বিষয়বস্তুতে চলুন

বানৌজা প্রত্যয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইতিহাস
বাংলাদেশ
নাম: বানৌজা প্রত্যয়
নির্মাণাদেশ: অক্টোবর, ২০১২
নির্মাতা: উচ্যাং শিপইয়ার্ড
নির্মাণের সময়: ০৮ জানুয়ারী, ২০১৩
অভিষেক: ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
অর্জন: ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫
কমিশন লাভ: ১৯ মার্চ, ২০১৬
শনাক্তকরণ: এফ১১২
অবস্থা: সক্রিয়
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার ও শ্রেণী: টাইপ ০৫৬ কর্ভেট
ওজন: ১,৪০০ টন
দৈর্ঘ্য: ৯০.২ মিটার (২৯৬ ফুট)
প্রস্থ: ১১.১৪ মিটার (৩৬.৫ ফুট)
ড্রাফট: ৩.২৬ মিটার (১০.৭ ফুট)
প্রচালনশক্তি:
  • ২ × এসইএমটি পিয়েলসটিক ১২পিএ৬ ডিজেল ইঞ্জিন
  • ২ × শ্যাফট
গতিবেগ: ২৫ নট (৪৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা; ২৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা)
সীমা: ৩,৫০০ নটিক্যাল মাইল (৬,৫০০ কিলোমিটার; ৪,০০০ মাইল)
সহনশীলতা: ১৫ দিন
সেন্সর এবং
কার্যপদ্ধতি:
  • ১ × টাইপ ৩৬০ এয়ার/সারফেস সার্চ র‍্যাডার, ই/এফ ব্যান্ড;
  • ১ × হাল মাউনন্টেড মাল্টি-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × হাল মাউনন্টেড সিঙ্গেল-বিম ইকো সাউন্ডার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × ডিজিপিএস রিসিভার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র);
  • ১ × সাউন্ড ভেলোসিটি প্রোফাইলার (যুক্তরাজ্য);
  • ১ × মাল্টিরোল ডিসপ্লে সহ কেলভিন হিউগস র্শাপআই ই/এফ-ব্যান্ড (এস-ব্যান্ড) নেভিগেশনাল র‍্যাডার;
  • ১ × কেলভিন হিউজেস শার্পআই আই-ব্যান্ড (এক্স-ব্যান্ড) র‍্যাডার;
  • ১ × টাইপ-৩৪৮ ফায়ার কন্ট্রোল র‍্যাডার (মেইন গানের জন্য)
  • ১ × চৌম্বকীয় কম্পাস (জাপান);
  • ১ × জিপিএস রিসিভার (ফুরুনো);
  • ১ × ইকো সাউন্ডার (কোডেন);
  • ১ × রাডার অ্যাঙ্গেল ইন্ডিকেটর;
  • ১ × ভিএইচএফ সেট (আইকম);
  • ২০ × ভিএইচএফ ওয়াকিটকি সেট (আইকম/মটোরোলা)
রণসজ্জা:
  • ১ × এইচ/পিজে-২৬ ৭৬ মিমি কামান;
  • ২ × এইচ/পিজে-১৭ ৩০ মিমি কামান;
  • ২ × ২ সি-৮০২এ জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র;
  • ১ × ৮ এফএল-৩০০০এন আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র;
  • ২ × ৬-টিউব টাইপ ৮৭ ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার;
  • ৪ × এসটিকে-৫০এমজি ১২.৭ মিমি বিমান-বিধ্বংসী মেশিনগান
  • ৬ × কিউডব্লিউ-২ ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণ যোগ্য বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র
বিমান বহন: ১টি অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড এডব্লিউ১০৯ হেলিকপ্টার
বিমানচালানর সুবিধাসমূহ: হেলিকপ্টার ডেক

বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ (সংক্ষেপেঃ বানৌজা) প্রত্যয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি অত্যাধুনিক স্বাধীনতা-শ্রেণীর কর্ভেট। উচ্যাং শিপইয়ার্ডে নির্মিত এই জাহাজটি এই শ্রেণীর প্রথম সংযোজন, যা এটিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক করে তুলেছে।

বানৌজা প্রত্যয় একটি বহুমাত্রিক যুদ্ধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ। এর প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ: গভীর সমুদ্রে যেকোনো অননুমোদিত প্রবেশ বা চোরাচালান কার্যক্রম প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • জলদস্যুতা দমন: সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জলদস্যুতা নিয়ন্ত্রণে এটি বিশেষভাবে সক্ষম।
  • সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান: যেকোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় সমুদ্রে দ্রুত উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় এই জাহাজটি অত্যন্ত কার্যকরী।
  • সুনীল অর্থনীতির সুরক্ষা: বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক সম্পদ, যেমন মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এবং সুনীল অর্থনীতির বিভিন্ন কার্যক্রমে এটি সহায়তা করে।

সংক্ষেপে, বানৌজা স্বাধীনতা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।[][][][][][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দূরদর্শী ও দীর্ঘমেয়াদী সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনার আওতায় দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এর ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ বানৌজা প্রত্যয় সফলভাবে কমিশন লাভ করে। এই সংযোজন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তি ও সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। বানৌজা প্রত্যয় জাহাজের সার্বিক ইতিহাস নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

নির্মাণ ও হস্তান্তর:

  • নির্মাণাদেশ: অক্টোবর ২০১২ সালে জাহাজটি নির্মাণের জন্য নির্মাণাদেশ দেওয়া হয়।
  • নির্মাণ শুরু: ৮ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে চীনের উচাং শিপইয়ার্ডে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
  • অভিষেক: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে জাহাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে জলে ভাসানো হয়।
  • হস্তান্তর: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে বানৌজা প্রত্যয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
  • চট্টগ্রাম আগমন: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে এটি বাংলাদেশে পৌঁছায় এবং চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে।
  • কমিশনিং: ১৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে বানৌজা প্রত্যয় (পেনান্ট নম্বর: F112) কমিশন লাভ করে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে বানৌজা প্রত্যয়-এর মতো যুদ্ধজাহাজ সংযোজন দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই সংযোজনের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

  • যুদ্ধকালীন সক্ষমতা বৃদ্ধি: যুদ্ধকালীন সম্ভাব্য যেকোনো সংঘাতে দেশের সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং সফলভাবে নৌ-অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা বানৌজা স্বাধীনতা সংযোজনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এটি নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করবে।
  • শান্তিকালীন উপস্থিতি ও কৌশলগত প্রতিরোধ: শান্তিকালীন সময়ে সমুদ্রে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে যেকোনো আগ্রাসী বা অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা এই যুদ্ধজাহাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মাধ্যমে দেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
  • বাণিজ্যিক নৌপথের নিরাপত্তা: আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা এবং সমুদ্রপথে অর্থনীতির নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ বজায় রাখা বানৌজা স্বাধীনতা-এর অন্যতম প্রধান কাজ। দেশের অর্থনীতির প্রাণ প্রবাহ সচল রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
  • সামুদ্রিক সম্পদ ও পরিবেশ সুরক্ষা: দেশের মৎস্য সম্পদ, খনিজ তেল ও গ্যাসসহ অন্যান্য মূল্যবান সামুদ্রিক সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করা এবং সামুদ্রিক পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা এই যুদ্ধজাহাজের অন্তর্ভুক্ত। এটি সুনীল অর্থনীতি বিকাশে সহায়ক হবে।
  • আইনশৃঙ্খলা ও চোরাচালান দমন: সমুদ্রে অবৈধ চোরাচালান, জলদস্যুতা, মানবপাচার এবং অবৈধ অস্ত্র পাচার দমনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমুদ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা বানৌজা প্রত্যয়-এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
  • সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান ও মানবিক সহায়তা: সমুদ্রে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে দুর্যোগকালীন সময়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা এই যুদ্ধজাহাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও শান্তিরক্ষা মিশন: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জোটের সাথে যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ ও ওয়ারগেম পরিচালনা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা এই যুদ্ধজাহাজ সংযোজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

বানৌজা প্রত্যয়-এর সংযোজন বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী, গতিশীল এবং বহুমুখী সক্ষমতা সম্পন্ন বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে। এটি কেবল দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাই বাড়ায়নি, বরং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের অঙ্গীকারকেও পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজটি বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং দেশের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্ভেট বানৌজা প্রত্যয় (পেন্যান্ট নম্বর: এফ ১১২) এর এযাবৎকালের সম্পূর্ণ কর্মজীবন এতদ্বারা নিম্নোক্তভাবে উপস্থাপিত হলো:

কর্মজীবন ও উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ: বানৌজা প্রত্যয় তার কমিশন লাভের পর থেকে দেশের জলসীমা রক্ষা, সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ, চোরাচালান ও মানব পাচার রোধ, এবং আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর উল্লেখযোগ্য কর্মসমূহ নিম্নরূপ:

উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও ঘটনা:

বিদেশ সফর ও মহড়া:

  • ভিয়েতনাম সফর (২০১৯): ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল বানৌজা প্রত্যয় ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির সাইগন বন্দরে চার দিনের শুভেচ্ছা সফরে গিয়েছিল। এই সফরে জাহাজের কমান্ডারগণ হো চি মিন সিটি এবং নেভি রিজিওন ২-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। জাহাজটির ক্রু সদস্যরা নেভি রিজিওন ২-এর কর্মকর্তা ও সৈন্যদের সাথে ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশ নেয় এবং হো চি মিন সিটির ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করে।
  • বঙ্গোপসাগরে মহড়া (২০২০): ২০২০ সালের অক্টোবরে বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy) – বাংলাদেশ নৌবাহিনী (Bangladesh Navy) এর দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক মহড়া 'বঙ্গোসাগর'-এ বানৌজা প্রত্যয় অংশগ্রহণ করে। এই মহড়ার লক্ষ্য ছিল সামুদ্রিক মহড়া ও অপারেশনের মাধ্যমে আন্তঃঅপারেবিলিটি এবং যৌথ অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এই মহড়ায় উভয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলি সার্ফেস ওয়ারফেয়ার ড্রিলস, সিম্যানশিপ ইভোলিউশন এবং হেলিকপ্টার অপারেশনে অংশ নেয়। এই মহড়াটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী 'মুজিববর্ষ' উদযাপনের সময় অনুষ্ঠিত হওয়ায় এর বিশেষ তাৎপর্য ছিল।
  • মুম্বাই সফর (২০২১): ২০২১ সালের ১৪ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি বানৌজা প্রত্যয় মুম্বাইয়ে দুই দিনের শুভেচ্ছা সফরে যায়। এই সফরটি বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এই সফরের সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি মার্চিং কন্টিনজেন্ট এবং সামরিক ব্যান্ড প্রথমবারের মতো ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে।

উদ্ধার অভিযান, মানবপাচার প্রতিরোধ, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা (সাধারণ ভূমিকা): বানৌজা প্রত্যয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ হিসেবে, দেশের সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন মানবিক ও জরুরি কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নেয়। যদিও ঘটনাগুলির তারিখ ও বিশদ বিবরণ সরকারিভাবে সহজে প্রকাশিত হয় না, তবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

  • উদ্ধার অভিযান: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন ঘূর্ণিঝড় বা আকস্মিক বন্যার সময় সমুদ্রে আটকে পড়া জেলে বা বিপন্ন মানুষের উদ্ধার অভিযানে বানৌজা প্রত্যয় এর মতো জাহাজগুলো দ্রুত মোতায়েন করা হয়।
  • মানবপাচার প্রতিরোধ: মানবপাচার একটি গুরুতর অপরাধ, এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিয়মিতভাবে সমুদ্রপথে মানবপাচার রোধে টহল ও অভিযান পরিচালনা করে থাকে। বানৌজা প্রত্যয় এই ধরনের অভিযানে অংশ নিয়ে দেশের জলসীমায় নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগে সহায়তা করে।
  • ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা: ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদানে নৌবাহিনীর জাহাজগুলো একটি কার্যকর মাধ্যম। বানৌজা প্রত্যয় এই ধরনের ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায়।

বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিক কর্ভেট বানৌজা প্রত্যয় একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ, যা দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিম্নে জাহাজটির প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং যান্ত্রিক কাঠামো সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হলো:

যান্ত্রিক কাঠামো ও কার্যক্ষমতা:

  • দৈর্ঘ্য: ৯০ মিটার (৩০০ ফুট)
  • প্রস্থ: ১১.১৪ মিটার (৩৬.৫ ফুট)
  • ওজন: ১,৪০০ টন
  • ইঞ্জিন: জাহাজটিতে জার্মানির তৈরি ২টি এসইএমটি পিয়েলসটিক ১২পিএ৬ ডিজেল ইঞ্জিন রয়েছে।
  • সর্বোচ্চ গতি: এই ইঞ্জিনের সাহায্যে জাহাজটি ২৫ নট (৪৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা; ২৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা) গতিতে চলতে সক্ষম।
  • শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র: জাহাজটিতে সামনে ও পিছনে দুটি আলাদা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এর ফলে, একটি কেন্দ্র অকার্যকর হয়ে পড়লেও অন্যটির সাহায্যে জাহাজটি নির্বিঘ্নে তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে, যা এর কার্যক্ষমতার নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।
  • নকশা: চিরাচরিত গোলাকার সম্মুখভাগের পরিবর্তে জাহাজটিকে ভি-আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে, যা এটিকে উত্তাল সমুদ্রেও দ্রুতগতিতে চলতে সক্ষম করে তোলে। এই বিশেষ নকশা প্রতিকূল আবহাওয়ায় জাহাজটির স্থিতিশীলতা এবং গতিশীলতা নিশ্চিত করে।
  • ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী কার্যক্রম: জাহাজটিতে কোনো সোনার না থাকায় এটি খুব সীমিত মাত্রায় ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী কার্যক্রম চালাতে সক্ষম।
  • হেলিকপ্টার ডেক: বানৌজা স্বাধীনতাতে একটি হেলিকপ্টার ডেক রয়েছে যেখানে একটি মধ্যম আকৃতির হেলিকপ্টার ওঠানামা করতে পারে। তবে, এতে কোনো হ্যাঙ্গার নেই।

ইলেক্ট্রনিক্স ও র‍্যাডার ব্যবস্থা:

  • সার্ফেস সার্চ র‍্যাডার: জাহাজটি সমুদ্রপৃষ্ঠ ও আকাশে অনুসন্ধানের জন্য চীনের তৈরি টাইপ ৩৬০ সার্ফেস সার্চ র‍্যাডার (ই/এফ ব্যান্ড) ব্যবহার করে।
  • ফায়ার কন্ট্রোল র‍্যাডার: প্রধান গানের জন্য ১টি টাইপ ৩৪৮ ফায়ার কন্ট্রোল র‍্যাডার রয়েছে।
  • নেভিগেশন র‍্যাডার: এছাড়াও, কেলভিন হিউজেস এর তৈরি শার্পআই আই-ব্যান্ড (এক্স-ব্যান্ড) এবং শার্পআই ই/এফ-ব্যান্ড (এস-ব্যান্ড) র‍্যাডার এবং মাল্টি-ডিজিটাল কৌশলগত প্রদর্শন সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এই র‍্যাডারগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে অনুসন্ধান এবং নৌচালনার কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • হেলিকপ্টার নিয়ন্ত্রণ: পাশাপাশি, হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরণ নিয়ন্ত্রণের জন্যও এই র‍্যাডার ব্যবহার করা যায়।

রণসজ্জা

[সম্পাদনা]

বানৌজা প্রত্যয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, যা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত। শত্রু জাহাজ মোকাবেলা, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং জলদস্যুতা দমনে এই জাহাজটি নিম্নলিখিত মারণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত:

  • ১টি এইচ/পিজে-২৬ ৭৬ মিমি কামান: এটি জাহাজের প্রধান কামান, যা বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
  • ২টি এইচ/পিজে-১৭ ৩০ মিমি কামান: ছোট লক্ষ্যবস্তু এবং দ্রুতগতির আক্রমণের জন্য এই কামানগুলো কার্যকর।
  • ৪টি সি-৮০২এ জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র: এটি শত্রু জাহাজ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।
  • ১টি ৮ সেল বিশিষ্ট এফএল-৩০০০এন আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র: এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি আকাশপথে যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম।
  • ১টি ৬-টিউব টাইপ ৮৭ ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার: এটি ডুবোজাহাজ সনাক্তকরণ ও ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ৪টি এসটিকে-৫০এমজি ১২.৭ মিমি বিমান-বিধ্বংসী মেশিনগান: স্বল্পপাল্লার বিমান এবং ড্রোন মোকাবেলায় এই মেশিনগানগুলো কার্যকর।
  • ৬টি কিউডব্লিউ-২ বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র: এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশপথে হুমকি মোকাবেলায় অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা প্রদান করে।

এই রণসজ্জা বানৌজা প্রত্যয়কে একটি সুসজ্জিত এবং সক্ষম যুদ্ধজাহাজে পরিণত করেছে, যা বাংলাদেশের জলসীমা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "নৌবাহিনীর বহরে নতুন দুই যুদ্ধজাহাজ"দৈনিক সমকাল। ১১ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  2. "navy নৌবাহিনীর Prottasha BNS Prottoy is a Type 056 stealth surface warfare guided missile corvette" 
  3. "সমুদ্র রক্ষায় বানৌজা প্রত্যয়-এর অপারেশনাল কর্মকাণ্ড | BNS Prottoy | Bijoyturjo | Bangladesh Navy" 
  4. "বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন নিয়ে ইত্যাদির তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন" 
  5. "প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার" (পিডিএফ)প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৮ 
  6. "Multiple Wins in Asia"। kelvinhughes.com। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫