বগা বাবা মাজার

বগা বাবা মাজহার, বগা ফকিরের মাজার নামেও পরিচিত, আসামের ডিব্রুগড় জেলার অন্তর্গত ডিব্রুগড় শহরের মধ্য পাঁচালি এলাকায় অবস্থিত একটি মুসলিম উপাসনালয়। এটি সুফি সাধক সৈয়দ রওশন আলী চিশতির মাজার। স্থানীয়ভাবে বোগা বাবা নামে পরিচিত। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য আজমির থেকে আসামে চলে আসেন এবং অবশেষে ডিব্রুগড়ে বসতি স্থাপন করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে এই স্থানে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীকালে সেখানেই তাঁর মাজার তৈরি করা হয়।

ব্যুৎপত্তি

সৈয়দ রওশন আলী চিশতী, যিনি বগা বাবা বা বগা ফকির নামেও পরিচিত, তার সুদর্শন চেহারার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর লম্বা গড়ন এবং ফর্সা বর্ণের কারণে তিনি ‘বগা বাবা’ বা ‘বগা ফকির’ উপাধি লাভ করেন। অসমীয়ায় বগা মানে সাদা আর বাবা মানে পিতৃতুল্য ব্যক্তি। পরবর্তীকালে, তাঁর সমাধিসৌধটি বগা বাবা মাজার বা বগা ফকিরের মাজার হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

কিংবদন্তি

সুফি সাধক সৈয়দ রোশন আলী চিশতী ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে রাজস্থানের আজমির থেকে আসামে ভ্রমণ করেছিলেন। প্রথমে কিছু সময়ের জন্য উত্তর প্রদেশে বসবাস করলেও পরে তিনি আসামে চলে আসেন। তিনি চিশতিয়া সুফি তরিকার সাধক ছিলেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আসামে আসেন। তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে আসেন। তিনি পশমী পোশাক পরে ছিলেন। তিনি ডিব্রুগড় টাউন রেলওয়ে স্টেশনের কাছে একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করা শুরু করেন। তাঁর কাছে মাত্র একটি ছোট রান্নার পাত্র ছিল। তিনি দর্শনার্থীদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নিতেন।

তাঁর উপস্থিতি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। সৈয়দ রোশন আলী চিশতী ১৯৬০-এর দশকে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে তার কুঁড়েঘরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে অবশেষে তার সম্মানে এটি মাজারে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া, কিছু স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, বগা বাবার মাজার ডিব্রুগড় শহরকে ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা থেকে রক্ষা করে।

পর্যটন

ডিব্রুগড় শহরের সবচেয়ে ঘন ঘন পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি হল বগা বাবা মাজার। মুসলমানদের কাছে এটি পবিত্র স্থান হিসেবে সম্মানিত। বিভিন্ন ধর্মের দর্শনার্থীরা এখানে আসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তীর্থযাত্রীরা পীর বগা বাবার মাজারে সমবেত হন। এখানে তারা মোমবাতি জ্বালান এবং শাল অর্পণ করেন। অনেকে এখানে তাদের প্রার্থনা পূরণের আশা নিয়ে আসেন।

পরিবহন

এটি ডিব্রুগড় শহরের কেন্দ্রে অসম ট্রাঙ্ক রোডের উপর অবস্থিত। বগা বাবার মাজার পুরনো ডিব্রুগড় টাউন রেলওয়ে স্টেশনের পাশে অবস্থিত। ডিব্রুগড় রেলওয়ে স্টেশন এটি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে। ডিব্রুগড় বিমানবন্দর এটি থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এই মাজারটি বগা বাবা মাজার কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়।