ফরিদ আহমদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মৌলভি
ফরিদ আহমদ
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৭ অক্টোবর ১৯৫৭ – ১৬ ডিসেম্বর ১৯৫৭
পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য (এমএনএ)
কাজের মেয়াদ
১৯৫৫ – ১৯৬৫
পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এম.এল.এ)
কাজের মেয়াদ
১৯৫৪ – ১৯৬২
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম৩ জানুয়ারি ১৯২৩
কক্সবাজার জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
ঢাকা
রাজনৈতিক দলনেজামে ইসলাম পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীরিজিয়া আহমদ
সন্তানমোহাম্মদ খালেকুজ্জামান
মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম কলেজ
পেশাআইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব

ফরিদ আহমদ (৩ জানুয়ারি ১৯২৩-২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১) যিনি মৌলভী ফরিদ আহমদ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য, গণপরিষদের সদস্য, পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের চীফ হুইপ ও কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ছিলেন।[১]

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

ফরিদ আহমদ ৩ জানুয়ারি ১৯২৩ সালে কক্সবাজারের রামুর রশিদনগরের মাছুয়াখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএ পাস করে তিনি ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ, ১৯৪৬ সালে এমএ ডিগ্রি ও ১৯৪৭ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন করেন।[১][২]

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ফরিদ আহমদ ১৯৪৬-১৯৪৭ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৫৪-১৯৬৯ মেয়াদে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[১][২]

তৎকালিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলার রেডিও ধারাভাষ্য দিয়েছেন তিনি। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বার কাউন্সিলের সহসভাপতিও ছিলেন।[২]

যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ১৯৫৪ সালে তিনি পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এম.এল.এ) এবং ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হয়ে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের চীফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইবরাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগড়ের মন্ত্রিসভায় তিনি ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৬২-১৯৬৫ মেয়াদে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সম্মিলিত বিরোধী দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালে তিনি পুনরায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্টের সদস্য হিসেবে আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ ভুমিকা রাখেন। নেজামে ইসলাম পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন।[১][২][৩]

তিনি ২৪ জুন ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) নামক নতুন রাজনৈতিক গঠন হলে সহসভাপতি হিসেবে যোগ দেন।[১]

গ্রন্থ[সম্পাদনা]

ফরিদ আহমদ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি দৈনিক নাজাত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও মাসিক পৃথিবীর উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:[১]

  • মোহাম্মদ আলী ক্লে -১৯৬৫
  • কারাগারে সাতাইশ দিন -১৯৬৬
  • The Sun Behind the Clouds
  • Twenty First February

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

ফরিদ আহমদ ব্যক্তিগত জীবনে রিজিয়া আহমদকে বিবাহ করেন।[৪] তাদের ছেলে মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানমোহাম্মদ শহীদুজ্জামান কক্সবাজার-৩ আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সংসদ সদস্য ছিলেন।

সমালোচনা[সম্পাদনা]

ফরিদ আহমদ অখন্ড পাকিস্তানের বিশ্বাসী ও এপ্রিল ১৯৭১ সালের শান্তি কমিটি গঠন হলে যোগ না দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ কাউন্সিল শান্তি ও কল্যাণ কমিটি গঠন করে তিনি সভাপতি ছিলেন।[৩] ১৪ মে ১৯৭১ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সফর করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।[২][৫][৬]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ফরিদ আহমদ ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে লালবাগ থানায় আত্মসমর্পণের করলে মুজিব বাহিনী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের পিছনে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।[১][২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, রফিকুল আহসান (৫ মে ২০১৪)। "আহমদ, ফরিদ"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "১০ মে ১৯৭১ মৌলবী ফরিদ আহমদ"সংগ্রামের নোটবুক। ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২০ 
  3. ড. মো. নূরুল আমিন (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। "একাত্তরের ঘটনাপঞ্জী নিয়ে কিছু কথা"দৈনিক সংগ্রাম। ৯ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২০ 
  4. কক্সবাজার, বিশেষ সংবাদদাতা (২৪ মার্চ ২০১৯)। "'সমাজ সেবার মাধ্যমে মানুষ অমর হয়ে থাকেন'"দৈনিক ইনকিলাব। ৯ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২০ 
  5. ষষ্ঠ খন্ড: মুজিবনগর: গণমাধ্যম, মানবতা বিরোধী অপরাধ, দালিলিক প্রমাণ গ্রন্থ (১৯৭৮)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্রবাংলাদেশ: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। পৃষ্ঠা ১১৬। 
  6. "মৌলভী ফরিদ আহমদ"সংগ্রামের নোটবুক। ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২০