বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৬°৬′০″ উত্তর ৮৮°১৬′৩০″ পূর্ব / ২৬.১০০০০° উত্তর ৮৮.২৭৫০০° পূর্ব / 26.10000; 88.27500
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বালিয়াডাঙ্গি উপজেলা থেকে পুনর্নির্দেশিত)
বালিয়াডাঙ্গী
উপজেলা
মানচিত্রে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা
মানচিত্রে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৬°৬′০″ উত্তর ৮৮°১৬′৩০″ পূর্ব / ২৬.১০০০০° উত্তর ৮৮.২৭৫০০° পূর্ব / 26.10000; 88.27500 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাঠাকুরগাঁও জেলা
আয়তন
 • মোট২৮৪ বর্গকিমি (১১০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট২,০৩,৭৭৬জন[১]
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৮%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৯৪ ০৮
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

বালিয়াডাঙ্গী বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

রংপুর বিভাগের অন্তর্গত ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলা বালিয়াডাঙ্গীর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গপঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলা, দক্ষিণে রানীশংকৈল উপজেলা, পূর্বে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলা। এই উপজেলা ২৫°৫৯' উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৬°১২' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১০' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ হতে ৮৮°২২' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। মোট আয়তন- ৭০১৯০ একর।

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

এই উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। সেগুলো হচ্ছে ১. পাড়িয়া, ২. চাড়োল, ৩. ধনতলা, ৪. বড়পলাশ বাড়ী, ৫. দুওসুও, ৬. ভানোর, ৭. আমজানখোর ও ৮. বড়বাড়ি ইউনিয়ন

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তীরনই নদীর বুক চিরে গড়ে উঠে এই উপজেলা । নদীর পশ্চিম তীরে ছিল জমিদারগণের আবাস। অনেকের মতে জমিদারগণ তাদের নিরাপত্তার জন্য ১৯০৮ সালে বর্তমান পাইলট স্কুলের উত্তর পার্শ্বে নদীর ধারে একটি পুলিশ ফাঁড়ির ব্যবস্থা করেন। এই পুলিশ ফাঁড়ী কালক্রমে বর্তমান স্থানান্তরিত হয়ে একটি স্বতন্ত্র থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে এই থানা উপজেলায় রুপান্তরিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লাহিড়ীহাটে জমিদারদের স্বেচ্ছাচারমূলক তোলা আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষকগণ সংগঠিত হন, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে "তোলাবাটি" আন্দোলন নামে খ্যাত হয়। এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানের দায়ে গ্রেফতারবরন করেন এবং তিনমাস বন্দী জীবন কাটান কৃষক নেতা কম্পরাম সিং। তোলাবটি আন্দোলন শেষ না হতেই সমগ্র উত্তরবঙ্গের সাথে বালিয়াডাঙ্গী বর্গা চাষীদের তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং কম্পরাম সিং সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন।[২]

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় কোথাও কোথাও দো-আঁশ মাটি পাওয়া গেলেও অধিকাংশ মাটিই বেলে মাটি। এ মাটিতে তেমন ভাল ফসল হতো না। কেবল কচু, বেগুন, আখ ইত্যাদি উৎপন্ন হতো ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বালিয়াডাঙ্গী মৌজায় থানা ও বর্তমান উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় থানার নামও হয়েছে বালিয়াডাঙ্গী।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মুক্তিযুদ্ধে বালিয়াডাঙ্গি[সম্পাদনা]

২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর বাঁধ ভাঙ্গা আহক্ষানে বাংলার আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বালিয়াডাঙ্গীর দামাল ছেলেরাও থেমে থাকেনি। ১৩ই এপ্রিল ১৯৭১ তাঁরা ভারতের ইসলামপুর জেলার অন্তর্গত ঠাকুর বাড়ী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প তৈরী করেন। প্রথমে ৩১৫ জন নিয়ে একটি দল গঠিত হয়। দলটি পরিচালনা করেন মিত্র বাহিনীর কাপ্টেন সুবাস চন্দ্র। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর সদর উদ্দিন। ৬নং সেক্টরের ক শাখায় তাঁরা অন্তর্ভূক্ত ছিল। বালিয়াডাঙ্গীতে মোট ৪টি গ্রুপ ছিল। পার্টি কমান্ডার ছিলেন : ১। জনাব আব্দুল মান্নান, ২। জনাব তরিকুল ইসলাম, ৩। মো: রেসাল উদ্দিন ও ৪। জনাব সাখাওয়াত হোসেন। ঠাকুর বাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন মো: রেসাল উদ্দিন (সিরিয়াল নং-১৯)।  সর্বপ্রথম পাক বাহিনী হরিনমারীতে আক্রমণ করে। এরপর খোকসা, কুশলডাঙ্গী, রায়মহল, গুঞ্জুরা এলাকায় পর্যায়ক্রমে আঘাত আনে। পাক বাহিনীর ক্যাম্প ছিল খোচাবাড়ী, দোলুয়া, লাহিড়ী, মোড়ল হাটে। আর্মি ক্যাম্পের হেড কোয়ার্টার ছিল বালিয়াডাঙ্গীতে। পাক বাহিনী বালিয়াডাঙ্গীতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নিষ্পেষন চালায়। বালিয়াডাঙ্গীতে মোট মুক্তিযোদ্ধা ২৫০ জন (সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী)। বালিয়াডাঙ্গীতে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১৬১ জন (সূত্র : সমাজ সেবা অধিদপত্মর, বালিয়াডাঙ্গী)। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা বালিয়াডাঙ্গীবাসী চিরকাল কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ[সম্পাদনা]

হরিণমারীর ঐতিহ্যবাহী সূর্যপুরী আমগাছ

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাচীন নিদর্শন ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ; উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছেঃ

  • হরিণমারীর ঐতিহ্যবাহী সূর্যপুরী আমগাছ;
  • সনগাঁও তিনগম্বুজ শাহী মসজিদ;
  • ফতেহপুর তিনগম্বুজ মসজিদ;
  • হরিণমারী হাট শিবমন্দির;
  • ইমামবাড়া;
  • সর্বমঙ্গলা জামে মসজিদের শিলালিপি;
  • গড়খাঁড়ি দুর্গ;
  • সনগাঁও দুর্গ;
  • উদয়পুর মোহনাশ্রম;
  • চাড়োল তিন গম্বুজ মসজিদ;
  • ভবানী বাবুর জমিদার বাড়ি;
  • রূপগঞ্জের জমিদার বাড়ির;
  • আধারদিঘি ও আধারদিঘির মেলা;
  • বামুনিয়া পীর সাহেবের মাজার।

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,০৩,৭৭৬। এই উপজেলার প্রচুর মানুষ জীবিকার তাগিদে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে,যা ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

শিক্ষার হার[সম্পাদনা]

জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ অনুসারে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার শিক্ষার হার ৭০.৯৫% ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা [১][সম্পাদনা]

প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩১
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫
কলেজ ৩ টি
কারিগরি কলেজ ৩ টি।
ফাজিল মাদ্রাসা ২ টি।
দাখিল মাদ্রাসা ১৭
কারিগরি  স্কুল স্বতন্ত্র-০২টি, সংযুক্ত- ৪টি

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

কৃষি মূলত এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। ৯৫% ভাগ মানুষ কৃষিতে নির্ভরশীল।

নদীসমূহ[সম্পাদনা]

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় চারটি নদী রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে নাগর নদী, কুলিক নদী, নোনা নদী, তীরনই নদীআমনদামন নদী[৩][৪]

ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী[সম্পাদনা]

আবহমান কাল ধরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে আসছে। বিশ্রামপুর, পাড়িয়া, ধনতলা, মধুপুর গ্রামে রয়েছে প্রায় ৩৭টি পরিবারের বসাবাস। এদের রয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে লালিত নিজস্ব জীবনধারা ও বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। জীবন ও জীবিকার প্রধান উপায় কৃষিকাজ। নারী ও পুরুষ উভয়ই কর্মঠ এবং মাঠে কাজ করে থাকে। প্রধান খাদ্য ভাত। মাছ, শূকর, ইঁদুর, কাঁকড়া, কাঠবিড়ালী গুইসাপ ইত্যাদি তাদের প্রিয় খাদ্য । সাঁওতালেরা মদ্যপানে অভ্যস্থ এবং বিভিন্ন উৎসবে মদ্যপান করে থাকে। বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে নাচ-গান করে থাকেন। সাঁওতালদের প্রধান উৎসবের মধ্যে রয়েছে সোহ্রাই উৎসব, মাঘসিম উৎসব ও বসমত্ম উৎসব।

উপজেলার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ[সম্পাদনা]

১. চা শিল্প

বালিয়াডাঙ্গী একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা। উত্তর সীমান্তে নাগর নদী সংলগ্ন ভারতের তীর জুড়ে চা বাগান রয়েছে। একই ধরণের মাটির বৈশিষ্ট্য গুণাগুণ ও আবহাওয়া বিরাজ করায় বালিয়াডাঙ্গীতে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ইসলাম টি স্টেট ও গ্রীণ ফিল্ড টি স্টেট নামে দুটি বড় চা বাগান গড়ে উঠেছে। চা বাগানের সফলতা দেখে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ছোট ছোট বাগান গড়ে তুলেছে। একটি লাভজনক শিল্প হওয়ার কারণে চাষী পর্যায়ে চা চাষে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছে। চা চাষের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অচিরেই বালিয়াডাঙ্গীতে চা শিল্প গড়ে উঠবে বলে এলাকাবাসী প্রত্যাশা করে।

২. আম প্রক্রিয়াজাতকরণ

উপযুক্ত মাটির বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ুর কারণে বালিয়াডাঙ্গীতে বহুকাল আগে থেকেই আম চাষের প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে সূর্যাপুরী এই অঞ্চলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একটি জাত যা সহজেই উৎপন্ন হয়। সমস্ত উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ক্ষুদ্র বৃহৎ বিভিন্ন আকারের আমের বাগানে প্রচুর পরিমান আম উৎপাদিত হয়। কিন্তু এই এলাকায় আমের বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় এবং আম প্রক্রিয়াজাতকরণের কোন কারখানা না থাকায় আম চাষীরা ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সস্তা শ্রম ও কাঁচামালের(কাঁচা/পাকা আম) দাম কম থাকায় বালিয়াডাঙ্গীতে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ(আচার, জুস, জ্যাম, জেলি) শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব।

৩. আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানী

বালিয়াডাঙ্গীর উঁচু জমি আলু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। শীতের আগমন আগাম হওয়ায় আগাম জাতের আলু বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সবচেয়ে আগে বালিয়াডাঙ্গীতে আলু উৎপাদিত হয়। এই এলাকার মাটিতে সবধরণের আলু জন্মে থাকে। আলুর উৎপাদন বিঘা প্রতি ৬০-১০০ মণ। আলুর আকৃতি অনেক বড় এবং উজ্জ্বল রং বিশিষ্ট। অধিক উৎপাদনের কারণে বাজার মূল্য কম হওয়ায়  প্রায় প্রতিবছর আলু চাষীরা ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সে লক্ষ্যে বালিয়াডাঙ্গী জরুরী ভিত্তিতে হিমাগার স্থাপন করা দরকার। ইদানিং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে আলু রপ্তানী হচ্ছে।  বালিয়াডাঙ্গীর আলু গুণেমানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় উদ্বৃত্ত আলু সহজেই বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব । কাঁচামালের সমারোহ অধিক থাকায় এই এলাকায় আলু প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা গড়ে তোলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. খাদ্যশস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। মাটির বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ু ফসল উৎপাদনের জন্যে অত্যান্ত উপযোগী। বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গীতে প্রতিবছর প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান, প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়। প্রচুর পরিমানে উৎকৃষ্ট মানের ভূট্টা উৎপাদিত হয়। এধরণের খাদ্যশস্য থেকে আটা, ময়দা, সুজি, শিশু খাদ্য ও বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরী করার উপযোগী শিল্প কারখানা এ অঞ্চলে গড়ে তোলার সম্ভব।

৫. পর্যটন শিল্প

বালিয়াডাঙ্গী যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে সমৃদ্ধ করে এমন কোন উল্লেখযোগ্য উপাদান হয় তো নেই তবুও এই অঞ্চলের প্রকৃতিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্বকীয়তা। রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত শস্য ক্ষেত্র আর সবুজ বৃক্ষরাজির আচ্ছাদিত শান্ত গ্রাম। বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফসলের আবর্তন থাকায় পালাক্রমে সৌন্দর্যের পট পরিবর্তিত হয়। রয়েছে এঁকে-বেঁকে চলা ছোট নদী, সারি সারি আমের বাগান, নাগর নদীর দুই তীরে চা বাগান। হরিণমারী এলাকায় প্রায় ২ বিঘা জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন প্রায় ২০০-২৫০ বছর বয়সী ঐতিহাসিক সূর্যপুরী আমগাছ।  শীতের শুরুতে উত্তর দিগন্তে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে তুষার আচ্ছাদিত বিশাল পর্বতমালার হিমালয়ের উচ্চশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ফতেহ্পুর মসজিদ, সনগাঁও শাহী মসজিদ, চাড়োল ৩ গম্বুজ মসজিদ, ভবানী বাবুর জমিদার বাড়ি ও হরিণমারী শিব মন্দির। আধারদিঘিসহ দুওসুও দিঘি, রতন দিঘি, লাহিড়ী হাটের বড় দিঘি, হরিণমারী দিঘিকে ঘিরে বিভিন্ন লোককাহিনী প্রচলিত আছে। ভবানী বাবুর জমিদার বাড়ি, রুপগঞ্জের জমিদারবাড়ি, গড়খাঁড়ি দুর্গ, বড়কোর্ট শহর সম্পর্কিত সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগীতায় এসব নিদর্শন সমূহের সংরক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে পর্যটনের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। পাশাপাশি এ অঞ্চলে পিকনিক স্পর্ট, শিশু পার্ক, ইকো পার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করা সম্ভব। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে উঁচু টাওয়ার  এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে নাগর নদীর দুই তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। সবকিছু মিলিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় পর্যটন শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

ভাষা ও সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভাষা বাংলাদেশের অন্য যেকোন অঞ্চলের তুলনায় ভিন্ন। এই ভাষা স্বাতন্ত্র্য ও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙ্গন নদী হচ্ছে ভাষাগত সীমানা। পূর্বদিকের ভাষা রাজবংশী ভাষার সঙ্গে মিল আর পশ্চিমে হিন্দি-উর্দু ভাষা প্রভাবিত। সাঁওতাল, ওরাও আদিবাসী এবং রাজবংশী, পলিয়া উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রাত্যহিক জীবনাচরণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংমিশ্রণ ভাষাগত পরিবেশকে করেছে বৈচিত্র্যময়। এছাড়া রয়েছে অত্র অঞ্চলের পশ্চিমাঞ্চলীর কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে ভারতের মালদহ, পূর্ণিয়া ও বিহার অঞ্চলের নিকটবর্তী প্রভাব।

এই অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা কে "ঢেঁকি" ভাষা বলা হয়ে থাকে। উপজেলার উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগূলোর মধ্যে রয়েছে ক্লাব ৩৪, নাট্যদল ৩, যাত্রাদল ১, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ৩২।

খেলাধুলা ও বিনোদন[সম্পাদনা]

আদিকাল থেকে এই উপজেলা ক্রিড়া ও সংস্কৃতির চরণ ভুমি বলেই পরিচিত এই  উপজেলার ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে খেলাধূলার প্রতি অসীম আগ্রহ রয়েছে। এখানে স্থানীয়  প্রশাসনও খেলাধূলার বিস্তৃতি ঘটাতে সব সময় সচেষ্ট। ফলে বিভিন্ন সময় আন্তঃ উপজেলা টুনামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ফলে এ উপজেলার বিশেষ করে ছাত্র সমাজ খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ পায়, যা একটি সুস্থ্য জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মত এ উপজেলার অদিবাসীগণ খেলা প্রিয়। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলায় এখানকার মাঠগুলো সবসময় মুখরিত থাকে।

খেলাধূলা :  হাডুডু,ফুটবল,ক্রিকেট,ক্যারাম,ডাবা,লুডু খেলা এই উপজেলার মানুষের কাছে বেশি প্রিয়।

বিনোদন :  যাত্রা ও গ্রাম্য বিনোদনের মাধ্যম।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

বিবিধ[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে বালিয়াডাঙী ঊপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. হোসেন, সেলিনা; ইসলাম, নুরুল, সম্পাদকগণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)। "কম্পরাম সিং" (ছাপা)বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত বিতীয় সংস্করণ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১০৮। 
  3. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯
  4. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ১৩১, ৬১৭, ISBN 984-70120-0436-4.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]