বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রবাল বলয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফরাসি পলিনেশিয়ার তেতি-আরোয়ার প্রবাল বলয়

প্রবাল বলয় বা অ্যাটল[] বলতে সমুদ্রে অবস্থিত একটি উপহ্রদকে ঘিরে রাখা প্রবাল বেষ্টনী নিয়ে গঠিত একপ্রকার বলয় আকৃতির ভূমিরূপকে বোঝায়। প্রবাল বেষ্টনীটির স্থানে স্থানে প্রবাল দ্বীপ বা প্রবাল চর থাকতে পারে।[] প্রবাল বলয়গুলি উষ্ণ ক্রান্তীয় বা উপক্রান্তীয় অঞ্চলের মহাসাগর এবং সমুদ্রগুলিতে অবস্থিত, যেসব স্থানে প্রবাল বিকশিত হতে পারে। বিশ্বে প্রায় ৪৪০টি প্রবাল বলয় আছে, যেগুলির বেশিরভাগই প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত।

গঠন প্রক্রিয়া

[সম্পাদনা]

প্রবাল বলয়ের বিকাশ ব্যাখ্যা করার জন্য দুটি ভিন্ন, সুপরিচিত প্রতিমান (মডেল) ব্যবহার করা হয়। এগুলি হল অবনমন প্রতিমান এবং পূর্ববর্তী কার্স্ট প্রতিমান। চার্লস ডারউইনের অবনমন প্রতিমান অনুসারে একটি আগ্নেয় দ্বীপ ডুবে যাওয়ার পরে তাকে ঘিরে একটি প্রান্তিক প্রবাল প্রাচীর তৈরি হয়ে একটি প্রবাল বলয় গঠিত হয়। ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে সাথে, আগ্নেয় দ্বীপটি সমুদ্র সমতলের নীচে সম্পূর্ণরূপে ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে বিলুপ্ত এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। আগ্নেয় দ্বীপটি অবনমিত হবার সাথে সাথে, প্রান্তিক প্রবাল প্রাচীরটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীরে পরিণত হয় ও মূল আগ্নেয় দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবশেষে প্রাচীর এবং তার উপরে গড়ে ওঠে ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপগুলিই মূল দ্বীপের অবশিষ্টাংশ গঠন করে এবং একটি উপহ্রদ পূর্বের আগ্নেয়গিরির স্থান দখল করে নেয়। তবে এই উপহ্রদটি আদি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ নয়। প্রবাল বলয়টি টিকে থাকার জন্য সমুদ্র সমতলে অবশ্যই প্রবাল প্রাচীরটিকে বজায় রাখতে হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের যেকোনও আপেক্ষিক পরিবর্তন ঘটলে, যেমন দ্বীপটি ডুবে যেতে থাকলে বা সমুদ্রতল বৃদ্ধি পেলে এর সাথে প্রবালের বৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হয়।[]

প্রবাল বলয়ের উৎপত্তির জন্য একটি বিকল্প প্রতিমান হল পূর্ববর্তী কার্স্ট প্রতিমান। এই প্রতিমান অনুযায়ী একটি প্রবাল বলয় গঠনের প্রথম ধাপ হল সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে আগ্নেয়গিরিজাত বা অ-আগ্নেয়গিরিজাত একটি মহাসাগরীয় দ্বীপের অবনমনের সময় একটি সমতল শীর্ষবিশিষ্ট ঢিবির মতো প্রবাল প্রাচীরের বিকাশ। এরপর যখন আপেক্ষিক সমুদ্রপৃষ্ঠতল প্রবাল প্রাচীরের সমতল পৃষ্ঠের নীচে নেমে যায়, তখন এটি একটি সমতল পৃষ্ঠতলবিশিষ্ট দ্বীপ হিসেবে বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে আসে, যে দ্বীপটি বৃষ্টিপাতের ফলে দ্রবীভূত হয়ে চুনাপাথরের কার্স্ট তৈরি করে। এই কার্স্টের জলবৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উন্মুক্ত প্রবালের দ্রবীভূত হওয়ার হার এর প্রান্ত বরাবর সর্বনিম্ন হয় এবং অভ্যন্তরীণ দিকে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দ্বীপের কেন্দ্রে সর্বোচ্চ হয়। এর ফলে একটি উঁচু কিনারাবিশিষ্ট "পেয়ালা"-আকৃতির দ্বীপ তৈরি হয়। যখন আপেক্ষিক সমুদ্রপৃষ্ঠ দ্বীপটিকে আবার ডুবিয়ে দেয়, তখন কিনারাটি একটি পাথুরে কেন্দ্র তৈরি করে যার উপর প্রবাল আবার বেড়ে ওঠে এবং কতগুলি প্রবাল দ্বীপ তৈরি করে, যেগুলি একত্রে প্রবাল বলয় তৈরি করে। অন্যদিকে "পেয়ালা"-র প্লাবিত তলদেশে উপহ্রদ তৈরি হয়।

বিতরণ এবং আকার

[সম্পাদনা]

পৃথিবীতে প্রায় ৪৪০টি প্রবাল বলয় রয়েছে।[] বিশ্বের বেশিরভাগ প্রবাল বলয় প্রশান্ত মহাসাগরে (ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জ, প্রবাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, তুয়ামোতু দ্বীপপুঞ্জ, কিরিবাতি, তোকেলাউ এবং তুভালুতে এগুলির উপস্থিতি বেশি) ও ভারত মহাসাগরে (চাগোস দ্বীপপুঞ্জ, লক্ষদ্বীপ, মালদ্বীপের প্রবাল বলয়সমূহ এবং সেশেলসের বহিস্থ দ্বীপপুঞ্জ) অবস্থিত। এছাড়া ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে বেশ কয়েকটি প্রবাল বলয় রয়েছে, যেমন হাজার দ্বীপপুঞ্জ, তাকা বোনেরাতে দ্বীপপুঞ্জ এবং রাজা আমপাত দ্বীপপুঞ্জের প্রবাল বলয়। আটলান্টিক মহাসাগরে কোনও বৃহৎ প্রবাল বলয়ের দল নেই। শুধুমাত্র নিকারাগুয়ার পূর্বে সাগরের মধ্যে আটটি প্রবাল বলয় রয়েছে। এগুলি ক্যারিবীয় অঞ্চলে কলম্বিয়ার শাসনাধীন সান আন্দ্রেস এবং প্রোভিদেনসিয়া দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে পড়েছে।

প্রবাল প্রাচীর সৃষ্টিকারী প্রবালগুলি কেবল মহাসাগর এবং সমুদ্রের উষ্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় জলে বৃদ্ধিলাভ করে, তাই প্রবাল বলয়গুলি কেবল ক্রান্তীয়/গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত প্রবাল বলয় হল কুরে প্রবাল বলয়, যা ২৮°২৫′ উত্তর অক্ষাংশে, উত্তর-পশ্চিম হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য প্রবাল বলয়গুলির সাথে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষিণের প্রবাল বলয়গুলি হল ২৯°৫৭' দক্ষিণ অক্ষাংশে তাসমান সাগরে অবস্থিতএলিজাবেথ প্রবাল প্রাচীর এবং এর নিকটে মিডলটন প্রবাল প্রাচীর। উভয়ই কোরাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের অংশ। পরবর্তী দক্ষিণে অবস্থিত প্রবাল বলয় হল পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জের ডুসি দ্বীপ, যা ২৪°৪১' দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত। বিষুবরেখার সবচেয়ে কাছের প্রবাল বলয় হল কিরবাসের (কিরিবাতি) আরানুকা। এর দক্ষিণ প্রান্ত বিষুবরেখা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার (৮.১ মাইল) উত্তরে অবস্থিত।

৩২°১৮' উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত বারমুডা দ্বীপকে কখনও কখনও "সর্ব-উত্তরে অবস্থিত প্রবাল বলয়" হিসেবে দাবি করা হয়। এই অক্ষাংশে উপসাগরীয় স্রোতের উষ্ণ জলরাশি ছাড়া প্রবাল প্রাচীরের বিকাশ ঘটত না। তবে বারমুডাকে একটি ছদ্ম-প্রবাল বলয় বলা হয় কারণ সাধারণভাবে এটি দেখতে একটি প্রবাল বলয়ের অনুরূপ হলেও এটি ভিন্ন উৎস থেকে গঠিত হয়েছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি প্রবাল বলয়ের মোট আয়তনের তুলনায় সেটির স্থলভাগের আয়তন খুবই কম। প্রবাল বলয়ের দ্বীপগুলি নিম্ন উচ্চতার হয়, সমুদ্র সমতল থেকে এদের উচ্চতা ৫ মিটার (১৬ ফুট) বা তারও কম হয়। উদাহরণস্বরূপ, মোট আয়তনের হিসাবে লিফৌ - যার আয়তন ১,১৪৬ বর্গকিলোমিটার (৪৪২ বর্গমাইল) - বিশ্বের বৃহত্তম উত্থিত প্রবাল বলয়। দ্বিতীয় বৃহত্তমটি হল রেনেল দ্বীপ, যার আয়তন ৬৬০ বর্গকিলোমিটার (২৫০ বর্গমাইল)।[] তবে অন্যান্য আরও উৎসে কিরিতিমাতি-কে স্থলভাগের আয়তনের হিসাবে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল বলয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটিও একটি উত্থিত প্রবাল বলয়, যার স্থলভাগের আয়তন ৩২১ বর্গকিলোমিটার (১২৪ বর্গমাইল); অন্য কিছু উৎসের মতে এর আয়তন এমনকি ৫৭৫ বর্গকিলোমিটার (২২২ বর্গমাইল), যার মধ্যে মূল উপহ্রদটির আয়তন ১৬০ বর্গকিলোমিটার (৬২ বর্গমাইল), অন্যান্য উপহ্রদগুলির আয়তন ১৬৮ বর্গকিলোমিটার (৬৫ বর্গমাইল) এবং মোট উপহ্রদ আয়তন ৩১৯ বর্গকিলোমিটার (১২৩ বর্গমাইল)।

প্রবাল প্রাচীর ঢিবি হিসেবে পরিচিত ভূতাত্ত্বিক গঠন বলতে চুনাপাথর অঞ্চলের মধ্যে একটি প্রাচীন প্রবাল বলয়ের উঁচু ধ্বংসাবশেষকে বোঝায়, যা দেখতে ঢিবি বা ছোট পাহাড়ের মতো। শুষ্কভূমির আয়তন অনুযায়ী দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল বলয়টি হল আলদাব্রা, যার আয়তন ১৫৫ বর্গকিলোমিটার (৬০ বর্গমাইল)। গঠনকারী দ্বীপের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বৃহত্তম প্রবাল বলয়টি হল মালদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত হুভাধু প্রবাল বলয়, যা মোট ২৫৫টি পৃথক দ্বীপ নিয়ে গঠিত।

১৮৪২ সালে প্রকাশিত চার্লস ডারউইন রচিতদ্য স্ট্রাকচার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন অভ কোরাল রিফস থেকে প্রাপ্ত মানচিত্র, যেখানে বিশ্বের প্রধান প্রধান প্রবাল প্রাচীর এবং প্রবাল বলয়গুলির দলগুলি দেখানো হয়েছে।

প্রবাল বলয়ের তালিকা

[সম্পাদনা]
মোট আয়তন অনুযায়ী বৃহত্তম প্রবাল বলয়ের তালিকা (উপহ্রদ, প্রবাল প্রাচীর ও শুষ্কভূমি যোগ করে প্রাপ্ত)[]
নাম অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা ভৌগোলিক অবস্থান স্থলভাগের আয়তন (কিমি) মোট আয়তন (কিমি) Notes
চাগোস মহাচড়া ৬°১০′ দক্ষিণ ৭২°০০′ পূর্ব / ৬.১৭° দক্ষিণ ৭২.০০° পূর্ব / -6.17; 72.00 ভারত মহাসাগর ৪.৫ ১২,৬৪২
রিড চড়া ১১°২৭′ উত্তর ১১৬°৫৪′ পূর্ব / ১১.৪৫° উত্তর ১১৬.৯০° পূর্ব / 11.45; 116.90 স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ ৮,৮৬৬ নিমজ্জিত, সবচেয়ে অগভীর অবস্থানে ৯ মিটার
ম্যাকক্লেসফিল্ড চড়া ১৬°০০′ উত্তর ১১৪°৩০′ পূর্ব / ১৬.০০° উত্তর ১১৪.৫০° পূর্ব / 16.00; 114.50 দক্ষিণ চীন সাগর ৬,৪৪৮ নিমজ্জিত, সবচেয়ে অগভীর অবস্থানে ৯.২ মিটার
উত্তর চড়া ৯°০৪′ দক্ষিণ ৬০°১২′ পূর্ব / ৯.০৭° দক্ষিণ ৬০.২০° পূর্ব / -9.07; 60.20 সায়া দি মালিয়া চড়ার উত্তরভাগ ৫,৮০০ নিমজ্জিত, সবচেয়ে অগভীর অবস্থানে <১০ মিটার
রোজালিন্ড চড়া ১৬°২৬′ উত্তর ৮০°৩১′ পশ্চিম / ১৬.৪৩° উত্তর ৮০.৫২° পশ্চিম / 16.43; -80.52 ক্যারিবীয় অঞ্চল ৪,৫০০ নিমজ্জিত, সবচেয়ে অগভীর অবস্থানে ৭.৩ মিটার
থিলাধুনমাথি ৬°৪৪′ উত্তর ৭৩°০২′ পূর্ব / ৬.৭৩° উত্তর ৭৩.০৪° পূর্ব / 6.73; 73.04 মালদ্বীপ ৫১ ৩,৮৫০
চেস্টারফিল্ড দ্বীপপুঞ্জ ১৯°২১′ দক্ষিণ ১৫৮°৪০′ পূর্ব / ১৯.৩৫° দক্ষিণ ১৫৮.৬৬° পূর্ব / -19.35; 158.66 নতুন ক্যালিডোনিয়া <১০ ৩,৫০০
হুভাধু প্রবাল বলয় ০°৩০′ উত্তর ৭৩°১৮′ পূর্ব / ০.৫০° উত্তর ৭৩.৩০° পূর্ব / 0.50; 73.30 মালদ্বীপ ৩৮.৫ ৩,১৫২
চুউক উপহ্রদ ৭°২৫′ উত্তর ১৫১°৪৭′ পূর্ব / ৭.৪২° উত্তর ১৫১.৭৮° পূর্ব / 7.42; 151.78 চুউক, মাইক্রোনেশিয়া ৩,১৫২
সাবালানা দ্বীপপুঞ্জ ৬°৪৫′ দক্ষিণ ১১৮°৫০′ পূর্ব / ৬.৭৫° দক্ষিণ ১১৮.৮৩° পূর্ব / -6.75; 118.83 ইন্দোনেশিয়া ২,৬৯৪
লিহৌ প্রবাল প্রাচীর ১৭°২৫′ দক্ষিণ ১৫১°৪০′ পূর্ব / ১৭.৪২° দক্ষিণ ১৫১.৬৭° পূর্ব / -17.42; 151.67 কোরাল সাগর ২,৫২৯
বাসাস দে পেদ্রো ১৩°০৫′ উত্তর ৭২°২৫′ পূর্ব / ১৩.০৮° উত্তর ৭২.৪২° পূর্ব / 13.08; 72.42 লাক্ষাদ্বীপ, ভারত ২,৪৭৪ নিমজ্জিত, সবচেয়ে অগভীর অবস্থানে ১৬.৪ মিটার
আর্ডাসিয়ার চড়া ৭°৪৩′ উত্তর ১১৪°১৫′ পূর্ব / ৭.৭১° উত্তর ১১৪.২৫° পূর্ব / 7.71; 114.25 স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ ২,৩৪৭
কোয়াজালেইন প্রবাল বলয় ৯°১১′ উত্তর ১৬৭°২৮′ পূর্ব / ৯.১৯° উত্তর ১৬৭.৪৭° পূর্ব / 9.19; 167.47 মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ১৬.৪ ২,৩০৪
হীরক খণ্ডদ্বীপ চড়া ১৭°২৫′ দক্ষিণ ১৫০°৫৮′ পূর্ব / ১৭.৪২° দক্ষিণ ১৫০.৯৬° পূর্ব / -17.42; 150.96 কোরাল সাগর <১ ২,২৮২
নামোনুইতো প্রবাল বলয় ৮°৪০′ উত্তর ১৫০°০০′ পূর্ব / ৮.৬৭° উত্তর ১৫০.০০° পূর্ব / 8.67; 150.00 চুউক, মাইক্রোনেশিয়া ৪.৪ ২,২৬৭
আরি প্রবাল বলয় ৩°৫২′ উত্তর ৭২°৫০′ পূর্ব / ৩.৮৬° উত্তর ৭২.৮৩° পূর্ব / 3.86; 72.83 মালদ্বীপ ৬৯ ২,২৫২
মারো প্রবাল প্রাচীর ২৫°২৫′ উত্তর ১৭০°৩৫′ পশ্চিম / ২৫.৪২° উত্তর ১৭০.৫৯° পশ্চিম / 25.42; -170.59 উত্তর-পশ্চিম হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ১,৯৩৪
রাঙ্গিরোয়া ১৫°০৮′ দক্ষিণ ১৪৭°৩৯′ পশ্চিম / ১৫.১৩° দক্ষিণ ১৪৭.৬৫° পশ্চিম / -15.13; -147.65 তুয়ামুতোস ৭৯ ১,৭৬২
কোলহুমাদুলু প্রবাল বলয় ২°২২′ উত্তর ৭৩°০৭′ পূর্ব / ২.৩৭° উত্তর ৭৩.১২° পূর্ব / 2.37; 73.12 মালদ্বীপ ৭৯ ১,৬১৭
কাফু প্রবাল বলয় ৪°২৫′ উত্তর ৭৩°৩০′ পূর্ব / ৪.৪২° উত্তর ৭৩.৫০° পূর্ব / 4.42; 73.50 মালদ্বীপ ৬৯ ১,৫৬৫
ওনতোং জাভা প্রবাল বলয় ৫°১৬′ দক্ষিণ ১৫৯°২১′ পূর্ব / ৫.২৭° দক্ষিণ ১৫৯.৩৫° পূর্ব / -5.27; 159.35 সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ১২ ১৫০০
লিফৌ ২০°৫৮′ দক্ষিণ ১৬৭°১৪′ পূর্ব / ২০.৯৭° দক্ষিণ ১৬৭.২৩° পূর্ব / -20.97; 167.23 নতুন ক্যালিডোনিয়া ১১৪৬ উপহ্রদবিহীন উত্থিত প্রবাল বলয়
রেনেল ১১°৪০′ দক্ষিণ ১৬০°১০′ পূর্ব / ১১.৬৭° দক্ষিণ ১৬০.১৭° পূর্ব / -11.67; 160.17 সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ৬৬০ উপহ্রদবিহীন উত্থিত প্রবাল বলয়
কিরিতিমাতি ১°৫১′ উত্তর ১৫৭°২৪′ পশ্চিম / ১.৮৫° উত্তর ১৫৭.৪° পশ্চিম / 1.85; -157.4 কিরিবাস ৩১২ ৬৪০

চিত্রসম্ভার

[সম্পাদনা]
ফরাসি পলিনেশিয়ার বোরা বোরার আকাশ থেকে তোলা দৃশ্য
তারাওয়া প্রবাল বলয়, কিরিবাস প্রজাতন্ত্র
বিকিনি প্রবাল বলয়, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ

১৮৪২ সালে, চার্লস ডারউইন ১৮৩১ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত এইচএমএস বিগল জাহাজে পাঁচ বছরের সমুদ্রযাত্রার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাল প্রবালপ্রাচীরের সৃষ্টি ব্যাখ্যা করেছিলেন। ডারউইনের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় যে, বেশ কিছু গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপের ধরণ: উচ্চ আগ্নেয়গিরির দ্বীপ থেকে শুরু করে ব্যারিয়ার রিফ দ্বীপ, অ্যাটল পর্যন্ত, সমুদ্রের আগ্নেয়গিরি হিসেবে শুরু হওয়া ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের একটি ধারাবাহিকতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রের একটি আগ্নেয়গিরির দ্বীপকে ঘিরে থাকা একটি প্রবাল প্রাচীর উপরের দিকে বৃদ্ধি পাবে যখন দ্বীপটি ডুবে যাবে (ডুবে যাবে), যা "প্রায় অ্যাটল" বা বাধা প্রাচীর দ্বীপে পরিণত হবে, যেমনটি কুক দ্বীপপুঞ্জের আইতুতাকি এবং সোসাইটি দ্বীপপুঞ্জের বোরা বোরা এবং অন্যান্য দ্বীপ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। বায়োটিক বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাচীরের বাইরের অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকার কারণে, প্রাচীরের ভেতরের অংশটি পিছিয়ে পড়ে, একটি উপহ্রদে পরিণত হয় কারণ বেশিরভাগ প্রাচীর বৃদ্ধির জন্য দায়ী প্রবাল এবং চুনযুক্ত শৈবালের জন্য পরিস্থিতি কম অনুকূল। সময়ের সাথে সাথে, অবনমন সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে পুরানো আগ্নেয়গিরি বহন করে এবং বাধা প্রাচীরটি রয়ে যায়। এই মুহুর্তে, দ্বীপটি একটি প্রবালপ্রাচীরে পরিণত হয়েছে।

জে. ই. হফমাইস্টার, এফ. এস. ম্যাকনিল,[] ই. জি. প্রুডি, এবং অন্যান্যদের দ্বারা সূত্রায়িত পূর্ববর্তী কার্স্ট প্রতিমান এই যুক্তি দেয়া হয়েছে যে প্রবাল বলয়গুলি প্লাইস্টোসিন যুগের বৈশিষ্ট্য যা সমুদ্রপৃষ্ঠের হিমবাহজনিত নিম্নাবস্থার সময় উন্মুক্ত সমতল শীর্ষবিশিষ্ট প্রবাল প্রাচীরের অভ্যন্তরে অবনমন ও নৈর্বাচনিক কার্স্ট দ্রবীভবনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার সরাসরি ফলাফল। এই নৈর্বাচনিক কার্স্ট দ্রবীভবনের ফলে সৃষ্ট দ্বীপের উঁচু কিনারাগুলি আন্তঃহিমবাহকালীন উচ্চাবস্থার সময় প্লাবিত হলে প্রবাল বৃদ্ধির স্থানে পরিণত হয় এবং পরিশেষে প্রবাল বলয় দ্বীপে পরিণত হয়।

এ. ডব্লিউ. ড্রক্সলার, স্তেফান জরি ও অন্যান্যদের গবেষণা পূর্ববর্তী কার্স্ট মডেলকে সমর্থন করে, কারণ তারা দেখেছেন যে আধুনিক প্রবাল বলয়গুলির ভূমিরূপগত বৈশিষ্ট্য কোনও অন্তর্নিহিত নিমজ্জিত এবং সমাহিত দ্বীপের প্রভাব থেকে স্বাধীন এবং ধীরে ধীরে অবনমনশীল আগ্নেয়গিরি কাঠামোর সাথে সংযুক্ত কোনও প্রাথমিক প্রান্তিক প্রাচীর/প্রতিবন্ধক প্রাচীরের সাথে সম্পর্কিত নয়। প্রকৃতপক্ষে অধীত আধুনিক প্রবাল বলয়গুলির নীচে অবস্থিত নবজনিক (নিওজিন) প্রবাল প্রাচীরগুলি অবনমিত দ্বীপটিকে সম্পূর্ণরূপে চাপা দেয় এবং ঢেকে দেয় এবং এগুলির সবগুলিই অ-প্রবাল বলয়, সমতল-শীর্ষ প্রবাল প্রাচীর। তারা দেখতে পেয়েছেন যে নবজনি যুগে অনেক পূর্ববর্তী দ্বীপপুঞ্জ সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত এবং সমতল শিলা দ্বারা সমাহিত হওয়ার অনেক পরে, মিড-ব্রুনেসের MIS-11 পর্যন্ত কোনও দ্বীপের অবনমনের ফলে প্রবাল বলয় তৈরি হয়নি।

প্রবাল বলয়গুলি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সামুদ্রিক জীবের বৃদ্ধির ফসল, তাই এই ভূমিরূপগুলি কেবলমাত্র উষ্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলে দেখতে পাওয়া যায়। যেসব আগ্নেয় দ্বীপ প্রাচীর-গঠনকারী জীবের উষ্ণ জলের প্রয়োজনীয়তার বাইরে অবস্থিত, সেগুলি অবনমিত হবার সাথে সাথে সমুদ্রগর্ভ পর্বতে পরিণত হয় এবং পৃষ্ঠতলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যদি কোনও দ্বীপ এমন অবস্থানে থাকে যেখানে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা যথেষ্ট উষ্ণ থাকে যাতে প্রবাল প্রাচীরের ঊর্ধ্বমুখী বৃদ্ধি দ্বীপের অবনমনের হারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, তখন বলা হয় যে সেটি ডারউইন বিন্দুতে অবস্থিত। অপেক্ষাকৃত অধিক শীতল, অধিক মেরুদেশীয় অঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জগুলি বিবর্তিত হয়ে সমুদ্রগর্ভ পর্বত বা গিয়ো (সমুদ্রগর্ভ মালভূমি)-তে পরিণত হয়। অন্যদিকে উষ্ণ, অধিক নিরক্ষীয় দ্বীপপুঞ্জগুলি প্রবাল বলয় হিসেবে বিবর্তিত হয়, যেমন কুরে প্রবাল বলয়। তবে মেসোজোয়িক (মধ্যজীবীয়) যুগের প্রাচীন প্রবাল বলয়গুলিতে বৃদ্ধি এবং বিবর্তনের বিভিন্ন ধরন দেখা যায়।[][]

প্রবাল বলয়গুলি ক্যালসাইটের ডলোমাইটীভবনের ঘটনস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাল বলয়ের ভেতরে ক্যালসাইটঅ্যারাগোনাইটের ডলোমাইটীভবনের জন্য বেশ কয়েকটি মডেল প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলি হলো বাষ্পীভবন, ক্ষরণ-বিপরীতমুখী প্রবাহ, মিশ্রণ-অঞ্চল, সমাধিক্ষেত্র এবং সমুদ্রজল প্রতিমান। যদিও প্রতিস্থাপন ডলোমাইটের উৎপত্তি আজও সমস্যাসঙ্কুল ও বিতর্কিত, সাধারণভাবে এটি গৃহীত হয়েছে যে ডলোমাইটীভবনের জন্য ম্যাগনেসিয়ামের উৎস এবং যে তরলের মধ্যে ক্যালসাইটের ডলোমাইটীভবন ঘটে ডলোমাইট সৃষ্ট হয়, তা হল সমুদ্রের জল। ডলোমাইটীভবন ঘটানোর জন্য একটি প্রবাল বলয়ের মধ্য দিয়ে প্রচুর পরিমাণে সমুদ্রের জল কীভাবে প্রবাহিত হয়, তা ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া প্রস্তাব করা হয়েছে।[][১০][১১]

লন্ডনের রয়েল সোসাইটির অনুসন্ধান

[সম্পাদনা]
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সামুদ্রিক জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের অংশ, ওয়েক দ্বীপ প্রবাল বলয়ের আকাশ থেকে তোলা সারচিত্র

১৮৯৬, ১৮৯৭ এবং ১৮৯৮ সালে, লন্ডনের রয়েল সোসাইটি প্রবাল প্রাচীর গঠনের তদন্তের উদ্দেশ্যে তুভালুর ফুনাফুতি প্রবাল বলয়ে খনন কাজ চালায়। তারা নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবাল দ্বীপপুঞ্জের প্রবালের গভীরতায় অগভীর জলের জীবের চিহ্ন পাওয়া যায় কিনা। এই তদন্তটি প্রশান্ত মহাসাগরে চার্লস ডারউইন কর্তৃক পরিচালিত প্রবাল প্রাচীরের গঠন এবং বণ্টন সম্পর্কিত গবেষণাকর্মটি অনুসরণ করে।

১৮৯৬ সালে প্রথম অভিযানের নেতৃত্ব দেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম জনসন সোলাস । ভূতাত্ত্বিকদের মধ্যে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াল্টার জর্জ উলনফ এবং এজওয়ার্থ ডেভিড অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ১৮৯৭ সালে অধ্যাপক এজওয়ার্থ ডেভিড এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। ১৮৯৮ সালে তৃতীয় অভিযানের নেতৃত্ব দেন আলফ্রেড এডমন্ড ফিঙ্ক।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  1. ধিবেহী: އަތޮޅު (অতোল়ু, উচ্চারণ [ˈat̪oɭu]) থেকে গৃহীত।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Geomorphological Landscapes of the World। Springer। ২০১০। পৃষ্ঠা 349। আইএসবিএন 978-90-481-3055-9। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; DroxlerOthers2021a নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. Watts, T. (২০১৯)। "Science, Seamounts and Society": 10–16। 
  4. "Misinformation about Islands"। worldislandinfo.com। 
  5. "Atoll Area, Depth and Rainfall" (spreadsheet)। The Geological Society of America। ২০০১। 
  6. MacNeil, F.S., 1954. "The Shape of Atolls; an Inheritance from Subaerial Erosion Forms". American Journal of Science, 252(7), pp. 402–427. ডিওআই:10.2475/ajs.252.7.402.
  7. Bialik, Or M.; Samankassou, Elias (জানুয়ারি ২০২১)। "Short-lived early Cenomanian volcanic atolls of Mt. Carmel, northern Israel": 105805। ডিওআই:10.1016/j.sedgeo.2020.105805 
  8. El-Yamani, Mahmoud S.; John, Cédric M. (১৬ মে ২০২২)। "Stratigraphic evolution and karstification of a Cretaceous Mid-Pacific atoll (Resolution Guyot) resolved from core-log-seismic integration and comparison with modern and ancient analogues": 1536–1566। ডিওআই:10.1111/bre.12670  |hdl-সংগ্রহ= এর |hdl= প্রয়োজন (সাহায্য)
  9. Budd, D.A. (March 1997). "Cenozoic dolomites of carbonate islands: their attributes and origin" (সদস্যতা প্রয়োজনীয়). Earth-Science Reviews, 42(1–2), pp. 1–47. ডিওআই:10.1016/S0012-8252(96)00051-7.
  10. Wheeler, C.W., Aharon, P. and Ferrell, R.E. (1 January 1999). "Successions of late Cenozoic platform dolomites distinguished by texture, geochemistry, and crystal chemistry; Niue, South Pacific". Journal of Sedimentary Research, 69(1), pp. 239–255. ডিওআই:10.2110/jsr.69.239.
  11. Suzuki, Y., Iryu, Y., Inagaki, S., Yamada, T., Aizawa, S. and Budd, D.A. (15 January 2006). "Origin of Atoll Dolomites Distinguished by Geochemistry and Crystal Chemistry: Kita-Daito-Jima, Northern Philippine Sea". Sedimentary Geology, 183(3–4), pp. 181–202. ডিওআই:10.1016/j.sedgeo.2005.09.016.

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]