বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ
২০১২ সালে প্রকাশিত অষ্টম সংস্করণ
লেখকঅ্যান্থনি মাসকারেনহাস
মূল শিরোনামBangladesh: A Legacy of Blood
অনুবাদকফরিদ কবির (১৯৮৭)
মোহাম্মদ শাহজাহান (১৯৮৮)
দেশযুক্তরাজ্য
বাংলাদেশ
ভাষাইংরেজি
বাংলা
ধরনইতিহাস বিষয়ক
প্রকাশকহড্ডার এন্ড স্টাফটন
প্রকাশনার তারিখ
১ মার্চ ১৯৮৬[১]
বাংলায় প্রকাশিত
ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ (প্রথম)
ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ (দ্বিতীয়)
পৃষ্ঠাসংখ্যা১১৭
আইএসবিএন৯৭৮-০৩৪০৩৯৪২০৫

বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ (ইংরেজি: Bangladesh: A Legacy of Blood, প্রতিবর্ণীকৃত: বাংলাদেশ: এ লিগ্যাসি অব ব্লাড; বাংলাদেশ: একটি রক্তাক্ত দলিল নামেও পরিচিত) হল একটি বাস্তবধর্মী বই যাতে সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন।[২] বইটিতে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে অভ্যুত্থান ও ৭১ এর রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের ইতিহাস রয়েছে। বইটি মূলত বাংলাদেশের রাজনীতির দুই প্রধান ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে।[৩][৪][৫][৬] দুজনেরই শাসন শেষ হয়েছিল তাদের গুপ্তহত্যার মাধ্যমে। বইটি বাংলায় বাংলাদেশ: একটি রক্তাক্ত দলিলবাংলাদেশ: রক্তের ঋণ নামে অনুবাদ করা হয়।

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

বইটির রচনাশৈলী আকর্ষণীয়। বইটিতে এই দুই নেতাদের হত্যাকাণ্ড এবং ষড়যন্ত্রকারীদের পরিকল্পনা বর্ণনা করা হয়েছে। বইটির এক অংশে কিছু সাদা-কালো ছবি সংকলন করা হয়েছে। ছবিগুলির মধ্যে নিহত শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, নিহত জেনারেল জিয়াউর রহমানের ছবি, বিভিন্ন অভ্যুত্থানের ছবি, ষড়যন্ত্রকারীদের ছবি, শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদের ছবি, সরকারী নথিপত্রের কিছু ফটোকপি, সরকারী গেজেটের ছবি উল্লেখযোগ্য।

লেখকের দাবি অনুসারে বইটিতে লেখা হয়েছে কারা মুজিবকে হত্যা করেছিল, কারা জেল হত্যায় জড়িত ছিল এবং কীভাবে জেনারেল জিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল। এই বইটিতে জেনারেল কোর্ট মার্শাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার জন্য ফাঁসি দেওয়া কর্মকর্তাদের একটি তালিকাও রয়েছে।

অধ্যায়[সম্পাদনা]

বইটির ১৩টি অধ্যায় এবং একটি সূচীপত্র রয়েছে:

  • মুদ্রিত ছবি ও দলিলপত্রের তালিকা
  • অবতরণিকা
  • প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গুপ্ত হত্যার জন্যে অভিযুক্ত (জেনারেল কোর্ট মার্শাল কর্তৃক) ও ফাঁসিতে নিহত অফিসারদের তালিকা
  • প্রথম অধ্যায় : শেখ মুজিব আর মেজরবৃন্দ
  • দ্বিতীয় অধ্যায় : যাত্রায় ভুল
  • তৃতীয় অধ্যায় : মানব দেবতার পতন
  • চতুর্থ অধ্যায় : মুজিবের মিলিটারী ভীতি
  • পঞ্চম অধ্যায় : দুঃসময়
  • ষষ্ঠ অধ্যায় : মোশতাক রাজি
  • সপ্তম অধ্যায় : শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড
  • অষ্টম অধ্যায় : মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণ
  • নবম অধ্যায় : পাল্টা অভ্যুত্থান ও জেলহত্যা
  • দশম অধ্যায় : একটি স্মরণীয় রাত
  • একাদশ অধ্যায় : জিয়া একটি নাম একটি কিংবদন্তি
  • দ্বাদশ অধ্যায় : অভ্যুত্থান , বিদ্রোহ আর প্রাণদণ্ড
  • ত্রয়োদশ অধ্যায় : জেনারেল জিয়ার হত্যা পর্ব

বিবরণ[সম্পাদনা]

১৯৮৫ সালের নভেম্বর মাসের একটি সংস্করণে বইয়ের প্রচ্ছদে মাসকারেনহাস লিখেছেন

"এটি একটি সত্য ঘটনা; নানাভাবে এটি তৃতীয় বিশ্বের অমোহিতের একটি পাঠ্যপুস্তক। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশ নামের একটি দেশ (জনসংখ্যা ৭০,০০০,০০০) নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামের শেষে জন্মগ্রহণ করেছিল। এই যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের দশ লক্ষেরও বেশি বাঙালি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে মারা গিয়েছিলেন। তবে এটি বিংশ শতাব্দীর কয়েকটি ভয়ংকরতম মানব-নির্মিত বিপর্যয়ের মধ্যে একটি হলেও এটি স্ব-সংকল্পের জন্য জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী মানবিক বিজয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠের একটি।"

পটভূমি[সম্পাদনা]

মাসকারেনহাস তার নিজের বইটি এভাবে বর্ণনা করেছেন যে

এই বইটি তাদের (বাংলাদেশের প্রথম দিকের নেতৃবৃন্দ) সময়ের অপরিবর্তিত গল্প; এটি মূলত বাংলাদেশের প্রথম দশ বছরের দুঃখজনক ইতিহাস। এটি লিখিত হয়েছে মূল নায়কদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত পরিচিতির উপর ভিত্তি করে, এই নাটকীয় ঘটনার সাথে জড়িত পুরুষ ও মহিলাদের সাথে ১২০টিরও বেশি পৃথক সাক্ষাৎকারের উপর নির্ভর করে এবং সরকারী সংরক্ষণাগার এবং নথির উপর ভিত্তি করে যা আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কথোপকথনগুলোর সম্পর্কে আমাকে তথ্যকর্মীরা বলেছিলেন যে তারা আসলে যে ঘটনাগুলিতে জড়িত ছিল সেগুলোর তারা সঠিক বর্ণনা করেছে।

প্রকাশনা এবং সংবর্ধনা[সম্পাদনা]

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ডেভিড টেলর বইটির ব্যাখ্যা ও বিবরণীর প্রতি মনোযোগ বিষয়ে প্রশংসা করেছেন যদিও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে বইটির ব্যাখ্যা কিছুটা সংক্ষিপ্ত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অতিরিক্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।[৭]

এই বইটি ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যের হড্ডার এন্ড স্টাফটন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করে।[৩] যুক্তরাজ্যে ৪.৯৫ ইউকেপি মূল্যমানের প্রচ্ছদসহ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। তবে এই বইয়ের ১৯৮৫ সালের পূর্ববর্তী একটি মুদ্রণ সংস্করণ আছে বলে ধরা হয়। এটি বইটি ইভোনে ও তাদের সন্তান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের উৎসর্গ করা হয়েছে।

বইটির বাংলা ভাষায় অনুবাদ ৯০ দশকের শেষদিকে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৮৭ সালে ফরিদ কবির এটিকে বাংলাদেশ: একটি রক্তাক্ত দলিল নামে ও ১৯৮৮ সালে মোহাম্মদ শাহজাহান এটিকে বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ শিরোনামে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। বইয়ের দ্বিতীয় নামটি জনপ্রিয়তা পায়।[৪]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

এম আর আখতার মুকুল তার স্বলিখিত পুস্তকে শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ম্যাসকারেনহাস শেখ মুজিবের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে বইটি রচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ম্যাসকারেনহাস বিশেষ প্রয়োজনে শেখ মুজিবের নিকট বিপুল অঙ্কের অর্থসহায়তা চেয়েছিলেন, যা মুজিব প্রদান করতে অপারগ হয়েছিলেন। এ ঘটনার ফলে ম্যাসকারেনহাস শেখ মুজিবের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।[৮]

মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী ম্যাসকারেনহাসের বিভিন্ন উদ্ধৃতির সমালোচনা করে অভিযোগ করেন,[৯]

এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালে বিশেষ মহলের সহযোগীতায় ম্যাসকারেনসাসের ওই বইটি প্রকাশিত হয়।...১৯৮৬ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এবং মদদে ম্যাসকারেনহাস লিগ্যাসি অফ ব্লাড নামে আর একটি পুস্তক রচনা করেন। বইটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে তার লেখার উদ্দেশ্য ও প্রেরণা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

তিনি আরো লিখেছেন,

জিয়া হত্যার ব্যাপারে এন্থনি ম্যাসকারেনহাস তার এ লিগ্যাসি অফ ব্লাড বইতে (পৃ. ১৬৯) জেনারেল মঞ্জুর ও জেনারেল শওকতের ষড়যন্ত্রের আভাস দিয়ে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না তা আমি আগেই বলেছি। একইভাবে ঐ বইয়ে বলা হয়, জেনারেল মঞ্জুর ঢাকায় একাধিকবার ফোন করেছেন এবং আমি তার ফোন পেয়ে অস্বস্তি বোধ করেছি বা হতবাক হয়েছি - এটাও সম্পূর্ণ বানোয়াট। আমি এসব ঘটনার সাক্ষী। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে এসব ভুল তথ্য আর্মিতে মুক্তিযোদ্ধা বিরোধীরা ম্যাসকারেনহাসকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সরবরাহ করে। বইটি পড়লেই এর উদ্দেশ্য বোঝা যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mascarenhas, Anthony (১ মার্চ ১৯৮৬)। "Bangladesh: A Legacy of Blood" (ইংরেজি ভাষায়)। Arnold Overseas। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "BNP's rejoinder and our reply"The Daily Star। ২০১৫-০৮-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-১৪ 
  3. Karki, Sumnima (২০ জুন ২০২০)। "Bangladesh: A Legacy of Blood"Khabarhub (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  4. হোসেন, আকবর (১৫ অগাস্ট ২০২০)। "শেখ মুজিবকে মিশরের উপহার দেয়া ট্যাংক যেভাবে তার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. "বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং জিয়ার সম্পৃক্ততা"jagonews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. Counts, Alex। Small Loans, Big Dreams: How Nobel Prize Winner Muhammad Yunus and Microfinance are Changing the World (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 388। আইএসবিএন 978-0-470-28527-5। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  7. Taylor, David (Autumn ১৯৮৬)। "Book Review: Bangladesh: a legacy of blood"। Royal Institute of International Affairs: 705। জেস্টোর 2618626 
  8. মুকুল, এম আর আখতার। মুজিবের রক্ত লাল 
  9. চৌধুরী, মইনুল হোসেন (২০০০)। এক জেনারেলের নিরব সাক্ষ্যঃ স্বাধীনতার প্রথম দশক। মাওলা ব্রাদার্স। পৃষ্ঠা ৬৪। আইএসবিএন 9844101751