প্রবীর রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রবীর রায় (জন্মঃ ৪ঠা অক্টোবর ১৯৪২) একজন ভারতীয় কণা পদার্থবিজ্ঞানী এবং টাটা মৌলিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন অধ্যাপক। তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। বসু বিজ্ঞান মন্দির তাঁর কর্মক্ষেত্র। এছাড়াও তিনি সাহা আণবিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরমাণু শক্তি বিভাগের প্রাক্তন রাজা রামান্না ফেলো।

দ্বি-ফোটন প্রক্রিয়ার যোগফল সূত্র নির্ণয়ের জন্য প্রবীর রায় সুপরিচিত। প্রবীর রায় ইন্ডিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস(ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমি), ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স একাডেমি (ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি), ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এর নির্বাচিত সদস্য। এছাড়াও তিনি আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞান সমিতির একজন সদস্য। তিনি বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল তাকে ১৯৮৭ সালে শান্তি স্বরূপ ভাটনগর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। [১]

জীবনী[সম্পাদনা]

১৯৪২ সালের ৪ঠা অক্টোবর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কিরণ লাল রায় ও মাতার নাম সুজাতা সিকদার। তিনি ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[২] অতঃপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের জন্য তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন ও ১৯৬৮ সালে এস এম বারম্যানের অধীনে কে মেসন বা কাওন নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। [৩] তিনি স্ট্যানফোর্ড সমতলীয় ত্বরণসৃজক (Linear accelerator) কেন্দ্রে গবেষণা সহকারী (১৯৬৬-১৯৬৮) ও গবেষণা সহযোগী (১৯৬৮) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ডক্টরেটোত্তর গবেষণা করেন। সেখানে তিনি কেনেথ জে উইলসন (যিনি ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)[৪] ও তোইচিরো কিশিতার সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে ভারত প্রত্যাবর্তনের আগে এক বছর (১৯৭১-১৯৭২) তিনি ইউরোপীয় নিউক্লীয় গবেষণা কেন্দ্রে(সার্ন) খণ্ডকালীন বিজ্ঞানী ছিলেন।[৫]

১৯৭২ সালে টাটা মৌলিক গবেষণা কেন্দ্রে ভারতে রায়ের কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি খণ্ডকালীন ফেলো হিসেবে যোগদান করেন ও এক বছর পরে পূর্ণকালীন ফেলো হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণের পূর্বে দীর্ঘ ৩৫ বছর তিনি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সহকারী অধ্যাপক (১৯৭৬-১৯৮৩), সহযোগী অধ্যাপক (১৯৮৩-১৯৯০) ও অধ্যাপক(১৯৯০-১৯৯৩)। নিয়মিত অধ্যাপনা ছেড়ে দেওয়ার পর প্রবীর আণবিক বিজ্ঞান গবেষণা বোর্ডের ডিএই রাজা রামান্না ফেলো নির্বাচিত হন ও সাহা আণবিক পদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্রে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত গবেষণা চালিয়ে যান। [৬] এখন তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির অধীন বসু বিজ্ঞান মন্দিরে জ্যেষ্ঠ ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মাঝে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইড(রিভারসাইড শহরে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা),ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই অ্যাট মানোয়া, হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয় ও কাভলি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। [৩]

প্রবীর রায় মানসী ভট্টাচার্যের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। তাদের দুই সন্তান- জাগরী ও অনোলোভা। তাঁরা কলকাতার সল্টলেক এলাকায় বসবাস করেন।

অবদান[সম্পাদনা]

কে-মেসন বা কাওন পদার্থবিজ্ঞানে রায়ের অবদান বীজগাণিতিক সূত্রের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর অভিসন্দর্ভ এ নামে প্রকাশিত হয়েছিল-"কাওন পদার্থবিজ্ঞানে বীজগণিতের প্রয়োগ।"[৭] সার্নে কাজ করার সময় কণা পদার্থবিজ্ঞান নিয়েও প্রবীর রায় ব্যাপক গবেষণা করেছেন। [৮] এছাড়াও তিনি দুইটি পোলারায়িত ফোটন কণার সংঘর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত যোগফল সূত্র বের করেছেন, যেটি "রায়ের যোগফল সূত্র" নামে পরিচিত।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "View Bhatnagar Awardees"ssbprize.gov.in 
  2. http://www.theory.tifr.res.in/~probir/cv.pdf
  3. "INSA :: Indian Fellow Detail"insaindia.res.in। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০২০ 
  4. "The Nobel Prize in Physics 1982"NobelPrize.org 
  5. "Probir Roy"theory.tifr.res.in 
  6. Bhuyan, Bipul (৩০ ডিসেম্বর ২০১৫)। "XXI DAE-BRNS High Energy Physics Symposium: Proceedings, Guwahati, India, December 8 – 12, 2014"। Springer – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  7. Roy, Probir (২ অক্টোবর ১৯৬৮)। "Current-algebra Applications in Kaon Physics"। Department of Physics, Stanford University. – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  8. "Awardee Details: Shanti Swarup Bhatnagar Prize"ssbprize.gov.in 
  9. http://www.theory.tifr.res.in/~probir/highlights-of-research.pdf