বদনজর

কুদৃষ্টি বা বদ নজর একটি অভিশাপ সংক্রান্ত অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস, যা সাধারণত হিংসা থেকে উদ্ভূত এক দৃষ্টির মাধ্যমে ঘটে বলে মনে করা হয়।[১] প্রায় ৫,০০০ বছর আগে মানুষ বদনজর থেকে বাঁচতে যে তাবিজ ব্যবহার করত, তার নমুনা আজও পাওয়া যায়।[২]


ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, বলকান, পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান ও ল্যাটিন আমেরিকা সহ নানা সংস্কৃতিতে বদনজরের ধারণা প্রচলিত। [৩] এসব সংস্কৃতিতে সাধারণত বিশ্বাস করা হয়, বদনজর কারও দুর্ভাগ্য বা বিপদের কারণ হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি একধরনের অতিপ্রাকৃত শক্তি—যা নির্দোষ মানুষদের ক্ষতিসাধনে দুষ্ট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বা তাদের প্রতি প্রতিফলিত হয়। এই ধারণাটি আব্রাহামীয় ধর্মসমূহের ধর্মীয় সাহিত্যেও বহুবার পাওয়া যায়।[৪]
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বদনজর থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। বদ নজরের বিরুদ্ধে কিছু বিখ্যাত তাবিজের মধ্যে রয়েছে নাজার তাবিজ, যা নিজেই একটি চোখের প্রতীক, এবং হামসা, একটি হাতের আকৃতির তাবিজ মন্দ চোখের প্রতীক প্রাথমিকভাবে সিরামিক বা কাদা-মাটির তৈরি হতো, তবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে কাচের পুঁতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর ভারতীয়, ফিনিশীয়, পারসিক, আরব, গ্রীক, রোমান ও অটোমান সংস্কৃতিতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইলিরিয়ান সংস্কৃতিতে বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফ্যালাস, হাত, পা এবং পশুর দাঁতের আকৃতির বিভিন্ন তাবিজ বা প্রতীক ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন রোমানরা বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য 'ফ্যাসিনাস'-এর মতো ফ্যালাস প্রতীক ব্যবহার করত। আধুনিক দক্ষিণ ইতালিতে এখনও কর্নিসেলো, সিমারূটা এবং শিংয়ের চিহ্নসহ বিভিন্ন ধরনের তাবিজ ও অঙ্গভঙ্গি বদনজর প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বদ নজরের (মন্দ চোখের) বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নানা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আরব সংস্কৃতিতে 'মাশা'আল্লাহ' (মা শা' আল্লাহ) বলার মাধ্যমে প্রশংসা করা হয়, কারো বদ নজরের প্রভাব না পারে, অন্যদিকে ইরানের মতো কিছু দেশে নির্দিষ্ট গাছ—যেমন রু—কে বদনজর থেকে রক্ষার প্রতিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।"।[৫]

তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "The strange power of the 'evil eye'"। www.bbc.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৫-১৭।
- ↑ "The strange power of the 'evil eye' - BBC Culture"। web.archive.org। ২০২১-০২-০৯। ২০২১-০২-০৯ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৫-১৭।
- ↑ Author, No (২০১২-০৮-০৯)। "Chapter 4: Other Beliefs and Practices"। Pew Research Center (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৬-০৯।
- ↑ Neis, Rafael Rachel (২০১৩)। The Sense of Sight in Rabbinic Culture Jewish Ways of Seeing in Late Antiquity। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 29–40, 160–164, 242, 258–278। আইএসবিএন 9781107292536।
- ↑ Foundation, Encyclopaedia Iranica। "Welcome to Encyclopaedia Iranica"। iranicaonline.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৪।