্য গোত্রের সাথে যোগদান আরবে অসম্ভব হিসেবে পরিগণিত হত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেরকম নয়, কারণ এক্ষেত্রে ইসলামের বন্ধনই শ্রেষ্ঠ বন্ধন হিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিগণিত হয়। এটি তখনকার যুগে একটি বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দেয়। ইসলামি পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিন গণনা শুরু হয়। এজন্য ইসলামি পঞ্জিকার বর্ষের শেষে AH উল্লেখিত থাকে যার অর্থ: হিজরি পরবর্তী।

স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান প্রণয়ন

মুহাম্মাদ মদিনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল বনু আওসবনু খাজরাজ। তিনি তার দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেছিলেন। মদিনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদিনা সনদে স্বাক্ষর করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদি গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনু নাদির)। এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল।[৮৩][৮৪] এই সনদের মাধ্যমে মদিনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মাদ হন তার প্রধান।[৮৭] যে সকল মদিনাবাসী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মুসলিম মুহাজিরদের আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেন তারা আনসার (সাহায্যকারী) নামে পরিচিত হন।[৮]

মক্কার সাথে বিরোধ ও যুদ্ধ

মুহাম্মাদ-এর নাম (محمد) লিখা একটি আরবি লিপি

মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদিনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে।[৮৮] মুহাম্মাদ মদিনায় এসে আশেপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে অগ্রণী ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগী সকল মুসলিমদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়। এই অবস্থায় ৬২৪ সালে মুহাম্মাদ ৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কার একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাঠায়। কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কুরাইশরা তাদের কাফেলা রক্ষায় সফল হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়। আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়ে কুরাইশদের এক তৃতীয়াংশ হয়েও বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত যা ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়।[৮৯][৯০] মুসলিমদের মতে, এই যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদের সহায়তা করেছিলেন। এই সময় থেকেই ইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এরপর ৬২৫ সালের ২৩ মার্চে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে প্রথম দিকে কুরাইশরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয় এবং মুসলিমগণ সূচনাপর্বে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত মুহূর্তের নীতিগত দুর্বলতার কারণে পরাজিতের বেশে মদীনায় প্রবেশ করে। ৬২৭ সালে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের আরেকটি দল নিয়ে মদিনা আক্রমণ করে। কিন্তু এবারও খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধ বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে মুসলিমরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে আশেপাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।[৯১]

মদিনার ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক

তুরস্কের এদ্রিনে মুহাম্মাদের নামের স্বাক্ষর সংবলিত লিপি

কিন্তু এ সময় মদিনার বসবাসকারী ইহুদিরা ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। মূলত ইহুদিরা বিশ্বাস করত না যে, একজন অ-ইহুদি শেষ নবি হতে পারে। এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শ মেনে নেয় নি এবং যখন ইসলামি রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। মুহাম্মাদ প্রতিটি যুদ্ধের পরে একটি করে ইহুদি গোত্রের উপর আক্রমণ করেন। বদর ও উহুদের যুদ্ধের পর বনু কাইনুকা ও বনু নাদির গোত্র সপরিবারে মদিনা থেকে বিতাড়িত হয়; আর খন্দকের পর সকল ইহুদিকে মদিনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।[৯২] মুহাম্মাদের এই ইহুদি বিদ্বেষের দুটি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়, একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক।[৯৩] ধর্মীয় দিক দিয়ে চিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়েও শেষ নবিকে মেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি। আর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে, ইহুদিরা মদিনার জন্য একটি হুমকি ও দুর্বল দিক ছিল। এজন্যই তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়।[৯৪]

হুদাইবিয়ার সন্ধি

"হে স্রষ্টা! তোমার নামে।
এটি মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ও সুহাইল ইবন আমর-এর মধ্যে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি। তারা দশ বছরের জন্য অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছেন। উক্ত সময়ের মধ্যে উভয় পক্ষ নিরাপদ এবং কোন পক্ষই অপর পক্ষের ক্ষতিসাধন করবে না; কোন গোপন আক্রমণ করবে না, তবে তাদের মধ্যে পারস্পারিক সততা ও সম্মান বিরাজ করবে। আরবের যে কেউ যদি মুহাম্মাদের সাথে কোন চুক্তি করতে বা চুক্তিতে যোগ দিতে চায়, তবে সে তা করতে পারবে এবং যে কুরাইশের সাথে চুক্তি করতে বা চুক্তিতে প্রবেশ করতে চায়, সেও তা করতে পারবে। আর যদি কোন কুরাইশ অনুমতি ব্যতীত (মদিনায় প্রবেশ করে) মুহাম্মাদের নিকট উপস্থিত হয়, তবে তাকে কুরাইশের নিকট ফেরত দেওয়া হবে; তবে অন্যদিকে যদি মুহাম্মাদের লোকদের মধ্যে একজন কুরাইশের কাছে আসে তবে তাকে মুহাম্মাদের হাতে তুলে দেওয়া (ফেরত দেওয়া) হবে না। এ বছর মুহাম্মাদকে তার সঙ্গীদের নিয়ে মক্কা থেকে সরে যেতে হবে, তবে পরের বছর তিনি মক্কায় এসে তিন দিন অবস্থান করতে পারবেন, তবে তাদের অস্ত্র ব্যতীত এবং তরবারিগুলো খাপে বদ্ধ রেখে।"

—হুদাইবিয়ার সন্ধির বিবৃতি[৯৫]

কুরআনে যদিও মুসলিমদের হজ্জের নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ করা আছে,[৯৬] তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরা হজ্জ আদায় করতে পারছিল না। মুহাম্মাদ এক দিব্যদর্শনে দেখতে পান তিনি হজ্জের জন্য মাথা কামাচ্ছেন।[৯৭] এটি দেখে তিনি হজ্জ করার জন্য মনস্থির করেন এবং ৬ হিজরি সনের শাওয়াল মাসে হজ্জের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মক্কার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাধা দেয়। অগত্যা মুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে সুপরিচিত। এই সন্ধি মতে মুসলিমরা সে বছর হজ্জ করা ছাড়াই মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে। সন্ধির অধিকাংশ শর্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে গেলেও মুহাম্মাদ এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।[৯৮]

বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী মুহাম্মাদ সারা বিশ্বের রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহ্বান পৌঁছে দেওয়া তার দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে তিনি এ কাজে মনোনিবেশ করেন। সে সময়ে পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলো ছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য, এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের 'আজিজ মুকাউকিস', ইয়ামামার সর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশ প্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরির জ্বিলহজ্জ মাসের শেষদিকে একইদিনে এদের কাছে ইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।[৮][৯৯][১০০][১০১]

প্রেরিত দূতগণের তালিকা
রোমসম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে মুহাম্মাদের প্রেরিত চিঠি
মুকাউকিসের কাছে মুহাম্মদের চিঠি
বাহরাইনের শাসক মুনজিরের নিকট প্রেরিত চিঠি
  1. দাহিয়া কালবীকে রোমসম্রাট কায়সারের (হিরাক্লিয়াস বা হিরাকল নামে অধিক পরিচিত) কাছে।
  2. আবদুল্লাহ বিন হুযায়ফা আস-সাহমিকে পারস্যসম্রাট কিসরা বা খসরু পারভেজের (খসরু ২) কাছে।
  3. হাতিব বিন আবু বুলতা'আকে মিশরের (তৎকালীন আলেকজান্দ্রিয়ার) শাসনকর্তা মুকাউকিসের কাছে।
  4. আমর বিন উমাইয়াকে হাবশার রাজা নাজ্জাশির কাছে।
  5. সলিত বিন উমর বিন আবদে শামসকে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।
  6. শুজা ইবনে ওয়াহাবকে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।
  7. আল আলা আল হাদরামিকে বাহরাইনের শাসক মুনজির ইবনে সাওয়া আল তামিমি'র কাছে।[৯৯][১০০][১০১]

শাসকদের মধ্য হতে বাদশাহ নাজ্জাসি ও মুনজির ছাড়া আর কেউ তখন ইসলাম গ্রহণ করেননি।

মক্কা বিজয়

মুহাম্মাদ (সবুজ রেখা) ও রাশিদুন খলিফাদের (কালো রেখা) বিজিত এলাকা: বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য (উত্তর ও পশ্চিম) এবং সাসানীয় সাম্রাজ্য (উত্তর পশ্চিম)।
সুরা আন-নাজম এর শেষ আয়াত

দশ বছরমেয়াদি হুদাইবিয়ার সন্ধি মাত্র দু' বছর পরেই ভেঙ্গে যায়।[১০২][১০৩] খুজাআহ গোত্র ছিল মুসলমানদের মিত্র, অপরদিকে তাদের শত্রু বকর গোত্র ছিল কুরাইশদের মিত্র।[১০২][১০৩] একরাতে বকর গোত্র খুজাআদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।[১০২][১০৩] কুরাইশরা এই আক্রমণে অন্যায়ভাবে বকর গোত্রকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে।[১০১][১০২] কোনো কোনো বর্ণনামতে, কুরাইশদের কিছু যুবকও এই হামলায় অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনার পর মুহাম্মাদ কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্তসহ পত্র প্রেরণ করেন এবং কুরাইশদেরকে এই তিনটি শর্তের যে কোনো একটি মেনে নিতে বলেন।[১০৪] শর্ত তিনটি হলো;

  • কুরাইশ খুজাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করবে।
  • অথবা তারা বকর গোত্রের সাথে তাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করবে।
  • অথবা এ ঘোষণা দিবে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

কুরাইশরা জানালো যে, তারা শুধু তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করবে।[১০৪] কিন্তু খুব দ্রুত কুরাইশরা তাদের ভুল বুঝতে পারলো এবং আবু সুফিয়ানকে সন্ধি নবায়নের জন্য দূত হিসেবে মদিনায় প্রেরণ করলো।[১০১] কিন্তু মুহাম্মাদ কুরাইশদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং মক্কা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করলেন।[১০৫]
৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন। সেদিন ছিল অষ্টম হিজরির রমজান মাসের দশ তারিখ। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনাপ্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো[১০৬][১০৭] এবং মুহাম্মাদ বিজয়ীবেশে সেখানে প্রবেশ করলেন। তিনি মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন। তবে দশজন নর এবং নারী এই ক্ষমার বাইরে ছিল। তারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুহাম্মাদ এর কুৎসা রটাত।[১০৮] তবে এদের মধ্য হতেও পরবর্তীতে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়।[১০৭][১০৯] মক্কায় প্রবেশ করেই মুহাম্মাদ সর্বপ্রথম কাবাঘরে প্রবেশ করেন এবং সেখানকার সকল মূর্তি ধ্বংস করেন।[১০৭][১১০][১১১][১১২] মুসলমানদের শান-শওকত দেখে এবং মুহাম্মাদ এর ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসীই ইসলাম গ্রহণ করে। আল-কুরআনে এই বিজয়ের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত আছে।[৭৬][১১৩]

মক্কা বিজয়ের পর

মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মাদ হাওয়াজিন সম্প্রদায়ের আক্রমণের সমূহ সম্ভাবনা দেখতে পান। তাদের মুহাম্মাদের সেনাবাহিনী অপেক্ষা দ্বিগুণ সেনা সদস্য ছিল। বনু হাওয়াজিনরা মক্কার পুরনো শত্রু ছিল। বনু সাকিফরা (তায়েফ নগরীর বাসিন্দারা) মক্কা-বিরোধী নীতি গ্রহণ করে এবং বনু হাওয়াজিনদের সাথে যোগ দেয়।[১১৪] মুহাম্মাদ হাওয়াজিন ও সাকিফদের হুনাইনের যুদ্ধে পরাজিত করেন।[৮]

মৃত্যু

মুহাম্মাদের সমাধি, যা রওজা নামে মুসলিমদের কাছে অধিক পরিচিত, মসজিদ এ নববী, মদিনা, সৌদি আরব
স্বর্ণখচিত সমাধিগৃহ (রওজা)
আয়িশা'র কক্ষে মুহাম্মাদের কবর

বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরি ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মাদ জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির উপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়িশার গৃহে অবস্থান করতে থাকেন। বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। স্ত্রী আয়িশার কোলে মাথা রেখে, তিনি আয়িশাকে তার সর্বশেষ পার্থিব সম্পত্তি (সাত কিংবা আট দিনার) দান করে দিতে বলেন (কথিত আছে তা তিনি বলেন মৃত্যুর এক দিন পূর্বে), এরপর তিনি তার জীবনের সর্বশেষ উক্তিটি উচ্চারণ করেন:

হে আল্লাহ, তুমি আর-রফিক আল-আ'লা (শ্রেষ্ঠ বন্ধু, সর্বোচ্চ আবাস বা সর্বোন্নত, স্বর্গের সর্বোচ্চ সঙ্গ)[১১৫][১১৬][১১৭]

— মুহাম্মাদ

অবশেষে ৮ই জুন ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে রবিবারে বা ১১ হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি মদিনায় আয়িশার গৃহে মৃত্যুবরণ করেন।[১১৮] এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলী তাকে গোসল দেন এবং কাফন পরান। আয়েশার ঘরের যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, জানাজার পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।[৮][১১৯][১২০][১২১] পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের সময়ে, মসজিদে নববিকে সম্প্রসারণ করে মুহাম্মাদের কবরকে এর সম্প্রসারিত এলাকার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১২২] বর্তমানেও মসজিদে নববির অভ্যন্তরে তার কবর রয়েছে। মুহাম্মাদের কবরের পাশেই আরও দুটি কবর রয়েছে, সেগুলো হলো যথাক্রমে ইসলামের প্রথম দুই খলিফা ও প্রখ্যাত সাহাবা আবু বকরউমরের, এর পাশে আরেকটি কবরের স্থান খালি রাখা হয়েছে। মুসলিমদের বিশ্বাস মতে, সেখানে পৃথিবীতে পুনরায় প্রত্যাবর্তীত নবি ঈসাকে প্রকৃত মৃত্যুর পর সমাহিত করা হবে।[১২০][১২৩][১২৪]

মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর

৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যরা যখন তার দাফনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তখন মদিনার আনসারদের মধ্যে তার উত্তরসূরি নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। উমরআবু উবাইদা দুজনেই আবু বকরের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেন। মদিনার আনসারমুহাজিররা অচিরেই তাদের অনুসরণ করে। আবু বকর এভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রথম খলিফা (খলিফা রাসুলুল্লাহ বা আল্লাহর রাসুলের উত্তরাধিকারী) হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং ইসলামের প্রচারের জন্য কাজ শুরু করেন।[১২৫] এর মাধ্যমে খিলাফত নামক নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। প্রথমে তাকে বিদ্রোহী আরব গোত্রগুলোকে দমন করতে হয় যারা ইসলাম ত্যাগ করে পূর্ব ব্যবস্থায় ফিরে গিয়েছিল।[১২৬][১২৭][১২৮][১২৯] আবু বকরের ক্ষমতালাভের পর খুব দ্রুত সমস্যা মাথাচাড়া দেয় এবং তা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। মুহাম্মাদের জীবদ্দশাতেই কিছু ধর্মদ্রোহিতার ঘটনা ঘটে এবং এ সংক্রান্ত সর্বপ্রথম সংঘর্ষ তার জীবদ্দশাতেই হয়। ধর্মত্যাগের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তা আরবের প্রত্যেকটি গোত্রকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরো গোত্র ধর্মত্যাগ করে। কিছু ক্ষেত্রে ইসলামকে অস্বীকার না করলেও যাকাত দিতে অস্বীকারের ঘটনা ঘটে। অনেক গোত্রীয় নেতা নিজেকে নবি দাবি করা শুরু করে। ধর্মত্যাগ ইসলামি আইনে সর্বোচ্চ ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আবু বকর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে রিদ্দার যুদ্ধ শুরু হয়। মধ্য আরবের ধর্মত্যাগীদের নেতৃত্ব ছিল স্বঘোষিত নবি মুসাইলিমা। অন্যরা দক্ষিণ ও পূর্বের অন্যান্য অঞ্চল যেমন বাহরাইন, মাহরাইয়েমেনে নেতৃত্বে দিচ্ছিল। আবু বকর বিদ্রোহ দমনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি মুসলিম সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রাথমিক বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। বিদ্রোহীদের শক্তিশালী বাহিনীগুলোর সাথে লড়াইয়ের জন্য খালিদের সেনাদের ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য সেনাদলগুলো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় ব্যবহার করা হত। আবু বকরের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে পশ্চিম ও মধ্য আরব (যা মদিনার নিকটবর্তী ছিল) নিষ্কণ্টক করা, এরপর মালিক ইবনে নুয়ায়রাহকে মোকাবেলা করা ও শেষে সবচেয়ে বিপদজনক শত্রু মুসাইলিমাকে শায়েস্তা করা। বেশ কিছু ধারাবাহিক সাফল্যের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ শেষপর্যন্ত ইয়ামামার যুদ্ধে মুসাইলিমাকে পরাজিত করেন।[১৩০] হিজরি ১১ সালে এ যুদ্ধ শুরু ও সমাপ্ত হয়। ১২ হিজরিতে আরব মদিনায় অবস্থান করা খলিফার নেতৃত্ব একীভূত হয়। বিদ্রোহী কথিত নবিদের যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে আবু বকর আরবকে ইসলামের অধীনে সুসংহত করেন এবং ইসলামি রাষ্ট্রকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেন।

সংস্কারক হিসেবে মুহাম্মাদ

উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াটের মতে মুহাম্মাদের জন্য ধর্ম ব্যক্তিগত বা একক বিষয় ছিল না, "এটি তার ব্যক্তিত্ব পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ, যার মাঝে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি ধর্মীয় ও বুদ্ধিগত বিষয়ের পাশাপাশি সমসাময়িক মক্কার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের দিকেও খেয়াল রেখেছিলেন।"[১৬] বার্নার্ড লুইস বলেন, ইসলামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রথা রয়েছে - মদিনায় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মুহাম্মাদ এবং মক্কায় বিদ্রোহী হিসেবে মুহাম্মাদ। নতুন সমাজব্যবস্থায় প্রবর্তিত হওয়ার সময়কে তিনি ইসলামের বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মনে করতেন, যা অনেকটা বিপ্লবের মত।[১৭]

ঐতিহাসিকগণ সাধারণভাবে সম্মত যে, আরব সমাজে সামাজিক নিরাপত্তা, পারিবারিক কাঠামো, দাসত্ব এবং নারী ও শিশুদের অধিকারের মতো ক্ষেত্রে ইসলামি সামাজিক পরিবর্তনগুলো ইতিবাচকভাবে আরব সমাজের সংস্কার ঘটায়।[১৭][১৩১] উদাহরণস্বরূপ: লুইসের মতে, ইসলাম ‘কেবল সম্ভ্রান্তশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সমালোচনা করা থেকে শুরু করে যাজকতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটায় এবং একটি ধীশক্তিভিত্তিক পেশাগত ব্যবস্থার বিধি পরিগ্রহ করে।’[১৭] মুহাম্মাদের বাণী আরব উপদ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রার নৈতিকতা ও সমাজকে রুপান্তরিত করেছিল; সমাজ আত্নপরিচয়, বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্যবোধের শ্রেণিবিন্যাস্যের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।[১৩২][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] অর্থনৈতিক সংস্কার দরিদ্রদের দুর্দশাকে বিবেচনা করেছিল, যা প্রাক-ইসলামিক মক্কায় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।[১৩৩] কুরআনে গরিবদের সুবিধার্থে কর (যাকাত) প্রদান করার বিধান রয়েছে; মুহাম্মাদের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে তিনি দাবি করেন যে, যেসব উপজাতিগুলো তার সাথে মিত্র হতে চায় তারা যেন স্বতন্ত্রভাবে যাকাত আদায় করে।[১৩৪][১৩৫]

ইসলামি বর্ণনামতে মুহাম্মাদের অলৌকিকত্ব

মুসলমানদের মতে মুহাম্মাদের অসংখ্য অলৌকিক ক্ষমতার মধ্যে প্রকাশ্য অলৌকিকত্ব বা মুজিযা’র সংখ্যা দশ হাজারেরও অধিক।[১৩৬] প্রখ্যাত পণ্ডিত জালালুদ্দিন সুয়ুতিরখাসায়েসুল কুবরা” নামক গ্রন্থে মুহাম্মাদের মুজিযা সম্পর্কিত ঘটনাগুলো আলাদাভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। মক্কাবাসীদের দাবীর মুখে মুহাম্মাদ কিছুক্ষণের জন্য চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেন। আল কোরআনের সুরা ক্বামারে মুহাম্মাদের প্রার্থনায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে। একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, বদর যুদ্ধের আগের দিন বদর নামক স্থানে পৌঁছে মুহাম্মাদ বললেন,

ইসলামের একটি বর্ণনায় উল্লেখ আছে মুহাম্মাদের স্পর্শে এক সাহাবীর ভাঙা পা ভালো হয়ে যায়। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতিক এর পা ভেঙে গেলে, তিনি তা মুহাম্মাদকে জানালে তিনি তার পায়ের উপর হাত বুলালেন। সাহাবি বলেন, ‘এতে আমার পা এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেল যেন তাতে আমি কখনো আঘাতই পাইনি।’ (বুখারী) আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায় মুহাম্মাদ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে স্বল্প খাদ্যে হাজার মানুষকে পরিতৃপ্তি সহকারে ভোজন করিয়েছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)

অমুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মুহাম্মদকে একজন আদর্শ আইন নির্মাতা এবং মহামানব আখ্যা দিয়ে মুহাম্মাদ এবং ইসলামের ভূয়সী প্রশংসা করেন।[১৩৭][১৩৮][১৩৯] ইতিহাসবিদ টমাস কার্লাইল[১৪০][১৪১] এবং উইলিয়াম মন্টমেগেরি ওয়াট[১৪২][১৪৩][১৪৪][১৪৫][১৪৬] তাদের নিজ নিজ বইয়ে মুহাম্মাদকে ইতিহাসের একজন অন্যতম প্রভাবশালী ইতিবাচক সংস্কারক হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া মাইকেল এইচ. হার্ট তার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একশ মনীষী নামক জীবনীগ্রন্থে মুহাম্মাদকে প্রথম স্থানে রেখেছেন।

সমালোচনা

মুহাম্মাদের সমালোচনা ৭ম শতাব্দী থেকে-ই বিদ্যমান ছিল। একেশ্বরবাদ প্রচারের জন্য তার অমুসলিম আরব সমসাময়িকরা তাকে একাধিকবার ধিক্কার দিয়েছিলো। তারা মুহাম্মদ এর বিরুদ্ধে পরিসংখ্যানের অযৌক্তিক ব্যবহার, ইহুদি বিশ্বাসের অপব্যবহার, এবং কোনো প্রকার অলৌকিক কাজ না করে ও নিজেকে নবি দাবি করার অভিযোগ করতো।[১৪৭][১৪৮] উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা মুহাম্মাদকে "হা-মেশুগাহ" (হিব্রু: מְשֻׁגָּע, ইংরেজি: "The Madman" বা "The Possessed") অপমানজনক ডাকনাম দিয়েছিল।[১৪৯][১৫০][১৫১]

মধ্যযুগে,[১৫২][১৫৩][১৫৪] বিভিন্ন পশ্চিমা এবং বাইজেন্টাইন খ্রিস্টান চিন্তাবিদরা মুহাম্মদকে একজন বিকৃত,[১৫৫][১৫৬] জঘন্য মানুষ,[১৫৭][১৫৮] একজন মিথ্যা নবি[১৫৯][১৬০] এবং এমনকি খ্রিস্টবিরোধী[১৬১] হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন, কারণ তাকে খ্রিস্টধর্মে প্রায়শই একজন ধর্মদ্রোহী বা ভূত দ্বারা আবিষ্ট হিসাবে দেখা যেত।[১৬২][১৬৩][১৬৪][১৬৫] তাদের মধ্যে কেউ কেউ, যেমন টমাস অ্যাকুইনাস পরকালের শারীরিক আনন্দের বিষয়ে মুহাম্মদের প্রতিশ্রুতির সমালোচনা করেছিলেন।[১৬৬]

একজন নবি হওয়ার দাবিতে মুহাম্মদের আন্তরিকতা, তার নৈতিকতা, তার ক্রীতদাসদের মালিকানা,[১৬৭][১৬৮] শত্রুদের সাথে তার অমানবিক আচরণ,[১৬৯] তার বিবাহ, মতবাদের বিষয়ে তার আচরণ এবং তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আধুনিক ধর্মতাত্ত্বিক[১৭০][১৭১] ও ধর্মনিরপেক্ষ[১৭২][১৭৩] সমাজে তার সমলাচনা হয়েছে।

মুহাম্মদের ডানাওয়ালা গাধায় চড়ে চাঁদে গিয়ে চাঁদকে বিভক্ত করার দাবি বরাবর-ই সমালোচিত। ২০১৬ সালে অ্যাপোলো মিশনের চাঁদের পৃষ্ঠে ৩০০ কিমি দীর্ঘ ফাটল রেখার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর,[১৭৪] কিছু ইন্টারনেট সাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে মুসলমানদের দ্বারা দাবি করা হয়েছিল যে এটি কুরআনে উল্লেখিত বিভক্তির ফলাফল।[১৭৫][১৭৬] ২০১০ সালে, নাসা বিজ্ঞানী ব্র্যাড বেইলিকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এবং উত্তর দিয়েছিলেন "আমার সুপারিশ হল আপনি ইন্টারনেটে যা কিছু পড়েন তা বিশ্বাস করবেন না। পিয়ার-পর্যালোচিত জার্নাল আছে বহু, সেগুলো-ই মূলত নতুন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্যের একমাত্র বৈজ্ঞানিকভাবে বৈধ উৎস। বর্তমান কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে চাঁদ দুটি (বা ততোধিক) অংশে বিভক্ত করা হয়েছিল এবং তারপরে অতীতের যেকোনো সময়ে পুনরায় একত্রিত করা হয়েছিল।"[১৭৭]

আরও দেখুন

পাদটীকা

  1. পূর্ণ নাম: আবুল কাসিম মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم)
  2. কারণ শহরের ভাষা নানান ধারার সংমিশ্রণের কারণে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তাই তারা বাচ্চাদের বেদুইনদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন

তথ্যসূত্র

  1. "Why send durood on prophet(saws)"। ১৩ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২ 
  2. "What does the Muslim phrase, "Peace Be Upon Him" mean?" (ইংরেজি ভাষায়)। InnovateUs Inc.। ১১ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৫ 
  3. Amir Ali, Syed (১৯০২)। "1st"। The spirit of Islam; or, The life and teachings of Mohammed (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। 54, College Street, Calcutta: S.K Lahiri & C0.। পৃষ্ঠা 8। 
  4. "Muḥammad - Oxford Islamic Studies Online"www.oxfordislamicstudies.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২০ 
  5. Esposito, John L.; Esposito, Professor of Religion and International Affairs Founding Director of the Prince Alwaleed Bin Talal Center for Muslim-Christian Understanding John L. (১৯৯৮)। Islam: The Straight Path (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা ৯। আইএসবিএন 978-0-19-511234-4 
  6. Peters, F. E. (Francis E. ) (২০০৩)। Islam, a guide for Jews and Christians। Internet Archive। Princeton, NJ : Princeton University Press। পৃষ্ঠা ৯। আইএসবিএন 978-0-691-11553-5 
  7. Morgan, Diane (২০০৯)। Essential Islam: A Comprehensive Guide to Belief and Practice। পৃষ্ঠা 101। আইএসবিএন 978-0-313-36025-1। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১২ 
  8. Buhl, F.; Welch, A. T. (1993). "Muḥammad". Encyclopaedia of Islam 7 (2nd ed.). Brill Academic Publishers. pp. 360–376. আইএসবিএন ৯০-০৪-০৯৪১৯-৯.
  9. Watt (1974) p. 231
  10. Tan Ta Sen, Dasheng Chen (২০০০)। Cheng Ho and Islam in Southeast Asia (ইংরেজি ভাষায়)। Institute of Southeast Asian Studies। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 981-230-837-7। ২০১৫-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-১৭ 
  11. Zvi Ben-Dor Benite (২০০৫)। The dao of Muhammad: a cultural history of Muslims in late imperial China (ইংরেজি ভাষায়)। Harvard University Asia Center। পৃষ্ঠা 182। আইএসবিএন 981-230-837-7। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-১৭ 
  12. Benite (2005), p.187
  13. Hyunhee Park (২০১২)। Mapping the Chinese and Islamic Worlds (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 120। আইএসবিএন 9781107018686। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-১৭ 
  14. J. Gordon Melton (২০১৪)। Faiths Across Time: 5,000 Years of Religious History (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 929। আইএসবিএন 9781610690256। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-১৭ 
  15. Hart, Michael H. (১৯৭৮)। The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History (ইংরেজি ভাষায়)। Carol Publishing Group। আইএসবিএন 978-0-8065-1350-8 
  16. Cambridge History of Islam (1970), p. 30.
  17. Lewis (1998) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ এপ্রিল ২০১০ তারিখে
  18. ncyclopedia of World History (1998), p. 452.
  19. Howarth, Stephen. Knights Templar. 1985. ISBN 9780826480347 p. 199.
  20. Muhammad Mustafa Al-A'zami (2003), The History of The Qur'anic Text: From Revelation to Compilation: A Comparative Study with the Old and New Testaments, pp. 26–27. UK Islamic Academy. ISBN 978-1872531656.
  21. Anis Ahmad (২০০৯). "Dīn". In John L. Esposito. The Oxford Encyclopedia of the Islamic World. Oxford: Oxford University Press.
  22. F.E. Peters (২০০৩), p. 9.
  23. Esposito (১৯৯৮), p. 12; (১৯৯৯) p. 25; (২০০২) pp. 4–5.
  24. "Muhammad", Encyclopedia of Islam and the Muslim world
  25. See:
    • Holt (1977a), p. 57
    • Lapidus (2002), pp. 31–32
  26. "Muhammad" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে. Random House Webster's Unabridged Dictionary.
  27. Jean-Louis Déclais, Names of the Prophet, Encyclopedia of the Quran
  28. Nasr, Seyyed Hossein (২০০৭)। "Qurʾān"Encyclopædia Britannica Online। ৫ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  29. Living Religions: An Encyclopaedia of the World's Faiths, Mary Pat Fisher, 1997, p. 338, I.B. Tauris Publishers.
  30. Quran 17:106 কুরআন ১৭:১০৬
  31. Clinton Bennett (১৯৯৮)। In search of Muhammad। Continuum International Publishing Group। পৃষ্ঠা 18–19। আইএসবিএন 978-0-304-70401-9। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  32. Francis E. Peters (১৯৯৪)। Muhammad and the origins of Islam। SUNY Press। পৃষ্ঠা 261। আইএসবিএন 978-0-7914-1876-5। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  33. Watt (1953), p. xi
  34. Reeves (2003), pp. 6–7
  35. S.A. Nigosian (2004), p. 6
  36. Donner (1998), p. 132
  37. Holland, Tom (২০১২)। In the Shadow of the Sword। Doubleday। পৃষ্ঠা 42। আইএসবিএন 978-0-7481-1951-6Things which it is disgraceful to discuss; matters which would distress certain people; and such reports as I have been told are not to be accepted as trustworthy - all these things have I omitted. [Ibn Hashim, p. 691.] 
  38. Lewis (1993), pp. 33–34
  39. Jonathan, A.C. Brown (২০০৭)। The Canonization of al-Bukhārī and Muslim: The Formation and Function of the Sunnī Ḥadīth CanonBrill Publishers। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 978-90-04-15839-9। ১৮ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। We can discern three strata of the Sunni ḥadīth canon. The perennial core has been the Ṣaḥīḥayn. Beyond these two foundational classics, some fourth-/tenth-century scholars refer to a four-book selection that adds the two Sunans of Abū Dāwūd (d. 275/889) and al-Nāsaʾī (d. 303/915). The Five Book canon, which is first noted in the sixth/twelfth century, incorporates the Jāmiʿ of al-Tirmidhī (d. 279/892). Finally, the Six Book canon, which hails from the same period, adds either the Sunan of Ibn Mājah (d. 273/887), the Sunan of al-Dāraquṭnī (d. 385/995) or the Muwaṭṭaʾ of Mālik b. Anas (d. 179/796). Later ḥadīth compendia often included other collections as well. None of these books, however, has enjoyed the esteem of al-Bukhārīʼs and Muslimʼs works. 
  40. Nurullah Ardic (২১ আগস্ট ২০১২), Islam and the Politics of Secularism, Routledge, পৃষ্ঠা 99, আইএসবিএন 978-1-136-48984-6, ২২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা 
  41. Watt (1953), pp. 1–2.
  42. Loyal Rue, Religion Is Not about God: How Spiritual Traditions Nurture Our Biological,2005, p. 224.
  43. ohn Esposito, Islam, Expanded edition, Oxford University Press, pp. 4–5.
  44. See:
    • Esposito, Islam, Extended Edition, Oxford University Press, pp. 5–7
    • Quran 3:95
  45. Ueberweg, Friedrich। History of Philosophy, Vol. 1: From Thales to the Present Time। Charles Scribner's Sons। পৃষ্ঠা 409। আইএসবিএন 978-1-4400-4322-2 
  46. Kochler (1982), p. 29
  47. cf. Uri Rubin, Hanif, Encyclopedia of the Qur'an
  48. See:
    • Louis Jacobs (1995), p. 272
    • Turner (2005), p. 16
  49. Dever, William G. (১০ মে ২০০১)। What Did the Biblical Writers Know and When Did They Know It?: What Archeology Can Tell Us About the Reality of Ancient Israel (ইংরেজি ভাষায়)। Wm. B. Eerdmans Publishing। আইএসবিএন 978-0-8028-2126-3 
  50. Christian Julien Robin (২০১২)। Arabia and Ethiopia. In The Oxford Handbook of Late Antiquity। OUP USA। পৃষ্ঠা 297–299। আইএসবিএন 978-0-19-533693-1। ১৬ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  51. Christian Julien Robin (২০১২)। Arabia and Ethiopia. In The Oxford Handbook of Late Antiquity। OUP USA। পৃষ্ঠা 302। আইএসবিএন 978-0-19-533693-1। ১ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  52. Christian Julien Robin (২০১২)। Arabia and Ethiopia. In The Oxford Handbook of Late Antiquity। OUP USA। পৃষ্ঠা 286–287। আইএসবিএন 978-0-19-533693-1। ৪ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  53. Christian Julien Robin (২০১২)। Arabia and Ethiopia. In The Oxford Handbook of Late Antiquity। OUP USA। পৃষ্ঠা 301। আইএসবিএন 978-0-19-533693-1। ১৭ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  54. Encyclopedia of World History (1998), p. 452
  55. Esposito, John L. (ed.) (২০০৩)। The Oxford Dictionary of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 198। আইএসবিএন 978-0-19-512558-0। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১২ 
  56. Marr JS, Hubbard E, Cathey JT. (2014): The Year of the Elephant. figshare. http://dx.doi.org/10.6084/m9.figshare.1186833 Retrieved 22:19, Oct 21, 2014 (GMT)
  57. Watt (1974), p. 7.
  58. Meri, Josef W. (২০০৪), Medieval Islamic civilization (ইংরেজি ভাষায়), 1, Routledge, পৃষ্ঠা 525, আইএসবিএন 978-0-415-96690-0, ১৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৩ 
  59. Watt, "Halimah bint Abi Dhuayb ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে", Encyclopaedia of Islam.
  60. গোলাম মোস্তফা (১৯৪২)। বিশ্বনবি। ঢাকা: আহমদ পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ৪৫। আইএসবিএন 984-11-0302-8 
  61. An Introduction to the Quran (1895), p. 182
  62. Watt, Amina, Encyclopaedia of Islam
  63. Armand Abel, Bahira, Encyclopaedia of Islam
  64. Khan, Majid Ali (১৯৯৮)। Muhammad the final messenger (ইংরেজি ভাষায়) (1998 সংস্করণ)। India: Islamic Book Service। পৃষ্ঠা 332। আইএসবিএন 81-85738-25-4 
  65. Esposito (1998), p. 6
  66. Berkshire Encyclopedia of World History (2005), v. 3, p. 1025.
  67. Dairesi, Hırka-i Saadet; Aydin, Hilmi (2004). Uğurluel, Talha; Doğru, Ahmet, eds. The Sacred Trusts: Pavilion of the Sacred Relics, Topkapı Palace Museum, Istanbul. Tughra Books. ISBN 978-1-932099-72-0.
  68. Muhammad Mustafa Al-A'zami (2003), The History of The Qur'anic Text: From Revelation to Compilation: A Comparative Study with the Old and New Testaments, p. 24. UK Islamic Academy. ISBN 978-1872531656.
  69. An Introduction to the Quran (1895), p. 184
  70. সূরা আলাক্ব: মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের ৯৬ নং সুরা; প্রথম পাঁচ (১ - ৫) আয়াত। www.islamdharma.net -এ প্রাপ্ত কুরআনের বাংলা অনুবাদ থেকে নেওয়া হয়েছে।
  71. Esposito (2010), p.8
  72. John Esposito, Islam, Expanded edition, Oxford University Press, p.4–5
  73. Watt (1953), p. 86
  74. Uri Rubin, Quraysh, Encyclopaedia of the Qur'an
  75. Watt, The Cambridge History of Islam (1977), p. 36
  76. An Introduction to the Quran (1895), p. 185
  77. Horovitz, Josef (1927). "The Earliest Biographies of the Prophet and Their Authors". Islamic Culture. 1: 548f. doi:10.1163/157005807780220576.
  78. F.E. Peters (2003b), p. 96
  79. Moojan Momen (1985), p. 4
  80. Encyclopedia of Islam and the Muslim World (2003), p. 482.
  81. Watt, The Cambridge History of Islam, p. 39
  82. Esposito (1998), p. 17.
  83. An Introduction to the Quran (1895), p. 187
  84. Moojan Momen (1985), p. 5
  85. "Ali ibn Abitalib"Encyclopedia Iranica (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০০৭ 
  86. Watt (1961), p. 132.
  87. C.F. Robinson, Uhud, Encyclopedia of Islam
  88. Watt (1964) p. 137
  89. Watt (1956), p. 35
  90. Esposito (1998), pp.10-11
  91. F.E.Peters(2003), p.77
  92. F.E.Peters(2003), p.76-78
  93. Learning Islam 8। Islamic Services Foundation। ২০০৯। পৃষ্ঠা D14। আইএসবিএন 1-933301-12-0 
  94. Quran 2:196–210.
  95. Lings (1987), p. 249.
  96. Watt, al- Hudaybiya or al-Hudaybiyya Encyclopedia of Islam.
  97. Lings (1987), p. 260
  98. Khan (1998), pp. 250–251
  99. An Introduction to the Quran II (1895), p.273
  100. Khan (1998), p. 274
  101. Lings (1987), p. 291
  102. Khan (1998), pp. 274–5.
  103. Lings (1987), p. 292
  104. Watt (1956), p. 66.
  105. An Introduction to the Quran II (1895), p.274
  106. The Message by Ayatullah Ja'far Subhani, chapter 48 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ মে ২০১২ তারিখে referencing Sirah by Ibn Hisham, vol. II, page 409.
  107. Rodinson (2002), p. 261.
  108. Harold Wayne Ballard, Donald N. Penny, W. Glenn Jonas (2002), p.163
  109. F. E. Peters (2003), p.240
  110. Guillaume, Alfred (১৯৫৫)। The Life of Muhammad. A translation of Ishaq's "Sirat Rasul Allah". (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 552। আইএসবিএন 978-0-19-636033-1। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১১Quraysh had put pictures in the Ka'ba including two of Jesus son of Mary and Mary (on both of whom be peace!). ... The apostle ordered that the pictures should be erased except those of Jesus and Mary. [কুরাইশগণ কা'বায় মরিয়ম (মেরি) ও মরিয়মের পুত্র ঈসার (যীশু) (উভয়ের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!) ছবি রেখেছিলেন। ... প্রেরিত রাসূল যীশু এবং মেরির ছবি বাদে ছবিগুলি মুছে ফেলতে আদেশ করেন।] 
  111. কুরআন ১১০:১
  112. Watt (1974), p. 207
  113. Reşit Haylamaz (২০১৩)। The Luminous Life of Our Prophet (ইংরেজি ভাষায়)। Tughra Books। পৃষ্ঠা 355। 
  114. Fethullah Gülen। Muhammad The Messenger of God (ইংরেজি ভাষায়)। The Light, Inc.। পৃষ্ঠা 24। আইএসবিএন 1-932099-83-2 
  115. Tafsir Ibn Kathir (Volume 5) (ইংরেজি ভাষায়)। DARUSSALAM। পৃষ্ঠা 214। 
  116. The Last Prophet, page 3. By Lewis Lord of U.S. News & World Report. 7 April 2008.
  117. Leila Ahmed (1986), 665–91 (686)
  118. F. E. Peters(2003), p. 90
  119. An Introduction to the Quran II (1895), p. 281
  120. Ariffin, Syed Ahmad Iskandar Syed (২০০৫)। Architectural Conservation in Islam: Case Study of the Prophet's Mosque। Penerbit UTM। পৃষ্ঠা 88। আইএসবিএন 978-983-52-0373-2 
  121. "Isa", Encyclopedia of Islam
  122. Shaykh Adil Al-Haqqani; Shaykh Hisham Kabbani (২০০২)। The Path to Spiritual Excellence (ইংরেজি ভাষায়)। ISCA। পৃষ্ঠা 65–66। আইএসবিএন 978-1-930409-18-7 
  123. "The Caliphate"www.jewishvirtuallibrary.org। ২ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯ 
  124. Azyumardi Azra (২০০৬)। Indonesia, Islam, and Democracy: Dynamics in a Global Context (ইংরেজি ভাষায়)। Equinox Publishing। পৃষ্ঠা 9আইএসবিএন 9789799988812 
  125. C. T. R. Hewer; Allan Anderson (২০০৬)। Understanding Islam: The First Ten Steps (illustrated সংস্করণ)। Hymns Ancient and Modern Ltd। পৃষ্ঠা 37। আইএসবিএন 9780334040323 
  126. Anheier, Helmut K.; Juergensmeyer, Mark, সম্পাদকগণ (৯ মার্চ ২০১২)। Encyclopedia of Global Studies (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 151। আইএসবিএন 9781412994224 
  127. Claire Alkouatli (২০০৭)। Islam (ইংরেজি ভাষায়) (illustrated, annotated সংস্করণ)। Marshall Cavendish। পৃষ্ঠা 44আইএসবিএন 9780761421207 
  128. Tabari: Vol. 2, p. 518
  129. Islamic ethics, Encyclopedia of Ethics
  130. Watt, The Cambridge History of Islam, p. 34
  131. Esposito (1998), p. 30
  132. Watt, The Cambridge History of Islam, p. 52
  133. থানভী, আশরাফ আলি। নাশরুত তিব ফি জিকরিন নাবিয়্যিল হাবিব 
  134. Talk Of Napoleon At St. Helena'' (1903), pp. 279–280
  135. Brockopp, Jonathan E., সম্পাদক (২০১০)। The Cambridge Companion to Muhammad। Cambridge Companions to Religion। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-71372-6। ১৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৫ 
  136. Younos, Farid (২০১০)। Islamic Culture। Cambridge Companions to Religion (ইংরেজি ভাষায়)। AuthorHouse। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 978-1-4918-2344-6 
  137. Carlyle, Thomas (১৮৪১)। On heroes, hero worship and the heroic in history (ইংরেজি ভাষায়)। London: James Fraser। পৃষ্ঠা 87 
  138. Kecia Ali (২০১৪)। The Lives of Muhammad (ইংরেজি ভাষায়)। Harvard UP। পৃষ্ঠা 48। 
  139. Watt, Bell (1995) p. 18
  140. Watt (1974), p. 232
  141. Watt (1974), p. 17
  142. Watt, The Cambridge history of Islam, p. 37
  143. Lewis (1993), p. 45.
  144. Norman A. Stillman (১৯৭৯)। The Jews of Arab Lands: A History and Source Book। Jewish Publication Society। পৃষ্ঠা 236। আইএসবিএন 978-0-8276-0198-7 
  145. Ibn Warraq, Defending the West: A Critique of Edward Said's Orientalism, p. 255.
  146. Andrew G. Bostom, The Legacy of Islamic Antisemitism: From Sacred Texts to Solemn History, p. 21.
  147. Quinn, Frederick (২০০৮)। "The Prophet as Antichrist and Arab Lucifer (Early Times to 1600)"। The Sum of All Heresies: The Image of Islam in Western Thoughtবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনNew York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 17–54। আইএসবিএন 978-0-19-532563-8 
  148. Goddard, Hugh (২০০০)। "The First Age of Christian-Muslim Interaction (c. 830/215)"। A History of Christian-Muslim Relationsসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজন। Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 34–41। আইএসবিএন 978-1-56663-340-6 
  149. Curtis, Michael (২০০৯)। Orientalism and Islam: European Thinkers on Oriental Despotism in the Middle East and Indiaসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজনNew York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 31আইএসবিএন 978-0-521-76725-5 
  150. Quinn, Frederick (২০০৮)। "The Prophet as Antichrist and Arab Lucifer (Early Times to 1600)"। The Sum of All Heresies: The Image of Islam in Western Thoughtবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনNew York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 17–54। আইএসবিএন 978-0-19-532563-8 
  151. Curtis, Michael (২০০৯)। Orientalism and Islam: European Thinkers on Oriental Despotism in the Middle East and Indiaসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজনNew York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 31আইএসবিএন 978-0-521-76725-5 
  152. Quinn, Frederick (২০০৮)। "The Prophet as Antichrist and Arab Lucifer (Early Times to 1600)"। The Sum of All Heresies: The Image of Islam in Western Thoughtবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনNew York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 17–54। আইএসবিএন 978-0-19-532563-8 
  153. Curtis, Michael (২০০৯)। Orientalism and Islam: European Thinkers on Oriental Despotism in the Middle East and Indiaসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজনNew York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 31আইএসবিএন 978-0-521-76725-5 
  154. Quinn, Frederick (২০০৮)। "The Prophet as Antichrist and Arab Lucifer (Early Times to 1600)"। The Sum of All Heresies: The Image of Islam in Western Thoughtবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনNew York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 17–54। আইএসবিএন 978-0-19-532563-8 
  155. Goddard, Hugh (২০০০)। "The First Age of Christian-Muslim Interaction (c. 830/215)"। A History of Christian-Muslim Relationsসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজন। Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 34–41। আইএসবিএন 978-1-56663-340-6 
  156. Quinn, Frederick (২০০৮)। "The Prophet as Antichrist and Arab Lucifer (Early Times to 1600)"। The Sum of All Heresies: The Image of Islam in Western Thoughtবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনNew York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 17–54। আইএসবিএন 978-0-19-532563-8 
  157. Buhl, F.; Welch, A.T. (1993). "Muḥammad". Encyclopaedia of Islam. 7 (2nd ed.). Brill. pp. 360–376. আইএসবিএন ৯০-০৪-০৯৪১৯-৯.
  158. Quinn, Frederick (২০০৮)। "The Prophet as Antichrist and Arab Lucifer (Early Times to 1600)"। The Sum of All Heresies: The Image of Islam in Western Thoughtবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনNew York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 17–54। আইএসবিএন 978-0-19-532563-8 
  159. Goddard, Hugh (২০০০)। "The First Age of Christian-Muslim Interaction (c. 830/215)"। A History of Christian-Muslim Relationsসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজন। Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 34–41। আইএসবিএন 978-1-56663-340-6 
  160. Curtis, Michael (২০০৯)। Orientalism and Islam: European Thinkers on Oriental Despotism in the Middle East and Indiaসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজনNew York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 31আইএসবিএন 978-0-521-76725-5 
  161. Curtis, Michael (২০০৯)। Orientalism and Islam: European Thinkers on Oriental Despotism in the Middle East and Indiaসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজনNew York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 31আইএসবিএন 978-0-521-76725-5 
  162. Willis, John Ralph, সম্পাদক (২০১৩)। Slaves and Slavery in Muslim Africa: Islam and the Ideology of Enslavement1New York: Routledge। পৃষ্ঠা vii–xi, 3–26। আইএসবিএন 978-0-7146-3142-4 ; Willis, John Ralph, সম্পাদক (১৯৮৫)। Slaves and Slavery in Muslim Africa: The Servile Estate2New York: Routledge। পৃষ্ঠা vii–xi। আইএসবিএন 978-0-7146-3201-8 
  163. Gordon, Murray (১৯৮৯)। "The Attitude of Islam Toward Slavery"Slavery in the Arab WorldNew York: Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 18–47আইএসবিএন 978-0-941533-30-0 
  164. Dobbins, Mike (১৩ এপ্রিল ২০১৫)। "The Critics of Islam Were Right: An Apology to Ayaan Hirsi Ali, Sam Harris, Bill Maher and Other So-Called Islamophobes"The Christian PostWashington, D.C.। ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  165. Cimino, Richard (ডিসেম্বর ২০০৫)। ""No God in Common": American Evangelical Discourse on Islam after 9/11"Review of Religious Research47 (2): 162–74। জেস্টোর 3512048ডিওআই:10.2307/3512048 
  166. Akyol, Mustafa (১৩ জানুয়ারি ২০১৫)। "Islam's Problem With Blasphemy"The New York Times। ২৬ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  167. Cornwell, Rupert (১০ এপ্রিল ২০১৫)। "Ayaan Hirsi Ali: Islam's most devastating critic"The IndependentLondon। ২৭ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  168. "Rima Ariadaeus, a Linear Rille"। NASA। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৬Experts agree that Rima Ariadaeus, about 300 km (186.4 mi) long, is a fault system similar to those on Earth. 
  169. "Crack on moon confirms Prophet Muhammad (S) had split it | Jafariya News Network"www.jafariyanews.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৩ 
  170. Soora, Gayathri। "Split Moon image goes viral on WhatsApp; Fact Check | Digit Eye" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৩ 
  171. Bailey, Brad (২১ জুন ২০১০)। "Evidence of the moon having been split in two"Solar System Exploration Research Virtual Institute 

গ্রন্থপঞ্জী

আরও পড়ুন

বিশ্বকোষ

অনলাইন

বহিঃসংযোগ

সাধারণ

মুসলিম রচিত

আহ্মদীয়া রচিত

অমুসলিম রচিত