প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাইবেলের অংশ 'হেক্সাটয়েশ' ("ষড়গ্রন্থ")-এর সচিত্র প্রাচীন ইংরেজি সংস্করণ। ছবিতে ব্যাবেলের মিনারের নির্মাণকাজ দেখা যাচ্ছে।

প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্য বা অ্যাংলো-স্যাক্সন সাহিত্য বলতে অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ডে প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় লেখা সাহিত্যকে বোঝায়। এই সাহিত্যের সময়কাল ছিল খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে ১০৬৬ খ্রিঃ নর্মানদের ইংল্যান্ড বিজয়ের পরবর্তী কয়েকটি দশক পর্যন্ত। ঐতিহাসিক ও গ্রন্থকার সন্ত বীডের মতে, সপ্তম শতাব্দীতে রচিত "কেড্‌মনের স্তোত্র" হল ইংরেজি ভাষায় রচিত প্রাচীনতম কবিতা। প্রাচীন ইংরেজিতে লেখা শেষ কবিতাটি হল দ্য গ্রেভ, যা প্রাচীন ইংরেজি ও মধ্য ইংরেজির অন্তর্বর্তী একটি স্তর নির্দেশ করে।[১] দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত রচনা হতে থাকা পিটারবরো ক্রনিক্‌ল বইটিকেও কখনও কখনও প্রাচীন ইংরেজির একটি শেষদিকের উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হল বেওউল্‌ফ নামক একটি কবিতা। এটিকে ইংরেজি সাহিত্যের প্রথাগত ইতিহাসের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ নমুনার মর্যাদা দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক গবষণার ক্ষেত্রে অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিক্‌ল বইটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটিতে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম পর্বের সময়ানুগ একটি ধারাবিবরণী আছে।

পরিমাণের দিক থেকে প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে সন্তদের জীবনী ও উপদেশ, তারপর বাইবেলের বিভিন্ন অংশের অনুবাদ, আদি খ্রিষ্টান পাদ্রীদের লাতিন রচনাবলীর অনুবাদ, ধারাবিবরণী ও অন্যান্য ইতিহাসভিত্তিক রচনা, আইন, উইল ও অন্যান্য আইনি কাজ, ব্যাকরণ, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ভূগোল এবং কবিতা।[২] মোট ৪০০ টি আলাদা আলাদা পাণ্ডুলিপি থেকে এই সমস্ত নথি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ৪০০ টির মধ্যে ১৮৯ টি পাণ্ডুলিপিকে 'প্রধান' বলা হয়।[৩]

প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের পাশাপাশি অ্যাংলো-স্যাক্সনরা বেশ কিছু অ্যাংলো-লাতিন রচনাও রেখে গেছেন।

চর্চা[সম্পাদনা]

একাধিক পর্যায়ে প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণা হয়েছে ও হচ্ছে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে গবেষণার লক্ষ্য ছিল এই সাহিত্যের জার্মানিক ও পেগান মূল।[৪] পরবর্তীকালে বার্নার্ড এফ. হুপ্পে-র গবেষণার[৫] পর থেকে সন্ত অগাস্টিনের টীকা ও ভাষ্যের অবদানের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়।[৬] বর্তমানে প্রাচীন লেখনী সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার রাস্তা খুলে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা রচনাকাল, উৎস, গ্রন্থকারের পরিচয়, মধ্যযুগে ইউরোপে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের সাথে অন্যান্য সংস্কৃতির সম্পর্ক এবং বিভিন্ন রচনার সাহিত্যগুণ প্রভৃতির দিকে নজর দিচ্ছেন।[২]

পাণ্ডুলিপি[সম্পাদনা]

প্রাচীন ইংরেজি গদ্যে লেখা অ্যাংলো স্যাক্সন ক্রনিক্‌লের অংশ পিটারবরো ক্রনিক্‌লের একটি পৃষ্ঠা।

অ্যাংলো স্যাক্সন যুগে লেখা অনেকগুলো পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করা গেছে, যার বেশিরভাগেরই রচনাকাল প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের শেষ তিন শতাব্দী (৯ম থেকে ১১শ শতাব্দী)। এদের মধ্যে প্রাচীন ইংরেজি ও লাতিন উভয় ভাষায় রচিত নমুনাই পাওয়া যায়। ষোড়শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে সরকারী অনুদানে বিভিন্ন ক্যাথলিক মঠ ধ্বংস করার কর্মসূচীর ফলে বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি ক্ষতিগ্রস্ত ও নষ্ট হয়েছে।[২] প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের যথাযথ বৈদগ্ধ্যপূর্ণ চর্চা শুরু হয় রানী প্রথম এলিজাবেথের রাজওকালে। সেই সময় ম্যাথিউ পার্কার ও তাঁর সহকর্মীরা যথাসম্ভব পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। তখন থেকেই সংগ্রাহকদের মধ্যে প্রাচীন ইংরেজি পাণ্ডুলিপি মূল্যবান বলে গণ্য হতে থাকে, কারণ দুষ্প্রাপ্যতা ও সাহিত্যিক গুণমান ছাড়াও এগুলির নান্দনিক আকর্ষণও কম নয়; সুন্দর আলঙ্কারিক হস্তাক্ষর, স্পষ্ট রচনাশৈলী ও লেখার সাথে সাথে প্রতি পৃষ্ঠায় অলঙ্করণের খাতিরে সুন্দর নকশা ইত্যাদিও করা হত।

চারটি প্রধান পাণ্ডুলিপিতে প্রাচীন ইংরেজি পদ্য পাওয়া যায়:

  • জুনিয়াস পাণ্ডুলিপি অথবা কেড্‌মনের পাণ্ডুলিপিতে বাইবেলের বিভিন্ন কাহিনীর সচিত্র পদ্য সংস্করণ আছে।
  • এক্সিটার গ্রন্থ হল ১১শ শতাব্দীতে এক্সিটার ক্যাথিড্রালে দান করা একটি কাব্য সংকলন।
  • ভার্সেলি গ্রন্থে গদ্য ও পদ্য দু'রকম রচনাই পাওয়া যায়। উত্তর ইতালির ভার্সেলি শহরে এটি কেমন করে এল তা আজও জানা যায়নি।
  • বেওউল্‌ফ পাণ্ডুলিপি (ব্রিটিশ গ্রন্থাগারের কটন ভিটেলিয়াস A. xv) বা নোওয়েল কোডেক্স-ও গদ্য ও পদ্য দু'রকম রচনার সমাহার। এর কবিতাগুলি বিভিন্ন দানবীয় কাহিনীর উপর কেন্দ্রীভূত; বেওউল্‌ফ কবিতাটি তার অন্যতম প্রমাণ।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Lerer 1997
  2. Cameron 1983, পৃ. 274-288।
  3. Ker 1990, পৃ. xv।
  4. Stanely 1975
  5. Huppé 1959
  6. Hill 2002
  7. Sisam 1962, পৃ. 96।