বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৩)
বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৩) | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: বর্গির হাঙ্গামা | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
বাংলা মারাঠা সাম্রাজ্য (পেশোয়া-নিয়ন্ত্রিত) | মারাঠা সাম্রাজ্য (নাগপুর) | ||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
আলীবর্দী খান গোলাম মুস্তফা খান বালাজী রাও পিলাজী যাদব মালহার হোলকার |
রঘুজী ভোঁসলে[২] ভাস্কর পণ্ডিত মীর হাবিব | ||||||||
শক্তি | |||||||||
অজ্ঞাত ~৫০,০০০[১] | ~৪০,০০০[২] | ||||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||||
অজ্ঞাত, তবে সামান্য[২] অজ্ঞাত, তবে সামান্য[২] | অজ্ঞাত, তবে প্রচুর[১][২][৩] |
বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৩) বলতে ১৭৪৩ সালে মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত নাগপুর রাজ্যের মহারাজা রঘুজী ভোঁসলে কর্তৃক বাংলায় পরিচালিত আক্রমণকে বোঝায়। ১৭৪৩ সালের মার্চে রঘুজী বাংলা আক্রমণ করেন, কিন্তু মুঘল সম্রাটের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী আরেক মারাঠা নেতা এবং রঘুজীর প্রতিদ্বন্দ্বী পেশোয়া বালাজী রাও বাংলাকে রক্ষার জন্য অগ্রসর হন[২][৪]। বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের অনুমতিক্রমে তিনি রঘুজীর বাহিনীকে আক্রমণ করে পরাজিত করেন এবং বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন[২][৩]।
পটভূমি[সম্পাদনা]
১৭৪২ সালে বাংলায় পরিচালিত মারাঠাদের প্রথম আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়[২]। কিন্তু রঘুজী ভোঁসলে বাংলা থেকে চৌথ আদায় করার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এজন্য তিনি ১৭৪৩ সালে আবার বিরাট এক সৈন্যবাহিনীসহ বাংলা আক্রমণ করেন এবং মার্চের প্রথমদিকে ভাস্কর পণ্ডিতের সঙ্গে সসৈন্যে কাটোয়ায় পৌঁছান[১][২][৩]।
মুঘল সম্রাট ও পেশোয়ার চুক্তি[সম্পাদনা]
মারাঠারা যখন বাংলায় তাদের দ্বিতীয় অভিযান পরিচালনা করছিল, তখন মুঘল সম্রাট তাঁর ক্ষীয়মাণ প্রতিপত্তির কারণে মারাঠাদের সর্বোচ্চ নেতা রাজা সাহুকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার চৌথ প্রদানে স্বীকৃত হতে বাধ্য হন[৩]। (উল্লেখ্য, বাংলা এসময়ে কার্যত স্বাধীন হলেও কাগজে-কলমে মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল) রাজা সাহু নাগপুরের রাজা রঘুজী ভোঁসলেকে এই চৌথ আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। কিন্তু, ইতোমধ্যে মুঘল সম্রাট রঘুজীর প্রতিদ্বন্দ্বী ও ব্যক্তিগত শত্রু আরেক মারাঠা নেতা পেশোয়া বালাজী বাজী রাও-এর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৭৪২ সালের নভেম্বরে পেশোয়া রঘুজীকে বলপূর্বক বাংলা থেকে বিতাড়িত করতে রাজি হন[৩]। কিন্তু পেশোয়া বাংলায় পৌঁছানোর আগেই ১৭৪২ সালের ডিসেম্বরে বাংলার নবাব আলীবর্দী খান বাংলা থেকে মারাঠাদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন[২]।
রঘুজীর আক্রমণ এবং পেশোয়ার আগমন[সম্পাদনা]
কিন্তু আলীবর্দীর সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। কারণ পরের বছর মার্চে রঘুজী আবার বাংলা আক্রমণ করেন[২]। এদিকে ১৭৪৩ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে পেশোয়া বালাজী একটি শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে বিহারে প্রবেশ করেন। বেনারস থেকে তিনি বিহারের সমতলভূমি, পাহাড়-পর্বত ও জঙ্গল অতিক্রম করেন এবং মুর্শিদাবাদের দিকে যাত্রা করেন[৩][৪]। বস্তুত পেশোয়ার সৈন্যবাহিনী মুঘল সম্রাটের অনুমতিক্রমে রঘুজী ভোঁসলের আক্রমণকারী বাহিনীর হাত থেকে বাংলাকে রক্ষার জন্যই বাংলায় প্রবেশ করেছিল। কিন্তু লুটতরাজের ব্যাপারে এই 'রক্ষক বাহিনী' রঘুজী ভোঁসলের হানাদার বাহিনীর পিছনে পড়ে থাকেনি[২]।
নবাব আলীবর্দী বুঝতে পারেন যে, তাঁর ক্লান্ত সৈন্যদের নিয়ে দুই বিরাট মারাঠা সৈন্যদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে কেবল শক্তিক্ষয় ছাড়া আর কোনো ফল হবে না। এজন্য তিনি পেশোয়ার বন্ধুত্ব গ্রহণ করা সমীচীন মনে করেন[২]। বন্ধুত্বের শপথ বিনিময়ের পর ১৭৪৩ সালের ৩০ মার্চ নবাব এবং পেশোয়া একমত হন যে, নবাব রাজা সাহুকে বাংলার জন্য চৌথ প্রদান করবেন এবং পেশোয়াকে তাঁর সৈন্যবাহিনীর খরচপত্রের জন্য ২২ লক্ষ টাকা প্রদান করবেন[২][৩]। এর বিনিময়ে পেশোয়া মারাঠা হানাদারদের আক্রমণ থেকে বাংলাকে রক্ষা করবেন এবং রঘুজী যেন ভবিষ্যতে আর বাংলায় সমস্যা না করেন সে জন্য রাজা সাহু রঘুজীর সঙ্গে চূড়ান্ত ফয়সালা করবেন। এ মর্মে সন্ধি হওয়ার পর নবাব আলীবর্দী ও পেশোয়া নিজ নিজ সৈন্যসহ রঘুজীর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন[২]।
রঘুজীর পরাজয়[সম্পাদনা]
নবাব এবং পেশোয়ার সম্মিলিত বাহিনীর তাঁর বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার সংবাদ পেয়ে রঘুজী ভয় পেয়ে যান এবং কাটোয়া থেকে শিবির গুটিয়ে বীরভূমে চলে যান[২][৩]। পেশোয়া দ্রুতগতিতে তাঁর অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে অপেক্ষাকৃত ধীরগতিসম্পন্ন নবাবের সৈন্যবাহিনীকে পিছে ফেলে যান, এবং ১৭৪৩ সালের ১০ এপ্রিল রঘুজীর বাহিনীকে ধরে ফেলেন[৩]। তিনি রঘুজীর বাহিনীকে আক্রমণ করে রঘুজীর লোকবল ও রসদপত্রের প্রচুর ক্ষতি করেন[৪] এবং তাঁর লুণ্ঠিত সামগ্রী হস্তগত করে তাঁকে পশ্চিমের পাহাড়ি অঞ্চলের দিকে তাড়িয়ে দেন[৩]। রঘুজী সম্বলপুরের রাস্তা ধরেন এবং তারপর পুনায় ফিরে যান।
ফলাফল[সম্পাদনা]
পেশোয়ার নিকট রঘুজীর শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় মারাঠাদের দ্বিতীয় অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। ১৭৪৩ সালের জুন থেকে ১৭৪৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শান্তিতে অতিবাহিত হয়[৩]। ১৭৪৪ সালের মার্চে মারাঠারা আবার বাংলা আক্রমণ করে[২][৩]।
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Jadunath Sarkar। "Fall Of The Mughal Empire"।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন ড. মুহম্মদ আব্দুর রহিম, (বাংলাদেশের ইতিহাস), আলীবর্দী ও মারাঠা আক্রমণ, পৃ. ২৯৩–২৯৯
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ মোহাম্মদ শাহ (২০১২)। "মারাঠা হামলা"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ ক খ গ G.S.Chhabra (১ জানুয়ারি ২০০৫)। Advance Study in the History of Modern India (Volume-1: 1707-1803)। Lotus Press। পৃষ্ঠা 29–47। আইএসবিএন 978-81-89093-06-8।