পেলোপনেশীয় যুদ্ধের ইতিহাস
![]() থুসিডাইডিস-এর ইতিহাস গ্রন্থের দশম শতাব্দীর মিনাসকিউল পাণ্ডুলিপি | |
লেখক | থুসিডাইডিস |
---|---|
প্রকাশনার স্থান | অ্যাথেনস |
ভাষা | প্রাচীন গ্রিক |
ধরন | ইতিহাস |
প্রকাশক | বিভিন্ন |
প্রকাশনার তারিখ | খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগে |
পেলোপোনেশিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস /pɛləpəˈniːʃən/ [১] ) একটি ঐতিহাসিক বিবরণ, যা পেলোপোনেশিয়ান লীগ ( স্পার্টার নেতৃত্বে) এবং ডেলিয়ান লীগের ( এথেন্সের নেতৃত্বে) মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এই বিবরণটি অসম্পূর্ণ, কারণ পুরো যুদ্ধের কথা এতে উল্লেখ নেই এবং যুদ্ধটি ৪১১ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়। এটি লিখেছিলেন থুসিডাইডিস, একজন এথেনীয় ইতিহাসবিদ যিনি যুদ্ধের সময় একজন এথেনীয় সেনাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সংঘাতের এই বিবরণকে ব্যাপকভাবে একটি ক্লাসিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি ইতিহাসের প্রাচীনতম পণ্ডিতিক রচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ইতিহাস আটটি বইয়ে বিভক্ত।
ইতিহাসের বিশ্লেষণ সাধারণত দুটি শিবিরের একটিতে ঘটে। একদিকে, জেবি বরির মতো কিছু পণ্ডিত এই কাজটিকে ইতিহাসের একটি বস্তুনিষ্ঠ ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হিসেবে দেখেন। বরির মতামত ঐতিহ্যবাহী ব্যাখ্যার প্রতিফলন, যা ''ইতিহাস''-কে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও সমালোচনামূলকভাবে লেখা হিসেবে দেখে, যেখানে কোনো প্রচলিত কথা বা নৈতিক বিচার নেই।
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক পাঠক-প্রতিক্রিয়া সমালোচনা এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ইতিহাস-কে একটি সাহিত্যকর্ম হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা ঐতিহাসিক ঘটনার একটি বস্তুনিষ্ঠ রেকর্ড নয়। এই মতামত প্রকাশ পায় ডব্লিউ. আর. কনারের কথায়, যিনি থুসিডাইডিসকে বর্ণনা করেন “একজন শিল্পী হিসেবে, যিনি তার উপাদানগুলোকে বেছে নেন, দক্ষতার সঙ্গে সাজান এবং এর প্রতীকী ও আবেগীয় সম্ভাবনাকে বিকাশ করেন”।
ঐতিহাসিক পদ্ধতি
[সম্পাদনা]
থুসিডাইডিসকে পাশ্চাত্য ইতিহাসচর্চার বিকাশে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই কারণে, ইতিহাসলিখনবিদ্যার ইতিহাসলিখন ক্ষেত্রে তার পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপক বিশ্লেষণের বিষয় হয়েছে।[২]
কালানুক্রমিকতা
[সম্পাদনা]থুসিডাইডিস ছিলেন প্রাচ্যের প্রথম ইতিহাসবিদদের একজন, যিনি কড়া কালানুক্রমিক মানদণ্ড অনুসরণ করেন। তিনি ঘটনাগুলোকে বছরের ভিত্তিতে লিপিবদ্ধ করেন, যেখানে প্রতিটি বছরকে ভাগ করা হয়েছে গ্রীষ্মকালীন সামরিক অভিযান এবং অপেক্ষাকৃত শান্ত শীতকালীন সময়ে। এই পদ্ধতি হেরোডোটাসের পন্থার সঙ্গে স্পষ্টভাবে ভিন্ন।
ভাষণসমূহ
[সম্পাদনা]ঘটনাপ্রবাহকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য থুসিডাইডিস ব্যাপকভাবে ভাষণের ব্যবহার করেছেন। যদিও আধুনিক ঐতিহাসিক পদ্ধতি অনুযায়ী দীর্ঘ প্রথম পুরুষে ভাষণ সংযোজন কিছুটা অপ্রচলিত, প্রাচীন গ্রিক মৌখিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে ভাষণ ছিল স্বাভাবিক। এসব ভাষণের মধ্যে ছিল যুদ্ধের আগে সেনাপতিদের সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য, অসংখ্য রাজনৈতিক ভাষণ—আথেনীয় ও স্পার্টান নেতাদের—এবং বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিতর্ক। এসব ভাষণের মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত হলো পেরিক্লিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভাষণ, যা দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে। যুদ্ধের সময় একজন আথেনীয় সেনানায়ক হিসেবে থুসিডাইডিস স্বয়ং কিছু ভাষণ শুনেছিলেন। অন্য ভাষণগুলোর জন্য তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করেছিলেন।[৩]
তবে শাস্ত্রবিদদের চোখে এসব ভাষণের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ থুসিডাইডিস ঠিক কতটা ভাষণগুলোকে পরিবর্তন করেছেন তা স্পষ্ট নয়—বিশেষত বক্তব্যের মূল বক্তব্য আরও স্পষ্ট করতে তিনি কিছু পরিবর্তন করেছেন কি না। থুসিডাইডিস স্বয়ং বলেছেন, কিছু ভাষণ সম্ভবত তার নিজের মূল্যায়ন অনুযায়ী নির্মিত, যেন “প্রত্যেক পরিস্থিতিতে যা উপযুক্ত ছিল তা বলা হয়” (১.২২.১)।[৪]
নিরপেক্ষতা
[সম্পাদনা]একজন অ্যাথেনীয় এবং এই সংঘাতের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হওয়া সত্ত্বেও, থুসিডাইডিসকে প্রায়ই দ্বন্দ্বের পক্ষগুলোর প্রতি তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ বিবরণ প্রদানকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রচনার শুরুতেই তিনি বলেন, "আমার কাজটি তৎকালীন জনরুচি পূরণের জন্য লেখা কোনো সাহিত্য নয়, বরং এটি চিরস্থায়ী হওয়ার জন্য রচিত" (১.২২.৪)।
তবে কিছু পণ্ডিত এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, আর্নস্ট ব্যাডিয়ান যুক্তি দিয়েছেন যে থুসিডাইডিসের বর্ণনায় প্রবল অ্যাথেনীয় পক্ষপাত লক্ষ্য করা যায়।[৫]
এই ধরণের সংশয়ের আলোকে, আরও কিছু গবেষক দাবি করেন যে থুসিডাইডিস তাঁর ইতিহাস রচনায় একটি গোপন অভিপ্রায় লালন করতেন—তিনি অতীতের মহাকাব্যিক রচনাগুলোর মতো একটি গাঁথা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যেমন হোমার। এই উদ্দেশ্য তাঁকে অ্যাথেনীয়দের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট দ্বৈততা তৈরি করতে প্ররোচিত করেছে বলে ধারণা করা হয়।[৬]
এই কাজটিতে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধেও সুস্পষ্ট পক্ষপাত লক্ষ্য করা যায়, যেমন ক্লিয়ন।[৭]
ধর্মের ভূমিকা
[সম্পাদনা]থুসিডাইডিসের লেখায় দেবতারা কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন না। এটি হেরোডোটাস-এর কাজ থেকে একেবারে আলাদা, যেখানে দেবতাদের কার্যকলাপ প্রায়শই উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি হোমার-এর শত শত বছর আগেকার কবিতাগুলোতেও দেবতাদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, দেবতাদের প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ধর্ম ও ধর্মীয় আচরণ স্পার্টানদের কার্যকলাপে বড় ভূমিকা রাখে, এবং অ্যাথেনীয়রাও কিছুটা তা অনুসরণ করত।
এই কারণে, প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন ভূমিকম্প ও সূর্যগ্রহণ—এই ঘটনাগুলো সে সময়ের মানুষের কাছে ধর্মীয় বা অলৌকিক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হতো (১.২৩.৩; ৭.৫০.৪)। যদিও থুসিডাইডিস এসব ঘটনাকে দেবতাদের ইচ্ছার ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করেননি, তবু তিনি দেখিয়েছেন যে সেই সময়কার মানুষ কীভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রতিক্রিয়া জানাত।
এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে থুসিডাইডিস ইতিহাসকে মানব কর্মকাণ্ড ও যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণের আলোকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন—যেখানে দেবতা নয়, বরং মানুষের সিদ্ধান্তই মূল চালিকা শক্তি।[৮][৯]
পুরাণের যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা
[সম্পাদনা]যদিও থুসিডাইডিসের লেখায় দেবতারা অনুপস্থিত, তবুও তিনি গ্রিক পুরাণ থেকে—বিশেষ করে হোমার-এর কাব্য থেকে—গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। থুসিডাইডিস প্রায়ই হোমারের উল্লেখ করেন, তবে তিনি সবসময়ই একটি সতর্ক মন্তব্য যোগ করেন, যেমন: “হোমার এ কথা বলেছেন, যদি এটিকে প্রমাণ হিসেবে ধরা যায়” অথবা “এই ক্ষেত্রেও যদি হোমারের কাব্য বিশ্বাসযোগ্য হয়”।[১০]
তবে থুসিডাইডিস হোমারের তথ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও, ট্রয় যুদ্ধ সম্পর্কিত কিছু ঐতিহাসিক অনুমান করতে তিনি হোমারের মহাকাব্য ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, থুসিডাইডিস মনে করেন যে ট্রয় অভিযানে এক হাজারের বেশি গ্রিক জাহাজ পাঠানোর কথা কবিত্বের অতিরঞ্জন মাত্র। কিন্তু, তিনি হোমারের জাহাজ তালিকা ব্যবহার করে আনুমানিক কতজন গ্রিক সৈন্য অংশ নিয়েছিল তা অনুমান করার চেষ্টা করেন।
পরবর্তীতে থুসিডাইডিস বলেন, যেহেতু হোমার কোথাও গ্রিকদের কোনো একক রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেননি, তাই প্রাচীন হেলেনীয় জাতিগুলো এতটাই বিভক্ত ছিল যে তারা সুষ্ঠুভাবে একটি কার্যকর যুদ্ধ অভিযান সংগঠিত করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, যদি গ্রিক নেতারা সঠিকভাবে সম্পদ বণ্টন করতেন এবং সৈন্যদের লুণ্ঠনের জন্য পাঠাতেন না, তাহলে ট্রয় আরও দ্রুত জয় করা যেত।
থুসিডাইডিস জোর দিয়ে বলেন, তিনি হোমারের মতো কবি নন যিনি কাহিনি রচনায় অতিরঞ্জন করেন, বরং তিনি একজন ইতিহাসবিদ, যার লেখা “তাৎক্ষণিক আনন্দের জন্য নয়,” বরং “যার অন্তর্নিহিত অর্থ বাস্তব সত্য দ্বারা যাচাইযোগ্য।”[১১]
এইভাবে, থুসিডাইডিস স্পষ্ট করে দেন যে, যদিও তিনি মহাকাব্য ও পুরাণকে একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন, এসবকে পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য ধরা যায় না। অতীতকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য নিরপেক্ষ এবং পরীক্ষণভিত্তিক মনোভাবসম্পন্ন একজন ইতিহাসবিদের প্রয়োজন, যেমন তিনি নিজে ছিলেন।
ইতিহাস গ্রন্থের বিষয়বস্তু
[সম্পাদনা]ইতিহাস-র প্রথম খণ্ডে সংক্ষিপ্তভাবে প্রাচীন গ্রিক ইতিহাস পর্যালোচনা ও ইতিহাস রচনার নীতিগত দিক নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। এরপর থুসিডাইডিস ব্যাখ্যা করেছেন কী কারণে এবং কী প্রেক্ষাপটে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। কয়েকটি সংক্ষিপ্ত অন্তর্বর্তী ব্যাখ্যা (বিশেষ করে ৬.৫৪–৫৮ তে স্বৈরাচার-বিনাশকারীদের প্রসঙ্গ) বাদ দিলে, গ্রন্থের অবশিষ্টাংশ (২ থেকে ৮ নম্বর খণ্ড) কঠোরভাবে পেলোপনেসীয় যুদ্ধকেই কেন্দ্রীভূত করে রচিত হয়েছে; অন্যান্য বিষয় প্রায় সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত।
যদিও ইতিহাস মূলত যুদ্ধের সামরিক দিককে উপজীব্য করেছে, তবুও থুসিডাইডিস যুদ্ধের মাধ্যমেই আরও কয়েকটি গভীর বিষয় তুলে ধরেছেন। গ্রন্থটিতে বিশেষভাবে দেখানো হয়েছে—যুদ্ধ মানবসমাজ ও সংস্কৃতির ওপর কীভাবে অবক্ষয়মূলক প্রভাব ফেলে। এটি আইন-শৃঙ্খলার ধ্বংস এবং যুদ্ধকালীন রাজনৈতিক পক্ষাবলম্বনের নামে গ্রিক নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত নিষ্ঠুরতার ওপর গভীর আলোকপাত করে।
ইতিহাসে চিত্রিত কিছু ঘটনা, যেমন মেলিয়ান সংলাপ, আধুনিক রিয়ালপলিটিক বা ক্ষমতার রাজনীতির প্রাথমিক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, থুসিডাইডিসের লেখার অনুবাদগত ভুলের কারণে আধুনিক বাস্তববাদী দর্শনের বিশ্লেষণে কিছু ভ্রান্ত ব্যাখ্যার জন্ম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[১২]
গ্রন্থটি রাজনীতি ও যুদ্ধ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ন্যায়বিচার ও ক্ষমতার পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছে। থুসিডাইডিস এই প্রশ্নে দ্ব্যর্থাবস্থার মধ্যে রয়েছেন—একদিকে মনে হয় ন্যায়বিচার একটি কৃত্রিম ধারণা যা ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়, অন্যদিকে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতায় আক্রান্তদের প্রতি সহানুভূতিও প্রকাশ করেছেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে, ইতিহাস গ্রন্থে শিল্প বা স্থাপত্যের মতো বিষয় আলোচিত হয়নি।
সামরিক প্রযুক্তি
[সম্পাদনা]
''ইতিহাস'' গ্রন্থে সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে (১.১৪.৩, ২.৭৫–৭৬, ৭.৩৬.২–৩) থুসিডাইডিস দূরপ্রসারিত যুদ্ধ কৌশল এবং নৌযুদ্ধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নতুনত্বের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।ইতিহাস গ্রন্থে নৌবাহিনীর আধিপত্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে এবং তিনি বলেন যে, একটি আধুনিক সাম্রাজ্য শক্তিশালী নৌবাহিনীর ব্যতীত অসম্ভব। থুসিডাইডিস এই নীতি গ্রিক উপকূলীয় ডাকাতি এবং উপকূলীয় বসতির বিকাশের ফলাফল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
এ ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পায় ক্লাসিকাল যুগের শুরুর দিকে (প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০) উদ্ভাবিত ট্রাইরিম নামে জাহাজটির, যা পরবর্তী কয়েকশ বছর ধরে নৌবাহিনীর প্রধান অস্ত্র ছিল। সমুদ্র শক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে থুসিডাইডিসের মতবাদ অ্যালফ্রেড থেয়ার মাহান-এর চিন্তার সঙ্গে মেলে, যার প্রভাবশালী গ্রন্থ দ্য ইনফ্লুয়েন্স অব সি পাওয়ার আপন হিস্ট্রি (ইংরেজি: The Influence of Sea Power upon History, বাংলায়: ইতিহাসে সমুদ্রশক্তির প্রভাব) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে নৌকৌশল প্রতিযোগিতার সূচনা করেছিল।
সাম্রাজ্র
[সম্পাদনা]ইতিহাস ব্যাখ্যা করে যে পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল "অ্যাথেন্সের ক্ষমতার বৃদ্ধি এবং এর ফলে স্পার্টার মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্ক" (১.২৩.৬)। থুসিডাইডিস অ্যাথেন্সের ক্ষমতার বিকাশকে অনুসরণ করেছেন, যা ৪৭৯ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪৩২ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত অ্যাথেনিয়ান সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঘটেছিল, যা ইতিহাস এর প্রথম বইয়ের (১.৮৯–১১৮) মধ্যে বর্ণিত হয়েছে। সাম্রাজ্যের বৈধতা বেশ কয়েকটি অংশে আলোচনা করা হয়েছে, বিশেষ করে ১.৭৩–৭৮ নম্বর অংশে, যেখানে একটি অনামিক অ্যাথেনিয়ান প্রতিনিধি দল দাবি করে যে সাম্রাজ্যটি জোরপূর্বক গ্রহণ করা হয়নি, বরং স্বেচ্ছায় অ্যাথেনিয়ানদের দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের জন্য তারা যুক্তি দেয়, "...পরিস্থিতির প্রকৃতি প্রথমে আমাদের সাম্রাজ্যকে বর্তমান উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল; আমাদের প্রধান প্রেরণা ছিল ভয়, যদিও পরে সম্মান ও স্বার্থের কারণে তা বজায় রাখা হয়।" (১.৭৫.৩) অ্যাথেনিয়ানরা আরও যুক্তি দেয়,
"আমরা কিছুই অস্বাভাবিক করিনি, মানব প্রকৃতির বিপরীতে কিছু করিনি, যখন আমাদের কাছে সাম্রাজ্য দেওয়া হয়েছিল তখন তা গ্রহণ করেছি এবং পরে তা ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেছি।"
(১.৭৬) তারা দাবি করে যে তাদের অবস্থানে কেউ থাকলে একইভাবে আচরণ করত। স্পার্টাররা একটি ঐতিহ্যবাহী, সাবধানী এবং কম বিস্তৃত শক্তি হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। সত্যি বলতে, অ্যাথেনিয়ানরা তাদের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যবিস্তারের ভুল সিসিলিয়ান অভিযান দ্বারা প্রায় ধ্বংস হয়, যা ইতিহাস এর ষষ্ঠ ও সপ্তম বইয়ে বর্ণিত হয়েছে।
ভূবিজ্ঞান
[সম্পাদনা]থুসিডাইডিস প্রথমবারের মতো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ইতিহাসে ৪২৬ খ্রিস্টপূর্বের মালিয়ান উপসাগরের সুনামির বর্ণনায় ভূমিকম্প ও তরঙ্গের মধ্যে কারণ ও প্রভাবের সম্পর্ক স্থাপন করেন।[১৩][১৪]
ব্যাখ্যার কিছু অসুবিধা
[সম্পাদনা]থুসিডাইডিসের ইতিহাস অত্যন্ত জটিল ও গভীর। তাঁর প্রাচীন গ্রিক গদ্য রচনাশৈলী ভাষাগত, বাক্যগঠনগত এবং অর্থগতভাবে বেশ কঠিন। এর ফলে ব্যাখ্যার বিভিন্ন বিষয়ে পণ্ডিত মহলে ব্যাপক মতবিরোধ হয়েছে।
রচনার স্তরসমূহ
[সম্পাদনা]সাধারণ ধারণা হলো থুসিডাইডিস ইতিহাস রচনা শেষ না করে মৃত্যু বরণ করেছিলেন, কারণ এটি বাক্যের মাঝখানে থেমে গেছে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪১১ সাল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, যার ফলে শেষ ছয় বছরের যুদ্ধ বর্ণিত হয়নি। তদুপরি, এটি স্পষ্ট নয় তিনি লিখিত অংশগুলো সংশোধন করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কি না। কারণ ইতিহাসের কিছু অংশের মধ্যে পরস্পরের বিরোধ লক্ষ্য করা যায়, তাই মনে করা হয়েছে যে এই বিরোধপূর্ণ অংশগুলো বিভিন্ন সময়ে লেখা হয়েছে এবং থুসিডাইডিসের ওই বিষয়ে মতামত পরিবর্তিত হয়েছে। যারা যুক্তি দেন যে ইতিহাস বিভিন্ন রচনামূলক স্তরে বিভক্ত, তাদের সাধারণত "বিশ্লেষক" বলা হয়, এবং যারা মনে করেন যে সমস্ত অংশ একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, তাদের "এককবাদী" বলা হয়।[১৫] এই বিতর্ককে "রচনার স্তর" বিতর্ক বলা হয়। বিশ শতাব্দীতে এই বিতর্কে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অনেক থুসিডাইডিসবিদ এই বিতর্ককে অবিশ্লেষণীয় বলে ঘোষণা করে নিজেদের কাজেই এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
উৎসসমূহ
[সম্পাদনা]ইতিহাস তার উৎস সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও গোপনীয়। থুসিডাইডিস প্রায় কখনই তার তথ্যদাতাদের নাম উল্লেখ করেন না এবং বিরল কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘটনার প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্করণের উল্লেখ করেন। এই আচরণ স্পষ্টভাবে হেরোডোটাসের থেকে ভিন্ন, যিনি তার কাহিনীগুলোর বিভিন্ন সংস্করণ প্রায়ই উল্লেখ করে পাঠককে সিদ্ধান্ত নিতে দেন কোনটি সত্য। পরিবর্তে, থুসিডাইডিস একটি সুশৃঙ্খল ও অবিচ্ছেদ্য বর্ণনার ছাপ তৈরি করার চেষ্টা করেন। তবুও, পণ্ডিতরা ইতিহাসেএ বিভিন্ন অংশের পেছনের উৎস সনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, থুসিডাইডিসের নির্বাসনের পরবর্তী বর্ণনা (৪.১০৮ এবং পরবর্তী) প্রথম চারটি বইয়ের তুলনায় পেলোপনেশীয় ঘটনার ওপর বেশি মনোযোগ দেয়, যা নির্দেশ করে যে ওই সময়ে তার পেলোপনেশীয় উৎসগুলোর প্রবেশাধিকার বেশি ছিল।
প্রায়ই থুসিডাইডিস মূল বর্ণনার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে ব্যক্তিদের চিন্তা-ভাবনার জ্ঞাতব্যতা দাবি করেন। পণ্ডিতরা এই মুহূর্তগুলোকে প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন যে তিনি পরে এসব ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তবে সিসিলিয়ান অভিযানের প্রমাণ এই ধারণার বিরুদ্ধে যায়, কারণ থুসিডাইডিস সেই অভিযানে নিহত জেনারেলদের চিন্তা-ভাবনা আলোচনা করেন, যাদের তিনি সাক্ষাৎ করতে পারেননি। বরং এটি মনে হয় যে, বক্তৃতার মতো, থুসিডাইডিস তার ইতিহাসে প্রধান চরিত্রদের চিন্তা, অনুভূতি ও প্রেরণা তাদের কর্মের মাধ্যমে অনুমান করার ক্ষেত্রে পূর্বের ধারণার তুলনায় অনেকটাই ঢিলেঢালা ছিলেন, পাশাপাশি পরিস্থিতির উপযুক্ততা বা সম্ভাব্যতার ওপর তার নিজস্ব বিচার নির্ভর করতেন।
সমালোচনামূলক মূল্যায়ন
[সম্পাদনা]প্রাচীন ইতিহাসচর্চায় থুসিডাইডিসের অবদান সর্বজনস্বীকৃত ও যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচিত। ইতিহাসবিদ জে. বি. ব্যুরি মন্তব্য করেন, থুসিডাইডিসের রচনা "ইতিহাসকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে একক কোনো ব্যক্তির দ্বারা নেওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"[১৬] ব্যুরির মতে, থুসিডাইডিস ইতিহাসকে কেবল গল্প বা কিংবদন্তির সমষ্টি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে যুক্তিনির্ভর, বিশ্লেষণমূলক এবং দলিলভিত্তিক এক শাস্ত্রে পরিণত করেন।
এইচ. ডি. এফ. কিট্টোর দৃষ্টিভঙ্গিও অনুরূপ, তবে তাঁর ব্যাখ্যা আরও আবেগঘন। কিট্টো মনে করেন, থুসিডাইডিস পেলোপনেশীয় যুদ্ধকে বেছে নিয়েছিলেন কারণ এটি ছিল প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও মানবিক দিক থেকে দুঃখবহ একটি সংঘাত। তাঁর ভাষায়, থুসিডাইডিসের লেখনী এমন আবেগে পরিপূর্ণ যে, "তা কখনও কখনও সাফোর (সাপ্ফো) কবিতার অনুভূতিশীলতাকেও অতিক্রম করে।"[১৭]
থুসিডাইডিস সম্পর্কে দার্শনিক কার্ল আর. পপারের মূল্যায়ন আরও গভীর এবং দ্বিমুখী। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ওপেন সোসাইটি অ্যান্ড ইটস এনিমিসে তিনি থুসিডাইডিসকে "সম্ভবত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ" আখ্যা দিলেও, সেই সঙ্গে সতর্ক করে দেন যে, থুসিডাইডিসের দৃষ্টিভঙ্গি একটি ব্যাখ্যা মাত্র—একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ, যা নিঃসন্দেহে আলোচনার যোগ্য এবং একমত না-হওয়ার সুযোগ রাখে।
পপার বলেন, থুসিডাইডিস মূলত স্পার্টার অভিজাততান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক এথেন্সের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল শীতল ও পক্ষপাতহীন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন:
"যদিও তিনি যুদ্ধকালে শত্রুর সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী এথেনীয় অভিজাত চক্রের চরমপন্থী সদস্য ছিলেন না, তথাপি তিনি অভিজাত দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রতি এথেন্সের সাধারণ জনগণের—'ডেমস'-এর—নির্বাসন ও তার সাম্রাজ্যবাদী নীতির প্রতি তাঁর কোনো আনুগত্য ছিল না।"[১৮]
প্রভাব
[সম্পাদনা]থুসিডাইডিসের ইতিহাস গ্রন্থটি প্রাচীন ও আধুনিক উভয় ইতিহাসচর্চায় অত্যন্ত প্রভাববিস্তারী রচনা হিসেবে বিবেচিত। তাঁর সমসাময়িক এবং পরবর্তী অনেক লেখকই এই গ্রন্থের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং অনেকে এর অসমাপ্ত অংশ পূরণ করার চেষ্টাও করেন। যেমন, জেনোফন তাঁর হেলেনিকা গ্রন্থটি রচনা করেন থুসিডাইডিসের লেখার অব্যবহিত পরে শুরু করে, যেন এটি সরাসরি সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
তবে পরবর্তী প্রাচীন যুগে থুসিডাইডিসের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা হ্রাস পায়। হ্যালিকার্নাসাসের ডায়োনিসিয়াস তাঁর লেখাকে "জটিল, কঠোর ও শুষ্ক" বলে সমালোচনা করেন। ব্যঙ্গাত্মক লেখক লুসিয়ান তাঁর বিখ্যাত কল্পকাহিনি দ্য ট্রু হিস্টোরিজে থুসিডাইডিসসহ একাধিক ঐতিহাসিককে বিদ্রূপ করেন, যা তাঁর শৈলীর অতিরিক্ত গাম্ভীর্য এবং আত্মবিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করে।
আধুনিক যুগেও থুসিডাইডিসের প্রভাব অনন্য। মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ভার্সাই শান্তি সম্মেলনের পথে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার সময় এই গ্রন্থটি পড়েন বলে জানা যায়, যা তাঁর কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলেছিল।[১৯]
সতেরো শতকে ইংরেজ দার্শনিক থমাস হবস থুসিডাইডিসের এই গ্রন্থের একটি অনুবাদও করেন এবং তাঁকে ইতিহাসচর্চায় সর্বোচ্চ মর্যাদায় অভিহিত করেন। হবস লেখেন:
"অনেকেই লক্ষ করেছেন যে, কবিতায় হোমার, দর্শনে অ্যারিস্টটল, বাগ্মিতায় ডেমোস্থেনিস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রাচীনদের শ্রেষ্ঠত্ব আজও অটুট। এদের কেউ কেউ এখনো অদ্বিতীয়, এমনকি অননুকরণীয়। এই শ্রেষ্ঠদের কাতারেই স্থান পেয়েছেন আমাদের থুসিডাইডিস; যিনি তাঁর কাজের পরিপূর্ণতায় অনন্য, এবং যাঁর মাধ্যমে (আমার মতে এবং আরও অনেকের মতে) ইতিহাসচর্চার শিল্প সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।" [২০]
থুসিডাইডিসের প্রভাব আজও অটুট। কেবল প্রাচীন ইতিহাস নয়, আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কূটনীতি এবং যুদ্ধতত্ত্বেও তাঁর বিশ্লেষণ ও রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি বিশেষভাবে মূল্যায়িত হয়। "থুসিডাইডিস ফাঁদ" (Thucydides Trap) নামে একটি সমসাময়িক ধারণাও তাঁর নামানুসারে প্রচলিত, যা একটি উদীয়মান শক্তির সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠিত শক্তির সংঘর্ষ সম্ভাবনার তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করে।
পান্ডুলিপি
[সম্পাদনা]
থুসিডাইডিসের ইতিহাস গ্রন্থের যেসব প্রাচীন পান্ডুলিপি টিকে আছে, তার মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- কোডেক্স প্যারিসিনাস (Codex Parisinus suppl. Gr. 255)– ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত।
- কোডেক্স ভ্যাটিকানুস (Codex Vaticanus 126)– ভ্যাটিকান গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত।
- কোডেক্স লরেন্তিয়ানুস (Codex Laurentianus LXIX.2) – ফ্লোরেন্সের লরেন্তিয়ান গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত।
- কোডেক্স পালাটিনাস (Codex Palatinus 252)– জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত।
- কোডেক্স মনাকেনসিস (Codex Monacensis 430 ও 228)– মিউনিখে সংরক্ষিত দুটি ভিন্ন পান্ডুলিপি।
- কোডেক্স ব্রিটানিকাস (Codex Britannicus II, 727) – ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত।
এই পান্ডুলিপিগুলো মধ্যযুগীয় গ্রিক ভাষায় লিপিবদ্ধ এবং থুসিডাইডিসের পাঠসম্পাদনার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান প্রামাণ্য উৎস।
আরও উল্লেখযোগ্য হলো, ইতিহাসবিদ বার্নার্ড পি. গ্রেনফেল ও আর্থার এস. হান্ট মিশরের অক্সিরিঙ্কাস শহরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে থুসিডাইডিসের লেখার খণ্ডিত অংশবিশেষ আবিষ্কার করেন। এই খণ্ডিত অংশগুলি প্রায় খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে শুরু করে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে লিপিবদ্ধ। এদের মধ্যে অক্সিরিঙ্কাস প্যাপিরাস ১৬ এবং ১৭ নম্বর প্যাপিরাস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসের পুনর্গঠনে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।[২১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Peloponnesian"। ডিকশনারী.কম। র্যান্ডম হাউজ।
- ↑ Morley, Neville; Lee, Christine (২০১৪)। "Introduction: Reading Thucydides"। A handbook to the reception of Thucydides। John Wiley & Sons, Ltd। পৃষ্ঠা 1–4। আইএসবিএন 978-1-4051-9691-8। ওসিএলসি 999625055।
- ↑ Thucydides (২০০৯-০৬-১১), Hammond, Martin; Rhodes, P. J, সম্পাদকগণ, "History of the Peloponnesian War"
, Oxford World's Classics: Thucydides: The Peloponnesian War, Oxford University Press, আইএসবিএন 978-0-19-282191-1, ডিওআই:10.1093/oseo/instance.00266021, সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৫
- ↑ Donald Kagan, "The Speeches in Thucydides and the Mytilene Debate", Yale Classical Studies (1975) 24:71–94.
- ↑ Ernst Badian, "Thucydides and the Outbreak of the Peloponnesian War. A Historian's Brief" in Conflict, Antithesis and the Ancient Historian, ed. June Allison, (Columbus 1990), pp. 46–91
- ↑ Graziosi, Barbara. Inventing Homer: The Early Reception of Epic, 2002, p. 118, আইএসবিএন ০-৫২১-৮০৯৬৬-৫
- ↑ Westlake, H. D. (২০১০)। Individuals in Thucydides। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 978-0-521-14753-8।
- ↑ Jordan, Borimir (১৯৮৬)। "Religion in Thucydides"। Transactions of the American Philological Association। 116: ১১৯–১৪৭। জেস্টোর 283914। ডিওআই:10.2307/283914।
- ↑ Strauss, Leo (১৯৭৪)। "Preliminary Observations on the Gods in Thucydides' Work"। Interpretation: A Journal of Political Philosophy। ৪। পৃষ্ঠা ১–১৬।
- ↑ Barbara Graziosi, Inventing Homer: The Early Reception of Epic, p. ১২১
- ↑ Thucydides, History of the Peloponnesian War.[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ Eckstein, Arthur M. (২০০৩)। "Thucydides, the Outbreak of the Peloponnesian War, and the Foundation of International Systems Theory"
। The International History Review। 25 (4): 757–774। আইএসএসএন 0707-5332। এসটুসিআইডি 154821198। জেস্টোর 40110357। ডিওআই:10.1080/07075332.2003.9641012।
- ↑ টেমপ্লেট:Thucydides
- ↑ Smid, T. C.: "'Tsunamis' in Greek Literature", Greece & Rome, ২য় সিরিজ, খণ্ড ১৭, সংখ্যা ১ (এপ্রিল, ১৯৭০), পৃ. ১০০–১০৪
- ↑ Saïd, Suzanne (২০১৫-০৭-৩০)। "Homer"। Oxford Research Encyclopedia of Classics (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসবিএন 978-0-19-938113-5। ডিওআই:10.1093/acrefore/9780199381135.013.3138। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৭।
- ↑ Bury, J. B (১৯৫৮)। The Ancient Greek Historians। New York: Dover Publications। পৃষ্ঠা 147।
- ↑ Bowker, Stan (১৯৬৬)। "Kitto At BC"। The Heights। XLVI (16)।
- ↑ Popper, Karl (২০১২-১১-১২)। The Open Society and Its Enemies (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 978-1-136-70025-5।
- ↑ H.W. Brands, Arthur Schlesinger Woodrow Wilson (The American President Series), Times Books, 2003 আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮০৫০-৬৯৫৫-৬
- ↑ Hobbes, Thomas (১৬২৯)। Eight bookes of the Peloponnesian Warre written by Thucydides the sonne of Olorus.। পৃষ্ঠা 5।
- ↑ Histories: book 3. Edited with notes, for the use of schools (Oxford Clarendon Press; 1901)
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- কনর, ডব্লিউ. রবার্ট, থিউসিডাইডিস। প্রিন্সটন: প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস (১৯৮৪)। আইএসবিএন ০-৬৯১-০৩৫৬৯-৫।
- ক্রেন, গ্রেগরি, থিউসিডাইডিস এবং প্রাচীন সরলতা: রাজনৈতিক বাস্তববাদের সীমা। বার্কলে: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস (১৯৯৮)।
- হর্নব্লোয়ার, সাইমন, থিউসিডাইডিস সম্পর্কে ব্যাখ্যা। ২ খণ্ড। অক্সফোর্ড: ক্ল্যারেনডন (১৯৯১–১৯৯৬)। আইএসবিএন ০-১৯-৮১৫০৯৯-৭ (খণ্ড ১), আইএসবিএন ০-১৯-৯২৭৬২৫-০ (খণ্ড ২)।
- হর্নব্লোয়ার, সাইমন, থিউসিডাইডিস। লন্ডন: ডাকওয়ার্থ (১৯৮৭)। আইএসবিএন ০-৭১৫৬-২১৫৬-৪।
- অরউইন, ক্লিফর্ড, থিউসিডাইডিসের মানবতা। প্রিন্সটন: প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস (১৯৯৪)। আইএসবিএন ০-৬৯১-০৩৪৪৯-৪।
- পাডে, মারিয়ান, "থিউসিডাইডিস", Catalogus Translationum et Commentariorum, ৮, পৃঃ ১০৪–১৮১। সর্বশেষ প্রবেশ ১ মার্চ ২০১৬।
- রোমিলি, জ্যাকলিন দে, থিউসিডাইডিস এবং অ্যাথেনিয়ান সাম্রাজ্যবাদ। অক্সফোর্ড: বাসিল ব্ল্যাকওয়েল (১৯৬৩)। আইএসবিএন ০-৮৮১৪৩-০৭২-২।
- রুড, টিম, থিউসিডাইডিস: বর্ণনা ও ব্যাখ্যা। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (১৯৯৮)। আইএসবিএন ০-১৯-৯২৭৫৮৫-৮।
- স্ট্র্যাসলার, রবার্ট বি, সম্পাদনা। দ্য ল্যান্ডমার্ক থিউসিডাইডিস: পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধে একটি ব্যাপক গাইড। নিউ ইয়র্ক: ফ্রি প্রেস (১৯৯৬)। আইএসবিএন ০-৬৮৪-৮২৮১৫-৪।
- থিউসিডাইডিস, থিউসিডাইডিস, ওলরি ফিল, ডে বেলো পেলোপনেশিয়াকোয়া লিবরি VIII, ভার্সিওন লাতিনা, (লন্ডন ১৮১৯)।
বহিঃযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিউক্তিতে দ্য পেলোপনেশিয়ান ওয়ার সম্পর্কিত উক্তি পড়ুন।
উইকিসংকলনে দ্য পেলোপনেশিয়ান ওয়ার সম্পর্কিত কর্ম দেখুন।
- দ্য পেলোপনেশিয়ান ওয়ার, রিচার্ড ক্রলি দ্বারা অনূদিত at Standard Ebooks
দ্য পেলোপনেশিয়ান ওয়ার লিব্রিভক্সে পাবলিক ডোমেইন অডিওবই (ইংরেজি)