প্রথম মুযাফফর উমর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুযাফফর উমর
হামার আমির (১১৭৯–১১৯১)
মিশরের নায়েবে আমির (১১৮১–১১৮৫)
রাজত্ব১১৭৯–১১৯১
রাজ্যাভিষেক১১৭৯
পূর্বসূরিসালাহউদ্দিন
উত্তরসূরিপ্রথম মানসুর মুহাম্মাদ
জন্মসিরিয়া
মৃত্যু১১৯১
খিলাত, মেসোপটেমিয়া
পূর্ণ নাম
মুযাফফর তাকিউদ্দিন উমর
পিতানুরুদ্দিন শাহানশাহ
ধর্মসুন্নি ইসলাম

মুযাফফর তাকিউদ্দিন উমর (আরবি: المظفر تقي الدين عمر) (মৃত্যু ১১৯১) ছিলেন ১১৭৯ থেকে ১১৯১ সাল পর্যন্ত হামার কুর্দি আইয়ুবীয় আমির সালাহউদ্দিনের একজন জেনারেল। তিনি ছিলেন সালাহউদ্দিনের ভাই নুরুদ্দিন শাহানশাহের পুত্র[১] এবং বালবেকের ফররুখ শাহের ভাই।

জীবনী[সম্পাদনা]

হামার আমির[সম্পাদনা]

সিরিয়া এবং উত্তর ইরাক জয়ের পর সালাহউদ্দিন মুযাফফর উমরকে আইয়ুবীয় শাসিত মেসোপটেমিয়ার সার্বভৌম শাসন ক্ষমতা দেন। মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এডেসা শহরে, মুযাফফর উমর একটি মাদ্রাসাও তৈরি করেছিলেন। তিনি বিশেষভাবে যারা ধর্মীয় আইন এবং সুফিদের জন্য কাজ করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছিলেন। ১১৭৫ সালে সালাহউদ্দিনকে হামা জয় করতে সাহায্য করার চার বছর পর তাকে সেখানকার শাসনভার অর্পণ করা হয়েছিল। তার কর্তৃত্ব হামার জন্য সমৃদ্ধির যুগের সূচনা করে যা ১৩৪১ সালে আইয়ুবিদের শাসনের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। মুযাফফর উমরের শাসনামলে শহরটি প্রাচীর বেষ্টিত ছিল। আর শহরে প্রাসাদ, বাজার, মাদ্রাসা এবং মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।[২]

মিশরের ভাইসরয়[সম্পাদনা]

১১৮১ সালে মানবিজে থাকাকালীন তিনি ইযযুদ্দিন মাসউদের জেনগি বাহিনীকে আলেপ্পো পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন এবং হামাতে পিছু হটতে বাধ্য হন।[৩] দুই বছর পর সালাহউদ্দিনের ভাই এবং মিশরে সহকারী শাসক আদিলকে ক্রুসেডারদের হাতে দক্ষিণ ট্রান্সজর্ডানের কেরাক অবরোধ করতে পাঠানো হয়। সালাহউদ্দিন তাই আদিলের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মুযাফফর উমরকে সহকারী শাসক হিসেবে মিশরে পাঠান।[৪]

মিশরে থাকাকালীন তাকে ফায়ুম প্রদেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি এই প্রদেশে দুটি সুন্নি মুসলিম মাদ্রাসা (ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) প্রতিষ্ঠা করেন, একটি শাফিঈ মাযহাবের জন্য এবং অন্যটি মালিকি মাযহাবের জন্য। কায়রোতে তিনি মানাযিলুল ইয নাম দিয়ে করে একটি মাদ্রাসা তৈরি করেন যা ছিল তার প্রাক্তন বাসভবন, মূলত ফাতেমিদের কাছ থেকে নেওয়া। তার সমস্ত মিশরীয় সম্পত্তিওয়াকফ ("ধর্মীয় দান") এর একটি অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছিল। যাইহোক ১১৮৫ সালে সালাহউদ্দিন তার পুত্র আজিজ উসমানকে তার পক্ষে মিশর শাসন করার জন্য নিযুক্ত করেন।[৪]

সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তন[সম্পাদনা]

এই কাজটি মুযাফফর উমরকে বিচলিত করেছিল যিনি মাগরেব আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু তার সহযোগীরা তা করতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। তিনি সালাহউদ্দিনের অনুরোধে সম্মত হন যে, তিনি তার কর্তৃত্বের অধীনে সেনা কমান্ডার হিসাবে কাজ করতে ফিরে আসেন। দামেস্কের কাছে দুজনের দেখা হয়েছিল এবং মুযাফফর উমরকে তার চাচা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। পরবর্তীতে ১১৮৭ সালে মুযাফফর উমর হাত্তিনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি ক্রুসেডার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষ্পত্তিমূলক আইয়ুবিদের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[৪]

পরবর্তীতে তিনি হামাতে ফিরে আসেন এবং শীঘ্রই তিনি তার বাহিনীকে মানজিকার্টের সেলজুক অধিকৃত দুর্গ দখল করার অভিপ্রায়ে মেসোপটেমিয়ার খিলাতে নিয়ে যান। অবরোধ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে এবং ১৯ অক্টোবর, ১১৯১ সালে সেটি কার্যকর থাকাকালীন মুযাফফর উমর মারা যান। তার লাশ হামাতে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাকে দাফন করা হয়। তার পুত্র মানসুর মুহাম্মদ তার উত্তরাধিকারী নিযুক্ত হন এবং মুযাফফর উমরের বংশধররা ১৩৪১ সালে মামলুকদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত হামা শাসন করেছিল।[৪]

বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ প্রত্যক্ষ করেছিলেন যে, কীভাবে সালাহউদ্দিন এবং তার সেনাপতিরা ইবনে জেন্দার, সাবেকুদ্দিন এবং ইযযুদ্দিন মুযাফফর উমরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা চিঠি পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, তিনি রমজানের ১৯ তারিখ শুক্রবার মারা যান।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

মুযাফফর উমরের পুত্র যাইনুদ্দিন এবং মালিকুল মানসুর অত্যন্ত আনুগত্যের সাথে সালাহউদ্দিনের সেবা করতে থাকেন।

প্রকৃতপক্ষে যাইনুদ্দিন ধর্মত্যাগী ইবনে কাফজাককে কেরখানির অন্ধকূপে রেখে শাস্তি দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সে মুসলিম সেনাদলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াইকে জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টায় উরুমিয়ার জনসংখ্যাকে হত্যা ও লুটপাট করেছিল। মালিকুল মানসুর হামার আমির হিসাবে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Lane-Poole, 2004, pp.76-79.
  2. Abu-Lughod and Dumper, 2007, p.163.
  3. Ayalon, 1986, p.380.
  4. Ibn Khallikan, 1843, pp.391-392.

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]