প্রাকৃতিক মারণ কোষ
প্রাকৃতিক মারণ কোষ | |
---|---|
![]() মানব প্রাকৃতিক মারণ কোষ, রঙিন ইলেক্ট্রন মাইক্রোগ্রাফ | |
বিস্তারিত | |
তন্ত্র | অনাক্রম্যতন্ত্র |
কাজ | কোষবিষক লিম্ফোসাইট |
শনাক্তকারী | |
মে-এসএইচ | D007694 |
এফএমএ | FMA:63147 |
মাইক্রো শারীরস্থান পরিভাষা |
প্রাকৃতিক মারণ কোষ (ইংরেজি: Natural killer cell) হলো এক ধরনের বৃহৎ দানাদার লিম্ফোসাইট যা দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[১][২] এটি জানা থাকা দ্রুত বর্ধনশীল সহজাত লিম্ফয়েড কোষ গোত্রভূক্ত এবং দেহের সকল লিম্ফোসাইটের ৫-২০%।[৩] এটিকে তৃতীয় ধরনের লিম্ফোসাইট হিসেবে বিবেচনা করা হয়, প্রায়শ এটিকে অ-টি কোষ, অ-বি কোষ বলা হয়। এটি অস্থিমজ্জা থেকে উদ্ভূত হয়। সুনির্দিষ্ট অনাক্রম্যতা বিশেষ করে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় এটি প্রথম সারির প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে।[৪] অধিকাংশ অনাক্রম্য কোষ সংক্রমিত কোষ তলে অবস্থিত মেজর হিস্টোকমপ্যাটিবিলিটি কমপ্লেক্স ১-এ উপস্থাপিত অ্যান্টিজেন শনাক্ত করে, কিন্তু প্রাকৃতিক মারণ কোষ অ্যান্টিবডি ও এমএইচসি-র অনুপস্থিতিতে পীড়িত কোষসমূহকে শনাক্ত ও হনন করতে পারে, ফলে খুব দ্রুত অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এগুলোকে প্রাকৃতিক মারণ কোষ বলার কারণ হলো যে-সব কোষে এমএইচসি ক্লাস ১-এর “স্ব-চিহ্নক” অনুপস্থিত থাকে সেগুলোকে হনন করতে সক্রিয়করণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না।[৫] এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ যে-সব ক্ষতিকর কোষে এমএইচসি-১ চিহ্নক অনুপস্থিত তাদেরকে অন্যান্য অনাক্রম্য কোষ, যেমন টি লিম্ফোসাইট শনাক্ত ও বিনাশ করতে পারে না। প্রাকৃতিক মারণ কোষ শনাক্ত করা যায় সিডি৫৬-এর উপস্থিতি ও সিডি৩-এর অনুপস্থিতির মাধ্যমে (সিডি৫৬+, সিডি৩-)।[৬] এরা অভিযোজনমূলক ও সহজাত অনাক্রম্যতন্ত্র উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে কারণ তারা গঠনগত দিক দিয়ে লিম্ফোসাইটের অনুরূপ এবং একই লিগ্যান্ডকে চিনতে পারে, কিন্তু তারা অ্যান্টিজেন-নির্দিষ্ট নয় এবং অনাক্রম্যতাসংক্রান্ত স্মৃতি তৈরি করতে পারে না।[৭][৮] প্রাকৃতিক মারণ কোষ সিডি১২৭+ নামক সাধারণ সহজাত লিম্ফয়েড প্রজনিকা কোষ থেকে বিভেদিত হয়,[৯] যা সাধারণ লিম্ফয়েড প্রজনিকা কোষের পরবর্তী অংশ যা থেকে বি ও টি লিম্ফোসাইটও উদ্ভূত হয়।[৯][১০] প্রাকৃতিক মারণ কোষ অস্থিমজ্জা, লিম্ফনোড, প্লীহা, টনসিল ও থাইমাস গ্রন্থিতে বিভেদিত ও পরিপক্ব হয়, যেখান থেকে সংবহনতন্ত্রে প্রবেশ করে।[১১] বহির্বৈশিষ্ট্য, উৎপত্তি ও নিজ নিজ প্রভাবক ক্রিয়ার দিক থেকে প্রাকৃতিক মারণ কোষ প্রাকৃতিক মারণ টি কোষ থেকে আলাদা হয়ে থাকে; প্রায়শই, প্রাকৃতিক মারণ টি কোষ ইন্টারফেরন গামা ক্ষরণ করার মাধ্যমে প্রাকৃতিক মারণ কোষের ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করে।[১২][১৩]
অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]প্রাকৃতিক মারণ কোষ সংবহন তন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গ যেমন যকৃৎ, প্লীহা, ফুসফুস ও অস্থিমজ্জায় পাওয়া যায়, তবে লিম্ফনোডে থাকে না। গঠনগত দিক থেকে বৃহৎ দানাদার লিম্ফোসাইট, পরিপক্ব অবস্থায় এদের সাইটোপ্লাজম মৃদু বেসোফিলিক (ক্ষারাকর্ষী)। অতিক্ষুদ্র গঠনের দৃষ্টিকোণ থেকে, এদের সাইটোপ্লাজমে রয়েছে রাইবোসোম, অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ও ঘন, ঝিল্লি-বেষ্টিত কোষগহ্বর যা ২০০-৫০০ ন্যানোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট। কোষথলির মূল অংশ স্ফটিকসদৃশ যার মধ্যে রয়েছে পারফোরিন নামক প্রোটিন, যেটি অভীষ্ট কোষের কোষঝিল্লিতে রন্ধ্র সৃষ্টি করতে সক্ষম এবং গ্র্যানজাইম, যা অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়ায় অভীষ্ট কোষের মৃত্যু ঘটায়।[১৪] মানবদেহে প্রাকৃতিক মারণ কোষের আবর্তন বা জীবৎকাল হলো দুই সপ্তাহ।[১৫] অভীষ্ট কোষকে হনন করার জন্য বিবিধ বস্তুর দ্বারা প্রাকৃতিক মারণ কোষ সক্রিয় হয়, এদের মধ্যে অন্যতম হলো ভাইরাস-সংক্রমিত কোষ থেকে ক্ষরিত টাইপ ১ ইন্টারফেরন (IFN-α/β)।[১৬] এরা অ্যান্টিবডি-আবৃত অভীষ্ট কোষসমূহকে অ্যান্টিবডি ডিপেন্ডেন্ট সেল-মিডিয়েটেড সাইটোটক্সিসিটি প্রক্রিয়ায় শনাক্ত ও হত্যা করতে পারে।[১৭]
ধরন
[সম্পাদনা]প্রাকৃতিক মারণ কোষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যেতে পারে, যেমন সিডি৫৬উজ্জ্বল বা সিডি৫৬অনুজ্জ্বল[৬][১৮][১৯] সিডি৫৬উজ্জ্বল প্রাকৃতিক মারণ কোষ সাইটোকাইন অবমুক্ত করার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের দিক দিয়ে টি সাহায্যকারী কোষের অনুরূপ।[১৯] বেশিরভাগ প্রাকৃতিক মারণ কোষ সিডি৫৬উজ্জ্বল ধরনের এবং অস্থিমজ্জা, গৌণ লিম্ফয়েড টিসু, যকৃৎ ও ত্বকে পাওয়া যায়।[৬] সিডি৫৬উজ্জ্বল প্রধানত অত্যধিক বিভাজনশীল কোষসমূহকে হনন করে,[২০] এবং এই প্রক্রিয়ায় অনাক্রম্যনিয়ন্ত্রণমূলক ভূমিকা পালন করে। সিডি৫৬অনুজ্জ্বল প্রাকৃতিক মারণ কোষ প্রাথমিকভাবে প্রান্তীয় রক্তে পাওয়া যায়,[৬] এবং তাদের হনন সক্ষমতার দ্বারা বিশেষভাবে চিহ্নিত করা যায়।[১৯] সিডি৫৬অনুজ্জ্বল কোষ সর্বদা সিডি১৬ ধনাত্মক (সিডি১৬ অ্যান্টিবডি-ডিপেন্ডেন্ট সেলুলার সাইটোটক্সিসিটির মুখ্য মধ্যস্থতাকারী)।[১৯] সিডি৫৬উজ্জ্বল কোষ সিডি১৬ অর্জনের মাধ্যমে সিডি৫৬অনুজ্জ্বল কোষে রূপান্তরিত হতে পারে।[৬] প্রাকৃতিক মারণ কোষ ভাইরাস-সংক্রমিত কোষসমূহকে সিডি১৬-মধ্যস্থতাকৃত অ্যান্টিবডি-ডিপেন্ডেন্ট সেলুলার সাইটোটক্সিসিটি প্রক্রিয়ায় নির্মূল করতে পারে।[২১] সকল কোভিড-১৯ রোগীর দেহে সিডি৫৬উজ্জ্বল কোষ কম পাওয়া গিয়েছে, তবে গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রেই কেবল সিডি৫৬অনুজ্জ্বল কোষ নিঃশেষিত ছিল।[২১]
রিসেপ্টরসমূহ
[সম্পাদনা]
প্রাকৃতিক মারণ কোষের কোষ পৃষ্ঠে বিবিধ রিসেপ্টর রয়েছে, যার কিছু উদ্দীপনাদায়ক ও অন্যান্যগুলো সম্বাধমূলক। সম্বাধমূলক রিসেপ্টরের প্রভাবটিই প্রাধান্য বিস্তার করে।[৭] এগুলো স্বাভাবিক নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষে অবস্থিত হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন অণুকে শনাক্ত করতে পারে, যা আক্রমণের হাত থেকে উক্ত কোষকে রক্ষা করে, অন্যদিকে উদ্দীপনাদায়ক রিসেপ্টরগুলো এমন অণুগুলোকে শনাক্ত করতে পারে যেগুলো সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত কোষের পৃষ্ঠে পাওয়া যায়। এই পদ্ধতির ফলে প্রাকৃতিক মারণ কোষ সুস্থ কোষকে আক্রমণ না করে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে আক্রমণ করে।[২২] ব্যাবহারিক রিসেপ্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাস লিগ্যান্ড (FasL), সিডি১৬, এডিসিসি-র জন্য কমপ্লিমেন্ট রিসেপ্টর এবং প্রাকৃতিক মারণ কোষের প্রতি সুনির্দিষ্ট সম্বাধমূলক ও সক্রিয়ক রিসেপ্টর (যেমন, এনকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন-সদৃশ রিসেপ্টর (কেআইআর))।[২৩]
প্রাকৃতিক কোষবিষণ (সাইটোটক্সিসিটি) রিসেপ্টরগুলো ফাস লিগ্যান্ড-এর সাথে যুক্ত হয়ে সরাসরি অ্যাপোপ্টোসিস ঘটায় যা কোষের সংক্রমণ নির্দেশ করে। এমএইচসি-স্বতন্ত্র রিসেপ্টরগুলো সংক্রমিত কোষে অ্যাপোপ্টোসিস ঘটানোর জন্য বিকল্প পথ ব্যবহার করে। প্রাকৃতিক মারণ কোষ সক্রিয়করণ সম্বাধমূলক ও সক্রিয়ক রিসেপ্টর উদ্দীপনার ভারসাম্যের মাধ্যমে নিরূপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি সম্বাধমূলক রিসেপ্টর সংকেত বেশি শক্তিশালী হয় তাহলে প্রাকৃতিক মারণ কোষের সক্রিয়তা নিবৃত্ত হবে; একইভাবে, যদি সক্রিয়ক সংকেত প্রকট হয়, তাহলে প্রাকৃতিক মারণ কোষ সক্রিয় হবে। প্রাকৃতিক মারণ কোষ সক্রিয় হয় ইন্টারফেরন ধরন ১ (ভাইরাস ও অন্যান্য সংক্রমণের শুরুতে উৎপন্ন হয়); টিএনএফ-α; ইন্টারলিউকিন ১২, ইন্টারলিউকিন ১৫ ও ইন্টারলিউকিন ১৮ (ডেনড্রিটিক কোষ ও সক্রিয়কৃত ম্যাক্রোফেজ দ্বারা উৎপন্ন হয়); ইন্টারফেরন ২ (সিডি৪ সাহায্যকারী টি কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয়) দ্বারা। সক্রিয় প্রাকৃতিক মারণ কোষ উৎপন্ন করে ইন্টারফেরন গামা, ইন্টারলিউকিন ১ ও গ্র্যানিউলোসাইট-ম্যাক্রোফেজ কলোনি-স্টিমিউলেটিং ফ্যাক্টর (GM-CSF)।[২৩]


কাজ
[সম্পাদনা]
প্রাকৃতিক মারণ কোষ অনাক্রম্যতায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: প্রথমত, তারা ভাইরাস-সংক্রমিত কোষ ও অর্বুদ কোষসমূহকে মেরে ফেলে এবং দ্বিতীয়ত তারা গামা ইন্টারফেরন উৎপাদন করে যা ম্যাক্রোফেজকে সক্রিয় করে যেন সেটি ভক্ষণকৃত ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে।[২৪]
প্রাকৃতিক মারণ কোষকে “প্রাকৃতিক” বলা হয়, কারণ তারা অভিযোজনমূলক কোষের মতো করে ক্লাস ১ বা ক্লাস ২ এমএইচসি প্রোটিন দ্বারা উপস্থাপিত অ্যান্টিজেন শনাক্ত করে তাদের অভীষ্ট কোষকে চিনতে পারে না, বারবার অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে আসলেও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না, তারা কোনো অনাক্রম্যতাসংক্রান্ত স্মৃতি তৈরি করে না এবং তারা সাধারণত কোনো সুনির্দিষ্ট ভাইরাস বা অর্বুদের বিরুদ্ধে কাজ করে না। কোষের কার্মিক বিকারের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে প্রাকৃতিক মারণ কোষ সিদ্ধান্ত নেয় উক্ত কোষকে সে হত্যা করবে কি না, উদাহরণস্বরূপ, এরূপ কোষের পৃষ্ঠতলে ক্লাস ১ এমএইচসি প্রোটিন থাকে না। এই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া কার্যকর কারণ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর অনেক কোষ ক্লাস ১ এমএইচসি প্রোটিন সংশ্লেষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।[২৫]
প্রাকৃতিক মারণ কোষ ক্যানসার বা কর্কট কোষকে এমআইসিএ প্রোটিন শনাক্ত করার মাধ্যমে খুঁজে বের করতে পারে কারণ এটি অনেক কর্কট কোষের পৃষ্ঠে থাকলেও স্বাভাবিক কোষে থাকে না। প্রাকৃতিক মারণ কোষে অবস্থিত রিসেপ্টরের সাথে এমআইসিএ প্রোটিনের মিথস্ক্রিয়ার ফলে কোষবিষ (সাইটোটক্সিন) উৎপাদন শুরু হয়। প্রাকৃতিক মারণ কোষ ভাইরাস-সংক্রমিত কোষ ও অর্বুদ কোষকে কোষবিষ (সাইটোটোক্সিন), যেমন পারফোরিন ও গ্র্যানজাইম ক্ষরণের মাধ্যমে হত্যা করতে পারে যা অ্যাপপ্টোসিস প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করে।[১১] তারা অ্যান্টিবডির সহায়তা ছাড়াই এই কাজটি করতে পারে, তবে অ্যান্টিবডি তাদের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়, যা অ্যান্টিবডি-ডিপেন্ডেন্ট সেলুলার সাইটোটক্সিসিটি নামে পরিচিতি।
ম্যাক্রোফেজ দ্বারা উৎপাদিত ইন্টারলিউকিন ১২ এবং ভাইরাস-সংক্রমিত কোষ দ্বারা উৎপাদিত ইন্টারফেরন আলফা ও বিটা প্রাকৃতিক মারণ কোষের শক্তিশালী সক্রিয়ক হিসেবে কাজ করে। যাদের দেহে কার্যকর প্রাকৃতিক মারণ কোষ নেই তারা হার্পিসভাইরাস ও হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস দ্বারা খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারে, এছাড়া বিভিন্ন কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।[২৪][২৬] অধিকন্তু, প্রাকৃতিক মারণ কোষ বিবিধ সাইটোকাইন উৎপাদন করে, যেমন টিএনএফ-α ও আইএফএন- γ যেগুলো ভাইরাস ও অর্বুদের বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করে।[৭] প্রাকৃতিক মারণ কোষের দানায় রয়েছে পারফোরিন, যা একটি রন্ধ্র-সৃষ্টিকারী প্রোটিন, এবং গ্র্যানজাইম (এস্টারেজ), যেগুলো সিডি৮ কোষবিষক টি লিম্ফোসাইটের দানাতেও পাওয়া যায়। এই অণুসমূহ অভীষ্ট কোষের অ্যাপোপ্টোসিস প্রক্রিয়ায় মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। প্রাকৃতিক মারণ কোষ প্রত্যেক কোষকে একটি সম্ভাব্য শিকার হিসেবে দেখে, বিশেষ করে যেগুলো পীড়িত অবস্থায় থাকে এবং যদি অভীষ্ট কোষ থেকে সম্বাধমূলক সংকেত না পায় তাহলে মেরে ফেলবে। প্রাকৃতিক মারণ কোষ একটি পীড়িত কোষের উপরিভাগে অবস্থিত শর্করা ও পৃষ্ঠতল প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাস ১ এমএইচসি প্রোটিন কেআইআর সম্বাধমূলক রিসেপ্টরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে যা একটি গোপন শব্দচাবি বা পাসওয়ার্ড হিসেবে কাজ করে এবং সম্বাধমূলক সংকেতকে সক্রিয় করে যেন প্রাকৃতিক মারণ কোষ অভীষ্ট কোষটিকে না মেরে ফেলে। ভাইরাস-সংক্রমিত কোষ ও অর্বুদ কোষের পৃষ্ঠে “পীড়ন-সম্পর্কিত অণুসমূহ” অভিব্যক্ত করে এবং এ-সব কোষে প্রায়শ ক্লাস ১ এমএইচসি অণুর ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে এগুলো প্রাকৃতিক মারণ কোষের লক্ষ্যে পরিণত হয়।[২৫]
প্রাকৃতিক মারণ কোষ অ্যান্টিবডি-আস্তরিত অভীষ্ট কোষের সাথে যুক্ত হলেও উক্ত কোষকে মেরে ফেলে, কিন্তু এটি সম্বাধমূলক সংকেত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। হনন প্রক্রিয়া কোষবিষক টি লিম্ফোসাইটের মতোই। প্রাকৃতিক মারণ কোষ ও অভীষ্ট কোষের মধ্যে একটি সাইন্যাপ্স বা পকেট গঠিত হয় এবং পারফোরিন ও গ্র্যানজাইম অবমুক্ত করে অভীষ্ট কোষকে চূর্ণ করে অ্যাপোপ্টোসিস ঘটানো হয়।[১১] অধিকন্তু, প্রাকৃতিক মারণ কোষে অবস্থিত ফাস লিগ্যান্ড ও অভীষ্ট কোষের ফাস প্রোটিনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া হলেও অ্যাপোপ্টোসিস ঘটতে পারে।[২৩]
প্রাকৃতিক মারণ কোষ ও ম্যাক্রোফেজ ঊনবৃদ্ধ কোষ (সিনেসেন্ট সেল) অপসারণে প্রধান ভূমিকা পালন করে।[২৭] প্রাকৃতিক মারণ কোষ সরাসরি ঊনবৃদ্ধ কোষকে মেরে ফেলে এবং সাইটোকাইন উৎপন্ন করে যা ম্যাক্রোফেজকে সক্রিয় করে ফলে সেটি ঊনবৃদ্ধ কোষগুলোকে অপসারণ করে।[২৭] উক্ত কোষগুলোকে শনাক্ত করার জন্য প্রাকৃতিক মারণ কোষ এনকেজি২ডি রিসেপ্টর ব্যবহার করতে পারে এবং পারফোরিন নামক রন্ধ্র-সৃষ্টিকারী কোষঘ্ন প্রোটিন ব্যবহার করে হনন কাজ সম্পন্ন করে।[২৮] সিডি৮+ কোষবিষক টি লিম্ফোসাইটও একই রিসেপ্টর ব্যবহার করে ঊনবৃদ্ধ কোষ শনাক্ত করতে পারে এবং এনকে কোষের মতো করে হনন কাজ করতে পারে।[২৮] উদাহরণস্বরূপ, পারকিনসন রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক মারণ কোষের মাত্রা বৃদ্ধি পায় কারণ তারা আলফা-সিনিউক্লিয়িন সমষ্টিকে ভেঙে ফেলে, ঊনবৃদ্ধ বা জীর্ণ স্নায়ুকে ধ্বংস করে এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে শ্বেতকণিকা দ্বারা সৃষ্ট স্নায়ুপ্রদাহ লাঘব করে।[২৯]
গর্ভধারণের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার টিসু সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না বিধায় সফল গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে মায়ের অনাক্রম্যতন্ত্র দমিত করে রাখা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক মারণ কোষ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৩০] এগুলোকে জরায়ুস্থ প্রাকৃতিক মারণ কোষ (ইউএনকে কোষ) বলে যা প্রান্তীয় মারণ কোষ থেকে ভিন্ন। এগুলো সিডি৫৬উজ্জ্বল এনকে কোষ উপসেটের অন্তর্ভুক্ত, সাইটোকাইন ক্ষরণ করতে সক্ষম, তবে কোষবিষক সক্ষমতা কম।[৩০] এই কোষগুলো গর্ভধারণের শুরুতে জরায়ুতে অবস্থিত শ্বেতকণিকার মধ্যে সর্বাধিক, জরায়ুর মোট শ্বেতকণিকার ৭০% হলো ইউএনকে কোষ, তবে এগুলো কোথা থেকে উৎপত্তি লাভ করে তা নিয়ে বিতর্ক আছে।[৩১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Oshimi, Kazuo (২০১৭)। "Clinical Features, Pathogenesis, and Treatment of Large Granular Lymphocyte Leukemias"। Internal Medicine (ইংরেজি ভাষায়)। 56 (14): 1759–1769। আইএসএসএন 0918-2918। ডিওআই:10.2169/internalmedicine.56.8881।
- ↑ "Large granular lymphocytic (LGL) leukemia"। www.lls.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৪।
- ↑ Perera Molligoda Arachchige AS (এপ্রিল ২০২১)। "Human NK cells: From development to effector functions"। Innate Immunity। 27 (3): 212–229। ডিওআই:10.1177/17534259211001512
। পিএমআইডি 33761782। পিএমসি 8054151
।
- ↑ Sembulingam, K.; Sembulingam, Prema (২০১২-১০-০১)। "Chapter 17:Immunity"। Essentials of Medical Physiology (ইংরেজি ভাষায়) (৬ সংস্করণ)। Jaypee Brothers Medical Publishers (P) Ltd। পৃষ্ঠা ১১৫। আইএসবিএন 978-93-5025-936-8।
- ↑ Vivier E, Raulet DH, Moretta A, Caligiuri MA, Zitvogel L, Lanier LL, ও অন্যান্য (জানুয়ারি ২০১১)। "Innate or adaptive immunity? The example of natural killer cells"। Science। 331 (6013): 44–49। ডিওআই:10.1126/science.1198687। পিএমআইডি 21212348। পিএমসি 3089969
। বিবকোড:2011Sci...331...44V।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Pfefferle A, Jacobs B, Haroun-Izquierdo A, Kveberg L, Sohlberg E, Malmberg KJ (২০২০)। "Deciphering Natural Killer Cell Homeostasis"। Frontiers in Immunology। 11: 812। ডিওআই:10.3389/fimmu.2020.00812
। পিএমআইডি 32477340। পিএমসি 7235169
।
- ↑ ক খ গ Penman, Ian D; Ralston, Stuart H; Strachan, Mark WJ; Hobson, Richard P। "Clinical immunology"। Davidson's priciples and practice of medicine (ইংরেজি ভাষায়) (২৪ সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা ৬৫। আইএসবিএন 978-0-7020-8347-1।
- ↑ Arina A, Murillo O, Dubrot J, Azpilikueta A, Alfaro C, Pérez-Gracia JL, ও অন্যান্য (মে ২০০৭)। "Cellular liaisons of natural killer lymphocytes in immunology and immunotherapy of cancer"। Expert Opinion on Biological Therapy। 7 (5): 599–615। এসটুসিআইডি 43003664। ডিওআই:10.1517/14712598.7.5.599। পিএমআইডি 17477799।
- ↑ ক খ Kansler ER, Li MO (জুলাই ২০১৯)। "Innate lymphocytes-lineage, localization and timing of differentiation"। Cellular & Molecular Immunology। 16 (7): 627–633। ডিওআই:10.1038/s41423-019-0211-7। পিএমআইডি 30804475। পিএমসি 6804950
।
- ↑ Harly C, Cam M, Kaye J, Bhandoola A (জানুয়ারি ২০১৮)। "Development and differentiation of early innate lymphoid progenitors"। The Journal of Experimental Medicine। 215 (1): 249–262। ডিওআই:10.1084/jem.20170832। পিএমআইডি 29183988। পিএমসি 5748853
।
- ↑ ক খ গ Iannello A, Debbeche O, Samarani S, Ahmad A (জুলাই ২০০৮)। "Antiviral NK cell responses in HIV infection: I. NK cell receptor genes as determinants of HIV resistance and progression to AIDS"। Journal of Leukocyte Biology। 84 (1): 1–26। এসটুসিআইডি 26975415। ডিওআই:10.1189/jlb.0907650। পিএমআইডি 18388298। সাইট সিয়ারX 10.1.1.619.9639
।
- ↑ Walzer T, Bléry M, Chaix J, Fuseri N, Chasson L, Robbins SH, ও অন্যান্য (ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "Identification, activation, and selective in vivo ablation of mouse NK cells via NKp46"। Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America। 104 (9): 3384–3389। ডিওআই:10.1073/pnas.0609692104
। পিএমআইডি 17360655। পিএমসি 1805551
। বিবকোড:2007PNAS..104.3384W।
- ↑ Sivori S, Vitale M, Morelli L, Sanseverino L, Augugliaro R, Bottino C, ও অন্যান্য (অক্টোবর ১৯৯৭)। "p46, a novel natural killer cell-specific surface molecule that mediates cell activation"। The Journal of Experimental Medicine। 186 (7): 1129–1136। ডিওআই:10.1084/jem.186.7.1129। পিএমআইডি 9314561। পিএমসি 2211712
।
- ↑ Standring, S (২০২১)। "Chapter 4:Blood, lymphoid tissues and haemopoiesis"। Gray's Anatomy: the anatomical basis of clinical practice (42তম সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা ৭৫-৭৬। আইএসবিএন 978-0-7020-7705-0।
- ↑ Zhang, Y; Wallace, DL; de Lara, CM; Ghattas, H; Asquith, B; Worth, A; Griffin, GE; Taylor, GP; Tough, DF; Beverley, PC; Macallan, DC (জুন ২০০৭)। "In vivo kinetics of human natural killer cells: the effects of ageing and acute and chronic viral infection."। Immunology। 121: 258–65। ডিওআই:10.1111/j.1365-2567.2007.02573.x। পিএমআইডি 17346281। পিএমসি 2265941
।
- ↑ Chan, CJ; Smyth, MJ; Martinet, L (জানুয়ারি ২০১৪)। "Molecular mechanisms of natural killer cell activation in response to cellular stress."। Cell death and differentiation। 21: 5–14। ডিওআই:10.1038/cdd.2013.26। পিএমআইডি 23579243। পিএমসি 3857624
।
- ↑ Vivier, E; Tomasello, E; Baratin, M; Walzer, T; Ugolini, S (মে ২০০৮)। "Functions of natural killer cells."। Nature immunology। 9: 503–10। ডিওআই:10.1038/ni1582। পিএমআইডি 18425107।
- ↑ Hashemi E, Malarkannan S (জুন ২০২০)। "Tissue-Resident NK Cells: Development, Maturation, and Clinical Relevance"। Cancers। 12 (6): 1553। ডিওআই:10.3390/cancers12061553
। পিএমআইডি 32545516। পিএমসি 7352973
।
- ↑ ক খ গ ঘ Wu SY, Fu T, Jiang YZ, Shao ZM (আগস্ট ২০২০)। "Natural killer cells in cancer biology and therapy"। Molecular Cancer। 19 (1): 120। ডিওআই:10.1186/s12943-020-01238-x
। পিএমআইডি 32762681। পিএমসি 7409673
।
- ↑ Lee, Mercede; Bell, Charles JM; Rubio García, Arcadio (২০২৩)। "CD56bright natural killer cells preferentially kill proliferating CD4+ T cells"। Discovery Immunology: kyad012। ডিওআই:10.1093/discim/kyad012
।
- ↑ ক খ Market M, Angka L, Martel AB, Bastin D, Olanubi O, Tennakoon G, ও অন্যান্য (২০২০)। "Flattening the COVID-19 Curve With Natural Killer Cell Based Immunotherapies"। Frontiers in Immunology। 11: 1512। ডিওআই:10.3389/fimmu.2020.01512
। পিএমআইডি 32655581। পিএমসি 7324763
।
- ↑ Terunuma H, Deng X, Dewan Z, Fujimoto S, Yamamoto N (২০০৮)। "Potential role of NK cells in the induction of immune responses: implications for NK cell-based immunotherapy for cancers and viral infections"। International Reviews of Immunology। 27 (3): 93–110। এসটুসিআইডি 27557213। ডিওআই:10.1080/08830180801911743। পিএমআইডি 18437601।
- ↑ ক খ গ Murray, PR; Rosenthal, KS; Pfaller, MA। "Basic Concepts in the Immune Response"। Medical microbiology (ইংরেজি ভাষায়) (৯ম সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা ৫৪-৫৫। আইএসবিএন 978-0-323-67450-8।
- ↑ ক খ Levinson, W; Chin-Hong, P; Joyce, EA; Nussbaum, J; Schwartz, B (২০১৮)। "Chapter 58: Innate Immunity"। Review of Medical Microbiology & Immunology - A Guide to Clinical Infectious Disease (ইংরেজি ভাষায়) (১৫ তম সংস্করণ)। McGraw-Hill Education। পৃষ্ঠা ৪৮৯। আইএসবিএন 978-1-25-964450-4।
- ↑ ক খ Lodoen MB, Lanier LL (জানুয়ারি ২০০৫)। "Viral modulation of NK cell immunity"। Nature Reviews. Microbiology। 3 (1): 59–69। এসটুসিআইডি 16655783। ডিওআই:10.1038/nrmicro1066। পিএমআইডি 15608700।
- ↑ O'Leary JG, Goodarzi M, Drayton DL, von Andrian UH (মে ২০০৬)। "T cell- and B cell-independent adaptive immunity mediated by natural killer cells"। Nature Immunology। 7 (5): 507–516। এসটুসিআইডি 1459858। ডিওআই:10.1038/ni1332। পিএমআইডি 16617337।
- ↑ ক খ Antonangeli F, Zingoni A, Soriani A, Santoni A (জুন ২০১৯)। "Senescent cells: Living or dying is a matter of NK cells"। Journal of Leukocyte Biology। 105 (6): 1275–1283। এসটুসিআইডি 73469394। ডিওআই:10.1002/JLB.MR0718-299R। পিএমআইডি 30811627।
- ↑ ক খ Prata LG, Ovsyannikova IG, Tchkonia T, Kirkland JL (ডিসেম্বর ২০১৮)। "Senescent cell clearance by the immune system: Emerging therapeutic opportunities"। Seminars in Immunology। 40: 101275। ডিওআই:10.1016/j.smim.2019.04.003। পিএমআইডি 31088710। পিএমসি 7061456
।
- ↑ Earls RH, Lee JK (সেপ্টেম্বর ২০২০)। "The role of natural killer cells in Parkinson's disease"। Experimental & Molecular Medicine। 52 (9): 1517–1525। ডিওআই:10.1038/s12276-020-00505-7। পিএমআইডি 32973221। পিএমসি 8080760
।
- ↑ ক খ Lash GE, Robson SC, Bulmer JN (মার্চ ২০১০)। "Review: Functional role of uterine natural killer (uNK) cells in human early pregnancy decidua"। Placenta। 31 (Suppl): S87–S92। ডিওআই:10.1016/j.placenta.2009.12.022। পিএমআইডি 20061017।
- ↑ Bulmer JN, Williams PJ, Lash GE (২০১০)। "Immune cells in the placental bed"। The International Journal of Developmental Biology। 54 (2–3): 281–294। ডিওআই:10.1387/ijdb.082763jb
। পিএমআইডি 19876837।
আরও পঠন
[সম্পাদনা]- Perera Molligoda Arachchige AS (এপ্রিল ২০২১)। "Human NK cells: From development to effector functions"। Innate Immunity। 27 (3): 212–229। ডিওআই:10.1177/17534259211001512। পিএমআইডি 33761782। পিএমসি 8054151
।
- Abbas AK, Lichtman A (২০০৩)। Cellular and Molecular Immunology। Saunders।
- Sompayrac L (২০০৩)। How the Immune System Works (2nd সংস্করণ)। Blackwell Publishing।
- Janeway Jr CA, Travers P, Walport M, Shlomchik MJ (২০০১)। Immunobiology: The Immune System In Health And Disease (5th সংস্করণ)। Garland Science। আইএসবিএন 0-8153-3642-X।
- Kindt TJ, Goldsby RA, Osborne BA। Kuby Immunology (6th সংস্করণ)। New York: W.H. Freeman and Company।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
- Natural Killer Cells যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় চিকিৎসা গ্রন্থাগারে চিকিৎসা বিষয়ক শিরোনাম (MeSH)