বিমল দাস
বিমল দাস | |
---|---|
জন্ম | ১৯৩৫ |
মৃত্যু | ২৭ জুলাই ২০০২ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
পেশা | চিত্রশিল্পী |
পরিচিতির কারণ | প্রচ্ছদ অলংকরণ |
দাম্পত্য সঙ্গী | আভা দাস |
পিতা-মাতা | যুগলকিশোর দাস (পিতা) ইন্দুমতী দেবী (মাতা) |
বিমল দাস (১৯৩৫ - ২৭ জুলাই ২০০২) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী, যিনি বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা প্রকাশনার জগতে বিশেষকরে শিশুসাহিত্যের পত্রিকা ও বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। [১]
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]বিমল দাসের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার আহিরীটোলায়। পিতা যুগলকিশোর দাস ও মাতা ইন্দুমতী দেবী। পৈতৃক বাড়ি হাওড়া জেলার সালকিয়ায়, কখনও সখনো থাকতেন বেলুড়ে। বাল্যকালে প্রথমদিকে কাগজ কেটে কেটে নানা রকম মুখোশ পশুপাখির আকৃতি বানাতেন। চোদ্দ বছর বয়স থেকেই বিমল শিল্পচর্চা শুরু করেন। [১] শিশুসাহিত্যিক শৈলেন ঘোষ ছিলেন তার স্কুলের বন্ধু। পড়াশোনা করতেন সালকিয়ার অ্যাংলো সংস্কৃত হাইস্কুলে। ছাত্রজীবনে দুই বন্ধু হাতে লেখা পত্রিকা 'হাতে খড়ি' বের করেন। তাতে বিমল দাসের আঁকা ছবি থাকত। [২] দারিদ্র্যতার জন্য তিনি ছবি আঁকার জন্য কোন শিক্ষকের কাছে প্রথাগত কোন শিক্ষা পান নি। শুধুমাত্র কোন কিছু দেখে দেখে পেন্সিল চালাতেন। স্বশিক্ষিত তিনি বালি'তে শিল্পী বিজন চৌধুরীর বাড়িতে কিছুদিন থাকার সুবাদে কালি কলমে ছবি আঁকাটা দেখতেন। ষোল বৎসর বয়সে ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় আনন্দমেলা বিভাগে প্রথম অলংকরণ প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে 'ন্যাশনাল টোবাকো কোম্পানি'র বিজ্ঞাপন বিভাগে সহকারী শিল্পী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই সময়ে সিগারেট প্যাকেটের সৌন্দর্য্যময় ডিজাইন ও শো-কার্ড অলংকরণে তিনি দশটির বেশি সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। [১][৩] ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে স্কুলের দুই বন্ধু শৈলেন ও বিমল দুজনে মিলে ‘মডার্ন ইন্ডিয়া প্রেস’ থেকে শিশু ও কিশোরদের সাপ্তাহিক পত্রিকা রবিবার এর প্রকাশনা শুরু করেন৷ নাম ‘রবিবার’৷ প্রায় একটানা দু’বছর চলেছিল পত্রিকাটি৷ প্রতিটি সংখ্যাতেই থাকতো বিমল দাসের আঁকা ছবি। ছবিগুলোতে বিমল গল্পের ইলাস্ট্রেশন করতেন না৷ ছবিগুলো দেখে গল্প লিখতেন শৈলেন ঘোষ৷ পত্রিকায় বিমল দাসের পরিচিতি ছাপা হত ‘শিল্পী সম্পাদক’ হিসাবে৷[২] ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে শৈলেন ঘোষের অরুণ বরুণ কিরণমালা প্রকাশিত হয় কলকাতার শৈব্যা প্রকাশনা হতে। তবে বিমল দাসের আঁকা ছবিতে প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে। তারপর থেকে শৈলেন ঘোষের 'মিতুল নামে পুতুলটি’, ‘বাগডুম সিং’, ‘জাদুর দেশে জগন্নাথ’, ‘ময়ূরকণ্ঠী রং’-সহ নানা লেখার সঙ্গে ছবি এঁকেছেন তিনি।[২] অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কানকাটা রাজার দেশ', লীলা মজুমদারের 'নতুন ছেলে নটবর', 'আরব্য উপন্যাসের গল্প', 'আবোল তাবোল', 'খাই খাই ', 'পাগলা দাশু' চিত্রায়ণ তাঁর সার্থক চিত্রকর্ম।[১] আরব্য উপন্যাসের গল্প বইয়ের অলংকরণের জন্য তিনি 'শিশু সাহিত্য সংসদ' থেকে পুরস্কার পান। [৩] দিল্লির প্রগতি ময়দানটিকে সুসজ্জিত করতে ও মডেলিং করতে তিনি শিল্পী সুনীল পালের সহকারি ছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কলকাতা বইমেলায় 'নির্মল বুক এজেন্সি'র ডেকরেশন করেন। ১৯৭৯-৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৯৫-৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা, দেশ, আনন্দমেলা সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও বইয়ের প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ করেন। আনন্দমেলা'য় শিশুদের জন্য বেশ কিছু প্রচ্ছদ করেন। তিনি অসংখ্য পোর্ট্রেট এঁকেছিলেন, যেগুলি এতটাই জীবন্ত, যে দেখলে মনে হয় আসল আলোকচিত্র। দেশ পত্রিকার সুকুমার রায় স্মরণ সংখ্যায় প্রচ্ছদে সুকুমার রায়ের যে ছবি তিনি এঁকেছিলেন, তাতে সত্য জিৎ রায় মুগ্ধ হন। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের গল্প ও তরুণ মজুমদারের চিত্রনাট্য অবলম্বনে চারটি সদাশিব চিত্রকাহিনী বিমল দাসের স্মরণীয় চিত্রকর্ম। এর আগে আনন্দমেলা'র তরফ থেকে তিনি পুনে যান সদাশিব কমিক্সের লোকেশন পর্যালোচনা করার জন্য।
বিমল দাস পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া সিরিজের অনেক গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকে প্রশংসা পেয়েছেন।[১]
এছাড়াও, বুদ্ধ সম্পর্কে তার তৈরি ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৪ ফুট প্রস্থের তিনটি ম্যুরাল বুদ্ধের জরাদর্শন, বুদ্ধ ও সুজাতা এবং বুদ্ধের মন্ত্রদান দর্শনীয় হয়ে আছে। [১]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুলাই অসামান্য দক্ষ শিল্পী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৬২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ ক খ গ "ঘরানা ইউরোপিয় স্বাদের খাঁটি বাঙালি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-২৭।
- ↑ ক খ গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বদেব (সম্পাদক) (২০১৫)। কমিক্স ও গ্রাফিক্স ১। বুক ফার্ম, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৬৯ ও ৭৩।