বিভূতিভূষণ সরকার (বিপ্লবী ও শিল্পোদ্যোগী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিভূতিভূষণ সরকার

'বিভূতিভূষণ সরকার' (২ মে ১৯১৭ - ২২ জানুয়ারি ১৯৭২) একজন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শিল্পোদ্যোগী। তিনি কৃষ্ণা গ্লাস ওয়ার্কস শিল্পসংস্থার প্রতিষ্ঠাতা।[১]

বিভূতিভূষণ সরকার ১৯১৭ সালের ২ মে চট্টগ্রামের রাউজান থানার চিকদাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১][২]

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিপ্লব সংগঠিত হয়। বিভূতিভূষণের তখন মাত্র ১৩ বছর বয়স। কিন্তু এই বয়সেই তিনি বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগের কারণে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হন। তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বার্মার আকিয়াব প্রদেশের থারওয়াডি জেলে বন্দী হন। কারাগার থেকে তিনি আসন্ন ম্যাট্রিক পরীক্ষার প্রস্ততি নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কর্তৃপক্ষ কারাগারে তাকে পড়াশোনার সুযোগ দানে অস্বীকার করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার দুই মাস আগে তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। তিনি এরপর আইএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয়, বিএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনীতে প্রথম এবং এমএসসিতে প্রথম শ্রেনীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি আইসিএস পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যোগ থাকার জন্য তাকে ব্রিটিশ সরকার পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়নি।[১][৩]

এরপর বিভূতিভূষণ সরকার শিল্পোদ্যোগী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় চলে আসেন এবং দক্ষিণ কলকাতার একজন বিখ্যাত ডাক্তারের কন্যা কৃষ্ণাকে বিবাহ করেন।[১][৩]

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৬ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে কলকাতার যাদবপুরে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। তার স্ত্রীর নামে এই সংস্থাটির নাম হয় 'কৃষ্ণা গ্লাস ওয়ার্কস'। তার পরিচালনায় কৃষ্ণা গ্লাস ওয়ার্কস একটি বড় কাঁচ পাত্র উৎপাদনকারী সংস্থাতে পরিণত হয়। ষাটের দশকের শেষের দিকে এটি ভারতের অন্যতম কাঁচশিল্পের মর্যাদা লাভ করে। সেই সময় যাদবপুর, বারুইপুর ও মুম্বাইতে কৃষ্ণা গ্লাস ফ্যাক্টরির তিনটি শাখা শুরু হয়। এগুলিতে প্রায় ২৫০০ কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। তিনি অল ইন্ডিয়া গ্লাস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং রপ্তানি উন্নয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দক্ষিণ কলকাতা রোটারি ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন।[১]

বিভূতিভূষণ সরকার দুই পুত্র এবং এক কন্যার পিতা। তার এক পুত্র ডাঃ কুনাল সরকার প্রতিষ্ঠিত হৃৎপিণ্ড শল্যচিকিৎসক।[১][৩]

বিভূতিভূষণ সরকার ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মারা যান।[১][৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]