বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা বলতে বুঝায় একটি সমাজের মধ্যে সামাজিক ও পরিবেশগত পুনরুত্থান বা পুনর্জাগরণ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক অবিচার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গে ছে যে পরিবেশগত নীতির উপর ভিত্তি করে মানবিক সভ্যতায় পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।আরো বিস্তৃতভাবে বললে বলা যায় বাস্তুতান্ত্রিক সভ্যতা বলতে বুঝায় টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত, কৃষিজ এবং গোটা সমাজব্যবস্থার পুনরুত্থান বা নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা।[১]

যদিও এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৮০ সালে, কিন্তু এটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে ২০০৭ সালে যখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম একটি মুখ্য উদ্দেশ্যে পরিণত হয় “বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা”।[২][৩] ২০১৪ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘের সভ্যতা বিষয়ক জোট এবং আন্তর্জাতিক বাস্তুসংস্থানিক সংরক্ষণ বিষয় সহযোগিতা সংস্থা বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা বিষয়ক একটি উপকমিটি গঠন করে ।[৪] পোপ ফ্রান্সিস লিখেছিলেন,”আমরা মানুষ জাতি শুধু ২টি দুর্দশা - পরিবেশগত এবং সামাজিক দুর্দশায় ভুগছিনা বরং আরো জটিল সামাজিক এবং পরিবেশগত দুর্দশায় ভুগে চলেছি । তাই আমাদের  একইসাথে দারিদ্র্য হ্রাস, নিপীড়িতের সম্মান ফেরানো এবং একই সাথে পরিবেশকে রক্ষার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ।”[৫] পোপের এই বক্তব্যের সাথে বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতার প্রবক্তারা সহমত পোষণ করেছেন।এইজন্য বাস্তুতান্ত্রিক সভ্যতা দীর্ঘমেয়াদি এবং পরিকল্পনামাফিক সামাজিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে আসছে।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিবেশবিদরা তাদের একটি "পূর্ণাঙ্গ সামাজিক নীতিভিত্তিক বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা প্রশিক্ষণের উপায়" শীর্ষক নিবন্ধে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করে যা পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক কমিউনিজম, মস্কো, ভলিউম ২-এ প্রকাশিত হয়।[৬]

৩ বছর পরে এই ধারণা (চাইনিজ: 生态文明; পিনিন: shēngtài wénmíng) নিয়ে আবির্ভূত হয় চীন এবং কিয়াঞ্জি ইয়ে ,একজন কৃষি অর্থনীতিবিদ(১৯০৯-২০১৭)[৬]পরিবেশ বিজ্ঞান এবং পরিবেশগত দর্শনতত্ত্ব এর উপর ভিত্তি করে ১৯৮৭ সালে এই শব্দটি ব্যবহার করেন।[৭]

১৯৯৫ সালে কারিগরি শব্দ হিসাবে প্রথমবার ইংরেজি ভাষার বই এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।[৮]

২০০৭ সালের শুরুর দিকে এটি আরো বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।[২][৩] ২০১২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিসি) বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা অর্জনকে তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হিসাবে তাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে।[১][৯] চীনের পরিপ্রেক্ষিতে এই শব্দটি মূলত গঠনমূলক উত্তর আধুনিকতাবাদ কে সমর্থন করে এবং এটি অতি আধুনিকতাবাদের বা উত্তর আধুনিকতাবাদ বিনির্মাণের বিরোধিতা করে যার উৎপত্তি ঘটে জাকুজ ডেরিদ্দা র বিনির্মাণ শব্দ থেকে।[১]

বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা এবং গঠনমূলক উত্তর আধুনিকতাবাদ এই দুটি শব্দই আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেডের দর্শনতত্ত্বকে সমর্থন করে।[১][১০] ক্লারেমন্ট স্কুল অফ থিওলজির প্রভাষক এবং দার্শনিক ডেভিড রে গ্রিফিন তার বই ভারিয়েটিজ অফ পোস্ট মডার্ন থিওলজিতে উত্তর আধুনিকতাবাদ প্রথম ব্যবহার করেন।[১১] আরো বেশি নিরপেক্ষ ধারণা ফুটে উঠে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বিষয়ক দার্শনিক অ্যারেন গরের বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি: ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক বইয়ে।[১২]

২০১৫ সালের জুনে পোমনা কলেজে বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতার(বিকল্প উদঘাটন:বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতার দিকে) উপর বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যাতে বিশ্বের প্রায় ২০০০ প্রতিযোগী এবং পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র বিল মসিকিববেন, ভান্দনা শিভা,জন বি কব্, জে আর ওয়েস জ্যাকসন এবং শেরি লিও সহ অনেকে অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে।[১৩] বার্ষিক সম্মেলনের অংশ হিসাবে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত , ক্লারেমনট সি এ  এবং নবম বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা আন্তর্জাতিক সভ্যতার উদ্যোগে এটি অনুষ্ঠিত হয়।[১৪]

বিকল্প অনুসন্ধানমূলক সম্মেলনে ফিলিপ ক্লায়টন এবং ডব্লিউ এম অ্যান্ড্রু শোয়ার্টজ বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন এবং দুজনে মিলে হয় রচনা করেন "বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতা কি: দুর্দশা, আশা এবং গ্রহের ভবিষ্যৎ" [১৫] নামক যা ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় ।

মার্ক্সিসম এর জৈব রূপ হিসাবে ২০১৫ থেকে বাস্তুসংস্থানিক সভ্যতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।[১] জৈব মার্ক্সিসম ফিলিপ ক্লেটন এবং জাস্টিন হেইঞ্জেকেহর তাদের ২০১৪ সালে প্রকাশিত বই ,জৈব মার্ক্সিসম:পুঁজিবাদ এবং পরিবেশগত দুর্দশার বিকল্প বইয়ে প্রথম ব্যবহার করেন।[১৬] এ বইটি ২০১৫ সালে চাইনিজ ভাষায় পিপলস প্রেস প্রকাশ করে এবং এ বইয়ে বাস্তুতান্ত্রিক সভ্যতাকে বাস্তুসংস্থানিক আন্দোলনের মূললক্ষ্য হিসাবে ধরা হয় ।[১৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Zhihe Wang, Huili He, and Meijun Fan, "The Ecological Civilization Debate in China: The Role of Ecological Marxism and Constructive Postmodernism—Beyond the Predicament of Legislation", last modified 2014, Monthly Review, accessed November 1, 2016.
  2. James Oswald, "China turns to ecology in search of ‘civilisation’", last modified August 3, 2016, Asian Studies Association of Australia, accessed November 1, 2016.
  3. Zhang Chun, "China's New Blueprint for an 'Ecological Civilization'", last modified September 30, 2015, The Diplomat, accessed November 1, 2016.
  4. Zhu Guangyao, "Ecological Civilization: A national strategy for innovative, concerted, green, open and inclusive development" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ মে ২০১৯ তারিখে, last modified March 2016, United Nations Environment Programme, accessed November 1, 2016.
  5. Francis, Pope। Laudato Si': On Care for Our Common Home। পৃষ্ঠা Ch 4, #139। 
  6. Arran Gare, "Barbarity, Civilization and Decadence: Meeting the Challenge of Creating an Ecological Civilization" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে, in Chromatikon V: Yearbook of Philosophy in Process, ed. Michel Weber and Ronny Desmet (Louvain-la-Neuve: Presses universitaires de Louvain, 2009): 167.
  7. Jiahua Pan, China's Environmental Governing and Ecological Civilization (Heidelberg: Springer-Verlag GmbH, 2016), 35.
  8. Jiahua Pan, China's Environmental Governing and Ecological Civilization (Heidelberg: Springer-Verlag GmbH, 2016), 34.
  9. John B. Fullerton, "China: Ecological Civilization Rising?", last modified May 2, 2015, Huffington Post, accessed November 1, 2016.
  10. Cobb, Jr., John B.; Scwhartz, Wm. Andrew (২০১৮)। Putting Philosophy to Work: Toward an Ecological Civilization। Minnesota: Process Century Press। আইএসবিএন 978-1940447339 
  11. John B. Cobb, Jr., "Constructive Postmodernism" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০৮-০৮ তারিখে, 2002, Religion Online, accessed November 1, 2016. See David Ray Griffin, William A. Beardslee, and Joe Holland, Varieties of Postmodern Theology (Albany, State University of New York Press, 1989)
  12. Arran Gare: "The Philosophical Foundations of Ecological Civilization: A Manifesto for the Future" (Routledge, 2016)
  13. Herman Greene, "Re-Imagining Civilization as Ecological: Report on the 'Seizing an Alternative: Toward an Ecological Civilization' Conference" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে, last modified August 24, 2015, Center for Ecozoic Societies, accessed November 1, 2016.
  14. "CONFERENCE LIST"postmodernchina.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-২৪ 
  15. Philip Clayton and Wm. Andrew Schwartz (২০১৯)। What is Ecological Civilization?: Crisis, Hope, and the Future of the Planet। Anoka, Minnesota। আইএসবিএন 978-1-940447-41-4ওসিএলসি 1112736444 
  16. "Spotlight: Organic Marxism, China's ecological civilization drive in spotlight at int'l conference", last modified May 1, 2016, Xinhua News Agency, accessed November 1, 2016. See Philip Clayton and Justin Heinzekehr, Organic Marxism: An Alternative to Capitalism and Ecological Catastrophe (Claremont: Process Century Press, 2014).
  17. Philip Clayton and Justin Heinzekehr, Organic Marxism: An Alternative to Capitalism and Ecological Catastrophe, trans. Xian Meng, Guifeng Yu, and Lixia Zhang (Beijing: The People's Press, 2015).

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]