বিষয়বস্তুতে চলুন

বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশনের তালিকা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান রূপরেখা গড়ে উঠেছে মূলত ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশদের থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত গঠিত বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট পর্যালোচনার মাধ্যমে তৎকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার মাধ্যমে।[][] [][][]

শিক্ষা কমিশনসমূহ

[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ শাসনামল

[সম্পাদনা]
  • লর্ড ম্যাকল-এর নিম্নগামী পরিস্রবণ নীতি (১৮১৩):
  • এটা তৎকালীন সময়ে গ্রহণযোগ্য না হলেও এখন এর গুরুত্ব অপরিসীম।
  • উইলিয়াম অ্যাডাম শিক্ষা কমিশন (১৮৩৫)
  • উড-এর ডেসপ্যাচ (১৮৫৪)
  • লর্ড কার্জন-এর শিক্ষা সংস্কার সম্মেলন (১৯০১)
  • মাইকেল স্যাডলার কমিশন (১৯১৭)
  • সার্জেন্ট কমিশন (১৯৪৪)[][][][]

পাকিস্তান শাসনামল

[সম্পাদনা]
  • মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ শিক্ষা কমিশন (১৯৪৯)
  • ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক মাওলানা আকরাম খান পূর্ববঙ্গ প্রস্তাব ৫৯ মোতাবেক গঠিত "পূর্ববঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণগঠন" নামে কমিশনের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন।
  • আতাউর রহমান খান শিক্ষা কমিশন (১৯৫৭)
  • এসএম শরীফ শিক্ষা কমিশন (১৯৫৮)
  • হামুদুর রহমান ছাত্র সমস্যা ও ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক কমিশন (১৯৬৪)
  • নূর খান শিক্ষা কমিশন (১৯৬৯)[১০][১১][১২][১৩][১৪][১৫]

বাংলাদেশ শাসনামল

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ডঃ কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে সর্বপ্রথম একটি কমিশন গঠন করা হয়; কমিশনের প্রধানের নামানুসারে যা কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন নামেও পরিচিত লাভ করে।[১৬]

মজিদ খান শিক্ষা কমিশন ছিল ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত একটি জাতীয় কমিশন।[১৭][১৮] তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আবদুল মজিদ খান-এর নেতৃত্বে এই কমিশন শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামো পুনর্গঠন এবং জাতীয় চাহিদার সাথে সংগতি রেখে আধুনিকীকরণে একাধিক প্রস্তাব ও সুপারিশ পেশ করে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৮৩ সালের "মজিদ খান শিক্ষানীতি" নামে একটি নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হয়, যা পরে ব্যাপক বিতর্ক ও আন্দোলনের জন্ম দেয় [১৯][২০] [২১] [২২]

এম এ বারী শিক্ষা কমিশন, ২০০১ হলো মুহাম্মাদ আব্দুল বারী (যিনি এম এ বারী নামে অধিক পরিচিত ছিলেন) কর্তৃক গঠিত একটি শিক্ষা কমিশন।[২৩][২৪] আব্দুল বারী বাংলাদেশের একজন উল্লেখযোগ্য শিক্ষাবিদ ছিলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য তার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়।[২৫] এই কমিশন তার পূর্ববর্তী কমিশন ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিশনকে পর্যালোচনা ও সংশোধনের গঠন করা হয়।[২৬][২৭] ২০০২ সালে এই কমিটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে নানা পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করে কিছু সংশোধনের সুপারিশ করে। তবে এই কমিশনের অনেক সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি, এইজন্য ২০০৩ সালে মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজন পরে।[২৮]

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ হালনাগাদ করার জন্য সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি ষোল সদস্য কমিটি গঠন করে। কমিটি কুদরত-ই-খুদা কমিশনের রিপোর্টের ১৯৭৪ এবং শামসুল হক শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৯৭ জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। ২০০৯-এর খসড়াটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ই সেপ্টেম্বর ২০০৯-এ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের সুপারিশগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে স্নাতক শিক্ষার স্তরগুলি তিন থেকে দুই এ সংশোধন করা, শিক্ষার সমস্ত ধারার অধীনে কিছু বাধ্যতামূলক বিষয়াবলীর বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষাকে আরও প্রয়োগ ভিত্তিক করে তোলা, এবং একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করা। নীতিমালাটিতে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়ানো, অষ্টম শ্রেণির শেষ পর্যায়ে চূড়ান্ত প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষা এবং ফলাফলের ভিত্তিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন নীতিতে সুপারিশ করা হয়েছে যে মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা চার শিক্ষাবর্ষ, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রসারিত হবে এবং দশম শ্রেণির শেষে সরকারি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। চূড়ান্ত মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষা দ্বাদশ শ্রেণির শেষে অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন ধারায় বাংলা, নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশের অধ্যয়ন, গণিত, প্রকৃতি ও পরিবেশ, সামাজিক গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসহ কয়েকটি মৌলিক বিষয় বাধ্যতামূলক করা হবে। নীতিমালাটিতে সকল মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানে কিছু প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রবর্তন করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। বাধ্যতামূলক বিষয়গুলির মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করে মাদ্রাসা শিক্ষার পুনর্গঠন করা হবে। কমিটি বেসরকারী শিক্ষক কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করেছিল।[২৯]

  • জাতীয় শিক্ষানীতি–২০১০
  • জাতীয় শিক্ষানীতি–২০২২
  • রূপকল্প–২০৪১[৩০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "শিক্ষা কমিশন - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২৫
  2. "গত তিন দশকে কোনো শিক্ষা আন্দোলন গড়ে ওঠেনি"দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২৫
  3. Zastoupil, L.; Moir, M., সম্পাদকগণ (১৯৯৯)। The Great Indian Education Debate: Documents Relating to the Orientalist-Anglicist Controversy, 1781–1843 (ইংরেজি ভাষায়)। Richmond। পৃ. ১৯৩।
  4. ড. শোয়াইব জিবরান। উনিশ শতকের বাংলার শিক্ষায় বৃটিশ উদ্যোগ : ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া [British Initiatives in Nineteenth Century Bengali Education: Action and Reaction]
  5. মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী। যুগে যুগে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষার উত্তরণ [Education Commissions Through the Ages and the Progress of Education]। ঢাকা: জাগরণী প্রকাশনী।
  6. Proceedings of the Pakistan Education Conference held at Karachi from 27 November to 1st December 1947 (ইংরেজি ভাষায়)। Education Division, Government of Pakistan। ১৯৪৭। পৃ. ২৯।
  7. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে শিক্ষা পরিকল্পনা ও বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ [Educational Planning in Bangladesh in Historical Context and Recommendations of Various Education Commissions] (প্রতিবেদন)। স্কুল অব এডুকেশন। পৃ. ১–৩০।
  8. বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস [A Brief History of the Education System of Bangladesh]। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। পৃ. ১–৩০।
  9. ড. মোছা. খোদেজা খাতুন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাথমিক শিক্ষা ১৯৪৭–‘৭১: সরকারের ভূমিকা [Primary Education in East Pakistan 1947–71: The Role of Government]
  10. History of abduction in India (ইংরেজি ভাষায়)। Tripura University। পৃ. ৩৭–৯৮।
  11. বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট [Reports of Various Education Commissions] (প্রতিবেদন)।
  12. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, পর্যালোচনা মন্তব্য ও পরামর্শ [National Education Policy 2010: Review Comments and Suggestions] (প্রতিবেদন)। ঢাকা: বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক পরিষদ। ৬ ডিসেম্বর ২০১০। পৃ. ৪, ১৬।
  13. "শিক্ষানীতি নিয়ে বিশ্লেষণ [Analysis on Education Policy]"। প্রথম আলো। ৩০ মে ২০২২।
  14. "শিক্ষা কমিশন নিয়ে প্রতিবেদন [Report on Education Commission]"। ইনকিলাব। ১১ জুন ২০২২।
  15. "শিক্ষানীতি সংশোধন নিয়ে আলোচনা [Discussion on Amendment of Education Policy]"। নয়া দিগন্ত। ২০ জুন ২০২২।
  16. বাংলাপিডিয়াএশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ
  17. "শিক্ষা কমিশন - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২৫
  18. Report of the Majid‑Khan Education Policy Formulation Committee (প্রতিবেদন)। Ministry of Education, Bangladesh। ১৯৮৩।
  19. "Majid Khan Education Policy"। Ministry of Education, Government of Bangladesh। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮২। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২৫
  20. Maniruzzaman, T. (২০০৪)। Group Interest and Political Changes: Studies of Pakistan and Bangladesh। Dhaka University Press।
  21. "Former Education Minister Majid Khan is no more"The Daily Post (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ এপ্রিল ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২৫
  22. TBS Report (২৭ এপ্রিল ২০২৩)। "Former education minister Majeed Khan passes away"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২৫
  23. Zastoupil, L. and Moir, M. (eds.) The Great Indian Education Debate: Documents Relating to the Orientalist-Anglicist Controversy, 1781–1843. Richmond, 1999, p 193
  24. "শিক্ষা কমিশন - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২২
  25. Proceedings of the Pakistan Education Conference held at Karachi from 27 November to 1st December 1947, Education Division, Government of Pakistan, p.29
  26. Hasan, Rakib (২৪ জুন ২০২২)। "একনজরে বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশনসমূহ"Fateh24 (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২২
  27. "বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই)"www.bmtti.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  28. "ড.-এম-এ-বারী-কমিশন-২০০২"www.shed.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২২
  29. মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান (২০১২)। "শিক্ষা কমিশন"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১ওসিএলসি 883871743ওএল 30677644M
  30. Hasan, Rakib (২৪ জুন ২০২২)। "একনজরে বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশনসমূহ"Fateh24 (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২৫

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]