বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বা সংক্ষেপে বিসিক (BSCIC=Bangladesh Small and Cottage Industry Corporation) বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। ১৯৫৭ সালে সংসদীয় আইনের অধ্যাদেশ বলে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বা ইপসিক (EPSCIC=East Pakistan Small and Cottage Industry Corporation)।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গঠনের লক্ষ্যে তদানীন্তন গণপরিষদে বিল উত্থাপন করেন। এরই ফলশ্রুতিতে একই বছরের ৩০ মে পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (EPSIC) ইপসিক প্রতিষ্টিত হয়, যা স্বাধীনতা উত্তরকালে বিসিক (BSCIC) নাম ধারণ করে। বিসিক বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র কুটির ও গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও কুটির খাতের পোষক কর্তৃপক্ষ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে বিসিকের মৌলিক কাজ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি যে উদ্যোক্তারা চাকুরি করবেনা, তারা শিল্প কারখানা স্থাপন করে অন্যকে চাকুরি দিবে, তারা দাতা হবে গ্রহীতা নয়। [১]
পরিচালনা পর্ষদঃ-[সম্পাদনা]
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বিসিকের প্রধান নির্বাহী বা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পরিচালক পর্ষদের অপর ছয়জন সদস্যও সরকারের যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালক পর্ষদের সহযোগিতা ও প্রশাসনিক বিষয় তদারকীর জন্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন সরকারের উপ-সচিব একজন কর্মকর্তা।
প্রধান কার্যালয়ঃ-[সম্পাদনা]
করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় ১৩৭/১৩৮ মতিঝিল বা/ এ ঢাকায় অবস্থিত। এখানে পরিচালক পর্ষদের সদস্যগণ সার্বক্ষণিক ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিসিক প্রধান কার্যালয়ে মোট ১০(দশ) টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগ গুলো হলো প্রশাসন, হিসাব ও অর্থ, ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতি, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, পরিকল্পনা, প্রকল্প, প্রযুক্তি, পুরকৌশল ও নিরীক্ষা বিভাগ। বিভাগের প্রধান হিসেবে মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ-[সম্পাদনা]
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় শহরে বিসিকের ৪ (চার) টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এগুলোর প্রধান হচ্ছেন মহাব্যবস্থাপক সমপর্যায়ের আঞ্চলিক পরিচালক যিনি অধীনস্থ জেলা সমূহের কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি করে থাকেন।
জেলা কার্যালয় (শিল্প সহায়ক কেন্দ্র):-[সম্পাদনা]
জেলা কার্যালয় হিসেবে প্রতিটি জেলায় ১ টি করে শিল্প সহায়ক কেন্দ্র রয়েছে। বস্তুত এ শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের মাধ্যমে বিসিকের অধিকাংশ সেবা সহায়তা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে।
বিসিক এর কার্যক্রম[সম্পাদনা]
শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের সেবা সহায়তা কার্যক্রমঃ-[সম্পাদনা]
(ক) বিনিয়োগ পূর্ব সহায়তাঃ-
- ০১। শিল্পোদ্যোক্তা চিহ্নিতকরন বা উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা।
- ০২। শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্প ষ্থাপনের বিষয়ে উদ্যোক্তাগনকে ধারনা দেয়া।
- ০৩। বিপনন সমীক্ষা প্রনয়ন।
- ০৪। বিপনন সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন প্রনয়ন।
- ০৫। উপ-খাত ভিত্তিক সমীক্ষা প্রনয়ন।
- ০৬। প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রনয়ন।
- ০৭। প্রকল্প প্রস্তাব প্রনয়ন ও মূল্যায়ন।
- ০৮। কারিগরী তথ্য সংগ্রহ ও বিতরন।
(খ) বিনিয়োগ কালীন সহায়তাঃ-
- ০৯। অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা সহ শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ প্রদান।
- ১০। ঋণ ব্যবস্থাকরন / ঋণ সহায়তা প্রদান।
- ১১। উদ্যোক্তার নিজস্ব বিনিয়োগ শিল্প স্থাপনে সহায়তা দান।
- ১২। নক্শা নমুনা উন্নয়ন ও বিতরন।
- ১৩। ঋণ বিতরনকৃত প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকীকরন।
- ১৪। ঋণ আদায়ের জন্য শিল্প ইউনিট পরিদর্শন।
(গ) বিনিয়োগোত্তর সহায়তাঃ-
- ১৫। ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মেলন আয়োজন।
- ১৬। পন্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান।
- ১৭। সাব-কন্ট্রাকটিং ইউনিট তালিকা ভূক্তি করন।
- ১৮। সাব-কন্ট্রাকটিং সংযোগ স্থাপন।
- ১৯। সেমিনার কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন।
- ২০। বিভিন্ন তথ্য বুলেটিন প্রকাশ করা।
- ২১। কর্মসংস্থান সিৃষ্টি করা।
(ঘ) বিবিধ কর্মকান্ডঃ-
- ২২। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্ট্রেশন প্রদান।
- ২৩। কর শুল্ক ইত্যাদি মওকুফ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
- ২৪। শিল্পের কাঁচামাল ও মোড়ক সামগ্রী আমদানীর ক্ষেত্রে প্রাধিকার নির্ধারনে সুপারিশ প্রদান।
- বিনিয়োগ পূর্ব পরামর্শ
- বিনিয়োগ পরবর্তী সম্প্রসারণ সেবা
- কারিগরি তথ্য
- হ্যান্ডিক্রাফট এর নকসা প্রনয়ন
- শিল্পের যাবতীয় তথ্য এবং পরিসংখ্যান
- বাজারজাতকরণ তথ্য
- অবকাঠামোগত সুবিধা
- দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ
- উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ
- ঋণ সুবিধা
বিসিক ক্ষুদ্র শিল্পে মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋন প্রদান করে থাকে। এই ঋন কার্যক্রম সরাসরি অথবা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ঢাকায় বিসিক-এর প্রধান কার্যালয় ছাড়াও সারা দেশে ৪টি আঞ্চলিক অফিস এবং ৬৪ টি জেলা অফিসের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।এছাড়াও সারাদেশে বিসিকের ৭৬টি শিল্প সহায়ক কেন্দ্র রয়েছে।