বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বাংলাদেশে সমকামিতা অধিকার থেকে পুনর্নির্দেশিত)
বাংলাদেশ বাংলাদেশ এ সমকামিতা অধিকার
বাংলাদেশ
সমলিঙ্গের প্রতি যৌন কার্যকলাপ আইনগত বৈধ?অবৈধ
জরিমানা/বিচার:
দেশের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক পায়ুমৈথুন তথা সমকাম শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দুই বছর থেকে শুরু করে দশ বছর কারাদণ্ড এবং উপরন্তু জরিমানাও আরোপযোগ্য।[১]
লিঙ্গ পরিচয় / অভিব্যক্তিঅনুপস্থিত
নিরাপত্তায় বৈষম্যঅনুপস্থিত
পারিবারিক অধিকার
সম্পর্কের স্বীকৃতিব্যবস্থা নেই
গ্রহনযোগ্যতাঅনুল্লিখিত
বাংলাদেশী এলজিবিটি জনসমাজের উদ্দেশ্যে জন অ্যাশলি (পশ্চিমি ব্যক্তি) নির্মিত পতাকা।

বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার সমাজ, ধর্ম, সংবিধান ও আইন সমর্থিত কোনো বিষয় নয়। সমকামীরা তাদের যৌনঅভিমুখ গোপন রাখে এবং সমলিঙ্গীয় যৌনকর্ম সম্পূর্ণ অপ্রকাশ্য বিবেচনা করা হয়।[১][২][৩]

বাংলাদেশের মতো একটি রক্ষণশীল দেশে সমকামী অধিকার নিয়ে কাজ করাটা দুরূহ হলেও কিছু সংগঠন আছে যারা মানুষের সমকামের অধিকার বিষয়টি নিয়ে সক্রিয়। মূলত সমকামী হিসেবে কেউ আত্মপ্রকাশ করলে তাকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে সমকামী অধিকারকর্মীদের হত্যার হুমকি পেতেও জানা যায়। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যকার প্রেম মানানসই নয়; সমাজে কেবল দুইজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে সম্মতিমূলক প্রেম এবং বিয়ে কিছুটা সমর্থিত যদিও এ-ক্ষেত্রেও অনেক সামাজিক এবং আইনি বাঁধা রয়েছে। সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যকার প্রেম একদমই সমর্থিত নয়, সম্মতি থাকলেও, ঠিক এই কারণে বাংলাদেশের মানুষরা তাদের সমকাম প্রবৃত্তি গোপন করেন আর প্রকাশ করলেও খুব কাছের বিশ্বস্ত মানুষের কাছে ছাড়া করেননা।[৪][৫][৬]

আইন ও অপরাধের ধারা[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সংবিধান-এ সকল নাগরিকের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার দেয়া হলেও নৈতিক অবক্ষয়ভিত্তিক বিধিনিষেধ রয়েছে।

  • খন্ড II আর্টিকেল ১৯ - সকল নাগরিকের সমান সুযোগের অঙ্গিকার।
  • খন্ড III ধারা ২৭ - সকল নাগরিকের জন্য আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার রয়েছে।
  • ধর্ম ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় উভয়ে প্রতিশ্রুতিশীল, কিন্তু অবশ্যই এই স্বাধীনতা "শালীনতা বা নৈতিকতা" ভিত্তিক বিধিনিষেধ সাপেক্ষে।
  • একজন নাগরিক সংসদের একজন সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা পাবে না যদি উক্ত নাগরিক কোন "অপরাধী হয়, অথবা “দুশ্চরিত্র অপরাধ" এর দোষী সাব্যস্ত হয়।

সমকামিতা নিয়ে যদিও বাংলাদেশে কোনো স্পষ্ট আইন নেই কিন্তু বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক পায়ুমৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দুই বছর থেকে শুরু করে দশ বছর কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে।[৭] এ আইনে বলা হয়েছেঃ

৩৭৭. প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ: কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে। ব্যাখ্যা: ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণে যৌনসঙ্গমের প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে লিঙ্গপ্রবেশের প্রমাণ যথেষ্ট হবে।[৭][৮]

৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যায় পায়ুসঙ্গমজনিত যে কোন যৌথ যৌন কার্যকলাপকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একারণে, পরস্পর সম্মতিক্রমে বিপরীতকামী মুখকামপায়ুমৈথুনও উক্ত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।[৯][১০] বাংলাদেশের বিয়ের আইনে একজন পুরুষ একজন নারীর সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে, সমলৈঙ্গিক বিয়ের কোনো স্বীকৃতি বাংলাদেশের আইনে নেই।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলাদেশীরা প্রেম এবং যৌনতার ক্ষেত্রে আবহমান কাল ধরেই রক্ষণশীলতা অবলম্বন করে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সমাজে এগুলো ট্যাবু ছিলো।[২] অন্যদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবেও কখনোই বৈধ করার চেষ্টা হয়নি এই প্রেম বা যৌন-স্বাধীনতার ব্যাপারটা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে কখনোই সমকামিতা নিয়ে কোথাও কোনো কিছু লিখিত হয়নি; সমকামিতার কোনো লিপিবদ্ধ ইতিহাস বাংলাদেশে কখনোই পাওয়া যায়নি। যেহেতু বাংলাদেশের সমাজে যৌনতা, প্রেম এসব নিয়ে মানুষ তেমন একটা আলোচনা করতোনা কিংবা করলেও খুব গোপনে করতো এবং এসব সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ ছিলো তাই এমনটা হয়েছে; ১৯৮০-এর দশকে কিছু পতিতালয়ে সমকামী পুরুষ যৌনকর্মীর কথা বাংলা সংবাদপত্রে উল্লেখিত হয় যদিও সমকামিতার পক্ষে কিছু লিখা হয়নি; আর তখনো 'সমকামিতা' শব্দটি তখনো বাংলাদেশীরা ব্যবহার করতোনা, পত্রিকায় 'পায়ুকাম' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিলো। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে এক সমকামী পুরুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস ধরা পড়লে তাকেও পায়ুকামী এবং পুরুষ যৌনকর্মী উল্লেখ করে পত্রিকাগুলো। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে 'সমকাম' বা 'সমকামী' শব্দদুটিও ব্যবহৃত হতো।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, নাটক, সাহিত্য, শিল্পকলা বা যে কোনো গণমাধ্যমে কখনো পায়ুকাম বা সমকাম কোনোটা নিয়েই কখনোই খোলাসা আলোচনা করা হয়নি আর হলেও সেটা হয়েছে সমকামিতাকে নেতিবাচক এবং আপত্তিকর হিসেবে উল্লেখ করে এবং এটাও শুধু সংবাদপত্রে হয়েছে অন্যান্য জায়গায় সমকাম বা অন্যান্য প্রেম বা যৌনতা সম্পর্কিত আলোচনাও নিষিদ্ধ ছিলো। আবার বাংলাদেশি চলচ্চিত্র বা নাটকে প্রেমের উপস্থাপন হয়েছে রক্ষণশীলভাবে এবং সেটা ছিলো বিষমকামী প্রেম।

২০১৫ সালে ডয়চে ভেলে বাংলার এক প্রতিবেদন-জরিপে দেখা যায় মানুষের মতামতঃ

[১১]

এবং ২০১৯ সালে ডয়চে ভেলে বাংলাতেই আরেকটি প্রতিবেদনের মতামতঃ

[১২]

২০১৪ সালে সমকামীদের পক্ষ নিয়ে লিখা একটি সাময়িকী বের হয় যার নাম ছিলো রূপবান কিন্তু ২০১৬ সালে সাময়িকীটির সম্পাদক জুলহাজ মান্নান তার এক বন্ধু সহ রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে দূর্বৃত্তদের দ্বারা খুন হলে সাময়িকীটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।[১৩]

সামাজিক মনোভাব[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে প্রকাশ্যে সমলিঙ্গের বন্ধুদের মধ্যে পারস্পরিক আবেগী আকর্ষণ প্রচলিতভাবে স্বীকৃত, এটা নিয়ে কোন সমালোচনা না হলেও, সমকামের প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উক্ত দেশের ৯০% ইসলাম ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যার ধর্মীয় ঐতিহ্য (মধ্যমপন্থী) ও বাংলাদেশী সমাজের মানসিকতার ফলে উক্ত বিরোধী মনোভাব দেখা যায়। পরিবারে বাইরের ব্যক্তিবর্গ যেমন: পুলিশ, প্রেম এবং যৌনস্বাধীনতা-বিদ্বেষী ও মুসলিম মৌলবাদী দলসমূহ এলজিবিটি (হিজড়া ব্যতীত) সদস্যদেরকে হয়রানি, নির্যাতন ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করতে পারে।[১৪][১৫] এই নৈতিক মানদণ্ডে সরকার কোনো অর্থায়ন না করলেও কোনো প্রকার উদ্যোগ নিতে কোন প্রকার উৎসাহ বা সক্রিয়তাও কখনো তাদের মাঝে দেখা যায় না। ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিল ঢাকার কলাবাগানে নিজ বাসায় সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান খুন হন; জুলহাজ 'রূপবান' নামের এক সমকামবিষয়ক ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন।[১৬]

সমকাম বাংলাদেশের আইনে অপরাধ হওয়ায় বাংলাদেশের পুলিশকেও সমকামীদেরকে গ্রেফতার করতে দেখা গেছে; সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে এক নারী সমকামীযুগলকে বিয়ের অপরাধে র‍্যাব গ্রেফতার করে[১৭], এরপর ২০১৭ সালে খবর পাওয়া যায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে সমকামী ছেলেদের গ্রেফতারের খবর[১৮] এবং ২০১৮ সালে পাবনা জেলায় দুই ছেলের বিয়ের খবর আসে, এ-ক্ষেত্রেও পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছিলো।[১৯]

বাংলাদেশী সমকাম-অধিকার বিষয়ক সংস্থাসমূহ[সম্পাদনা]

পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের এলজিবিটি অধিকার শোভাযাত্রা (২০১৫)।

বাংলাদেশে প্রথম এলজিবিটি সংক্রান্ত জনসচেতনতা গড়ে তোলার প্রকাশ্য প্রয়াস শুরু হয় ১৯৯৯ সালে যখন রেংগ্যু নামক এক কানাডীয় নাগরিক (যিনি জাতিগতভাবে একজন চাকমা) বাংলাদেশের সমকামীদের জন্য প্রথম অনলাইন গ্রুপ "গে বাংলাদেশ" প্রতিষ্ঠা করেন।[২০] এর সদস্য সংখ্যা একহাজার পর্যন্ত হয়েছিল, কিন্তু রেংগ্যুর মৃত্যুর পরে এর কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে।[২০] এরপর ২০০২ সালে ইয়াহু পোর্টালে প্রকাশ এবং আবরার দ্বারা পরিচালিত টিন গে বাংলাদেশ এবং কাজি হক দ্বারা পরিচালিত বয়েস অব বাংলাদেশ নামক দুইটি অনলাইন গ্রুপের কার্যক্রম শুরু হয়। ইয়াহু কর্তৃপক্ষ দুইটি গ্রুপই ২০০২ সালে মুছে ফেলে। বিভিন্ন ভাবে নাম পরিবর্তন ও বারবার চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বয়েজ অনলি বাংলাদেশ যা বর্তমানে “বয়েজ অব বাংলাদেশ” নামে পরিচিত এই গ্রুপটিই টিকে আছে। বর্তমানে তানভির আলম নামে পরিচালিত গ্রুপটি বাংলাদেশী সমকামীদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক।[২১] এটি ২০০৯ থেকে ঢাকায় এলজিবিটি সচেতনতাবর্ধক অনুষ্ঠান করে আসছে। এই দলটি বাংলাদেশে একটি সুসংহত এলজিবিটি সমাজ গড়তে চায়, এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাটির প্রযোজ্যতার অবসান চায়।[২২]

কিন্তু ১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে ঢাকার কাকরাইলে বন্ধু নামে একটি বিদেশী সাহায্যপুষ্ট বেসরকারী সংস্থা স্থাপিত হয় যা প্রথম থেকেই পুরুষ সমকামীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে বন্ধু’র শাখা দপ্তর স্থাপিত হয়েছে। এই সংস্থাটি সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হওয়ায় এর কার্যক্ষেত্র প্রকাশ্য ও ক্রম প্রসারমান।[২৩][২৪]

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে, বাংলাদেশের প্রথম এলজিবিটি সাময়িকী প্রকাশিত হয়। প্রেমের প্রতিনিধিত্ব করে, এরূপ লোককাহিনী "রূপবান" থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সাময়িকীটির নামকরণ করা হয় রূপবান সাময়িকী।[২৫]

১৪ এপ্রিল বাঙালি নববর্ষ হওয়ায়, এদিনটি বাংলাদেশে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। ২০১৪ সালে এ দিনটিতে "রেইনবো র‍্যালি" (রঙধনু শোভাযাত্রা) ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হয়। হুমকির পর ২০১৬ সালে এধরনের শোভাযাত্রা বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রূপবান (ম্যাগাজিন) প্রতিষ্ঠাতা এবং রেইনবো র‍্যালির সংগঠক জুলহাজ মান্নান বন্ধুসহ খুন হন।[১৬]

অসংখ্য মানুষ বয়েজ অব বাংলাদেশের (বব) কাছে তাদের সমস্যার কথা বিশদভাবে বলতে থাকে। এই ফোরাম কখনোই নিজেদের সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন করে নি, কারণ তারা নিজেদের নিছক পুরুষ-পুরুষ যৌনক্রিয়া করতে উৎসাহিত করে, এরুপ উপাধি পেতে চায়নি। এই দলটির সমন্বয়কারী মনে করেন, তাদের কাজের পরিধি আরো ব্যাপক।[২৬] অনলাইনে সক্রিয় এই দলটি সমকামী পুরুষদের সাক্ষাৎ করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, এবং তাদের মধ্যে সামাজিকীকরণ বৃদ্ধিতে কাজ করে। ববে নিবন্ধিত সদস্যসংখ্যা ২০০০ এর বেশি এবং তাদের মধ্যে পিএইচডিধারী ও চিকিৎসকরাও আছেন।[২৬]

যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা বিষয়ক ফান্ড এবং বিভিন্ন এনজিওগুলো বাংলাদেশ যাতে যৌন শিক্ষা এবং এলজিবিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বিবেচনা করে তার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। ২০১৩ খ্রিষ্ঠাব্দের ১৬ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ এশিয়ান এবং প্যাসিফিক পপুলেশন কনফারেন্সে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচিত হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সমকামীদের স্বীকৃতি দেওয়ার ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন বলেন, এধরনের কোন নীতি বাংলাদেশের সামাজিক আদর্শের বিরুদ্ধে যায় বলে বাংলাদেশ এধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেশে বাস্তবায়ন করবে না।[২৭]

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক পপুলেশন ডেভেলপম্যান্ট কনফারেন্সে বাংলাদেশ পুনরায় সমকামীদের স্বীকৃতি দেওয়ার ধারণার বিরোধিতা করে। আবদুল মোমেন ষষ্ট এশীয় প্যাসিফিক পপুলেশন কনফারেন্সে দেওয়ার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, অন্যান্য মুসলিম এবং কিছু খ্রিষ্ঠান দেশের মত বাংলাদেশ সমকামীদের অধিকার সমর্থন করবে না, কারণ তা তার মুল্যবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে না।[২৮]

সারাংশ ছক[সম্পাদনা]

সমকামিতা বৈধ? (শাস্তি: বাংলাদেশ দণ্ডবিধির 'ধারা ৩৭৭' অনুযায়ী সর্বোচ্চ দশ বছরের কারাদণ্ড)[২৯]
দৈহিক মিলনের জন্য ন্যূনতম বয়স? No
কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আইন?
পণ্য, সেবা এবং বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আইন?
অন্যান্য সব জায়গায় বৈষম্যবিরোধী আইন (বিদ্বেষমূলক বক্তব্যপ্রদানকারী বা পরোক্ষ বৈষম্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন)?
সমলৈঙ্গিক বিয়ে?
সম-লিঙ্গের মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের স্বীকৃতি
সমলিঙ্গের মানুষের সন্তান দত্তক No
এতিম শিশু দত্তক? No
সামরিক বাহিনীতে চাকরির অনুমতি? No
লিঙ্গ পরিবর্তনের অনুমতি? No
তৃতীয় লিঙ্গধারীদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি হ্যা (২০১৩ সাল থেকে)[৩০]
সমকামিনীদের জন্য আইভিএফ? No
সারোগেসি? No(সকল স্তরের মানুষের জন্যই নিষিদ্ধ)[৩১]
রক্তদানের অনুমতি? No

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সমকামিতা ফৌজদারি অপরাধ, নিশাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী"ntvbd.com। ৫ মে ২০১৬। 
  2. "সমকামীদের অধিকারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে"www.dw.com 
  3. "বাংলাদেশের সমকামীদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই"www.dw.com 
  4. "সমকামিতা: দুই পুরুষে ঘর!"dailyjanakantha.com 
  5. "সমকামী এক বাংলাদেশির অভিজ্ঞতা: 'আমি এখন পরিবারের বিষফোঁড়া'"bbc.com। ১৯ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৭ 
  6. "Raped and abused, this 23-year-old gay refugee from Bangladesh on the run in Nepal shares his story"gaystarnews.com। ২৬ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "Sodomy Laws Around the World"। ২৪ এপ্রিল ২০০৭। ৮ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ 
  8. "Indian Penal Code" (পিডিএফ)। District Court Allahabad। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  9. "Bangladesh: Treatment of homosexuals including legislation, availability of state protection and support services"। www.unhcr.org। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১২ 
  10. "Bangladesh_Penal_Code_1860_Full_text.pdf (application/pdf Object)" (পিডিএফ)। www.unodc.org। ১২ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১২ 
  11. "বাংলাদেশের সংস্কৃতি সমকামিতা সর্মথন করে না"dw.com। ২৮ অক্টোবর ২০১৫। 
  12. "কেমন আছেন বাংলাদেশের সমকামীরা"dw.com। ২৬ মে ২০১৯। 
  13. "চাপাতির শিকার এবার সমকামী অধিকারকর্মী"bdnews24.com। ২৫ এপ্রিল ২০১৬। ১২ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২১ 
  14. "Founder of Bangladesh's first and only LGBT magazine killed"theguardian.com। ২৫ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  15. "28 youngsters detained on charges of homosexuality in Bangladesh"indiatoday.in। ১৯ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  16. "'রূপবান' পত্রিকার সম্পাদকসহ দুজনকে কুপিয়ে হত্যা"ntvbd.com। ২৫ এপ্রিল ২০১৬। 
  17. "বাংলাদেশে দুই 'সমকামী' তরুণীর প্রেম নিয়ে বিতর্ক"dw.com। ২৬ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২০ 
  18. "ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২৭ জন 'সমকামী' আটক করেছে র‍্যাব"bbc.com। ১৯ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২০ 
  19. "বাংলাদেশের পাবনায় কথিত সমকামী বিয়ে নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন, শুরু হয়েছে পুলিশী তদন্ত"4 April 2018। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২০ 
  20. "The Boys of Bangladesh"। pink-pages.co.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-০৯ 
  21. "সমকামীদের মৃত্যুদণ্ড বিলোপের বিপক্ষে বাংলাদেশ"dw.com 
  22. "Bangladesh: Treatment of homosexuals including legislation, availability of state protection and support services"। www.unhcr.org। ২০১৮-১২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-০৯ 
  23. "Mission & Vision"www.bandhu-bd.org। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  24. "স্বীকৃতি উদ্‌যাপন করবে হিজড়ারা"bdnews24.com। ২৫ অক্টোবর ২০১৪। ১৮ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  25. "Archived copy"। ৩০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  26. Ebert, Rainer, and Mahmudul Hoque Moni. "In Bangladesh, Dies a Vestige of Colonialism." Gay & Lesbian Review Worldwide 18.3 (2011): 45-. Print
  27. Zaman, Sheikh Shahariar. "UNFPA for Gay Rights in Bangladesh." UNFPA for Gay Rights in Bangladesh | Dhaka Tribune. N.p., n.d. Web. 25 October 2014.
  28. Zaman, Sheikh Shahriar. "Bangladesh Opposes ICPD's LGBT Rights Move | Dhaka Tribune." Bangladesh Opposes ICPD's LGBT Rights Move | Dhaka Tribune. N.p., n.d. Web. 25 October 2014. The IPCD proposed to provide rights to the LGBT community
  29. "Police just arrested 27 men 'for homosexuality' in Bangladesh"Washington Post। ১৯ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  30. "Hijras legally 3rd gender but yet to get rights"The Daily Star। ২৪ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  31. SURROGACY LAW AROUND THE WORLD

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]