বিষয়বস্তুতে চলুন

ফ্রেজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিড়াল-টানা ট্রলিতে ফ্রাইযা, নিলস ব্লোমের'এর চিত্রিত চিত্র, ১৮৫২
ফ্রাইযার চিত্র, চিত্রকর - জন বাউয়ার (১৯০৫)

ফ্রেজা বা ফ্রাইযা হলো প্রেম ও বিবাহ সম্পর্কিত এক নর্দীয় দেবী।[] এছাড়াও তাকে যৌনতা, উর্বরতা, স্বর্ণ, যুদ্ধ, মৃত্যু প্রভৃতি বহুকিছুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবেও কল্পনা করা হয়েছে। তিনি হলেন নরডিকদের স্বর্গ প্যান্থিয়নের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দেবী, গুরুত্বের বিচারে তার অবস্থান মাতৃত্বের দেবী ফ্রিগ-এর পরেই। অবশ্য পরবর্তীযুগে, বিশেষত আধুনিককালে রচিত বিভিন্ন চিত্র বা লেখায় প্রায়শই দেখা যায় তাকে ফ্রিগের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।[] রোমানদের দেবী  ভেনাসের সাথে এই দেবীর যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

তার সম্বন্ধে যেটুকু বিবরণ পাওয়া যায় তা এরকম - তিনি দু'টি বিড়ালে টানা একটি গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করেন; তার স্বামী হল ওদ্‌র; বাজপাখির পালক দিয়ে তার পরিধেয় বস্ত্র তৈরি; নসগেরসিমি হল তার দুই মেয়ে; তার বাবা নিওর্দ্‌র মা (নিওর্দ্‌রেরই বোন, কিন্তু উপকথায় তার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি) ও ভাই ফ্রাইর'এর সাথে তিনিও ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এবং জ্ঞান, উর্বরতা, প্রকৃতি ও জাদুবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত দেবতাদের গোষ্ঠী ভনিরের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যা। গেফ্‌ন্‌, হ্যোর্ন, মারড্যোল, স্যির, ভালফ্রাইয়া, ভানাডিস - প্রভৃতি আরও বহু নামে তিনি পরিচিত।

নামের ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

ফ্রাইযা শব্দটির সম্ভাব্য উৎপত্তি আদি জার্মানিক শব্দ ফ্রায়োইওন থেকে। এর সাথে সম্পর্কিত আরেকটি শব্দ হল আদি হাই জার্মান ফ্রোউবা। বর্তমান জার্মান শব্দ ফ্রাউ-এরও উৎপত্তি একই উৎস থেকে।[] ফ্রাইযা শব্দটিরও প্রকৃত অর্থ সেই একই - "হের্রিন" বা "লেডি"। অনেকের মতে, এটি আদতে ছিল এই দেবীর প্রতি সম্ভ্রমসূচক বিশেষণ, প্রকৃত নাম ছিল অন্যকিছু। কিন্তু দেবীর প্রতি সম্মান ও সম্ভ্রমবশত উচ্চারিত এই শব্দটি ধীরে ধীরে বেশি ব্যবহৃত হতে হতে দেবীর নামের সমার্থকে পরিণত হয় এবং মূল নামটিকে ঢাকা দিয়ে দেয়। এখনও পর্যন্ত এই মূল নামটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।[] হয়তো বা এই মূলনামটিই ধীরে ধীরে জনমানসে অন্য এক পৃথক দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। এই দিক থেকে বিবেচনা করেই অনেক বিশেষজ্ঞ ফ্রাইযাফ্রিগকে বাস্তবে একই আদি দেবীর দুই পৃথক রূপ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

উল্লেখ

[সম্পাদনা]

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রচিত ইতিমধ্যেই প্রচলিত বিভিন্ন স্ক্যান্ডিনেভীয় কাব্যের যে সংকলন ইডিক কবিতাগুচ্ছে, তাতে ফ্রাইয়ার একাধিক উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও ঐ ত্রয়োদশ শতাব্দীরই পরবর্তী পর্বে রচিত স্নোরি স্টুরলসনের স্নোর-এডাহাইমসক্রিংলাতেও তার উল্লেখ আছে। বিভিন্ন আইসল্যান্ডের উপকথা, স্কাল্ট কবিতা এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে রচিত গল্প স্যোরলা দাত্‌রেও এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকী আধুনিক স্ক্যান্ডিনেভীয় উপকথাতেও ফ্রাইয়ার উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়।

ইডিক কবিতাগুচ্ছ

[সম্পাদনা]

অজানা কবিদের হাতে রচিত ইডিক কবিতাগুচ্ছের বিভিন্ন কবিতা, যেমন "ভোলুস্পা", "গ্রিমনিস্মাল", "লোকাসেনা", "দ্রিমস্কভিদা", "ওড্রুনারগ্রাট্‌র" ও "হিন্ডলুলিয়ো"তে ফ্রাইয়ার সংক্ষিপ্ত থেকে যথেষ্ট বিস্তৃত উল্লেখ আছে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য "লোকাসেনা", "দ্রিমস্কভিদা" ও "হিন্ডলুলিয়ো" কবিতাগুলি। এদের মধ্যে প্রথমটির বিষয়বস্তু দেবতা লোকি ও ফ্রাইয়ার মধ্যে এক দীর্ঘ কথোপকথন ও বিতর্ক;[] "দ্রিমস্কভিদা" কবিতাটির বিষয়বস্তু দেবতা থরের বিখ্যাত হাতুড়ি হারিয়ে যাওয়া ও ফ্রাইয়ার সহায়তায় তা উদ্ধারের গল্প;[] অন্যদিকে "হিন্ডলুলিয়ো" কবিতাটিতে মূল চরিত্র ফ্রাইয়া নিজেই। সেখানে তিনি তার অনুগামী ভৃত্য ওতারকে সাহায্য করেন তার বংশপরিচয় উদ্ধারে।[]

স্নোর-এডা

[সম্পাদনা]

স্নোরি স্টুরলসন রচিত স্নোর-এডাতেও ফ্রাইয়ার প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। এই গ্রন্থের দুটি পর্ব গিলফাগিনিং এবং স্কাল্ডস্কাপারমালে ফ্রাইয়ার প্রসঙ্গ এসেছে। এর মধ্যে প্রথম বইটিতে আমরা ফ্রাইয়ার সম্পর্কে জানতে পারি যে, তিনি ও তার ভাই ফ্রাইর দেবতা নিওর্দরের সন্তান (যদিও তাদের মায়ের নামের কোনও উল্লেখ সেখানে নেই); স্বর্গে ফ্রাইয়ার বাসস্থানের নাম ফোল্কভাংর্‌ (Fólkvangr)। এই ফোল্কভাংর্‌'এর মধ্যেই তার বিশাল প্রাসাদ সেস্রুমনির ( Sessrúmnir) অবস্থিত। যুদ্ধক্ষেত্রে মৃতদের মধ্যে অর্ধেক ফ্রাইয়ার অধীনে এই ফোল্কভাংর্‌'এ বাস করে (বাকি অর্ধেক বাস করে দেবতা ওডিনের অধীনে); তিনি একটি বিড়ালে টানা রথে চেপে ভ্রমণ করেন; লোকের প্রার্থনায় তিনি সহজে সাড়া দেন; তার নাম থেকেই অভিজাত মহিলাদের ফ্রুভর, অর্থাৎ "লেডি" নামে ডাকা হয়ে থাকে; বিশেষ করে তিনি প্রেমসঙ্গীতের অনুরাগী, কারণ তিনি প্রেমেরও দেবী।[] এছাড়া এই পর্বে আরও উল্লেখ আছে যে ফ্রাইয়া গুরুত্বে দেবীদের মধ্যে দ্বিতীয়, শুধুমাত্র ফ্রিগ'এর পরেই। ব্রিসিঙ্গামেন নেকলেস'এর মালকিন তিনিই। তার স্বামী হলেন দেবতা ওদ্‌র। তিনি মাঝে মাঝেই দীর্ঘদিনের জন্য অন্যত্র চলে যান ও তার দীর্ঘ অনুপস্থিতিকালে ফ্রাইয়া বিরহবেদনায় কাঁদতে বসলে তার প্রতিটি অশ্রুবিন্দু লালবর্ণের স্বর্ণের রূপ ধারণ করে। তার দুই কন্যা - নস ও গেরসিমি। এছাড়া এই পর্বে তার একাধিক নামেরও উল্লেখ পাওয়া যায়।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Rudolf Simek, Lexikon der germanischen Mythologie, Alfred Kröner Verlag, স্টুটগার্ট, 1995, p. 109
  2. Orel, Vladimir (2003). A Handbook of Germanic Etymology. Brill Publishers. আইএসবিএন ৯০ ০৪ ১২৮৭৫ ১.
  3. Grundy, Stephan. "Freyja and Frigg". The Concept of the Goddess. Ed. Sandra Billington & Miranda Green. Routledge. আইএসবিএন ০-৪১৫-১৯৭৮৯-৯.
  4. Larrington, Carolyne (Trans.). The Poetic Edda. Oxford University Press, 1999. আইএসবিএন ০-১৯-২৮৩৯৪৬-২.
  5. Bellows, Henry Adams (Trans.). The Poetic Edda. American-Scandinavian Foundation, 1923.
  6. Thorpe, Benjamin (Trans.) (1866). The Elder Edda of Saemund Sigfusson. Norrœna Society.
  7. Faulkes, Anthony (Trans.). Edda. Everyman, 1995. পৃঃ - ২৪। আইএসবিএন ০-৪৬০-৮৭৬১৬-৩.
  8. Faulkes, Anthony (Trans.). Edda. Everyman, 1995. পৃঃ - ২৯ - ৩০। আইএসবিএন ০-৪৬০-৮৭৬১৬-৩.