বিকার (পরীক্ষাগার সামগ্রী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিকার
নানান আকৃতির বিকার।
ব্যবহারতরল পদার্থের আয়তন পরিমাপ
এবং বিভিন্ন তরল পদার্থের সংমিশ্রন।
সম্পর্কযুক্তগবেষণাগারে ব্যবহৃত ফ্লাস্ক।

বিকার হল পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত একটি অন্যতম সামগ্রী। বিকার সাধারণত একটি চোঙ আকৃতির পাত্র যার তলদেশ সমতল হয়।[১] বেশিরভাগ বিকারের মুখের কাছে একটি চঞ্চু আকৃতির ব্যাকা ছোট অংশ থাকে যা বিকারের মধ্যস্থিত তরল পদার্থকে ঠিকঠাক পরিমান মতো ঢালার কাজে সহায়ক হয়। মিলিমিটার থেকে শুরু করে কয়েক লিটার অবধি বিভিন্ন আয়তনের বিকার পাওয়া যায়। বিকার ও ফ্লাস্কের মধ্যে মূল পার্থক্য এই যে, বিকারের গাত্রদেশ সম্পূর্ণ সমান হয় কিন্তু ফ্লাস্কের গাত্রদেশে ঢালু অংশ থাকে। এর একমাত্র ব্যাতিক্রম হল ফিলিপ্স -এর বিকার যার গাত্রদেশে সামান্য শঙ্কু আকৃতির অংশ থাকে। সাধারণ পানীয়র জন্য ব্যবহৃত বিকারের আকৃতি প্রায় একই রকম হয়।

বিকার সাধারনত কাচের, বিশেষ করে বোরোসিলিকেট জাতীয় কাচের তৈরি হয়।[২] কিন্তু কখনো কখনো স্টেনলেস্‌ স্টিল বা অ্যালুমিনিয়াম -এর তৈরি বিকারও দেখা যায়। পলিথিন, প্রোপিলিন বা পিটিএফই জাতীয় পদার্থও বিকার প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয়। কঠিন ও তরল পদার্থের গামা বর্ণালী বিশ্লেষণ করার সময় পলিপ্রোপিলিনের তৈরি বিকার ব্যবহার হয়। সাধারণত বিকারের ব্যবহার হয় তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপ করতে এবং বিভিন্ন তরল পদার্থকে মিশ্রিত করতে।

নির্মাণ ও ব্যবহার[সম্পাদনা]

(A) শ্রেণিভুক্ত গ্রিফিন বিকার
(B)বি শ্রেণিভুক্ত গ্রিফিন বিকার
(C) সি শ্রেণিভুক্ত গ্রিফিন বিকার

গবেষণাগারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির নির্ধারিত মান অনুযায়ী বিভিন্ন রকম বিকার ব্যবহার হয়। পাশের চিত্র অনুযায়ী, লো ফর্ম বা নিম্ন মানের বিকারগুলিকে শ্রেণিভুক্ত করা হয় এবং এদের উচ্চতা এদের নিজস্ব ব্যাসার্ধের প্রায় ১.৪ গুন হয়।[২] চঞ্চু আকৃতির অংশ সহ বিকারের সাধারণ আকৃতিটি জন জোসেফ গ্রিফিনের তৈরি তাই একে গ্রিফিন বিকারও বলা হয়।[৩][৪] বর্ত‌মানে গ্রিফিন দ্বারা নির্দেশিত বৈশিষ্ট্য অনুসরন করে যে বিকার তৈরি হয় তাই সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন তরলের মিশ্রণ ঘটিয়ে দ্রবণ প্রস্তুতি থেকে শুরু করে অন্যন্য অনেক কাজে যেমন কিছু বিশেষ বর্জ্য তরল পদার্থকে বাতিল করার আগে তাদের পরিমাপ করে তাদের সাহায্যে কিছু সাধারণ বিক্রিয়া ও পরীক্ষা করার কাজে বিকারের ব্যবহার হয়। নিম্ন মানের বিকার সাধারণত পরীক্ষাগারে রাসায়নিক বিশ্লেষণ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার কাজে ব্যবহার হয়।

পাশের চিত্র অনুযায়ী, টল ফর্ম না উচ্চ মানের বিকারগুলিকে বি শ্রেণিভুক্ত করা হয় এবং এদের উচ্চতা এদের নিজস্ব ব্যাসার্ধের প্রায় ২ গুন হয়।[২] এই বিকারগুলিকে বার্জে‌লিয়াস বিকার নামেও অভিহিত করা হয়। এই শ্রেণিভুক্ত বিকারগুলি সাধারণত টাইট্রেশন-এর সময় ব্যবহৃত হয়।[৪]

চিত্র অনুযায়ী, সি শ্রেণিভুক্ত বিকারগুলিকে সমতল বিকার বা ফ্ল্যাট বিকার নামে অভিহিত করা হয়। এই প্রকার বিকারগুলি সাধারণত স্ফটিককরণের কাজে বেশি ব্যবহার হয়। এছারাও এগুলি প্রায়শই হট-বাথ -এ উত্তপ্ত করার কাজে পাত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই বিকারগুলি সাধারণত ফ্ল্যাট স্কেল যুক্ত হয়না।

বিকারের মুখে যদি চঞ্চু আকৃতির অংশ থাকে তাহলে তার আবরন থাকা সম্ভব নয়। যাইহোক, ব্যবহারের সময়, বিকারের মধ্যবর্তী তরলকে পারিপার্শ্বি‌ক‌ পরিবেশের দূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ একটি কাচ দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয় তবে তার সঙ্গে সঙ্গে চঞ্চু আকৃতির অংশের মাধ্যমে সামান্য বাস্পিভবনের জায়গা থাকে যা বিকারে স্থিত তরলের জন্য জরুরী। বিকল্পভাবে, একটি বিকারের মুখের উপর আরও বড় আকারের অন্য কোনো বিকারকে উল্টো করে বসিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করা যেতে পারে, তবে এই কাজের জন্য কাচের ব্যবহার করাই উপযুক্ত।

বিকারের গায়ে কখনও কখনও সমান ব্যবধানে সংখ্যাযুক্ত লাইন টানা থাকে যা বিকারের মধ্যবর্তী তরলের আয়ত্ন পরিমাপ করতে ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ একটি ২৫০ মিলি আয়তনের বিকারের গায়ে ৫০,১০০,১৫০,২০০ এবং ২৫৯ মিলি. আয়তনের পরিমাপ নির্দেশকারী লাইন চিহ্নিত থাকে। বেশিরভাগ বিকার সঠিক পরিমাপের মান ১০% এর মধ্যে থাকে।

মানদণ্ড[সম্পাদনা]

ডিআইএন ইএন দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী নিম্নলিখিত আকার ও প্রকারের বিকার দেখা যায়, [৫]

প্রকার নামমাত্র পরিমাণ
(মিলি.)
বাহিরের ব্যাসার্ধ
(মিমি.)
+/- ৫ %
ঊচ্চতা
(মিমি.)
সর্বোচ্চ মাত্রা
গাত্রদেশের পুরুতা
(মিমি.)
সর্বনিম্ন.
লো হাই বিকার ২২ ৩২ ০.৭
১০ ২৬ ৩৭ ০.৭
২৫ ৩৪ ৫২ ০.৭
৫০ ৪২ ৬২ 0.8
১০০ ৫০ ৭২ ০.৯
১৫০ ৬০ ৮২ ১.০
২৫০ ৭০ ৯৭ ১.১
৪০০ ৮০ ১১৩ ১.২
৫০০ ৮৫ ১১৮ ১.৩
৬০০ ৯০ ১২৮ ১.৩
৮০০ ১০০ ১৩৮ ১.৩
১০০০ ১০৫ ১৪৮ ১.৩
২০০০ ১৩০ 1৮৮ ১.৪
৩০০০ ১৫০ ২১৪ ১.৭
৫০০০ ১৭০ ২৭৪ ২.০
১০০০০ ২২০ ৩৬০ ২.০
হাই বিকার ৫০ ৩৮ ৭২ ০.৮
১০০ ৪৮ ৮২ ০.৯
১৫০ ৫৪ ৯৭ ১.০
২৫০ ৬০ ১২৩ ১.১
৪০০ ৭০ ১৩৩ ১.২
৫০০ ৭৯ ১৪০ ১.৩
৬০০ ৮০ ১৫৩ ১.৩
৮০০ ৯০ ১৭৮ ১.৩
১০০০ ৯৫ ১৮৩ ১.৩
২০০০ ১২০ ২৪৪ ১.৪
৩০০০ ১৩৫ ২৮৪ ১.৭
৫০০০ ১৬০ ৩২৪ ২.০
পুরু গাত্রদেশ যুক্ত ১৫০ ৬০ ৮২ ১.১১১১১১
২৫০ ৭০ ৯৭ ১.২
৪০০ ৮০ ১১১ ১.৪
৬০০ ৯০ ১২৭ ১.৪
১০০০ ১০৫ ১৪৭ ১.৪
২০০০ ১৩২ ১৮৭ ১.৫
৫০০০ ১৭০ ২৭৫ ২.৫


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Oxford English Dictionary 1989 edition
  2. British Standard 6523 (1984) Glass beakers for original experiments use
  3. A. I. Vogel (1974) Practical Organic Chemistry Third edition (Longman, London) page 46 আইএসবিএন ০-৫৮২-৪৪২৪৫-১
  4. Chemistry World August 2011 Classic kit: Griffin's Beaker
  5. ISO 3819:2015-12