বাইসাইকেলের ইতিহাস
বাইসাইকেল মানুষ পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত যানবহন। বাইসাইকেলের রয়েছে দুইটি চাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো এটা চালানোর জন্য ভারসম্য প্রয়োজন। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে সাইকেল চালনার রচনা হয়। এই পরিবহন তৈরির প্রথম মাধ্যম ছিল দুইটি চাকা পরপর সাজানো এবং এভাবে ১৮১৭ সালে জার্মান ড্রাইসিন সাইকেলের আদিরূপ পাওয়া যায়। বাইসাইকেল শব্দটি ১৮৬০ এর দশকে ফ্রান্সে সৃষ্টি হয় এবং "সাধারণ বাইসাইকেল"কে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত বর্ণনামূলক শিরোনাম হল "পেনি ফরথিং", যা ১৯-শতাব্দীর শব্দ।
১৮৮৮ সালে আধুনিক সাইকেলের সূচনা হয়।ফ্রান্সের পিয়ের মিশো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ের লালেমেন্ট- এই দু’জন প্রথম প্যাডেল চালিত সাইকেল আবিষ্কার করেন। তবে দু’জনের কে আসল উদ্ভাবক তা কিন্তু আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। যদিও ১৮৬৬ সালের ২০ নভেম্বর পিয়ের লালেমেন্ট সাইকেল উদ্ভাবনের জন্য তাঁর দেশে স্বীকৃতি লাভ করেন। সেই হিসেবেই আধুনিক বাইসাইকেলের আবিষ্কারের সময় ধরা হচ্ছে।
বর্তমানে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাইকেলের জনপ্রিয়তা বেশি।আমাদের দেশেও দিন দিন সাইকেলের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।
প্রারম্ভিক যাচাইবিহীন বাইসাইকেল[সম্পাদনা]
বাইসাইকেলের আবিষ্কার বেশ প্রাথমিক , তবে তা যাচাই করা হয়নি বলে দাবি রয়েছে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি্র এক ছাত্র জিয়ান গিয়াকোমো ক্যাপ্রোটি বাইসাইকেলের চিত্র অঙ্কন করেন, তবে এটি নিয়ে ১৯৯৮ সালে হান্স-এরহার্ড লেসিং বলেন এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক জালিয়াতি ।[১][২] যাইহোক, বাইসাইকেল অঙ্কনের সত্য ঘটনা অধ্যাপক অগস্টো মেরিনোনির অনুসারীরা এখনও দৃঢ়রূপে রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। অগস্টো মেরিনোনি ছিলেন একজন অভিধান সংকলক এবং ভাষাবিজ্ঞানী যিনি রোমের কমিশনে ভিনসিয়ানার লিওনার্দোর কোডেক্স আটলান্টিকাসের নকলকরণের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।[৩][৪]
পরে, এবং সমান যাচাইবিহীন বিতর্ক করা হয়েছে যে, ১৭৯২ সালে সুনিশ্চিত "কমট ডি সিভরাক" ক্যলেরিফেরি বিকাশ করেছে । এই ক্যলেরিফেরি ফ্রান্সের প্যালাইস-রয়্যালে প্রদর্শন করা হয়েছে। ক্যলেরিফেরিতে সম্ভবত দুটি চাকা যুক্ত ছিল এবং অনমনীয় কাঠের শরীর ও হাত দিয়ে পরিচালনার জন্য কিছু ছিলনা । গতপথ নিয়ন্ত্রণ সীমাবদ্ধ ছিল এবং হেলান দিয়ে যে গতিপথ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। [৫] একজন চালক বলেছিল দুই পাশে দুই পা ফাঁক করে বসা এই যন্ত্র বারবার ধাক্কা দেওয়া অতিরিক্ত চরণযুঘল। এখন মনে করা হয় যে, দুই চাকার ক্যলেরিফেরি কখনোই ছিল না (যদিও সেখানে চাকা ছিল) এবং এই বিষয়ে ১৯৮১ সালে প্রখ্যাত ফরাসী সাংবাদিক লুই বাউড্রি ডি সুনিয়ার অপব্যাখ্যা দিয়ে ছিল।[৬][৭]
১৯ শতক[সম্পাদনা]
১৮১৭ থেকে ১৮১৮: ড্রাইসিন এবং তিন চাকার সাইকেল[সম্পাদনা]


ব্যবহারিকভাবে ব্যবহৃত বাইসাইকেলের প্রথম যাচাইযোগ্য দাবী জার্মান ব্যারন কার্ল ভন ড্রাইস করেছিলেন। তিনি জার্মানির গ্র্যান্ড ডিউকের বাডেনের একজন সরকারী কর্মচারী ছিলেন। ১৮১৭ সালে ড্রিস তার লাউফমাসচিন (জার্মান "চলমান মেশিন") আবিষ্কার করেছিলেন। যাকে প্রেস দ্বারা ইংরেজিতে ড্রেইসিন বা ফ্রেঞ্চে ড্রেসিয়েন বলে ডাকা হয়। কার্ল ভন ড্রইস ১৮১৮ সালে এই নকশাকে পেটেন্ট করেন, এটি ছিল প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল দুই চাকা, চালমান, মানব চালিত যন্ত্র, যাকে সাধারণত একটি বেগ বলা হয এবং ডাকনাম শখের ঘোড়া বা ড্যান্ডি ঘোড়া বলা হয়।[৮] প্রাথমিকভাবে এটি জার্মানি এবং ফ্রান্সে তৈরি করা হয়েছিল।
হান্স-এরহার্ড লেসিং (ড্রইজের চরিতকার) থেকে পরিস্থিতিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ড্রইসের আগ্রহের জন্য ঘোড়ার বিকল্প অনুসন্ধান ছিল ব্যপক এবং ১৮১৬ সালে গ্রীষ্মদের দিন ছাড়াই (১৮১৫ সালে তাম্বোরার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের পরে) বিফল ফসলের কারণে ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।[৯]
১৮১৭ সালের ১২ জুন ম্যানহিম নামক এক ব্যক্তি প্রথম সাইকেল চালনা করেন এবং তিনি জ্ঞাপিত করেন যে, তিনি এক ঘণ্টারও কম সময়ে ১৩ কিলোমিটার (আট মাইল) যাত্রা করেছিলেন।[১০] প্রায় সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি ড্রাইসিনের ওজন ২২ কেজি (৪৮ পাউন্ড),একটি স্ব-কেন্দ্রীকরণ কাস্টার প্রভাব জন্য বাইসাইকেলের চাকায় ছিল বিয়ারিংয়ের মধ্যে পিতলের গুল্ম , লোহার শড চাকা, একটি পিছন চাকার ব্রেক এবং ১৫২ মি.মি. (৬ ইঞ্চি) সামনের চাকার লেজ। এই নকশাটি ভারসাম্য বজায় রাখার কারণে দু:সাহসী যান্ত্রিক চিন্তাধারার লোকেরা এটিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং মূলত পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় কয়েক হাজার অনুলিপি তৈরি এবং ব্যবহার করা হয়েছিল। আংশিক ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনার কারণে, কিছু শহর কর্তৃপক্ষ এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে শুরু করলে এর জনপ্রিয়তা দ্রুত ম্লান হয়ে যায়। তবে, ১৮৬৬ সালে প্যারিসে বিন চুন নামে একজন চীনা দর্শনার্থী পা-ধাক্কা দেওয়া বাইসাইকেল চালাতে পারতেন।[১১]
ধারণাটি বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ কার্টরাইট দিয়েছিলেন; সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিলেন লন্ডনের ডেনিস জনসন, তিনি ১৮১৮ সালের শেষদিকে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি একটি উন্নত সাইকেলের মডেল বিক্রি করবেন।[১২]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Lessing, Hans-Erhard: "The evidence against Leonardo's bicycle", Cycle History 8, San Francisco 1998, pp. 49–56
- ↑ "Leonardo da Vinci Bicycle Hoax"। cyclepublishing.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৮।
- ↑ On the question of Leonardo's 'bicycle' ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত জুলাই ১১, ২০০৯ তারিখে
- ↑ "Leonardo Da Vinci, the inventor of the modern bike."। beyondthirtynine.com। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। ৫ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৮।
- ↑ Baudry de Saunier, Louis (১৮৯১)। Histoire Générale de la Vélocipédie। Ollendorff Paris। পৃষ্ঠা 4–8।
- ↑ Seray, Jacques: Deux Roues. La véritable histoire du vélo. Éditions du Rouergue 1988, 13–17
- ↑ An earlier English version appeared as "The End of De Sivrac" in The Boneshaker #85(1977)
- ↑ "Canada Science and Technology Museum: from Draisienne to Dandyhorse"। ২০১২-০৮-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-৩১।
- ↑ "Lessing, Hans-Erhard: "What Led to the Invention of the Early Bicycle?" Cycle History 11, San Francisco 2001, pp. 28–36"।
- ↑ "LODA, eine neuerfundene Fahrmaschine" in: Badwochenblatt für die Großherzogliche Stadt Baden of 29th of July 1817
- ↑ Eesfehani, Amir Moghaddaas: "The Bicycle's Long Way to China", Cycle History 13, San Francisco 2003, pp. 94–102
- ↑ Herlihy, David (২০০৪)। Bicycle: the History। Yale University Press। পৃষ্ঠা 31, 62। আইএসবিএন 0-300-10418-9। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-২৯।
আরো পড়ুন[সম্পাদনা]
- Bijker, Wiebe E. (1995). Of bicycles, bakelites, and bulbs: toward a theory of sociotechnical change. Cambridge, Massachusetts: MIT Press. আইএসবিএন ৯৭৮০২৬২০২৩৭৬৪.
- Cycle History vol. 1–24, Proceedings of the International Cycling History Conference (ICHC), 1990–2014
- Friss, Evan. The Cycling City: Bicycles and Urban America in the 1890s (University of Chicago Press, 2015). x, 267 pp.
- Tony Hadland & Hans-Erhard Lessing: Bicycle Design – An Illustrated History. The MIT-Press, Cambridge (USA) 2014, আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৬২-০২৬৭৫-৮
- David Gordon Wilson Bicycling Science 3rd ed. 2004
- David V. Herlihy Bicycle – The History. 2004
- Hans-Erhard Lessing Automobilitaet – Karl Drais und die unglaublichen Anfaenge, 2003 (in German)
- Pryor Dodge The Bicycle 1996 (French ed 1996, German eds 1997, 2002, 2007)
- Taylor, Michael (২০০৮)। "The Bicycle Boom and the Bicycle Bloc: Cycling and Politics in the 1890s"। Indiana Magazine of History। 104 (3): 213–240।
- Taylor, Michael (২০১০)। "Rapid Transit to Salvation: American Protestants and the Bicycle in the Era of the Cycling Craze"। Journal of the Gilded Age and Progressive Era। 9 (3): 337–363। ডিওআই:10.1017/s1537781400004096।
How I Saved The British Empire. Reminiscences of a Bicycling Tour of Great Britain in the Year 1901 A novel released by Ailemo Books in July 2015. Author Michael Waldock. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯৮১৯২২৪-৩-০. Library of Congress: 2015909543.
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

- International Cycling History Conference (ICHC)
- Karl-Drais memorial
- Karl Drais seen by ADFC Mannheim – Focus on events in Mannheim, being the place of his invention. A 3-page Drais biography is available in more than 15 languages.
- Menotomy Vintage Bicycles – Antique bicycle photos, features, price guide and research tools.
- Metz Bicycle Museum in Freehold, NJ
- Myths and Milestones in Bicycle Evolution by William Hudson (accessed 2005-11-17)
- A Quick History of Bicycles from the Pedaling History Bicycle Museum (accessed 2005-01-06)
- Sharp, Archibald (১৯১১)। "Bicycle"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ। 3 (১১তম সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 913–917।
- Bicyclette of Harry John Lawson
- VeloPress has published dozens of books on the history of cycling and the bicycle.
- The Wheelmen organization