বায়োপেসটিসাইড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Beauveria,একটি জৈব কীটনাশক

বায়োপেস্টিসাইড বা জৈব পেস্টনাশক বায়োপেস্টিসাইড এক প্রকার কীটনাশক যা বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান থেকে পাওয়া যায়। যেমন:- প্রাণী, উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি। বায়ো (bio) শব্দের অর্থ জীবন, পেস্ট(pest) হল পোকা-মাকড় এবং সাইড (cide) অর্থ মেরে ফেলা।

বায়োপেস্টিসাইড হল সেই সব পদার্থ যা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে পাওয়া যায় এবং পোকা দমনের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। উদাহরণ স্বরূপ- ক্যানোলা ‌‌তেল এবং বেকিং সোডার কীটনাশক ক্ষমতা আছে এবং কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

শ্রেণিবিভাগ[সম্পাদনা]

বায়োপেস্টিসাইডকে মূলত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।

¡. মাইক্রোবিয়াল বায়োপেস্টিসাইড: এই কীটনাশকগুলো বিভিন্ন প্রকার অনুজীব থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। যেমন:- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি।[১][২][৩][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] মাইক্রোবিয়াল বায়োপেস্টিসাইড বিভিন্ন প্রকার কীট বা পোকা-মাকড় দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত মাইক্রোবিয়াল বায়োপেস্টিসাইড হলো বিটি টক্সিন বা বিটি প্রোটিন যা Bacillus thuringiensis নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি।

¡¡.বায়োকেমিক্যাল বা জৈবরাসায়নিক কীটনাশক: এই কীটনাশক বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি যা আশেপাশের পরিবেশকে বিষাক্ত না করে পোকা-মাকড় দমনে সহায়তা করে যেখানে শুধু রাসায়নিক কীটনাশক পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে।বিভিন্ন প্রকার সুগন্ধি গাছের নির্যাস বায়োপেস্টিসাইড হিসেবে কাজ করে।[৪][৫]

¡¡¡.প্লান্ট ইনকর্পোরেটেড প্রোটেকট্যান্ট(পিপস): এই কীটনাশকগুলো সেই সকল পদার্থ যা উদ্ভিদের জীনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়।যেমন:- বিটি প্রোটিন উৎপন্নকারী জীন উদ্ভিদে সংযোগ করার মাধ্যমে উদ্ভিদে সরাসরি বিটি প্রোটিন উৎপন্ন করা যায়। তাদের ব্যবহার বিতর্কিত বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে।[৬]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

কৃষিক্ষেত্রে সর্বপ্রথম উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল বায়োপেস্টিসাইড হিসেবে।ইতিহাস বলে ১৭ শতকের দিকে প্লাম বিটল( বরই জাতীয় গাছের পোকা) দমনের জন্য নিকোটিন ব্যবহার করা হতো। আনুমানিক ১৮৩৫ সালের দিকে আগাস্তিন ব্যাসি দেখান যে হোয়াইট-মাস্কেডিন ছত্রাক(Bauveria bassiana) সিল্ক ওয়ার্মে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। ১৯ শতকের দিকে খনিজ তেলগুলোকে উদ্ভিদ সংরক্ষণের বিবরণী পাওয়া যায়। ২০ শতকের শুরুর দিকে কৃষিক্ষেত্রে গবেষণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেশ কিছু কীটনাশক তৈরি করা হয়েছে যা এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৯০১ সালে জাপানিজ জীববিজ্ঞানী সিগেটেন ইসিওয়াটা, সিল্ক ওয়ামে প্রাপ্ত Bacillus thiringiensis (BT) ব্যাকটেরিয়া থেকে বিটি প্রোটিনকে পৃথক করেন। ১৯২০ সালের দিকে ফ্রান্স প্রথম বিটি প্রোটিনকে বায়োপেস্টিসাইড হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে।

কর্মপদ্ধতি[সম্পাদনা]

সকল বায়োপেস্টিসাইড একভাবে কাজ করে না।ভিন্ন ভিন্ন পেস্টিসাইড ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করে। যেমন:-

  • Bacillus thuringiensis- এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া যা হতে উৎপন্ন বিটি টক্সিন কীট পতঙ্গের অন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে এবং খাদ্য গ্রহণে বাধা দান করে।
  • Azadirachtin- এক প্রকার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক, নীম গাছের বীজ থেকে তৈরি করা হয় যা পোক মাকড়ের খাদ্য গ্রহণ ও খোলস মোচনে বাধা দেয়।
  • Bauveria bassiana- এক প্রকার ছত্রাক যা পোকাকে আক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যেই মেরে ফেলে।
  • Dysphania ambrosioides- এক প্রকার গাছ যার নির্যাস পোকার বহিঃকঙ্কাল ভেঙে ফেলে, শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে।

উপকারিতা[সম্পাদনা]

  • বায়োপেস্টিসাইড নির্দিষ্ট পোকা দমনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে ফলে নির্দিষ্ট প্রজাতির পোকা ব্যতীত অন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা কম থাকে।
  • বায়োপেস্টিসাইড প্রচলিত কীটনাশক থেকে কম ক্ষতিকর।
  • পরিবেশে সহজে ভেঙে যায় (biodegradable) বা নষ্ট হয়ে যায় তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় না।
  • রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর ফলে স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদন করা সম্ভব।

অপকারীতা[সম্পাদনা]

• বিভিন্ন প্রকার বায়বীয় এবং অবায়বীয় স্ট্রেস এর প্রভাবে কার্যক্ষমতার পরিবর্তন হতে পারে। • পোকা দমনের হার রাসায়নিক কীটনাশকের তুলনায় কম। • কাজ করতে তুলনামূলকভাবে সময় বেশি লাগে। • যদি পোকা-মাকড় কীটনাশকের বিরূদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট(প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা) হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে এই কীটনাশক ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Coombs, Amy (১ জুন ২০১৩)। "Fighting Microbes with Microbes"The Scientist। ২০১৩-০১-০৭ তারিখে মূলঅর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজন থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৩ 
  2. Malherbe, Stephanus (২১ জানুয়ারি ২০১৭)। "Listing 17 microbes and their effects on soil, plant health and biopesticide functions"Explogrow। London। ২০১৬-০২-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  3. Francis Borgio J, Sahayaraj K and Alper Susurluk I (eds) . Microbial Insecticides: Principles and Applications, Nova Publishers, USA. 492pp. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৬১২০৯-২২৩-২
  4. Isman, Murray B. (২০০৬)। "Botanical Insecticides, Deterrents, and Repellants in Modern Agriculture and an Increasingly Regulated World" (পিডিএফ)Annual Review of Entomology51: 45–66। এসটুসিআইডি 32196104ডিওআই:10.1146/annurev.ento.51.110104.151146পিএমআইডি 16332203 – Semantic Scholar-এর মাধ্যমে। 
  5. Pal GK, Kumar B। "Antifungal activity of some common weed extracts against wilt causing fungi, Fusarium oxysporum" (পিডিএফ)Current Discovery2 (1): 62–67। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. National Pesticide Information Center. Last updated November 21, 2013 Plant Incorporated Protectants (PIPs) / Genetically Modified Plants