বিজয় দিবস (বাংলাদেশ)
এই নিবন্ধের সঙ্গে বিজয় দিবস (ভারত) নিবন্ধটি একীভূত করার প্রস্তাব করা হলো। (আলোচনা করুন) প্রস্তাবের তারিখ: জুন ২০২৫। |
| বিজয় দিবস | |
|---|---|
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিজয় দিবস উদযাপন | |
| পালনকারী | বাংলাদেশ ও ভারত |
| ধরন | জাতীয় দিবস |
| তাৎপর্য | পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি |
| উদযাপন | পতাকা উত্তোলন, সকল বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও প্যারেড, দেশাত্মবোধক গান ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, শহীদদের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। |
| তারিখ | ১৬ ডিসেম্বর |
| পরবর্তী আয়োজন | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ |
| সংঘটন | বার্ষিক |
| সর্বপ্রথম | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ |
| সূচনাকারী | বাংলাদেশ সরকার |
| সম্পর্কিত | স্বাধীনতা দিবস |
বিজয় দিবস বাংলাদেশ ও ভারতে বিশেষ দিন হিসেবে পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।[১] নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।[২] এর ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
এ উপলক্ষ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন।
পটভূমি
[সম্পাদনা]
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে উপস্থিত রাখা হয়নি। অনেকের ভাষ্যমতে ভারত সরকারের বাধার কারণে জেনারেল ওসমানী আত্নসমর্পন অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ:[৩]
পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।
এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সকল দেশ স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।[৪]
উদযাপন
[সম্পাদনা]
১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ, গণমাধ্যম ইত্যাদিতে বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া, দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ, বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু ঘটনা
[সম্পাদনা]- ১৯৭১: স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।[৫]
- ১৯৭২: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান প্রকাশিত হয়।[৬]
- ১৯৭২: ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গ্যাজেটের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব ঘোষণা করা হয়।[৭]
- ১৯৯৬: ২৫ বছর পূর্তি উৎসব করা হয়।
- ২০১৩: জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭,১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল এবং সবুজ ব্লক নিয়ে একত্রে জড়ো হয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড করে।[৮]
- ২০২১: ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হয়।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মিকোয়ান মিগ-২৯ এবং চেংদু এফ-৭ জাতীয় কুচকাওয়াজের সময় উড়ে যাচ্ছে।
- বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মার্চ করছে।
- বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
- বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ উপকূলরক্ষী বাহিনী মার্চ করছে।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধে লোকজন ফুল দিতে যাচ্ছে।
- একটি বিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান।
- পেট্রোবাংলার ভবন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
- ঢাকার কদম ফোয়ারা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "মহান বিজয় দিবস আজ"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "আত্মসমর্পণের দলিল"। প্রথম আলো। ২৫ মার্চ ২০১১। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}:|archive-date=/|archive-url=টাইমস্ট্যাম্প মেলেনি; 15 ডিসেম্বর 2017 প্রস্তাবিত (সাহায্য) - ↑ "The Recognition Story"। Bangladesh Strategic and Development Forum। ২৫ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১১।
- ↑ মজিদ, মোহাম্মদ আবদুল (২০১২)। "বাংলাদেশ ব্যাংক"। ইসলাম, সিরাজুল; জামাল, আহমেদ (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া (দ্বিতীয় সংস্করণ)। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।
- ↑ আহমদ, এমাজউদ্দীন (২০১২)। "সাংবিধানিক ক্রমবিকাশ"। ইসলাম, সিরাজুল; জামাল, আহমেদ (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া (দ্বিতীয় সংস্করণ)। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।
বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২ ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান একটি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন।
- ↑ শেখ মুজিবুর রহমান: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৩০০
- ↑ "মানব পতাকা গড়ে গিনেস বুকে বাংলাদেশ"। দৈনিক প্রথম আলো। ৪ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]| বাংলাদেশের স্বাধীনতা |
|---|
| ধারাবাহিকের একটি অংশ |
| ঘটনাবলী |
| সংগঠন |
| ব্যক্তিত্ব |
| সম্পর্কিত |
|
|