বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পুকুরসহ বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার (২০০৮ সাল)
মূল মাজারে উঠার সিড়ি (২০২২ সাল)

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ইরানের বিখ্যাত সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। বেশ কিছু মানুষের ধারণা যে এখানেই বায়েজিদ বোস্তামীর কবর অবস্থিত এবং তাঁরা এই বিশ্বাস থেকেই তার কবর জিয়ারত করতে যান। কিন্তু আসলে তা নয়। তাঁর কবর ইরাক (মতভেদে ভারতে) অবস্থিত। হযরত বায়জিদ বোস্তামি রাহমাতুল্লাহ আলাইহের মাজার বা কবর হলো ইরানের বুস্তামে

বর্ণনা[সম্পাদনা]

মাজারের সামনে অবস্থিত দীঘি (২০২২ সাল)

এই সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে আবিষ্কার করা হয়। আঙ্গিনার ঠিক মাঝামাঝি একটি শবাধার অবস্থিত। পরবর্তীতে সমাধিস্থলটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মুঘল রীতির আয়তাকার মসজিদ এবং একটি বিশালাকার দীঘি আছে। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত।

জনশ্রুতি[সম্পাদনা]

মাজারের একটি নামফলক (২০২২ সাল)

যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজার, ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়না। ধারণা করা হয় সুফী সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড় এর উপরে কিংবা জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব জায়গাতে মাজার কিংবা এই ধরনের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারটাও মূলত উনাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।

যদিও এলাকার জনশ্রূতি অনুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে অবস্থানের পরে প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান। এই জনশ্রুতির স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে। বায়েজীদ বোস্তামীকে যেহেতু সুলতান উল আরেফীন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় যেই সূত্রে এই শাহ সুলতান আর সুলতান উল আরেফীন কে একই ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। [১][২][৩][৪]

বোস্তামীর কাছিম[সম্পাদনা]

বোস্তামীর কাছিম

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি অবস্থিত। এর বাসিন্দা হিসাবে বোস্তামীর কাছিম ও গজার মাছ সুবিখ্যাত। আঞ্চলিকভাবে এদের মাজারী ও গজারী বলে আখ্যায়িত করা হয়। বোস্তামীর কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গণ ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও এদের দেখা মিলে না। মাজারের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা মাজার তত্ত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গণ সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়।

মাজারের ভক্তকূল ও আঞ্চলিক জনশ্রুতি অনুযায়ী মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপীষ্ঠ আত্মার পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামী তার এই অঞ্চলে ভ্রমনকালে এইসব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন এবং আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। [৫][৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বাংলাপিডিয়াতে বায়েজিদ বোস্তামী"। ১২ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  2. Bibliography Hamidullah Khan, Ahadis-ul-Khawanin, Calcutta, 1871, Muhammad Enamul Haq
  3. A History of Sufism in Bengal, Dhaka 1975 Abdul Karim
  4. Social History of the Muslims in Bengal, 2nd ed, Chittagong, 1985
  5. বোস্তামীর কাছিম
  6. "আইইউসিএন কর্তৃক বিপন্নপ্রায় ঘোষিত প্রাণী তালিকায় বোস্তামীর কাছিম"। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০