বাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্ম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এশিয়া মহাদেশজুড়ে পেশাদার যৌনকর্মের অবস্থা
  অপরাধ নয় – পেশাদার যৌনকর্মের জন্য কোনো আইনি শাস্তি নেই
  বৈধ – পেশাদার যৌনকর্ম বৈধ এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিচালিত
  বিলুপ্তিমূলক – পেশাদার যৌনকর্ম বৈধ, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড যেমন যৌনপল্লি ও যৌন কারবারি অবৈধ; পেশাদার যৌনকর্ম পরিচালিত নয়
  নব্য-বিলুপ্তিমূলক – লিঙ্গ ক্রয় ও ৩য় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা অবৈধ, লিঙ্গ বিক্রয় বৈধ
  অবৈধতা – পেশাদার যৌনকর্ম অবৈধ
  বৈধতা স্থানীয় আইনভেদে ভিন্ন

বাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্ম (পতিতাবৃত্তি) আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হলেও বৈধ। আইন অনুসারে কেবল প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা আদালতে ঘোষণা দিয়ে পেশাদার যৌনকর্মে নিয়োজিত হতে পারেন, যদিও বাংলাদেশে লক্ষাধিক যৌনকর্মীর মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিশুও রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের যৌনকর্মী দেখা যায়: হোটেল ভিত্তিক, পার্ক ও উদ্যানে ভাসমান এবং যৌনপল্লিভিত্তিক। বিশ ও একুশ শতকে বেশ কিছু যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হলেও ২০২০ সালে বাংলাদেশে ১৪টি নিবন্ধিত যৌনপল্লি ছিলো। পেশাদার নারী যৌনকর্ম বৈধ হলেও পেশাদার পুরুষ যৌনকর্ম অবৈধ, যদিও বিভিন্নস্থানে তার প্রচলন রয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে ২ লক্ষ যৌন কর্মী আছে যাদের মধ্যে ১০ থেকে ২৯ হাজার অপ্রাপ্তবয়স্ক।[১]

নামকরণ[সম্পাদনা]

যৌনকর্মীদের আভিধানিকভাবে দেহপসারিণী, নগরবধূ, বেশ্যা, রক্ষিতা, খানকি, জারিণী, পুংশ্চলী, অতীত্বরী, গণিকা, কুলটা, বারণবণিতা, কুম্ভদাসী, নটি, রূপজীবা ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।[২] অভিধান মতে তাদের খানকি,ছিনাল, ছেনাল, গণিকা, গণেরুকা, দেহোপজীবিনী, নটী, নটিনী, বারাঙ্গনা, বারবধূ, বারবিলাসিনী, পতিতা, বেশ্যা, ভ্রষ্টা, যৌনকর্মী, রাণ্ডী, রূপোপজীবিনী, হট্টবিলাসিনী ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়।[৩] বেশ্যা, পতিতা, গণিকা, বন্ধকী, বারাঙ্গনা, খানকি সহ পেশাদার যৌনকর্মীর বাংলায় প্রায় ৩০০টি প্রতিশব্দ আছে।[৪] যেহেতু স্বাধীনভাবে জীবিকা বেছে নেবার সুযোগ রয়েছে সেহেতু আধুনিক যুগে এই পেশায় জড়িতদের আভিধানের কোনো হীন নামে অভিহিত না করে পেশাজীবী যৌনকর্মী বা পেশাদার যৌনকর্মী বলে অভিহিত করা হয়।[৫] “যারা দারিদ্র, প্রতারণা, জবরদস্তি, অসহায়ত্ব এবং অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থার শিকার হয়ে অর্থ বা উপঢৌকনের বিনিময়ে যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত তথা নৈতিকতা পরিপন্থী পেশায় নিয়োজিত হয়” তাদের বাংলাদেশ সরকার “সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়ে” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।[৬]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ সালে রচিত কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে যৌনকর্মীদের উল্লেখ রয়েছে, যাতে তাদের বার্ষিক আয় ১,০০০ পণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থশাস্ত্রের সমসাময়িক রচনা বাৎস্যায়নের কামসূত্র অনুসারে প্রাচীনকালে যৌনকর্ম ছিলো একটি বিকশিত কলাবিদ্যা। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি স্বীকৃত পেশা হলেও এটি সর্বদা সম্মানজনক পেশা ছিলো না। মহাভারতের উল্লেখ অনুসারে একজন যৌনকর্মী ভালো প্রকৃতির হলে পরজন্মে উচ্চতর জন্মগ্রহণ করতে পারেন। বৌদ্ধ ধর্মেও এই একই মত পোষণ করা হয়েছে। প্রাচীনকালে নারীদের নৃত্য পরিবেশনাও যৌনসেবার অংশ ছিলো, এবং এই পেশায় জড়িতদের বলা হতো নটিনী, গণিকা বা নর্তকী।[৫] জৈন লেখক হেমচন্দ্রের লেখায় বলা হয়েছে “রাজা নন্দ” যৌনকর্মীর গর্ভজাত এক নাপিতের সন্তান। বৌদ্ধ গ্রন্থে পাওয়া যায় আম্রপালি, সালাবতী, সামা, সুলমা সহ বিভিন্ন যৌনকর্মীর বর্ননা।[৭]

কালিকাপুরাণোক্ত দুর্গাপূজা পদ্ধতি গ্রন্থে প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায় বর্ণনা করেছেন যে দুর্গাপূজার সময়ে ব্যবহৃত দশ ধরনের মাটির মধ্যে পেশাদার যৌনকর্মীর বাড়ির দরজার মাটি অপরিহার্য, কারণ যৌনকর্মীরা এই সমাজকে নির্মল রাখেন।[২][৭] একসময়ে বাংলাদেশের বেদে নারীরা যৌনপেশায় নিযুক্ত ছিলেন, যদিও এখন তারা অধিকাংশই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং এ পেশায় আর নিযুক্ত হননা।[৫] মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বাংলার স্বীকৃত পেশার তালিকা দিতে গিয়ে শুঁড়ি ও বারবনিতার কথা বলেছেন।[৮]

নবাবি যুগ[সম্পাদনা]

পূর্ব বাংলায় বাইজি বা তাওয়ায়েফ সংস্কৃতির প্রথম বিস্তার ঘটে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম পর্বে সুবাদার ইসলাম খাঁর (১৬০৮–১৬১৩) আমলে। যারা নাচ-গান করতেন তাদের কাঞ্চনী বলা হতো। বাইজিরা মনোরঞ্জন করতেন মূলত খেয়াল, ঠুমরি, টপ্পা, গজল ইত্যাদি গান এবং কত্থক ইত্যাদি নাচ পরিবেশন করে। সত্যেন সেনের তথ্যমতে, বাইজিরা গানের ভাব প্রকাশ করতেন নাচের মুদ্রায় এবং হাত, মুখ, চোখ, নাক ও ঠোঁটের অভিব্যক্তিতে। তাঁদের এই আসর পরিচিত ছিল মেহিফল বা মুজরা নামে। আসরে বাইজিরা পেশওয়াজ, চুড়িদার পাজামা, ওড়না ও পায়ে চিকন ঘুঙুর পরাতেন। তাঁদের দেখাশোনা করা, বাজনা বাজানো এবং নতুন গ্রাহক জোগাড় করার জন্য থাকত নিজস্ব সফরদার[৯] পরবর্তীতে ঢাকার নায়েব নাজিম নুসরাত জং (১৭৮৫–১৮২২), শামসুদ্দৌলা (১৮২২–১৮৩১) ও কামরুদ্দৌলা (১৮৩১–১৮৩৬), এবং ঢাকার নবাব আবদুল গনি (১৮৪৬–১৮৯৬) ও খাজা আহসানুল্লাহর (১৮৯৬–১৯০১) সময় এই সংস্কৃতির আরো বিকাশ ঘটে। এসময়ে কলকাতা ও ভারতের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা বাইজিদের অনেকে ঢাকায় থাকতে শুরু করেন এবং শহরে স্থায়ী বাইজিপাড়াও গড়ে ওঠে।[৯][১০] অষ্টাদশ শতকে ঘনরাম চক্রবর্তী ধর্মমঙ্গল কাব্যে বারবনিতাদের রন্ধন পারদর্শিতার দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন।[১১]

উনিশ শতক[সম্পাদনা]

উনিশ শতকের পূর্ব বাংলায়, বিশেষ করে নদী তীরবর্তী শহর ঢাকানারায়ণগঞ্জে, যথেষ্ট মাত্রায় পেশাজীবী যৌনকর্মের প্রচলন ছিল।[৫] জেমস টেলরের আ স্কেচ অফ দা টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস অফ ঢাকা এবং ড. অশ্বিনী তাম্বের দা ইলুসিভ ইন্ট্রিগ: আ ট্রান্সন্যাশনাল ফেমিনিস্ট অ্যানালিসিস অফ ইউরোপিয়ান প্রস্টিটিউশন ইন কলোনিয়াল বোম্বে গ্রন্থ অনুসারে ভারতবর্ষ জুড়ে ইংরেজ সৈন্যদের ৬০% যৌনরোগে আক্রান্ত হবার পর ১৮৬৪ সালে প্রচারিত ক্যান্টনমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী যৌনকর্মীদের নিবন্ধন শুরু হয়। ১৮৮৫ থেকে ১৮৩৫ পর পর্যন্ত ঢাকায় সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা টেলরের তথ্য অনুসারে অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগেও ঢাকায় সংগঠিত যৌনকর্মের অস্তিত্ব ছিলো।[৭]

উনিশ শতকের শেষ দিকে ঢাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে যেসব বাইজি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তার মধ্যে ছিলেন লখনৌর প্রখ্যাত গায়ক ও তবলাবাদক মিঠুন খানের নাতি সাপান খানের স্ত্রী সুপনজান ঢাকায়। নবাব গণির দরবারে নিয়মিত মনোরঞ্জন করতেন পিয়ারি বাই, হীরা বাই ও ওয়ামু বাই। ঢাকার অন্য খ্যাতিমান বাইজিদের মধ্যে ছিলেন বাতানি, জামুরাদ, পান্না, হিমানি, আমিরজান, রাজলক্ষ্মী, কানী, আবছন প্রমুখ। এ ছাড়া কলকাতা থেকে মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসতেন মালকাজান বুলবুলি, মালকাজান আগরওয়ালি, জানকী বাই, গহরজান, জদ্দন বাই, হরিমতী প্রমুখ।[১০][১২] ১৮৭০ দশকে ঢাকার শাহবাগের বাগানবাড়িতে নবাব গণির আমন্ত্রণে মুশতারি বাই গান গেয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সেকালের প্রখ্যাত উর্দু সাহিত্যিক সাহিত্যিক আবদুল গফুর খানআবদুল গাফফার নাসকানকে। কলকাতায় তার গান মুগ্ধ করেছিলো রাইচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে আর কাজী নজরুল ইসলামকে। রেডিওতে তার গান শুনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও মুগ্ধ হয়েছিলেন।[১০][১২]

হিন্দু সম্প্রদায়ের ঝুলন উৎসবের সময় ধনী বণিকদের বাড়িতে নিয়মিত মেহিফলের আয়োজন হতো। ১৮৭৫ সালে আবদুল গনির নবাবি খেতাবপ্রাপ্তির সময় থেকে উনবিংশ শতকের শেষ অবধি প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে নর্তক-নর্তকী ও গায়ক-গায়িকারা শাহবাগের নবাবি প্রাসাদে নাচ-গান করে মনোরঞ্জন করতেন। তাঁদের নওয়াব এস্টেট থেকেই মাসিক বেতন দেওয়া হতো।[৯][১০] হাকিম হাবিবুর রহমান ঢাকা পাঁচাস বারাস পেহলে গ্রন্থে আন্নু, গান্নু ও নবাবিন নামে তিন বোনের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে নবাবিন সবচেয়ে কমবয়স্কা ও সর্বাধিক বিখ্যাত ছিলেন।[৯][১০] এই তিন বোন ১৮৮০-এর দশকে ঢাকার নাটক মঞ্চায়নের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ১৮৮০-এর দশকে শাহবাগে এলাহীজান নামে আরেক বাইজির করুণ পরিণতির বর্ণনা করেছেন হাকিম হাবিবুর রহমান।[১০][১২]

বিশ শতক[সম্পাদনা]

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় শাহবাগের ইশরাত মঞ্জিল সহ বেশ কিছু ভবন মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল যেগুলোতে বাইজি নাচের ব্যবস্থা ছিল।[১৩] নিয়মিত মুজরা হতো আহসান মঞ্জিলের রংমহল, ইশরাত মঞ্জিল, দিলকুশার বাগানবাড়িতে[১০][১২] পরবর্তীতে নবাব সলিমুল্লাহ ১৯০৬ সালের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল ইশরাত মঞ্জিল ভবনটি নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের স্থান হিসেবে নির্বাচন করেন। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বরে এ ভবনেই অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে এটিকে সংস্করণ করে ঢাকার প্রথম আন্তর্জাতিক হোটেলে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে ভবনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যার নাম একসময়ে ছিলো ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ (সাধারণ মানুষের কাছে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত)।[১৩]

গওহর জান (১৮৭৩-১৯৩০)

ঢাকায় মুজরা করতে আসা বাইজিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মালকা জান (১০৬টি গজলের রচয়িতা বহুভাষী সঙ্গীতপ্রতিভা), গওহর জান (মালকা জানের মেয়ে, যিনি নাচের ফাঁকে পোশাক বদলানো প্রচলন করেছিলেন এবং কলকাতার ফ্যাশনে ব্যপক প্রভাব রেখেছিলেন) নূরজাহান, সিদ্ধেশ্বরী, জানকি বাই (ছাপ্পান ছুরি), জদ্দন বাই (মালকা জানের শিষ্যা ও ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নার্গিসের মা), কোহিনূর ও ইন্দুবালা।[৯][১০] এদের মধ্যে গওহর জান (১৮৭৩-১৯২৯) ছিলেন উপমহাদেশে গ্রামোফোন রেকর্ডে কণ্ঠদানকারী প্রথম শিল্পী। হরিমতী গ্রমোফোন রেকর্ডে নজরুল গীতি গেয়ে তিরিশ ও চল্লিশের দশকে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। আরেক বাইজি দেবী বাই ঢাকার প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র দ্য লাস্ট কিস-এ (১৯৩১) অভিনয় করেছিলেন।[১০]

বিত্তশালী সম্প্রদায় ও জমিদারশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা উনিশ শতকের শুরুতে বাইজিবৃত্তি একটি লাভজনক পেশায় পরিণত করেছিল। ২২ নভেম্বর ১৯০৩ সালে প্রকাশিত ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার তথ্যমতে, এক নর্তকীর নবজাত সন্তানের অন্নপ্রাশন উৎসবে খরচ হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা, যখন এক মণ চালের দাম ছিল চার টাকা। ঢাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর জন্য ১৮৭৪ সালে নওয়াব আবদুল গনির আহ্বানে সাড়া দিতে প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন বাইজি রাজলক্ষ্মী ও আমিরজান। তারা ৫০০ টাকা করে দান করেছিলেন। যদিও আর্থিক সচ্ছলতার কারণে বাইজিদের উচ্চ সামাজিক অবস্থান থাকলেও সামাজিক মর্যাদা ও পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতেন তাঁরা।[৯] ত্রিপুরার মহারাজার রাজদরবারের শ্রেষ্ঠ বাইজি নূরজাহান ৪০-৪২ বছর বয়সে অবসর নিয়ে কুমিল্লার মাঝিগাছা গ্রামে মহারাজার দেয়া জমিতে বসবাস করার সময়ে একটি মসজিদ নির্মান করলেও স্থানীয় মুসলমানরা “নটির মসজিদে” আজ অব্দি নামাজ পড়তে রাজি হয়নি।[১৪]

ড. আবুল আহসান চৌধুরী অবিদ্যার অন্তপুর: নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন নিজের রোজনামচায় যৌনপল্লি যাবার কথা লিখেছেন। মরমি কবি হাসন রাজা আর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত যৌনপল্লি যেতেন। যৌনকর্মী সুকুমারী দত্ত মুগ্ধ করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে[২][৭] বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী নাট্য রচয়িতা এবং প্রথম নারী অভিনেত্রী সুকুমারী দত্ত ছিলেন বেঙ্গল থিয়েটারের চারজন নারী অভিনেত্রীর একজন। তার মঞ্চ নাম ছিলো গোলাপ সুন্দরী। অপর তিনজন ছিলেন জগত্তারিণী, এলোকেশি ও শ্যামা। পেশায় সবাই যৌনকর্মী। পরবর্তীতে তিনি সুকুমারী নামেই গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারএমারেল্ড থিয়েটারে অভিনয় করেন।[১৫]

নীতি ও আইন[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্ম আইন অনুযায়ী বৈধ, তবে তা নিয়ন্ত্রিত।[৫] বিশ্বের স্বল্পসংখ্যক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি যেখানে ১৮ অথবা তারও বেশি বয়সের নারীদের জন্য পতিতাবৃত্তি বৈধ।[১৬] তবে পেশাদার যৌনকর্মের ব্যাপারে বাংলাদেশের সংবিধানে বৈরিভাব সুস্পষ্ট।[৫] বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ, ১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷”[১৭] সংবিধানে পতিতাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত ও এই পেশা বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও আইনে ১৮ বছর বয়স হলে কোনো নারী আদালতে ঘোষণা দিয়ে পেশা হিসেবে যৌনকর্ম বেছে নিতে পারেন৷[১৮] বাংলাদেশ পৃথিবীর স্বল্পসংখ্যক দেশগুলোর একটি যেখানে পেশাদার যৌনকর্ম একই সাথে বৈধ এবং অবৈধ।[১৯]

টানবাজারনিমতলী যৌনপল্লি উচ্ছেদ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে ১০০জন যৌনকর্মী বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সহায়তায় হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে আদালত ২০০০ সালের রায়ে পেশাদার যৌনকর্ম বৈধ বলে ঘোষণা দেন। পিটিশনের রায়ে বলা হয়, নারী যৌনকর্মী অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের হলে এবং যৌন ব্যবসাই তার একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে তিনি বৈধভাবে এই ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। রায়ে আরো বলা হয় যে, যৌনপল্লি উচ্ছেদের সরকারি উদ্যোগটি অবৈধ।[২০][২১][২২]

রাষ্ট্র বনাম বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (২০০০) মামলার এই রায়ে আরো বলা হয় যে জীবন ও জীবিকার স্বাধীনতা এবং আইনের সুরক্ষার সাংবিধানিক অধিকার যৌনকর্মীদের জন্যেও প্রযোজ্য এবং তাদের জীবিকার অধিকার হরণ করা বেআইনি। উচ্চ আদালত আরো বলেন যে, অনৈতিক কার্যক্রম দমন আইন ১৯৩৩ (যাকে পতিতা আইনও বলা হয়) এবং ১৮৬০-এর দন্ডবিধি অনুসারে যৌনপল্লি পরিচালনা ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌনকর্মে নিয়োগ নিষিদ্ধ হলেও পেশাদার যৌনকর্ম কোনো আইনেই নিষিদ্ধ নয়।[২২] পেশাদার নারী যৌনকর্ম বৈধ হলেও পেশাদার পুরুষ যৌনকর্ম অবৈধ, যদিও বিভিন্নস্থানে তার প্রচলন রয়েছে।[২৩]

নিবন্ধন[সম্পাদনা]

যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে হলেে আগ্রহী নারীকে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধিত হবার আগে তাকে আদালতে উপস্থিত হয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামা জমা দিয়ে অনুমতিপত্র নিতে হবে।[৫][২৪] এই হলফনামায় তাকে ঘোষণা করতে হবে যে, তিনি অন্য কোন পেশা খুঁজে পেতে অসমর্থ, এবং তার ভরণপোষণের অন্যকোন ব্যবস্থা কিংবা তাকে সাহায্য করার কেউ না থাকায় তিনি স্বেচ্ছায় এই জীবিকা বেছে নিয়েছেন। তাছাড়া এই পেশা নির্বাচনে কোন মহল তার ওপর কোন প্রভাব বিস্তার বা চাপ সৃষ্টি করা হয়নি বরং তিনি জোরজবরদস্তি ছাড়াই নিজস্ব পছন্দে যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।[৫][২৪] এরপর তাকে এই পেশায় সম্মতি জানিয়ে একটি সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে।[১৬]

তাছাড়া ১৮ বছরের নীচে কোনো নারী এই পেশা বেছে নিতে পারবেন না৷ জোর করে কাউকে এই পেশায় নিয়োজিত করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ অভিযোগ রয়েছে যে এই পেশা স্বেচ্ছায় বেছে নিতেও পুলিশকে ন্যুনতম ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে৷[২৫] যৌনপল্লী থেকে মাঝে মধ্যে পুলিশ অপ্রাপ্তবয়স্কদের উদ্ধার করলেও ভাসমান যৌনকর্মীদের ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই৷[১৮] প্রশাসন প্রায়ই যৌনকর্মীর ন্যুনতম বয়সের (১৮ বছর) বিষয়টি উপেক্ষা করেন এবং মিথ্যা বয়স ব্যবহার করে নিবন্ধণ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যৌনপল্লিগুলোতে বহুসংখ্যক শিশু যৌনকর্মে ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের যারা এই পেশায় নিয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে খুব কম ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেয়া হয়।[২৩]

পাচার প্রতিরোধ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো আইনে মানব পাচার-কে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।[২৬] দন্ডবিধি ১৮৬০-এ কোন ব্যক্তির অপহরণ, দাসত্ব ও জবরদস্তিমূলক শ্রম ছাড়াও যৌনকর্মের উদ্দেশ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকা ক্রয় ও বিক্রয় বিষয়ে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে ২০১২ সালের আগে সুনির্দিষ্ট কোন আইন বা কঠোর শাস্তির বিধান ছিল না।[২৭] অনৈতিক কার্যক্রম দমন আইন ১৯৩৩-এ যৌনপল্লি পরিচালনা এবং নারী ও শিশু পাচার দমনের ব্যাপারে শাস্তি প্রদানের কথা বলা থাকলেও সে শাস্তি লঘু প্রকৃতির এবং এতে কেবল নারী ও শিশু পাচারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।[২৬][২৭][২৮] পাচারসংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি দণ্ডবিধির ৩৩৯, ৩৪৯, ৩৫০, ৩৫১, ৩৫৯, ৩৬০, ৩৬১, ৩৬২, ৩৬৩, ৩৬৪, ৩৬৪ (ক), ৩৬৬ (খ), ৩৭০, ও ৩৭১ ধারা, অনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৩৩ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ সহ বিভিন্ন আইনে অন্তর্ভুক্ত আছে।[২৬] বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৫৯-৩৭৪ ধারাসমূহে অপহরণ, দাসত্ব এবং জবরদস্তিমূলক শ্রমের জন্য অর্থদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ড বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও জবরদস্তিমূলক শ্রমের ব্যাপারে শাস্তির মাত্রা (সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড, জরিমানা অথবা উভয় দন্ড) বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত নীতির (“সকল প্রকার জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ এবং এই বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে”) তুলনায় অপ্রতুল।[২৭]

নারীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা (প্রতিরোধক সাজা) অধ্যাদেশ ১৯৮৩-র ৪ ও ৫ নং ধারা অনুসারে যে কোন বয়সের নারীকে বেশ্যাবৃত্তি অথবা যে কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌনসঙ্গম করার জন্য অথবা যে কোন অবৈধ ও নৈতিকতা বিরোধী কাজের জন্য কেনা-বেচা বা আমদানি-রপ্তানি করা হলে তাহার শাস্তি যাবজ্জীবন কারদন্ড বা ১৪ বছর পর্যন্ত কারদন্ড এবং তদুপরি অর্থদন্ডে দণ্ডিত হবে।[২৯] ২০০০ সালে প্রবর্তিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধনী ২০০৩) ৫ ও ৬ ধারায় নারী ও শিশু পাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২৮] প্রথমবারের মতো এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার নারী ও শিশু পাচারের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির চেয়ে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে।[২৭] পাচারসংক্রান্ত মামলাসমূহ সে সময়ে এই ৫ ও ৬ ধারার অধীনে বিচার করা হয়েছে।[২৬]

কিন্তু দেখা যায় এসব আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।[২৮] তাই ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন নামে একটি নতুন আইন প্রবর্তন করে। এই আইনে পাচারকারীদের শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি পাচারের শিকারদের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন ও নিরাপদ অভিবাসনের দিকেও নজর দেয়া হয়। এই আইনের ধারা ৩-এর উপধারায় অনুযায়ী মানব পাচারকে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে “কোন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বল প্রয়োগ করে বা প্রতারণা করে বা উক্ত ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোন অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে বা অর্থ বা অন্য কোন সুবিধা লেনদেনপূর্বক উক্ত ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোন শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেয়া” বলে।[২৭] এই আইনটি মানব পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেশন ২০০০ এবং সার্ক কনভেনশন-এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।[২৮] এই আইনের ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৫ ও ৬ ধারা এবং অনৈতিক কার্যক্রম দমন আইন ১৯৩৩ অকার্যকর করা হয়।[২৭][২৮]

নিয়ন্ত্রণ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশু পতিতাবৃত্তি, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, অবৈধ পতিতালয় ইত্যাদির বিরুদ্ধে আইন বলবৎ আছে। বিভিন্ন আইন কখনও কখনও পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭২, ৩৭৩, ৩৬৪(ক) ও ৩৬৬(খ) ধারায় পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্রয় বিক্রয়ের শাস্তির বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ২৯০, ২৯২ ও ২৯৪ ধারায় পতিতাবৃত্তিকে গনউপদ্রব বলে আইনগতভাবে অপরাধ হিসাবে গন্য করে অপরাধীর জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান করেছে।[২][৩০] তাছাড়া, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ৭৪ ধারায় পতিতা বৃত্তির জন্য আহবান করাকে অপরাধ হিসাবে গন্য করে অপরাধীর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান করেছে।

দন্ডবিধি ৩৭২ ধারা অনুসারে যে লোক আঠার বৎসরের কমবয়স্ক কোন ব্যক্তিকে যে কোন বয়সে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌন সহবাস অথবা কোন বেআইনী ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হবে এই উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হবে এরূপ সম্ভাবনা রয়েছে জেনে সেই ব্যক্তিকে বিক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে, সেই লোকযাহার দশ বছর মেয়াদ পর্যন্ত যে কোন বর্ণনার কারাদন্ড এবং তদুপরি অর্থ দন্ডে দন্ডনীয় হবে। ৩৭৩ ধারা অনুসারে কোন লোক এরূপ ক্রয় করলে তার শাস্তি দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং তদুপরি অর্থদন্ডও হতে পারে। ৩৬৪ (ক) ধারা অনুসারে কোন লোক যদি দশ বছরের কমবয়স্ক কাউকে খুন, গুরুতর আঘাত, দাসত্ব কিংবা কাম-লালসার শিকারে পরিণত করার উদ্দেশ্যে হরণ করে, তাহলে সে মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হবে। যার মেয়াদ ১৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে, তবে ৭ বছরের কম নয়। ৩৬৬ (ক) ধারা অনুসারে কোন লোক যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক কোন বালিকাকে, যার বয়স ১৮ হয়নি, সংগ্রহ করে তাকে কারো সাথে যৌন সংগম করতে বাধ্য করে তাহলে সে কারাদন্ডে দণ্ডিত হবে। যার মেয়াদ ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে এবং সে জরিমানা দন্ডে শাস্তি যোগ্য হবে।[২৯]

মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-র ১২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি পতিতালয় স্থাপন বা পরিচালনা করলে অথবা তা স্থাপন বা পরিচালনা করতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা বা অংশগ্রহণ করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।” একই আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি রাস্তায় বা জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে অথবা গৃহ অভ্যন্তরে বা গৃহের বাইরে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে মুখের ভাষায় বা অঙ্গভঙ্গি করে বা অশালীন ভাবভঙ্গি দেখিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তিকে আহ্বান জানালে সে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে। এ রকম অপরাধের জন্য সে অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে অথবা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।”[২]

সমাজ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্ম সামাজিকভাবে সবচেয়ে ঘৃনিত পেশা,[৫] এবং তারা ঘন ঘন সামাজিকভাবে নিগ্রহের সম্মুখীন হন। প্রায়ই পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে হোটেলে বেআইনি পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে এবং পতিতা ‍ও তাদের গ্রাহকদের উভয়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেয়।[৩১][৩২] যৌনকর্মীদের অনেকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হলেও তেমন কোন নাগরিক সুবিধা তাদের নেই। বয়স হয়ে গেলে তাদের অনেকেই নিদারুণ সমস্যায় পড়েন।[৩৩] এমনকি নির্বাচনের সময় তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে আলাদা লাইনে আলাদাভাবে ভোট নেয়া হয়।[৩৪] একসময়ে যৌনকর্মীদের জুতা পরারও অনুমতি ছিলোনা।[৩৩]

প্রথাগতভাবে একজন যৌনকর্মীর মৃত্যুর পর কেবল তার সহকর্মীই তার দেহ স্পর্শ করতে পারে। তাকে কোন সার্বজনীন কবরস্তানে দাফন করা সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ।[৫] এজন্যে সাধারণত তাদের মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা অথবা নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ধর্মীয় নেতারা দীর্ঘদিন যাবত ধরে অনৈতিক কাজের কারণে যৌনকর্মীদের জানাজা পড়ানোর প্রবল বিরোধিতা করে আসছেন। ২০২০ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো দৌলতদিয়া পতিতালয়ের যৌনকর্মী হামিদা বেগমের মৃত্যুর পর এনজিও ও গোয়ালন্দ থানার সহায়তায় প্রচলিত রীতি ভেঙে ধর্মীয় রীতি মোতাবেক জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার জানাজায় প্রায় ২০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। পরে মিলাদ মাহফিলকুলখানিতে আরও ৪০০ জন যোগদান করেন।[১৬] কিন্তু এই জানাজা পড়ানোর দায়ে দৌলতদিয়া রেলস্টেশন মসজিদের ইমাম গোলাম মোস্তফা সামাজিকভাবে নিগৃহিত হন ও পরবর্তীতে আরো কোনো যৌনকর্মীর জানাজা না পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।[৩৩] তা সত্ত্বেও তিনি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে একই বছরের ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারী রিনা বেগম ও পারভীন নামের আরো দু’জন যৌনকর্মীর জানাজা পড়ান।[৩৫]

বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা প্রায়ই অত্যন্ত দরিদ্র সামাজিক অবস্থার শিকার।[৩৬][৩৭] বাংলাদেশের যৌনপল্লিগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার সরকারি উদ্যোগ নেই। এগুলোতে পায়াকট বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়৷[২৫] বাইরের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে যৌনকর্মীদের নিজেদের প্রকৃত নাম-পরিচয় গোপন রাখতে হয়।[৩৩] প্রাথমিক শিক্ষার পর আরো শিক্ষার জন্য যৌনকর্মীদের সন্তানদের তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ পতিতালয় বহির্ভূত বিদ্যালয়ে তাদের ভর্তি নিতে চায় না৷ যদিও কেউ কেউ আত্মপরিচয় গোপন করে সন্তানদের বাইরের স্কুলে ভর্তি করান৷[২৫] সন্তানদের স্কুলে ভর্তি, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ, ব্যাংক হিসাব খোলা, মৃত্যুসনদ সংগ্রহ বা বিকল্প পেশায় যোগদান করতে গেলে পরিচয়পত্রে পতিতালয় লেখা থাকায় সমাজের মানুষেরা যৌনকর্মীদের নিচু নজরে দেখে বলে জাতীয় পরিচয়পত্রে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে যৌনকর্মী সহ স্থানীয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার অধিবাসী “দৌলতদিয়া পতিতালয়”-এর বদলে “দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া”-র বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।[৩৫][৩৮][৩৯]

প্রসার[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের যৌনকর্মী দেখা যায়: হোটেল ভিত্তিক, পার্ক ও উদ্যানে ভাসমান এবং যৌনপল্লিভিত্তিক।[৬] নানারকম বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্মীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই পেশা গ্রহণের প্রধান কারণের মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অবিবাহিতা তরুণীদের স্বল্প বেতনের চাকরির জন্য ক্রমবর্ধমান শহরমুখী অভিবাসন এবং পারিবারিক বিপর্যয়। বাংলাদেশের পেশাদার যৌনকর্মীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃষিশ্রমিক, ক্ষুদ্র কৃষক, মৎস্যজীবী ইত্যাদি পরিবার থেকে আসে এবং বাকিরা অনেকেই আসে ক্ষুদ্র আয়ভুক্ত রিকশা বা ঠেলাগাড়ি চালক, মাঝি ইত্যাদি পরিবার থেকে। বর্তমানে সচ্ছল পরিবারের নারীদেরও এ পেশায় দেখা যায়।[৫]

১৯০১ সালে সরকারি হিসাব মতে ঢাকা যৌনকর্মীর সংখ্যা ছিলো ২১৬৪।[৭] বাংলাদেশের স্থানীয় কিছু বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) হিসাবে মতে একুশ শতকের শুরুতে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ নিবন্ধিত যৌনকর্মী ছিলেন৷[২৩][২৫] বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের সংগঠন সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক অফ বাংলাদেশ-এর হিসেবে ২০১৭ সালে সারা দেশে ২৫ হাজার ভাসমান এবং যৌনপল্লিগুলোতে ৭০ হাজার বৈধ যৌনকর্মী ছিলেন। ২০২০ সালে তাদের তথ্য অনুসারে তাদের তালিকায় ৬৫ হাজারেরও বেশি যৌনকর্মী থাকলেও দেশে মোট যৌনকর্মীর সংখ্যা এক লাখের বেশি। ২০১৫-১৬ সালের সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক বাংলাদেশে রয়েছেন এক লাখ দুই হাজারের মতো যৌনকর্মী।[৪০] বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে নারী যৌনকর্মীর মোট সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ বলেও ধারণা করা হয়।[২৫] সেভ দ্য চিলড্রেন-এর হিসেব মতে ২০১৪ সালে যৌনকর্মীদের ৫ শতাংশ হোটেলে, ৪১ শতাংশ ভাসমান ও ৫৪ শতাংশ যৌনপল্লীতে অবস্থান করছিলেন।[৪১]

ইউনিসেফ-এর হিসাবে পেশাদার যৌনকর্মে জড়িত রয়েছে ১০ হাজার শিশু।[২৩] বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, পথশিশু বা টোকাইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ, যাদের অর্ধেক থাকে ঢাকার রাস্তায়। রাস্তায় বসবাস করা মেয়েশিশুদের মধ্যে ১৯% বাধ্য হয় দেহ ব্যবসা করে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নীর তথ্য মতে, ২০১৪ সালে সারাদেশে অন্তত ২০ হাজার শিশুকন্যা রাস্তায় পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত ছিলো।[৪২] সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক-এর মতে বাংলাদেশের পেশাদার যৌনকর্মীদের অনেকের বয়সই ১৮ বছরের নিচে যাদের বড় একটি অংশকে জোর করে এই পেশায় নামানো হয়েছে৷ পেশাদার যৌনকর্মে নিযুক্ত হবার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক নারী আদালতে ঘোষণা দেবেন বলে আইন থাকলেও তা মানা হয় না৷ একদিকে ঘোষণা দিয়ে এই পেশায় আসার সংখ্যা খুবই কম৷ অন্যদিকে দালালেরা শিশু বা কিশোরীদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দেখায় আদালতে৷ এর সঙ্গে পুলিশও জড়িত৷[৪৩] বাংলাদেশ সরকারের মতে, নারী ও শিশু নির্যাতন, পাচার, প্রতারণা, অপহরণ, যৌনপল্লীতে জন্ম প্রভৃতি কারণে তারা পেশাদার যৌনকর্মীতে পরিণত হয়।[৬] পেশাদার যৌনকর্মে অল্পবয়সীদের চাহিদা থাকার অন্যতম একটি কারণ এই যে খদ্দেররা মনে করেন শিশু-কিশোরীদের থেকে যৌনরোগে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রাপ্তবয়সীদের তুলনায় কম। তাছাড়া তাদের সহজে ও ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যায়।[৪২] ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকার উদ্ধারকৃত অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মীদের জন্যে “সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠা করে।[৬]

যৌনপল্লি[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্ম আইনগতভাবে বৈধ হলেও যৌনকর্ম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যৌনকর্মীদের নাম নিবন্ধণ করে তাদের সুনির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। বসবাসের এই জায়গাগুলোকে নটিপাড়া, বেশ্যাপাড়া বা নিষিদ্ধ পল্লী বলে অভিহিত করা হয়।[৫] বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারী অনুমোদনে নিবন্ধিত পতিতালয় বা যৌনপল্লির সংখ্যা ১৪টি৷[৪৪] এর মধ্যে ৭টি যৌনপল্লি রয়েছে ঢাকা বিভাগে, ৬টি খুলনা বিভাগে ও একটি রয়েছে বরিশাল বিভাগে।[৪৫] দৌলতদিয়া যৌনপল্লি, কান্দুপট্টি, টানবাজার যৌনপল্লি, সন্ধ্যাবাজার যৌনপল্লিগাঙ্গিনাপাড় যৌনপল্লির পাশাপাশি চট্টগ্রামের সদরঘাটের বিলুপ্ত যৌনপল্লিটি বাংলাদেশের নামকরা কিছু যৌনপল্লি।[৪৬] ২০২০ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধকরণ-এর সময়ে বাংলাদেশ সরকার এর মধ্যে ১১টি যৌনপল্লিতে খাদ্য ও অর্থসাহায্য দিয়েছে, যদিও তা অপ্রতুল বলে নির্ধারিত হয়েছে।[৪৭]

উচ্ছেদ[সম্পাদনা]

বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান-এ যৌনপল্লি উচ্ছেদের হিড়িক পড়ে যায়।[৪৮] স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকার কুমারটুলি, গঙ্গাজলি ও পাটুয়াটুলি, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার, মাগুরা, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল ও ফুলতলা যৌনপল্লি সহ বেশ কিছু যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হয়েছে।[৪৯] এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার, ঢাকার ইংলিশ রোড, মাদারীপুর, খুলনার ফুলতলা এবং টাঙ্গাইল যৌনপল্লির যৌনকর্মীদের মারপিট ও নির্যাতন করে এক রাতের মধ্যে উচ্ছেদ করা হয়৷ প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে প্রশাসনের সহায়তায় এ কাজ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা৷ অনেক যৌনকর্মীকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে ভবঘুরে কেন্দ্রে পঠানো হয়। তাঁরা অন্য অনেকেই এখন ভাসমান যৌনকর্মী৷[২৫] জামালপুর, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাট ও রথখোলা এবং বাগেরহাট যৌনপল্লী একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে।[৪৯] এছাড়াও বানিশান্তা সহ বাংলাদেশের আরো কয়েকটি যৌনপল্লি হুমকির মুখে রয়েছে৷[২৫]

সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক-এর দেয়া তথ্য অনুসারে সাম্প্রতিককালে ৮টি যৌনপল্লি উচ্ছেদ হয়েছে।[৪৯] ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে ঢাকার তিনটি যৌনপল্লি কুমারটুলি, গঙ্গাজলি ও পাটুয়াটুলি উচ্ছেদ করা হয়। পরে একে একে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার (১৯৯৯), মাগুরা (২০০৩), মাদারীপুর (২০১৩), টাঙ্গাইল (২০১৪) ও ফুলতলা যৌনপল্লি (২০১৫) উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের চেষ্টা ও প্রাণনাশের হুমকিতে আছে জামালপুর, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর সিঅ্যান্ডবি ঘাট ও রথখোলা এবং বাগেরহাট যৌনপল্লি।[৫০] অভিযোগ রয়েছে যে যৌনপল্লির জমি দখল করতেই ধর্মের কথা তুলে যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হচ্ছে।[২৫] আরো অভিযোগ রয়েছে যে এসব উচ্ছেদের ঘটনায় থানায় মামলা করা হলেও প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করেনি।[৫০] উচ্ছেদ করা মধ্যে কয়েকটি যৌনপল্লি বর্তমানে বহুতল বাজার৷[২৫] কয়েকটি যৌনপল্লি আইনি লড়াইয়ের পর পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৮৫ সালে অপ্রাপ্তবয়স্কা শবমেহের হত্যা কেন্দ্র করে টানবাজার যৌনপল্লি উচ্ছেদ অভিযান বিফল হয়। ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং জাতীয় পার্টি টানবাজার যৌনপল্লি থেকে চাঁদা তোলা নিয়ে বিরোধের অংশ হিসেবে আরেকটি উচ্ছেদ প্রচেষ্টা ব্যাহত হয় ১৯৯১ সালের অক্টোবরে। অভিযোগ রয়েছে যে কান্দুপট্টিতে ছাত্রনেতা তিব্বত, বানিশান্তায় শ্রমিক নেতা আইউব এবং টানবাজারে যৌনকর্মী জেসমিন হত্যাও হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।[৫১] স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রামে জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি রফিক উদ্দীন ছিদ্দিকী আর সাধারণ সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরীর মধ্যে দ্বন্দ্বে জয়লাভ করতে ফজলুল কাদের স্থানীয় মুসলমানদের নিয়ে রিয়াজউদ্দীন বাজার এলাকার যৌনপল্লিটি উচ্ছেদ করেন যাতে রফিক উদ্দীন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।[৪৮][৫২]

জেলা ভিত্তিতে যৌনপল্লি[সম্পাদনা]

কুমিল্লা জেলা[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সমবেত বিপুল সংখ্যক বিদেশি সৈন্যের প্রয়োজনে কুমিল্লা শহরের ছোট যৌনপল্লির পাশাপশি দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারের পাশে আরেকটি যৌনপল্লি স্থাপন করা হয়েছিল।[৪৮][৫২]

চট্টগ্রাম জেলা[সম্পাদনা]

কর্ণফুলী নদী তীরে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো চট্টগ্রামের সাহেবপাড়ার যৌনপল্লি।[৫৩] এককালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যৌনপল্লি ছিল বর্তমান রিয়াজউদ্দীন বাজার এলাকায়, বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেড় থেকে দুই হাজার যৌনকর্মী ছিলেন সেখানে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়লেই নাবিকেরা জাহাজ থেকে নেমে খোঁজ করতেন যৌনপল্লিটির। পাকিস্তানি আমলে উচ্ছেদ হওয়া যৌনপল্লিটি পরবর্তীতে বন্দরের কাছে মাঝির ঘাটে পুনঃস্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীতে অবশ্য সেটাও উচ্ছেদ করা হয়েছে।[৪৮][৫২]

যশোর জেলা[সম্পাদনা]

যশোর শহরে যৌনপল্লির ইতিহাস ৫০০ বছরের পুরনো। মোগল সম্রাট আকবর-এর সময় থেকেই যৌনপল্লি ছিলো জমজমাট। ব্রিটিশ যুগে সেখানে তিনটি যৌনপল্লি ছিলো। কলকাতা থেকে নিয়মিত জমিদার মন্মথনাথ রায় যেতেন ফূর্তি করতে। জানা যায় তার জন্যে যৌনকর্মী যেতো চাঁচড়ার রায় পাড়ার ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে।[৭] বর্তমানে যশোর শহরে ঝালাইপট্টি ও মারওয়াড়ি মন্দির এলাকায় দু’টি যৌনপল্লিতে প্রায় ১২০জন যৌনকর্মী আছেন।[৫৪]

খুলনা জেলা[সম্পাদনা]

খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা যৌনপল্লিতে রয়েছেন প্রায় ৯০ জন যৌনকর্মী।[৫৫] তাছাড়াও ২০২০ সালে এখানে থাকতেন ৬৫ জন শিশু ও ৭০ জন পুরুষ।[৫৬] একশ’ বছরের বেশি আগে মোংলা সমুদ্রবন্দর-এর কাছে পশুর নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যৌনপল্লিটি। ২০১৯ সালে এ যৌনপল্লিতে অবস্থানরত ৫০ শিশুকে স্কুলগামী করতে তাদের জামাকাপড়, শিক্ষা উপকরণ ও প্রতি মাসে নগদ অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। বানিশান্তা ঢাংমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যৌনপল্লির মায়েদের সমাবেশে হয়েছে শিক্ষা অফিসের উদ্যোগে।[৫৭] ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পান-এর আঘাতে যৌনপল্লির অধিকাংশ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।[৫৮]

বাগেরহাট জেলা[সম্পাদনা]

বাগেরহাট শহরে ঘোষপট্টির কাছের যৌনপল্লিতে থাকেন প্রায় ৪০ জন যৌনকর্মী। ২০২০ সালেে এখানে আরো ছিলেন তাদের ৪৪ জন সন্তান।[৫৯]

ঢাকা জেলা[সম্পাদনা]

ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে যৌনপল্লির মধ্যে গঙ্গাজলি ও সাঁচিবন্দর ছিল বিখ্যাত। ইসলামপুরপাটুয়াটুলীর মোড় থেকে ওয়াইজঘাট নামে যে পথটি বুড়িগঙ্গার দিকে চলে গেছে তার নাম একসময়ে ছিল গঙ্গাজলি। নাট্যকার সাঈদ আহমেদ লিখেছেন যে মহেশ ভট্টাচার্যের হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানের কাছে ও কালীমন্দিরের উল্টোদিকে গঙ্গাজলি ছিল দোতলা প্রশস্ত বাড়ি। নিচতলায় থাকতেন বাইজিদের কাজের লোকেরা। বাইজিরা থাকতেন বাঁকওয়ালা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায়। বাইজিদের খাস কামরা সাজানো থাকত শানশওকতে। তাতে ছিলো ফরাশ বিছানো ঘর আর বারান্দায় পাতা থাকত ইজিচেয়ার। গঙ্গাজলির অধিকাংশ বাইজি ছিলেন বৈষ্ণব। প্রতিদিন সকালে দলবেঁধে বুড়িগঙ্গায় স্নান সেরে তাদের বুকে গামছা জড়িয়ে কোমরে পিতলের কলসি নিয়ে সিক্তবসনে দলবেঁধে দিয়ে ফিরে আসার বর্ণনা দিয়েছেন সাঈদ আহমেদ এবং শিল্পী পরিতোষ সেন[১২]

১৯৮০ সাল থেকে ঢাকার কুমারটুলি, গঙ্গাজলি ও পাটুয়াটুলি যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হয়েছে।[৪৯] ঢাকা শহরে কান্দুপট্টি ও ইংলিশ রোডেও যৌনপল্লি ছিল।[৫২]

নারায়ণগঞ্জ জেলা[সম্পাদনা]

নৌবন্দর নারায়ণগঞ্জে টানবাজারে ছিল বড় একটি যৌনপল্লি। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান টানবাজার থেকে যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করল তারা ছড়িয়ে পড়েন শহরের রাস্তায় রাস্তায়। আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন তারা।[৪৮][৫২] প্রায় ২০০ বছরের পুরানো এই যৌনপল্লিটি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের নিমতলা যৌনপল্লিও এইকই সময়ে উচ্ছেদ করা হয়।[৬০]

১৯৮৫ সালে টানবাজার যৌনপল্লির দৌলত খান ভবনে নরসিংদীর এক গ্রামের ১২-১৩ বছরের মেয়ে শবমেহেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করতে মারধর ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে অত্যাচার করে মৃতপ্রায় অবস্থায় টানবাজারের বাইরে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলেন অভিযুক্ত মালিক মমতাজ মিয়া এবং দালাল সর্দারনি। তাকে রাস্তার মানুষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এ নিয়ে যাবার পর সেখানে ৩৫ নং ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি সাড়া মানুষের মধ্যে সাড়া জাগায়। তার মৃত্যু নিয়ে লেখক ইমদাদুল হক মিলন টোপ উপন্যাস লেখেন, এবং কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর লেখা গানে কণ্ঠ দেন শিল্পী ফকির আলমগীর[৬১] জাহানারা আরজুর কবিতা “শবমেহের তোমার জন্য” অবলম্বনে শবমেহের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মান করেন ইসমাইল হোসেন।[৬২]

রাজবাড়ি জেলা[সম্পাদনা]

দৌলতদিয়া ঘাটের যৌনপল্লিটি দেশের মধ্যে বৃহত্তম এবং এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম যৌনপল্লি। এটি পৃথিবীর বড় কয়েকটি পতিতালয়ের মধ্যে একটি।[৬৩][৬৪][৬৫] বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার খদ্দেরকে খুশি করতে ব্যবহৃত হন।[১৬] এখানে প্রায় ১,৫০০ জন নিবন্ধিত যৌনকর্মী রয়েছেন।[২৫] ১৯৮৮ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত বলা হলেও দৌলতদিয়ায় বহুকাল আগে থেকেই পেশাদার যৌনকর্মের প্রচলন ছিলো।[৬৬]

ফরিদপুর জেলা[সম্পাদনা]

ফরিদপুর শহরের হাজী শরিয়তুল্লাহ বাজার সংলগ্ন রথখোলা যৌনপল্লি এবং ডিক্রীরচর ইউনিয়ন-এর সিএন্ডবি ঘাট যৌনপল্লিতে সরকারি হিসাবে প্রায় ৩০০ যৌনকর্মী রয়েছেন।[৬৭][৬৮] বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যাটি দ্বিগুনও হতে পারে।[৬৭]

টাঙ্গাইল জেলা[সম্পাদনা]

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর বাজারে একসময়ে ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ বাইজিপল্লি। রসিকরা সেখানে শুধু কামপ্রবৃত্তি নয়, গুণী বাইজির গান ও নাচের আসর উপভোগের জন্য যেতেন।[৬৯]

বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের কান্দাপাড়া যৌনপল্লি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম যৌনপল্লি।[৭০] একবার উচ্ছেদ হওয়া টাঙ্গাইল যৌনপল্লি পুনরায় চালু করার আন্দোলন হয়েছে।[২৫] পুনরায় চালু হবার পর এখানে ৮০০জন নিবন্ধিত যৌনকর্মী রয়েছেন, যাদের অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে লক্ষ্য করা যায়। টাঙ্গাইলের যৌনপল্লিটি প্রথম দেখায় একটি সাধারণ বস্তি মনে হয়। মোটা লাঠি নিয়ে যৌনপল্লিটি পাহারা দেয়া হয়। যৌনপল্লির খোলা নর্দমা পরিত্যক্ত কন্ডমে আটকে গেছে।[৪৪]

ময়মনসিংহ জেলা[সম্পাদনা]

ময়মনসিংহের গাঙ্গিনাপাড়ে ব্রিটিশ আমলের পুরোনো যৌনপল্লিটিতে প্রায় ৩০০ যৌনকর্মী আছেন। তা ছাড়াও ২০২০ সালে গাঙ্গিনাপাড় যৌনপল্লিতে সরকারী ও ব্যক্তিমালিকানাসহ ১০টি বাড়িতে যৌনকর্মীদের পরিবারের সদস্যসহ প্রায় এক হাজার মানুষ বসবাস করেন।[৭১]

জামালপুর জেলা[সম্পাদনা]

জামালপুরের রাণীগঞ্জ যৌনপল্লিতে ২০২০ সালে সরকারি হিসেবে ৯৭ জন সক্রিয় যৌনকর্মী, ৫০ জন বৃদ্ধা ও ২ জন পাহারাদার ছিলেন।[৭২] বেসরকারি হিসেবে ছিলেন দু’শতাধিক যৌনকর্মী। পল্লির নয়টি বাড়িতে ১৭৪টি ঘর রয়েছে যার প্রতিটিতে থাকেন একজন করে যৌনকর্মী।[৭৩]

পটুয়াখালী জেলা[সম্পাদনা]

পটুয়াখালীর যৌনপল্লিতে প্রায় ২০০ ঘর আছে। ২০২০ সালে সেখানে ১৩০জন যৌনকর্মী এবং মাসি ও শিশুসহ মোট ২০০ লোকের বসবাস ছিলো।[৭৪]

পাচার[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ মানব পাচারের জন্য একটি উৎস, ট্রানজিট ও গন্তব্য দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য। এখানে নারী ও শিশুদের পাচারের শিকার হতে হয়। এখানকার মেয়েদের পাচার করে ভারত, পাকিস্তানমধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়, যাদের অধিকাংশই পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে।[৭৫][৭৬]

গোয়ালন্দ থানার তথ্য মোতাবেক দৌলতদিয়া যৌনপল্লি ঘিরে জোর করে যৌনকর্মী বানানোর একটি চক্র সক্রিয় আছে। ফাঁদে ফেলে এখানে প্রতিজন নারীকে ৪০-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়৷ এনজিওসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্যের ভিত্তিতে কেবল এক বছরেই গোয়ালন্দ থানা এই পল্লি থেকে ২০জন নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সেখানে এনে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিলো।[২৫] একাধিক দাতব্যসংস্থা তাদের অনুসন্ধানে সাত বছরের শিশুকেও যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এমন প্রমাণ পেয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধেও দালাল ও যৌনপল্লি বা পতিতালয়ের মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়েদের সনদপত্র দেবার অভিযোগ রয়েছে।[১৬]

স্বাস্থ্য[সম্পাদনা]

পায়াকট বাংলাদেশের মতে যৌনকর্মীদের একটি অংশ সিফিলিস এবং গনোরিয়ার মতো যৌনরোগে আক্রান্ত হন, যদিও তাদের মধ্যে এইচআইভি/এইডস হবার তেমন নজির নেই।[২৫] তবু বিভিন্ন এনজিওর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের যৌনকর্মী এবং তাদের গ্রাহকরা এইচআইভি/এইডস এর সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ তাদের মধ্যে নিরাপদ যৌনতা বিষয়ক জ্ঞান ও তথ্যের অভাব রয়েছে।[৭৭][৭৮] বেসরকারি সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানুর তথ্য অনুসারে, যৌনকর্মে নিযুক্ত শিশুকন্যাদের হতাশা, মাদকাসক্তি, বিভিন্ন যৌনরোগ, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতি ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির শিকার। কিশোরীদের শরীর বড় করার জন্য ট্যাবলেট খাওয়ানোর ঘটনাও ঘটে।[৪২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. havocscope। "Number of Prostitutes in Bangladesh – Havocscope" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৯ 
  2. সিরাজ প্রামাণিক, বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ, না অবৈধ? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে, দৈনিক সংবাদ, ২৩ আগস্ট ২০২০
  3. অভিধান, অনুশীলন
  4. শামিম আহমেদ, শুধু শ্রম অধিকার নয়, গণিকাবৃত্তি তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দাবি করে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৪ মে ২০১৯
  5. কে.এম.এ আজিজ, "যৌন কর্মী", বাংলাপিডিয়া
  6. সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, সমাজসেবা অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
  7. রানা চক্রবর্তী, পতিতাবৃত্তির উৎস সন্ধানে, লিটলম্যাগ, ১৮ এপ্রিল ২০২০
  8. আনিসুজ্জামান, বাঙালি নারী : সাহিত্যে ও সমাজে[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], ভোরের কাগজ, ৮ মার্চ ২০১৯
  9. হোসাইন মোহাম্মদ জাকি, ইতিহাসের খেরো খাতা: থেমে যাওয়া নূপুরের নিক্বণ, কালের কণ্ঠ, ১৪ মার্চ, ২০১৮
  10. অনুপম হায়াৎ, বাঈজী, বাংলাপিডিয়া, ৫ মে ২০১৪
  11. সংগৃহিত, কাব্যে সাহিত্যে পিঠে পাঁচালি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], ডেইলি হান্ট, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
  12. পীর হাবিবুর রহমান, নবাবদের বাইজি নয় রাজনীতির পাপিয়ারা ভয়ঙ্কর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
  13. নিজস্ব প্রতিবেদক, হোটেল শাহবাগ থেকে বিএসএমএমইউ, প্রথম আলো, ৭ এপ্রিল ২০১৭
  14. মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়া, প্রাচীন এক মসজিদ, অথচ নামাজ হয়নি কোনো দিন!, ইত্তেফাক, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
  15. বাংলা নাটকে প্রথম অভিনেত্রী সুকুমারী দত্ত, দৈনিক জনকণ্ঠ, এপ্রিল ২৭, ২০১৮
  16. এএফপি, “দৌলতদিয়ার এক যৌনকর্মীর জানাজার ‘সম্মান’ পাওয়ার গল্প ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ নভেম্বর ২০২০ তারিখে”, বাংলা ট্রিবিউন, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
  17. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, আইন ও বিচার বিভাগআইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
  18. হারুন উর রশীদ স্বপন, অবৈধ পতিতাবৃত্তি রোধে আইন আছে, প্রয়োগ নেই, ডয়েচে ভেলে, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
  19. Rasheek Irtisam (১২ আগস্ট ২০১৬)। "Is it wrong to buy sex?"dhakatribune.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  20. "Bangladesh says prostitution legal"BBC News। ১৪ মার্চ ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০ 
  21. সাকিলা মতিন মৃদুলা (২২ জুন ২০১৮)। "অমীমাংসিত দায়বদ্ধতা : লক্ষ্য যখন যৌনকর্মী"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০ 
  22. Law Desk, Landmark judgments on women rights, The Daily Star, March 10, 2020
  23. "2008 Human Rights Report: Bangladesh"। State.gov। ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০ 
  24. "Sex Work Law - Countries"Sexuality, Poverty an ,d Law (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৮ 
  25. হারুন উর রশীদ স্বপন, “কেমন আছেন বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা?, ডয়েচে ভেলে, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭
  26. সালমা আলী, পাচারসংক্রান্ত আইন কাজে আসছে না, প্রথম আলো, ১৫ অগাস্ট ২০১০
  27. ড. এম. হাসিবুল আলম প্রধান, মানব পাচার প্রতিরোধে কয়েকটি সুপারিশ, দৈনিক জনকণ্ঠ, মে ২৯, ২০১৫
  28. নিজস্ব প্রতিবেদক, মানবপাচার রোধে বিচারপ্রাপ্তির প্রতিবন্ধকতা দূর করা উপায়, ঢাকা টাইমস, ২২ মার্চ ২০২০
  29. মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ, বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি, আইন ও বাস্তবতা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে, স্বাধীনবাংলা২৪, ৭ নভেম্বর ২০১৩
  30. অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক, বাংলাদেশের পতিতাবৃত্তি আইন ও বাস্তবতা, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭
  31. "26 arrested in Uttara for involvement in flesh trade"Bdnews24.com 
  32. "Police arrest over 60 sex workers from hotels"Bdnews24.com 
  33. তাফসীর বাবু, প্রথা ভেঙে যৌনকর্মীর জানাজা পড়ানো ইমাম বললেন, 'ভবিষ্যতে আর কোন যৌনকর্মীর জানাজা পড়ানোর নিয়ত নাই', বিবিসি, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০
  34. গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ‘পতিতালয়’ নাম পরিবর্তনের দাবি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে, দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
  35. রাজবাড়ী প্রতিনিধি, প্রথা ভেঙে তৃতীয়বারের মতো যৌনকর্মীর জানাজা সম্পন্ন, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
  36. Nawaz Farhin (১২ মে ২০১৮)। "Sex workers still struggling for their rights"dhakatribune.com। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  37. "Independent Appeal: Sex workers dicing with death in Bangladesh"Independent.co.uk। ২৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৮ 
  38. সোহেল মিয়া, নতুন নামে এখন ‘দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী’, বার্তা২৪, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  39. এম রাশেদুল হক, ঠিকানা যখন দৌলতদিয়া যৌনপল্লী, প্রথম আলো, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
  40. হাসনাত নাঈম, যাদের সহযোগিতার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে, ডয়েচে ভেলে, ৯ মে ২০২০
  41. ইত্তেফাক রিপোর্ট, দেশে ৭৪ হাজারের বেশি যৌনকর্মী আছে ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে, দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪
  42. প্রতিবেদক, ভাসমান ২০ হাজার শিশু পতিতাবৃত্তিতে, দ্য রিপোর্ট ২৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
  43. হারুন উর রশীদ স্বপন, অবৈধ পতিতাবৃত্তি রোধে আইন আছে, প্রয়োগ নেই, ডয়েচে ভেলে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
  44. Mark Dummett। "Bangladesh's dark brothel steroid secret"Bbc.co.uk 
  45. Qazi Azad-uz-zaman, Swapan Kumar Roy, Lives of Brothel Based Sex Workers in Khulna, Bangladesh, International Journal of Social Work and Human Services Practice 3(4):131-136
  46. রোকসানা বন্যা, পুরুষ যে-ই হোক না কেন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], দৈনিক আজাদি, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  47. Sex workers in Bangladesh: building resilience during the COVID-19 pandemic, UNAIDS
  48. আনিস আলমগীর, ধর্ষণের মহোৎসব এবং যৌনকর্মের অতীত বর্তমান[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], বাংলা ট্রিবিউন, আগস্ট ০৮, ২০১৭
  49. দ্য রিপোর্ট প্রতিবেক, যৌনপল্লীতে অত্যাচার নিপীড়ন ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি, দ্য রিপোর্ট ২৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  50. যুগান্তর রিপোর্ট, যৌনপল্লী উচ্ছেদে যৌনকর্মীরা আরও বেশি নির্যাতিত, যুগান্তর, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  51. যোগাযোগ ডেস্ক, রাজনীতি নয় অনৈতিক অর্জনের পেশা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], যোগাযোগ২৪, ২৮ জুলাই ২০১৯
  52. আনিস আলমগীর, ধর্ষণ, হত্যা, হিজাব ও বোরকা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে, বিডিনিউজ২৪, ৪ এপ্রিল, ২০১৮
  53. হুমায়ূন মালিক, বাংলা কথাসাহিত্যে নিম্নবর্গ এবং হরিশংকর জলদাস[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], ভোরের কাগজ, ১২ অক্টোবর ২০১৮
  54. যশোর প্রতিনিধি, দুই পতিতালয় বন্ধ ঘোষণা, বাংলাদেশ জার্নাল, ২২ মার্চ ২০২০
  55. দাকোপ (খুলনা) সংবাদদাতা, অর্থ-সংকটে যৌনকর্মীরা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], ইত্তেফাক, ০৫ এপ্রিল, ২০২০
  56. ডেস্ক, করোনায় করুণ দশা খুলনা বানিশান্তা যৌনপল্লিতে ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখে, প্রবর্তন, ৫ এপ্রিল ২০২০
  57. মো. মহিদুল ভূঁইয়া শিপন, স্কুলমুখী হচ্ছে বানিশান্তা যৌনপল্লির শিশুরা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে, সমকাল, ২২ নভেম্বর ২০১৯
  58. খুলনা প্রতিনিধি, ‘খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে, কেউ খবর নেচ্ছে না’, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২২ মে ২০২০
  59. এস এম মঞ্জুরুল ইসলাম সাজিদ, শিশু অধিকার থেকে বঞ্চিত পতিতাপল্লির শিশুরা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে, শিশুবার্তা, ১০ মার্চ ২০২০
  60. ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট, সাবেক মন্ত্রী নাসিমের মৃত্যুতে না’গঞ্জবাসী প্রাণের মানুষ হারালো ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে, ডান্ডিবার্তা, ১৪ জুন ২০২০
  61. নিজস্ব প্রতিবেদক, লেখার প্রয়োজনে টানবাজারে গিয়েছিলাম, প্রথম আলো, ২০ এপ্রিল ২০১৮
    যেভাবে আজও প্রাসঙ্গিক ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস ‘টোপ’, বাংলা নিউজ ২৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০
    মোজাফ্ফর হোসেন, টোপ উপন্যাসটি এখন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক, কালের কণ্ঠ, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
    মালেকা বেগম, 'দেখা থেকে লেখা' প্রসঙ্গে শবমেহের, প্রথম আলো, ৪ মে ২০১৮
    ইসহাক খান, রুদ্রের সেই বিখ্যাত গান, ভোরের কাগজ, ২১ জুন ২০১৯
    ফকির আলমগীর, ভালো আছি ভালো থেকো ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে, সমকাল, ১৬ অক্টোবর ২০১৬
  62. জাহানারা আরজু: তার দিনকাল, ওয়ার্ল্ডবাংলা, ২৪ অগাস্ট ২০১৪
    বাংলাদেশ ডেস্ক, জেসমিন খান এওয়ার্ড পেলেন কাজী জহির, আজকাল, ৮ মার্চ ২০১৯
  63. Claudia Hammond (৯ জানুয়ারি ২০০৮)। "'I'm just here for survival'"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  64. Christine Jackman (২৬ অক্টোবর ২০১৩)। "Daughters of the brothel"Sydney Morning Herald। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  65. Tania Rashid (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Sex, Slavery, and Drugs in Bangladesh"Vice News। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  66. জার্নাল ডেস্ক, বন্ধ হয়ে গেল দৌলতদিয়া যৌনপল্লী, বাংলাদেশ জার্নাল, ২০ মার্চ ২০২০
  67. ফরিদপুর সংবাদদাতা, ফরিদপুরে ‘লকডাউন’ হলো দু’টি পতিতাপল্লী, নয়া দিগন্ত, ২১ মার্চ ২০২০
  68. ফরিদপুর সংবাদদাতা, ফরিদপুরে ‘লকডাউন’ হলো দু’টি পতিতাপল্লী, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ মার্চ ২০২০
  69. গোপালপুর সংবাদদাতা, টাঙ্গাইলের হেমনগর রাজবাড়ীর দেখভালের দায়িত্ব নিচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ নভেম্বর ২০২০ তারিখে, ইত্তেফাক, ০৩ অক্টোবর, ২০২০
  70. প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইলে যৌনপল্লিতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যাতায়াত নিষিদ্ধ, প্রথম আলো, ১৮ এপ্রিল ২০২০
  71. মঈন উদ্দিন রায়হান, পতিতালয়ের করোনা যেন ‘মরণ’, বাংলাদেশ জার্নাল, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
  72. সারাদেশ ডেস্ক, জামালপুরের যৌনপল্লী লকডাউন, অধিকার, ২৩ মার্চ ২০২০
  73. জামালপুর সংবাদদাতা, জামালপুরের রাণীগঞ্জ পতিতাপল্লী ‘লকডাউন’, নয়া দিগন্ত, ২২ মার্চ ২০২০
  74. প্রতিনিধি, পটুয়াখালী, পটুয়াখালীর যৌনপল্লিতে সবার যাতায়াত নিষিদ্ধ, প্রথম আলো, ১৯ এপ্রিল, ২০২০
  75. "Bangladesh 2018 Trafficking in Persons Report"U.S. Department of State। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৮ 
  76. "পতিতালয় থেকে তরুণী উদ্ধার, আটক ১"bdnews24.com। ২৫ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৯ 
  77. "HIV and AIDS in South Asia"। The World Bank। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০ 
  78. "Bangladesh – HIV/AIDS"। World Health organization – Bangladesh। ১৭ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]