বন্যা নিয়ন্ত্রণ
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বলতে বন্যার জলপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধ বা হ্রাস করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলিকে বোঝায়।[১][২] বন্যা লাঘব (Flood relief) পদ্ধতিগুলি বন্যার পানি বা উচ্চ জলপ্রবাহের প্রভাব হ্রাস করতে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক কারণ যেমন উজানের চরম আবহাওয়ার পাশাপাশি মানুষের দ্বারা জলাশয় ও বৃষ্টি গড়ানো পানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলির কাঠামোভিত্তিক ও কাঠামোবিহীন এই দুইভাগে ভাগ করা হয়। কাঠামোভিত্তিক পদ্ধতিগুলি বন্যার পানিকে আক্ষরিক অর্থে প্রতিরোধ করে। বন্যা প্রতিরোধের জন্য শক্ত অবকাঠামো নির্মাণ (যেমন বন্যা প্রাচীর) বন্যা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর হয়ে থাকে। তবে ভূদৃশ্য প্রকৌশল শাস্ত্রের অভ্যন্তরে সেরা চর্চা হিসেবে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি সামাল দেওয়ার জন্য কোমল অবকাঠামো ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থার (যেমন জলাভূমি, প্লাবনভূমি) উপর নির্ভরশীলতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপকূলীয় বন্যা প্রতিরোধ বা সামাল দেওয়ার জন্য উপকূল ব্যবস্থাপনার চর্চাগুলিকে জোয়ারভাটার মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সমুদ্রসমতলের উচ্চতাবৃদ্ধিকেও গণনায় রাখতে হয়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও লাঘব জলবায়ু পরিবর্তন উপযোজন ও জলবায়ুজনিত ঘাতসহিষ্ণুতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমুদ্র সমতলের উচ্চতাবৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত ও তীব্র বৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই বিশ্বব্যাপী এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।[৩]
পরিবেশ প্রকৌশল শাস্ত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বলতে বন্যার জলপ্রবাহের ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়, যেমন বন্যা প্রতিরোধ না করে বন্যাপ্রাচীর ও বন্যাদ্বারের মাধ্যমে বন্যার পানির গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া। এছাড়া লোক ব্যবস্থাপনাও এর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে লোক বাসস্থান স্থানান্তর এবং বাড়িঘর-সম্পত্তির উপরে বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সাধারণত বন্যা নিয়ন্ত্রণ তিনটি স্তরে অধ্যয়ন করা যায় - একক ব্যক্তির সম্পত্তি, ক্ষুদ্র সম্প্রদায় ও সমগ্র শহর।
প্রাচীনকাল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের যে মৌলিক পদ্ধতিগুলি চর্চিত হয়ে আসছে, সেগুলি হল উজানে বনায়ন (যাতে বৃক্ষ আচ্ছাদনের কারণে ভূমিক্ষয় হ্রাস পায় ও পানির স্রোত দ্রুত ভাটিতে নেমে না আসে), নদীর তীর ঘেঁষে বেড়িবাঁধ (Dyke ডাইক বা Levee লেভি), বন্যাপ্রাচীর (Floodwall ফ্লাডওয়াল), সমুদ্রপ্রাচীর (Seawall সি-ওয়াল), বাঁধ (Dam ড্যাম), নদীবক্ষ বাঁধ (Weir উইয়ার) ও জলাধার (Reservoir রিজার্ভয়ার) নির্মাণ এবং জনবহুল এলাকা থেকে বানের পানির গতিপথ ঘোরানোর জন্য ভাটিতে কৃত্রিম প্লাবনপথ (Floodway ফ্লাডওয়ে) ও নিষ্কাশন খাল (Drainage canal) নির্মাণ। উপকূলীয় প্লাবন প্রতিরোধের জন্য সমুদ্র প্রাচীর (Sea wall), সমুদ্রতট পুষ্টকরণ (Beach nourishment) ও প্রতিবন্ধক দ্বীপপুঞ্জ (Barrier islands) ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নদীর খাতের উন্নতিসাধন (Channel improvement) আরেক শ্রেণীর সমাধান, যেমন অগভীর নদীর তলদেশের পলিকাটা-র (Dredging ড্রেজিং) মাধ্যম নদীর গভীরতা বৃদ্ধি, নদীর তীরের বৃক্ষ অপসারণ, নদীর প্রশস্ততা বর্ধন, আঁকা-বাঁকা প্যাঁচানো নদীর প্যাঁচ বন্ধ করে দিয়ে পানির গতিপথ সরলরেখায় নিয়ে আসা, ইত্যাদি করে নদীর ভেতর দিয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন হ্রাস, এবং জলাভূমি, তৃণভূমি ও বনভূমি সংরক্ষণ করার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পানি শোষণের সুবন্দোবস্ত করে বন্যার পৃষ্ঠগড়ানো পানির (run-off water) প্রবাহ হ্রাস করা যায়। এইসব পদ্ধতির মূলত তিনটি লক্ষ্য থাকে: বন্যাপ্লাবিত ভূমির আয়তন হ্রাস করা, বন্যার স্থায়িত্বকাল হ্রাস করা এবং বন্যার পানির প্রবাহের সর্বোচ্চ নির্গমহার হ্রাস করা।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Paoletti, Michele; Pellegrini, Marco; Belli, Alberto; Pierleoni, Paola; Sini, Francesca; Pezzotta, Nicola; Palma, Lorenzo (জানুয়ারি ২০২৩)। "Discharge Monitoring in Open-Channels: An Operational Rating Curve Management Tool"। Sensors (ইংরেজি ভাষায়)। MDPI (প্রকাশিত হয় ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। 23 (4): 2035। আইএসএসএন 1424-8220। ডিওআই:10.3390/s23042035 । পিএমআইডি 36850632
|pmid=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। পিএমসি 9964178|pmc=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। - ↑ "Flood Control", MSN Encarta, 2008 (see below: Further reading).
- ↑ "Strengthening climate resilience through better flood management"। ReliefWeb (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৪।