বাকতাশিবাদ
![]() বাকতাশিবাদের পতাকা (যা বাকতাশিদের বিশ্ব সদর দপ্তরে দেখা যায়)। | |
![]() বাকতাশিবাদের প্রতীক | |
ধরন | সুফি তরিকা |
---|---|
সদরদপ্তর | বাকতাশি বিশ্ব সদর দপ্তর, তিরানা (পূর্বে হাজি বাকতিশ ওয়ালি কমপ্লেক্স, নেভেশির) |
যে অঞ্চলে | আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রিস, কসোভো, উত্তর মেসিডোনিয়া, তুরস্ক, অন্যান্য আলবেনীয় অভিবাসী (ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও তুর্কি অভিবাসী (জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম) |
বাবা মোন্দি | |
মূল ব্যক্তিত্ব |
বাক্তাশিবাদ বা বাক্তাশিয়া ( আলবেনীয়: Bektashi, তুর্কি: Bektaşîlik) হলো সুফি ইসলামি উৎসের একটি তরিকা, যা ১৩শ শতাব্দীতে আনাতোলিয়ায় বিকশিত হয়েছিল। এটি গোটা উসমানীয় সাম্রাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটির নামকরণ করা হয়েছে হাজী বাকতাশ ওয়ালীর নামে, যিনি খোরাসানের একজন ইসলামী পণ্ডিত, মরমি, সাধক ও দার্শনিক ছিলেন। বাকতাশীয় সম্প্রদায় বর্তমানে তাদের অষ্টম বাকতাশী দেদেবাবা বাবা মন্ডির নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের সদর দপ্তর আলবেনিয়ার তিরানায় অবস্থিত। [৬] বাকতাশিবাদের অনুসারীদের সম্মিলিতভাবে বাকতাশীয় বা কেবল বাকতাশি বলা হয়। [৭]
বাকতাশিবাদ মূলত সুন্নি ইসলামের প্রচলিত অগণিত সুফি তরিকার একটি ছিল। তবে ষোড়শ শতাব্দীতে এ সম্প্রদায়টি দ্বাদশ শিয়া ইসলামের কিছু নীতি গ্রহণ করে: যার মধ্যে আলী ( নবী মুহাম্মদের জামাতা) এবং বারো ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিভিন্ন ধরণের সমন্বিত বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৫শ শতকে যখন উসমানীয় জেনিসারি বাহিনীতে বাকতাশিরা আধিপত্য বিস্তার করে, তখন তারা রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করতে সক্ষম হয়। [৮] তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দেশটির নেতা কামাল আতাতুর্ক ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের অংশ নয় এমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিষিদ্ধ করেন। তখন বাক্তাশিদের সদর দপ্তর আলবেনিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। সালিহ নিজাজি ছিলেন তুরস্কের শেষ ও আলবেনিয়ার প্রথম দেদেবাবা। এই দলটি আলবেনীয় রাজনীতিতেও জড়িত হয়ে পড়েছিল এবং ইসমাইল কেমালিসহ এর কিছু সদস্য আলবেনীয় জাতীয় জাগরণের প্রধান নেতা ছিলেন। বাকতাশিরা ইসলামী নবী ও রসূলদের ইসমাতে (নিষ্পাপ) বিশ্বাস করে। তারা চতুর্দশ অভ্রান্তে বিশ্বাসী: নবী মুহাম্মদ, তাঁর কন্যা ফাতিমা ও বারোজন ইমাম। [৯] দ্বাদশবাদী শিয়াদের বিপরীতে বাকতাশিরা নবি মুহাম্মদের সকল সাহাবীকে সম্মান করেন, যার মধ্যে আবু বকর, উমর, উসমান, তালহা ও মুয়াবিয়াও অন্তর্ভুক্ত; কিন্তু তারা আলীকে নবীর সকল সাহাবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করে। [১০]
হাজী বাক্তাশ ওয়ালীর আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাশাপাশি বাকতাশি তরিকা পরবর্তীতে তার গঠনকালীন সময়ে হুরুফি ( ১৫শ শতকের গোড়ার দিকে), সুফিবাদী কলন্দরিয়া তরিকা, আহমদ ইয়াসাভি, ইউনূস এমরে, শাহ ইসমাইল, শেখ হায়দার, নাসিমি, পীর সুলতান আব্দাল, গুল বাবা ও সারি সালতিকের মত ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন মাত্রায় ১৪ থেকে ১৬ শতকের আনাতোলিয়ায় প্রচলিত শিয়া বিশ্বাস দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। বাকতাশি তরিকার রহস্যময় রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠানগুলি ১৬শ শতাব্দীতে বালিম সুলতান দ্বারা সুশৃঙ্খল ও কাঠামোবদ্ধ করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে রেশাত বর্ধির করা একটি গবেষণা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী সাত মিলিয়নেরও বেশি বাকতাশি রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এই সংখ্যাটি ২০ মিলিয়নেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। [১১]
আলবেনিয়ায় তারা মোট মুসলমান জনসংখ্যার ৯% এবং দেশের জনসংখ্যার ৫%। তুরস্কে আরও ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাকতাশি বাস করেন। [১২] বাকতাশিরা মূলত আনাতোলিয়া, বলকান ও উসমানীয় যুগের গ্রীক মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পাওয়া যায়। আলাভি-বাকতাশি শব্দটি বর্তমানে তুরস্কের ধর্মীয় আলোচনায় প্রায়শ ব্যবহৃত একটি অভিব্যক্তি, যা আলেভিবাদ ও বাক্তাশিবাদের অনুসারী দুটি ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্য একটি সমন্বিত শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যদিও উভয়ের স্বতন্ত্র উৎস ও পৃথক বিশ্বাস ব্যবস্থা রয়েছে। [১৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Procházka-
- ↑ "Encyclopedia Iranica, "BEKTĀŠĪYA""। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৪।
- ↑ "Encyclopedia Iranica, "ḤĀJĪ BEKTĀŠ""। ১৭ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৮।
- ↑ ক খ "ʿALĪ AL-AʿLĀ (d. 822/1419), also known as Amīr Sayyed ʿAlī, principal successor of Fażlallāh Astarābādī, founder of the Ḥorūfī sect."। ১৭ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৮।
- ↑ "Encyclopedia Iranica, "ASTARĀBĀDĪ, FAŻLALLĀH" (d. 796/1394), founder of the Ḥorūfī religion, H. Algar"। ১৭ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৮।
- ↑ "Encyclopedia Iranica, "HORUFISM" by H. Algar"। ১৭ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৮।
- ↑ Gibb, H. A. R.; Kramers, J. H.; Lévi-Provençal, E.; Schacht, J.; Lewis, B. & Pellat, Ch., সম্পাদকগণ (১৯৬০)। "Bektāshiyya"। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume I: A–B। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 1162।
- ↑ "The Bektashi Shi'as of Michigan: Pluralism and Orthodoxy within Twelver Shi'ism"। shiablog.wcfia.harvard.edu (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-৩১।
- ↑ "Bektashiyyah | Religion, Order, Beliefs, & Community | Britannica"।
- ↑ Moosa, Matti (১৯৮৮-০২-০১)। Extremist Shiites: The Ghulat Sects (ইংরেজি ভাষায়)। Syracuse University Press। আইএসবিএন 978-0-8156-2411-0।
- ↑ Baskel, Zekeriya (২০১৩-০২-২৭)। Yunus Emre: The Sufi Poet in Love (ইংরেজি ভাষায়)। Blue Dome Press। আইএসবিএন 978-1-935295-91-4।
- ↑ Norman H. Gershman (২০০৮)। Besa: Muslims who Saved Jews in World War II (illustrated সংস্করণ)। Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 9780815609346।
- ↑ "Sabahat Akkiraz'dan Alevi raporu | soL haber"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "The Amalgamation of Two Religious Cultures: The Conceptual and Social History of Alevi-Bektashism"। ১২ মে ২০২২।