বাংলাদেশের স্থান-নাম প্রত্যয়-তালিকা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

স্থান-নাম হচ্ছে যে কোন স্থানের বা ভৌগোলিক অঞ্চলের সাধারণ নাম।[১] বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের স্থান-নাম প্রত্যয় দেখা যায়। বেশিরভাগ স্থান-নামের প্রত্যয় অংশে সংস্কৃত, প্রাকৃত, দেশী, আরবী, ফার্সী ইত্যাদি ভাষা হতে উদ্ভূত শব্দের প্রত্যয় যুক্ত হতে দেখা যায়।

বাংলাদেশের স্থান-নামের প্রত্যয়-তালিকা[সম্পাদনা]

প্রত্যয় অর্থ প্রত্যয়যুক্ত স্থান-নাম মন্তব্য
আইল সংস্কৃত আলি শব্দ হতে ব্যুৎপন্ন। যার অর্থ পানি ধরে রাখার নিমিত্তে মাটির বাঁধ। [২] টাঙ্গাইল, নড়াইল, তাড়াইল, বাসাইল, সরাইল, ডুবাইল, বানাইল, পুবাইল, মাতুয়াইল
আইশ চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত স্থান-নামের প্রত্যয়। চন্দনাইশ, পাঁচলাইশ, আমিলাইশ, কাশিয়াইশ, কুয়াইশ
আবাদ আবাদ ফার্সী শব্দ (ফার্সীঃ آباد)। যার অর্থ চাষকারকিত দ্বারা ফসলের যোগ্য, বাসস্থান, নগর বা সমৃদ্ধ স্থান। ইসলামাবাদ, হোসনাবাদ, আমিরাবাদ, আমিনাবাদ, নেসারাবাদ, ফতেয়াবাদ, এলাহাবাদ, ফরহাদাবাদ
আশ তাড়াশ, পলাশ
ইয়া নড়িয়া, পুঠিয়া, কালিয়া, ভাটুরিয়া, গাছুরিয়া, গজারিয়া, বাউরিয়া, বাহুরিয়া
উড়া আখাউড়া, কুলাউড়া, ডোবাউড়া, মাটিউড়া, কান্দিউড়া, খাগাউড়া, রাজিউড়া
উয়া কচুয়া, গাছুয়া, ধানুয়া, ছনুয়া, ফেনুয়া,
কাটা কাটা শব্দ সংস্কৃত কর্তন থেকে উদ্ভূত।[৩] কুয়াকাটা, শোলকাটা, ঢালকাটা, কাচিকাটা, কেরালকাটা, পাতাকাটা, কচুকাটা, মাটিকাটা
কাঠি ঝালকাঠি, স্বরুপকাঠি, লাউকাঠি, চুলকাঠি, জৈনকাঠি, শেয়ালকাঠি, শ্রীরামকাঠি, উদয়কাঠি
কানিয়া সাতকানিয়া, সোনাকানিয়া, রুপকানিয়া
কান্দা কান্দা মানে নদী-তীরবর্তি জলস্রোত প্রতিরোধী বাঁধ। কলমাকান্দা, নগরকান্দা, তারাকান্দা, কলাকান্দা, গোহালাকান্দা, বড়কান্দা
কান্দি কান্দি অর্থে ও নদী-তীরবর্তি জলস্রোত প্রতিরোধী বাঁধ। দাউদকান্দি, সারিয়াকান্দি, ধোপাকান্দি, অসারকান্দি, পাইক কান্দি
কুণ্ড কুণ্ড সংস্কৃত শব্দ, অর্থ জলাধার, গর্ত্ত বিশেষ বা খাত। সীতাকুণ্ড, বাড়বকুণ্ড, হরিণাকুণ্ড, গোকুণ্ড, বংশীকুণ্ড
কুয়া আকুয়া, কাকুয়া, কুকুয়া, বাকুয়া, চাকুয়া, ডাকুয়া, ঢাকুয়া, পেকুয়া
কুরা ফুকুরা, ভূবনকুরা, পাইকুরা, সিদুলকুরা, নলকুরা, রামচন্দ্রকুরা, কাকিলাকুরা, আখাইলকুরা
কুল ভাগ্যকুল, ঋষিকুল, রাজারকুল, চৈত্রকুল, চাকমারকুল, শিয়ালকুল, খুরুসকুল
কোঁ হেয়াকোঁ, তারাকোঁ
কোট নাঙ্গলকোট, দেবকোট, চিত্রকোট
কোনা নেত্রকোণা, মোহর কোনা, চাপার কোনা
খাইন বড়খাইন, জঙ্গলখাইন, পাঁচখাইন, কচুখাইন, পীরখাইন, ওশখাইন
খাদা তেরখাদা, আঠারো খাদা , বড়খাদা
খান সিরাজদীখান, দৌলতখান, বালিখান, সিন্দুরখান, চর কালেখান
খালী খাল শব্দের অর্থ দীর্ঘ খাত, জলপ্রবাহের খাই। শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত খাত থেকে, যার অর্থ গভীর নালা।[৪] খাল থেকে খালী নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, মহেশখালী
খিল খিল (সংস্কৃতঃ खिल) সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ পতিত জমি। সংস্কৃত গ্রন্থ নারদস্মৃতি অনুসারে খিল অর্থ তিন বছর ধরে কর্ষিত হয়নি এমন পতিত জমি।[৫] চাটখিল, মীরেরখিল, কধুরখিল, শেখেরখিল, বৈরাগীরখিল, মুনশীরখিল
খোলা শরণখোলা, আরনখোলা, হাটখোলা, ধুলখোলা
গঞ্জ গঞ্জ ফার্সী শব্দ (ফার্সীঃ گنج)। গঞ্জ শব্দের সাধারণ অর্থ ধন-সম্পদ, ভাণ্ডার বা গুদাম। এর অন্য অর্থ বাজার বা ছোট শহর হিসেবেও প্রচলিত, যেখানে বিভিন্ন পণ্যের আড়ত বা গুদাম থাকে।[৬] নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কাতালগঞ্জ, আছদগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ
গড় সংস্কৃত গর্ত্ত হতে উদ্ভূত। গড় অর্থ পরিখা, দুর্গ। পঞ্চগড়, রামগড়, মহাস্থানগড়, ধর্মগড়
গাছা চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মুক্তাগাছা, পাইকগাছা
গাছি বদলগাছি, সোনাগাছি, রাখালগাছি, বেলগাছি, দোগাছি, কেরালগাছি
গাতি ঝিনাইগাতি, পাটগাতি, মাঝিগাতি, পাসারগাতি, তেলিগাতি, দেহেরগাতি
গ্রাম চট্টগ্রাম, সপ্তগ্রাম, অষ্টগ্রাম, নবগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম, কুড়িগ্রাম, বড়াইগ্রাম
গাঁ নওগাঁ, বনগাঁ
গাঁও সোনারগাঁ, বনগাঁও, চাঁদগাঁও, সাতগাঁও, বাইশগাঁও, বীরগাঁও
গাজী সোনাগাজী, ফুলগাজী, চেহেলগাজী, চরগাজী
ঘর আটঘর, দশঘর, ষোলঘর, বেলঘর, দেওঘর, ধামঘর, মূলঘর
ঘাট রাজঘাট, চুনারুঘাট, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট
ঘাটা পাথরঘাটা, বটিয়াঘাটা, বালিঘাটা, গোপালঘাটা
ঘোনা চন্দ্রঘোনা, মাগুরা ঘোনা, মোবারক ঘোনা, বাঘ ঘোনা, মেহের ঘোনা
চঙ বুড়িচঙ, বানিয়াচঙ, ফকিরাচঙ্গ
চর শিবচর, কুলিয়ারচর, নানিয়ারচর, হাইমচর, উরকিরচর, বুড়িশ্চর
ছড়া বাহারছড়া, বুরুমছড়া, ভাইবোন ছড়া, পাতাছড়া, বাবুছড়া, চিকনছড়া
ছড়ি ছড়ি অর্থ পাহাড়িয়া নদী, ক্ষুদ্র স্রোত। ছড়া অর্থেও তাই। হরিচরণ বন্ধোপাধ্যায় কর্তৃক সম্পাদিত বঙ্গীয় শব্দকোষ মতে শব্দটি সংস্কৃত সরিৎ হতে উৎপন্ন হয়েছে।[২] খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি, বিলাইছড়ি, পানছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি
জুড়ি বালিজুড়ি, বিনাজুড়ি, খালিয়াজুড়ি, পুটিজুড়ি
ঝরা আগৈলঝরা,তেঁতুলঝরা
টুলী মোগলটুলী, পাঠানটুলী, টিকাটুলী, পাটুয়াটুলী, কসাইটুলী, কুমারটুলী
টোলা আরমানীটোলা, কুর্মিটোলা, নয়াটোলা, বৈরাগীটোলা
ডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা, আলফা ডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, সোনাডাঙ্গা, নলডাঙ্গা, ঝাউডাঙ্গা, পাহাড় ডাঙ্গা, ধোপাডাঙ্গা
ডাঙ্গি বালিয়াডাঙ্গী, কামারডাঙ্গী (গোলাপগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর), ভাওয়ার ডাঙ্গি
তলা পত্নীতলা, কলাতলা, সোনাতলা, জামতলা, ফুলতলা
তলী আমতলী, কাঁঠালতলী, কলাতলী, গাবতলী, পাহাড়তলী
দণ্ডি চিকনদণ্ডি, গোমদণ্ডি, সুচক্রদণ্ডি, শোভনদণ্ডি, চৌফলদণ্ডি, কোকদণ্ডি, জুঁইদণ্ডি
দং পাইন্দং, তাইন্দং, মৈদং, তাজিংডং, কেওকারাডং, বুচিডং, রাচিডং
দহ দহ সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ হ্রদ, জলা, বিল, ঘূর্ণিপাক। ঝিনাইদহ, মালদহ, মেলান্দহ, বিড়ালদহ, ভোমরাদহ, বাঁশদহ, ঘুড়িদহ
দিয়া দিয়া দ্বীপ শব্দের অপভ্রুংশ। কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, আলোকদিয়া, নারানদিয়া, কনকদিয়া
দিহি আলোকদিহি, গোয়ালদিহি
দী মুলাদী, জলদী, ঈশ্বরদী নরসিংদী, মনোহরদী, মাধবদী
দীঘি আদমদীঘি, বালিয়াদীঘি, বেতদীঘি, জগন্নাথ দীঘি
দ্বার দেবীদ্বার, হরিদ্বার (ভারত)
দ্বীপ সন্দ্বীপ, চরনদ্বীপ, হাবিলাশ দ্বীপ
নগর নগর (ইংরেজি: Town) হল গ্রামের চাইতে বড় অথচ পুরোপুরি শহর হিসেবে গড়ে ওঠেনি এমন জনপদ। প্রধানত আধুনিক উন্নয়ন মূলক অঞ্চল বা বড় গ্রাম আধুনিক উন্নয়ন মূলক অঞ্চলে মনুষ্য সম্প্রদায়ের বসতি। শহরের মত আধুনিক ব্যস্ততম জনবসতি। উন্নয়ন মূলক অঞ্চল বা বড় গ্রাম কেও নগর বলা হয়। জাহাঙ্গীর নগর, নাসিরনগর,নবীনগর, শ্রীনগর, জিয়ানগর, সুজানগর, জাফতনগর
না খুলনা, কালনা, চালনা, পাবনা, মেঘনা, হোমনা
নালা দীঘিনালা, মিঠানালা, জোয়ারিনালা, বড়নালা
পাড়া বনপাড়া, কোটালীপাড়া, আটপাড়া, বাগাতিপাড়া
পাল রামপাল, ধর্মপাল, গোপাল
পাশা ধর্মপাশা, দুর্গাপাশা, রামপাশা, লক্ষীপাশা, বদরপাশা, হোগলাপাশা, মাধবপাশা
পুর পুর অর্থ নগর, আবাস এবং দুর্গ। ভারতের সর্বপ্রাচীন গ্রন্থ ঋগ্বেদে শব্দটি নগর এবং বাসস্থান অর্থে প্রায় ৩০ বারের কাছাকাছি ব্যবহৃত হয়েছে। [৭] জামালপুর, ভূজপুর, নানুপুর, ধর্মপুর
পুরা মনপুরা, শাকপুরা, শম্ভূপুরা, রায়পুরা, শেখপুরা, চন্দনপুরা
বন সুন্দরবন, মগবন, লতিবন, মহিষাবন
বন্দ পায়রাবন্দ, লাঙ্গলবন্দ, লক্ষণাবন্দ
বাগ সেনবাগ, হামজার বাগ, হাজারীবাগ, লালবাগ, কাজীরবাগ, প্রেমবাগ, ঘোষবাগ
বাগান আমবাগান, কাঠাল বাগান, কচু বাগান
বাগিচা সেগুন বাগিচা, আমবাগিচা, কাঁঠালবাগিচা, ফুলবাগিচা
বাজার কক্সবাজার, মৌলভী বাজার, বিয়ানি বাজার, দোয়ারা বাজার ,বাগান বাজার
বান্ধা গাইবান্ধা, হাতিবান্ধা, বাংলাবান্ধা
বাড়ি রাজবাড়ি, পোড়াবাড়ি, টঙ্গীবাড়ি
বাড়িয়া মঠবাড়িয়া, গাছবাড়িয়া, বাঁশবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফুলবাড়িয়া, সাতবাড়িয়া ,জামবাড়িয়া, আমবাড়িয়া
বিল বিল সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ বিস্তীর্ণ জলাভূমি। তামাবিল, সুয়াবিল, বড়বিল, লম্বাবিল, কৈয়ারবিল, সাহারবিল, নয়াবিল
বিলা পুটিবিলা, পদ্মবিলা, ভদ্রবিলা, রাজবিলা
বুনিয়া বুনিয়া শব্দটি বনজ শব্দের দেশী রুপ। বেতবুনিয়া, কাঠালবুনিয়া, কেওড়াবুনিয়া, বাহারবুনিয়া, মাদারবুনিয়া
বো কত্রাবো, বেলাবো, তারাবো, আমলাবো
ভাঙ্গা মাথাভাঙ্গা, খাপরাভাঙ্গা, মাটিভাঙ্গা, মাইটভাঙ্গা, পটুয়াভাঙ্গা, বন্দুকভাঙ্গা, দাঁতভাঙ্গা
ভিটা আদারভিটা, গাজীরভিটা, বড়ভিটা
মারা মারা শব্দ সংস্কৃত মারণ শব্দ হতে ব্যুৎপন্ন। ভেড়ামারা, বাঘমারা, পুঁটিমারা, গন্ডামারা, হরিণমারা, গুইমারা, সাপমারা, দাঁতমারা
মারী মারী সংস্কৃত মারণ শব্দ হতে ব্যুৎপন্ন। বুড়িমারী, বোয়ালমারী, কাতলামারী, চিতলমারী, রৌমারী, শোলমারী, চিলমারী, ভূরঙ্গমারী
রশি আটরশি, দশরশি
ড়া বগুড়া, মগড়া, হুগড়া, সিংড়া, মহেড়া, ভাওড়া, বাংড়া
লা মংলা, হিজলা, কাজলা, বিরলা
শা, সা খোকসা, রুপসা, শার্শা, পাংশা, পোরশা
শাল শাল সংস্কৃত শালা শব্দের অপভ্রংশ। সংস্কৃতে শালা অর্থ গৃহ বা আলয়। ঘোড়াশাল, হাতিশাল, ত্রিশাল
হাট হাট সংস্কৃত হট্ট শব্দ হতে উদ্ভূত। জয়পুরহাট, বাগেরহাট, ফকিরহাট, নারায়ণহাট, বীরহাট
হাটা হাটা সংস্কৃত হট্ট শব্দ হতে উদ্ভূত। দিনহাটা, নওহাটা, দেবহাটা, দুর্গাহাটা, মাঝিহাটা, ময়দানহাটা
হাটি হাটি সংস্কৃত হট্ট শব্দ হতে উদ্ভূত। নৈহাটি, লাউহাটি, সেনহাটি, শেখহাটি, নলহাটি
হার সাপাহার, শান্তাহার, কোচাসাহার, শাখাহার

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. United Nations Conference on the Standardization of Geographical Names, London, 10–31 May 1972. 1974. New York: United Nations. Dept. of Economic and Social Affairs, p. 68.
  2. ‌‌বঙ্গীয় শব্দকোষ: হরিচরণ বন্ধোপাধ্যায় (সম্পা.), ৮৯৮ পৃষ্টা।
  3. ‌‌বঙ্গীয় শব্দকোষ: হরিচরণ বন্ধোপাধ্যায় (সম্পা.), ৫৮৯ পৃষ্টা।
  4. বঙ্গীয় শব্দকোষ: হরিচরণ বন্ধোপাধ্যায় (সম্পা.), ৭৩৫ পৃষ্টা।
  5. Bhartiya Samantwad By Ramsharan Sharma
  6. উইকি অভিধান گنج
  7. Tej Ram Sharma (১৯৭৮)। Personal and geographical names in the Gupta inscriptions। Concept Publishing Co., Delhi। পৃষ্ঠা 224-225।