ফজলুর রহমান (ঢাকার রাজনীতিবিদ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফজলুর রহমান
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৫৫ – ১৯৫৮
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা, বাণিজ্য ও শরণার্থী মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯৪৭ – ১৯৫৪
বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৩৭ – ১৯৪৭
বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার রাজস্ব মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯৪৬ – ১৯৪৬
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯৫১ – ১৯৫৩
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯০৫
সাইনপুকুর গ্রাম, দোহার, ঢাকা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৯৬৬(1966-00-00) (বয়স ৬০–৬১)
রাজনৈতিক দলনিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগ
সন্তানসালমান এফ রহমান
আত্মীয়স্বজনফজলুল কাদের চৌধুরী (শ্যালীপতি)
ফজলুল কবির চৌধুরী (শ্যালীপতি)
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (শ্যালীপুত্র)
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী (শ্যালীপুত্র)
এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরী (শ্যালীপুত্র)[১][২]

ফজলুর রহমান (১৯০৫-১৯৬৬) আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ যিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসাবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৩৭-১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও ১৯৪৬-১৯৪৭ রাজস্ব মন্ত্রী ছিলেন।[৩][৪][৫]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

ফজলুর রহমান ১৯০৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকার দোহারের সাইনপুকুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারগা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে পরে ১৯২৯ সালে  ইতিহাসে এমএ ও ১৯৩৩ সালে বিএল ডিগ্রি অর্জন করেন।[৩] রাজনীতিজ্ঞ ও শিল্পপতি সালমান এফ রহমান তার পুত্র।[৬]

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ফজলুর রহমান ওকালতির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। মুসলিম লীগে যোগদিয়ে তিনি নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মনোনীত হন। তিনি ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার চিফ হুইপ এবং ১৯৪৬ সালে রাজস্ব মন্ত্রী মনোনীত হন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি অন্যতম নেতা ছিলেন।[৩]

তিনি ভারত বিভাজনের পর ১৯৪৭ সালে লিয়াকত আলী খানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শিক্ষা, বাণিজ্য ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪][৫] খাজা নাজিমউদ্দীনের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ১৯৫১-১৯৫৩ সালে শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালের পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আইআই চুন্দ্রীগড়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য, অর্থ ও আইন বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩]

আইয়ুব খানের সামরিক সরকার কর্তৃক তাকে ১৯৬০ সালে এবডো আইনে সাজা দেওয়া হয়।[৩]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ফজলুর রহমান ১৯৬৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[৩]

আরবি হরফে বাংলা লিখন প্রবর্তনে ভূমিকা[সম্পাদনা]

পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই নব্য পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের পক্ষে একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংহতির যুক্তি ছিল। বলা হচ্ছিল, উর্দু ছাড়া পশতু, সিন্ধি, পাঞ্জাবি ভাষায় আরবি হরফ যেহেতু ব্যবহৃত হচ্ছে—এখন বাংলায় এই হরফের প্রবর্তন করলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতি দৃঢ় হবে। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষা সচিব বা শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান।[৭] এ বিষয়ে তিনি পূর্ব বাংলার শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে করাচিতে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষা সচিবের এ প্রস্তাব করেন। ১৯৪৯ সালের পেশোয়ারে কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের সভায়ও আরবিকে পাকিস্তানের ভাষা সমূহের একমাত্র হরফ করার জোর সুপারিশ করা হয়। ফজলুর রহমান ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, একই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পথে যেসব অসুবিধা আছে তার মধ্যে নানারকম হরফের সমস্যাটি অন্যতম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরবি বর্ণমালার উপযোগিতার কথা বর্ণনা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ জটিলতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন, এবং বাংলাকে অপরিবর্তিত অবস্থায় পূর্ব বাংলা রাষ্ট্রভাষা তথা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "আত্মীয়তার বন্ধনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী"newsbybd.net। ১৮ নভেম্বর ২০১৫। 
  2. "Feuding SQ Chy family wanders in legal maze"। The Daily Star। ২০০৬-০২-১৪। ২০২১-০৬-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৯ 
  3. "রহমান, ফজলুর"বাংলাপিডিয়া। ৫ মে ২০১৪। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ 
  4. Legislature, Pakistan Constituent Assembly (1947-1954) (১৯৫৬)। Debates. Official Report (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 61। 
  5. "পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ হতে ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত"সংগ্রামের নোটবুক। ২৯ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  6. যেভাবে শিল্পপতি হলেন সালমান এফ রহমান, একুশে টিভি ডট কম, ২৩ মে ২০১৯
  7. আলম, এস. এম শামসুল (২০১৬)। Governmentality and Counter-Hegemony in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। স্প্রিংগার। আইএসবিএন 978-1-137-52603-8। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  8. উমর, বদরউদ্দীন (১৯৭০)। "অষ্টম পরিচ্ছেদের চতুর্থ অনুচ্ছেদ"। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি। আনন্দধারা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৮৫ – ১৮৭। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]