বাংলাদেশের গণমাধ্যম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলাদেশের গণমাধ্যম বলতে বাংলাদেশের মুদ্রিত, সম্প্রচার এবং অনলাইন গণমাধ্যম বোঝায়।

সংবিধান সংবাদপত্র স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা "যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ"সহ নিশ্চয়তা প্রদান করে।[১] যদিও কিছু সংবাদমাধ্যমের হয়রানি করা হয়েছে।[২] বাংলাদেশী মিডিয়ার স্থান ২০১৬ সালে ১৪৬ এর অবস্থান থেকে নামিয়ে ২০১৮ সালে ১৪৪ এ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।[৩][৪] রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার এর ২০১৯ সালের সংবাদপত্র স্বাধীনতা সুচকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫০তম স্থানে আছে।[৫][৬]

বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিল্পে একবিংশ শতাব্দীতে উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটলেও বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যম ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাত বিদ্যমান।[৭]

সূচনা[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে গণমাধ্যম সরকারি ও বেসরকারির একটি মিশ্রণ। মানবাধিকার, মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার পাশাপাশি জাতীয় সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ফৌজদারি শাস্তির বিধান রয়েছে [১] ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে বিচার ছাড়া সাংবাদিক ১২০ দিন পর্যন্ত আটক থাকতে পারে। সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সময়ে মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা বেড়ে যায়।রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস সেনাবাহিনীকে সাংবাদিকদের টার্গেট করে সেন্সরশিপ প্রয়োগ করার অভিযোগ তুলে।[২]

সংবাদ সংস্থা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার আগে সংবাদ সংস্থাগুলো বাংলাদেশে উপস্থিত ছিল।১৯৪৯ সাল থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অফ পাকিস্তান (এএপি) এর ঢাকা ও চট্টগ্রামে শাখা ছিল। স্বাধীনতার পরে এএপি'র স্থলাভিষিক্ত হয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা। প্রতিষ্ঠিত হওয়া দ্বিতীয় সংবাদ সংস্থা এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রথমটি ছিল ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সি (ইএনএ)। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে ছয়টি শেয়ারহোল্ডারের একটি কনসোর্টিয়াম দ্বারা যার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোলাম রসুল মল্লিক অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ, দেশের প্রথম সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড বেসরকারী মালিকানাধীন সংস্থা ছিল। অন্যান্য বেসরকারী সংবাদ সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে নিউজ নেটওয়ার্ক অফ বাংলাদেশ (এনএনবি) এবং বিডি নিউজ ২৪, যা দেশের প্রথম ফটো এজেন্সি ফোকাস বাংলা চালু করেছে।[৮][৯][১০]

সংবাদপত্র[সম্পাদনা]

বেসরকারি প্রিন্ট মিডিয়ায় মতামতের একটি সুবিশাল উপস্থাপনা আছে, এছাড়া সাপ্তাহিকসহ শত শত প্রকাশনা প্রকাশিত হয়, কিছু কড়া কাগজপত্র অতীতে চাপ সম্মুখীন হয়েছে[১] ইংরেজি ভাষার পত্রিকা শিক্ষিত শহুরে পাঠককুলের জন্য আবেদন করা হয়েছিল ।[২]

টিভি ও রেডিও[সম্পাদনা]

টেলিভিশন বাংলাদেশে খবরের জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম।[২] বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালে ১৫ টি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল [১১] ২০০৬ সালের হিসাবে বাংলাদেশে ১৫টি এএম এবং ১৩টি এফএম চ্যানেল আছে।[১২] বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস দেশে সম্প্রচারিত হয়, এবং ভারতীয় এবং অন্যান্য বিদেশী টেলিভিশন সম্প্রচারগুলি দেশে আনা হয় [২]বর্তমানে বাংলাদেশে শতাধিক টিভি চ্যানেল রয়েছে।

বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি), এনজিও নেটওয়ার্ক কনসালটেটিভ স্ট্যাটাসে ইউএন ইসোসোকের সাথে কমিউনিটি রেডিওকে মধ্যবত্তিতার একটি বিশেষ ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করে। বিএনএনআরসি ২০০০সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অন্যান্য সংস্থার সাথে কমিউনিটি রেডিও সম্পর্কিত সরকারের সাথে ওকালতি প্রচার করে চলেছে।

বিএনএনআরসি'র কমিউনিটি রেডিওর হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্য হ'ল দারিদ্র্য ও সামাজিক বর্জন, প্রান্তিক গ্রামীণ দলগুলিকে শক্তিশালী করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুঘটক করা এবং উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টা চালানো প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক স্তরের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধান করা।

সম্প্রদায়িক রেডিওর প্রধান ভূমিকাটি সেই কণ্ঠহীন লোকদের ভয়েস দিচ্ছে যাদের সম্প্রদায়ের বিকাশের বিষয়ে তাদের ধারণা এবং মতামত প্রকাশের জন্য মূলধারার মিডিয়াতে প্রবেশ করতে পারে না।কমিউনিটি রেডিও দ্বারা করা কয়েকটি বড় কাজ হল যোগাযোগের অধিকার প্রচার, সম্প্রদায়কে অবহিত করার প্রক্রিয়াটি গতিময় করা, তথ্যের অবাধ প্রবাহকে সহায়তা করা এবং পরিবর্তনের অনুঘটক হিসাবে কাজ করা। এটি সম্প্রদায়িক স্তরে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমর্থন করবে।

ফলস্বরূপ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় কমিউনিটি রেডিও ইনস্টলেশন, সম্প্রচার ও অপারেশন নীতি ২০০৮ সালে ঘোষণা করর হয়। এই নীতিমালার অধীনে তথ্য মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে প্রথম ১২ টি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা করার অনুমোদন দেয়।[১৩] বাংলাদেশে,২০১৬ সালের মধ্যে, সক্রিয় সম্প্রদায়িক রেডিও স্টেশনগুলির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ তে।[১৪] তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সালে প্রণীত করেন । এ ক্ষেএে কমিউনিটি রেডিওর অনুমোদন গ্রামীণ মানুষকে শক্তিশালী করার একটি শক্ত পদক্ষেপ হয়ে দাড়ায়।

প্রাথমিকভাবে সরকার সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রামের জন্য ইয়ং পাওয়ার ইন অ্যাকশন (ওয়াইপিএসএ), সাতক্ষীরার জন্য নলতা কমিউনিটি হাসপাতাল, বগুড়ার জন্য এলডিআরও, ব্র্যাকের জন্য-মৌলভীবাজার, নওগাঁর জন্য বারান্দ্রো কমিউনিটি রেডিও, ছাপাই নববজঞ্জের প্রিয়াস, সিসিডি - রাজশাহী, শ্রীজনি - ঝিনাইদহ, ইসি বাংলাদেশের জন্য - মুন্সিহিগঞ্জ, এমএমসি-বরগুনা এবং আরডিআরএসের জন্য - কুড়িগ্রাম, সুন্দরবন কমিউনিটি রেডিওর জন্য কয়রা (খুলনা), এসিএলবি-তেলনাফ (কক্সবাজার) এবং কৃষি তথ্য পরিষেবাদি (এআইএস) - সম্প্রদায়িক পল্লী রেডিওর জন্য আমতোলি (বরগুনা)- কে অনুমোদিত করেছে।

বিএনএনআরসি দ্বারা সরবরাহকৃত এনএনআরসি সচিবালয়ে কমিউনিটি রেডিওতে ন্যাশনাল হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে কমিউনিটি রেডিও অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়ায় প্রায় ২০০ সংস্থাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিওর জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা তৈরি করতে একটি প্র্যাকটিভ প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করা উচিত। এই প্রেক্ষাপটে, বিএনএনআরসি কমিউনিটি রেডিও একাডেমি (সিআরএ) প্রতিষ্ঠা করেছে। একাডেমি সম্প্রদায় রেডিও সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, গবেষণা, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং অন্যান্য সহায়তার জন্য সারা বছর কমিউনিটি রেডিও সূচনাকারীদের সংগঠিত করবে।

সম্প্রদায়িক রেডিওগুলিকে গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য নিজস্ব শৈলীর সাহায্যে তাদের চিন্তাভাবনাগুলি প্রকাশ করার জন্য একটি বিকল্প, কার্যকর গণমাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত কমিউনিটি রেডিও অলাভজনক সংস্থা।

ইন্টারনেট মিডিয়া[সম্পাদনা]

২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪,২৭,৬৬,০০০ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। [১৫] ইন্টারনেটকে ভিত্তি করে বেশ কিছু অনলাইন গণমাধ্যমও রয়েছে।[১] বাংলাদেশে বিশাল অনলাইন সংবাদপত্র এবং নিউজ পোর্টাল রয়েছে। তবে সব নিউজ পোর্টালই বাংলাদেশ সরকারের তালিকাভুক্ত নয়। এখন বাংলাদেশ সরকার অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য স্মারকলিপি তৈরির চেষ্টা করছে। এছাড়াও কিছু সোশ্যাল মিডিয়া, যেমন ফেসবুক, টুইটার এবং ওয়ান মিরর বাংলাদেশের শক্তিশালী মিডিয়া হয়ে ওঠে।

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bangladesh Press Freedom ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ জুন ২০১১ তারিখে, Freedom House
  2. Country profile: Bangladesh, BBC News Online
  3. "2018 World Press Freedom Index | Reporters Without Borders" (ইংরেজি ভাষায়)। Reporters Without Borders। ২০২০-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১১ 
  4. "World press freedom index" (ইংরেজি ভাষায়)। Reporters Without Borders। ২০১৭-০৩-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১১ 
  5. "2016 World Press Freedom Index | Reporters Without Borders"RSF (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-২৩ 
  6. Worldwide Press Freedom Index ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে, Reporters Without Borders
  7. আলী রীয়াজ, মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান (জানুয়ারি ২০২১)। বাংলাদেশের মিডিয়ার মালিক কারা?। নিউ ইস্কাটন, ঢাকা, বাংলাদেশ: সেন্টার ফর গর্ভন্যান্স স্টাডিজ। আইএসবিএন 978-984-95364-1-3 
  8. Banerjee, Indrajit and Logan, Stephen (eds.) (2008). Asian Communication Handbook 2008, p. 110. Asian Media Information and Communication Centre. আইএসবিএন ৯৮১৪১৩৬১০৭.
  9. Salam, Shaikh Abdus (1997). Mass media in Bangladesh: Newspaper, radio and television, p. 54 . South Asian News Agency
  10. The Daily Star (23 May 2006). "Journalist Golam Rasul Mallick passes away" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মে ২০১৫ তারিখে. Retrieved 15 June 2015.
  11. "বেসরকারি চ্যানেলসমূহ" (পিডিএফ)। ২১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  12. Bangladesh ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে, CIA World Factbook
  13. Rahman, Anis (জানুয়ারি ২০১২)। "Television and Public Sphere in Bangladesh: An Uneasy Relationship"। Media Asia39 (2): 89। ডিওআই:10.1080/01296612.2012.11689922 
  14. Rahman, Anis (২০১৬)। "Print and Electronic Media"। Sajjadur Rahman, Mohammad; Riaz, Ali। Routledge Handbook of Contemporary Bangladesh। Routledge। পৃষ্ঠা 328–329। আইএসবিএন 978-0-415-73461-5 
  15. Internet Subscribers in Bangladesh January 2015

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]