পেনরোজ সিঁড়ি
নিদর্শন | অসম্ভব বস্তু |
---|---|
যার নাম অনুসারে | রজার পেনরোজ |
আবিষ্কারক | লিওনাল পেনরোজ রজার পেনরোজ অস্কার রয়টার্সবার্ড |
আবিষ্কারের সাল | ১৯৫৯ |
পেনরোজ সিঁড়ি (ইংরেজিতে Penrose stairs বা Penrose steps) একটি অসম্ভব বস্তু যা ১৯৩৭ সালে অস্কার রয়টার্সফের্ড সৃষ্টি করেন। এটিকে অসম্ভব সিঁড়ি নামেও ডাকা হয়।[১][২][৩] পরবর্তীতে লিওনেল পেনরোজ ও তাঁর পুত্র রজার পেনরোজ এটি পুনরাবিস্কার করেন ও এটির জনপ্রিয়তায় অবদান রাখেন।[৪] এটি মূলত পেনরোজ ত্রিভুজের একটি প্রকারভেদ। এটি একটি সিঁড়ির দ্বিমাত্রিক চিত্র যেখানে সিঁড়িটি চারবার ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁক নেয় কিন্তু একটি আবদ্ধ ফাঁসের মতো নামতেই থাকে বা উঠতেই থাকে, তাই একজন ব্যক্তি এই সিঁড়ি দিয়ে চিরকাল উঠতে থাকে কিন্তু কখনোই উপরে ওঠে না। এই ব্যাপারটি পরিস্কারভাবে একটি ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে অসম্ভব, কিন্তু কিছু অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি যেমন শূন্য জ্যামিতিতে সম্ভব।[৫]
১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ জার্নাল অফ সাইকোলজিতে রজার পেনরোজ দ্বারা প্রকাশিত "পেনরোজের ত্রিভুজ" এর উপর ভিত্তি করে ১৯৫৯ সালে লিওনাল ও রজার পেনরোস যে নিবন্ধটি লিখেছিলেন তাতে "পেনরোস সিঁড়ি" প্রথম উপস্থাপিত হয়েছিল।[৪]এম. সি. এশ্যর পরবর্তী বছরে পেনরোজ সিঁড়ি আবিষ্কার করেন এবং ১৯৬০ সালের মার্চ মাসে তাঁর বিখ্যাত লিথোগ্রাফ ক্লিমমেন এন ডালেন ( অ্যাসেন্ডিং অ্যান্ড ডিসেন্ডিং ) তৈরি করেন। একই বছর পেনরোজ এবং এশ্যর একে অপরের কাজের বিষয়ে অবহিত হন। এশ্যর তার চিত্র ওয়াটারভাল ( জলপ্রপাত ) থিমটিকে আরও উন্নত করেছিলেন, যা ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
তাদের মূল নিবন্ধে লিওনাল ও রজার পেনরোস উল্লেখ করেছেন যে "কাঠামোটির প্রতিটি অংশ এক সারি সিঁড়ির ধাপ হিসেবে গ্রহণযোগ্য কিন্তু সংযোগগুলি এমন যে চিত্রটি সামগ্রিকভাবে অসঙ্গত হয়ে যায়, সিঁড়ির ধাপগুলি ক্রমাগত ঘড়ির কাঁটার দিকে নামতেই থাকে।"[৬]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]লিওনাল পেনরোজ ও রজার পেনরোজ
[সম্পাদনা]১৯৫৪ সালে রজার পেনরোজ আমস্টারডামে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ ম্যাথমেথিসিয়ানে এম. সি. এশ্যরের কাজের সাথে পরিচিত হন। তিনি এশ্যরের কাজের দ্বারা অত্যন্ত মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন এবং ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি নিজের থেকে অসম্ভব কিছু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একটির উপর একটি দণ্ড বসিয়ে বিভিন্ন নকশা তৈরি করার পর তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অবশেষে তিনি অসম্ভব ত্রিভুজ তৈরিতে সক্ষম হন। রজার তার আঁকা ছবিটি তার বাবাকে দেখিয়েছিলেন, যিনি খুব সহজে এর অনুরূপ বিভিন্ন অসম্ভব বস্তু তৈরি করেন, যার মধ্যে অসম্ভব সিঁড়ি অন্তর্ভুক্ত ছিল । তারা তাদের ফলাফল প্রকাশ করতে চেয়েছিল কিন্তু এটি কোন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত তা তারা জানতেন না। লিওনেল পেনরোজ ব্রিটিশ জার্নাল অফ সাইকোলজির সম্পাদকের সাথে পরিচিত ছিলেন এবং তাই তিনি তাদের সংক্ষিপ্ত পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে তাকে রাজি করেছিলেন। এরপর এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে এটি প্রকাশের পর পেনরোস তাদের সম্মানের চিহ্ন হিসাবে এশ্যরকে নিবন্ধটির একটি অনুলিপি পাঠান।[৭]
১৯৮৫ সালে রোমের একটি এশ্যর সম্মেলনে, রজার পেনরোজ বলেছিলেন যে তিনি এশ্যরের কর্মগুণ দ্বারা ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যখন তিনি এবং তার পিতা পেনরোজ ত্রিভুজ এবং পেনরোজ সিঁড়ি উভয়ই আবিষ্কার করেছিলেন ।
অস্কার রয়টার্সভার্ড
[সম্পাদনা]পেনরোজের আগে অসম্ভব সিঁড়ি নকশাটি আবিষ্কার করেছিলেন সুইডিশ শিল্পী অস্কার রয়টার্সভার্ড, কিন্তু পেনরোজ বা এশ্যর কেউই তার নকশা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। রেডিও এর একটি অনুষ্ঠান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রয়টার্সভার্ড ১৯৫০ সালে স্টকহোম থেকে প্যারিস ভ্রমণকালে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি অসম্ভব বস্তু আঁকা শুরু করেন। তিনি তখন বুঝতে পারেননি যে অঙ্কন করার সময় তাঁর ছবিটি একটি ক্রমাগত ফ্লাইট সিঁড়ি ছিল, তবে এই প্রক্রিয়াটি তাঁকে ধাপে ধাপে তাঁর ক্রমবর্ধমান জটিল নকশাগুলির সন্ধান করতে সক্ষম করেছিল।। ১৯৬১ সালে রয়টার্সভার্ডের কাছে যখন এম.সি. এশ্যরের অস্যান্ডিং এন্ড ডেসেন্ডিং পাঠানো হয়েছিল, তখন তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু সিঁড়ির অনিয়মটি পছন্দ করেননি। ১৯৬০ এর দশক জুড়ে, রয়টার্সভার্ড তাঁর কাজের প্রশংসা জানানোর জন্য এশ্যরকে বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু সেই ডাচ শিল্পী সাড়া দিতে ব্যর্থ হন। রজার পেনরোজ ১৯৮৪ সালে রয়টার্সভার্ডের কাজ আবিষ্কার করেন।
এশ্যরিয়ান সিঁড়ি
[সম্পাদনা]এসচেরিয়ান সিঁড়ি হলো পেনরোজ সিঁড়ির বিভ্রমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা একটি ভাইরাল ভিডিও। ভিডিওটি, যেটি মাইকেল লাকানিলাও দ্বারা রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে চিত্রায়িত করা হয়েছিল, তৈরি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যেখানে একটি চাক্রিক সিঁড়ির এক প্রান্ত থেকে কেউ যদি একদিক থেকে হাঁটা শুরু করে, তাহলে সে পুনরায় একই স্থানে পৌঁছাবে। ভিডিওটির মতে সিঁড়িটি ১৯৬০ এর দশকে কাল্পনিক স্থপতি রাফায়েল নেলসন আবোগান্ডা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ভিডিওটি একটি ইন্টারনেট প্রতারণা বলে প্রকাশিত হয়েছিল, কারণ বিভিন্ন ব্যক্তি এই সিঁড়িটি দেখতে রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভ্রমণ করেছিলেন।[৮]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
[সম্পাদনা]- পেনরোজ সিঁড়িগুলি ইনসেপশন সিনেমাই দুবার উপস্থিত হয়েছিল। এই দৃষ্টি-বিভ্রম শুধুমাত্র চলচ্চিত্রের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যেতে পারে।[৯]
- ২০১১ সালের আমেরিকান রক ব্যান্ড দ্য স্ট্রোকস এর অ্যালবাম অ্যাঙ্গেলস এর প্রচ্ছদে পেনরোজ সিঁড়ির একটি জটিল সেট চিত্রিত করা হয়েছিল।
- তাদের ২০১৫ সালের সিঙ্গলে যার নাম গ্রীক ট্র্যাজেডি, ইংরেজ রক ব্যান্ড দ্য ওম্ব্যাটস পেনরোজ সিঁড়ি উল্লেখ করেছেন।[১০]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Penrose Stairs। Illusions index। Benedikt Taschen। ১৯৯২। আইএসবিএন 9783822896372। ২৩ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ Torre, Matteo। "Impossible Pictures: When Art Helps Math Education" (পিডিএফ)। Impossible Pictures: When Art Helps Math Education। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "Endless staircase"। Impossible World। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ Penrose ও Penrose 1958, পৃ. 31–33
- ↑ YouTube, ZenoTheRogue, Ascending and Descending in Nil (ইংরেজি ভাষায়), সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৯
- ↑ Ernst 1992, পৃ. 72
- ↑ Ernst, Bruno (1992), The Eye Beguiled: Optical Illusions, Taschen, পৃষ্ঠা ৭১-৭২, আইএসবিএন 3-8228-9637-3
- ↑ Mikkelson, David (৬ মে ২০১৩), FACT CHECK: Escherian Stairwell, Snopes.com
- ↑ Harshbarger, Eric (২০১০-০৮-১৯), The never ending stories inceptions penrose staircase, আইএসএসএন 1059-1028
- ↑ Greek Tragedy
গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Deutsch, Diana (জুলাই ২০১০)। "The Paradox of Pitch Circularity" (পিডিএফ)। Acoustics Today। 6 (3): 8–14। ডিওআই:10.1121/1.3488670। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৬, ২০১১।
- Ernst, Bruno (১৯৯২)। The Eye Beguiled: Optical Illusions। Taschen। আইএসবিএন 3-8228-9637-3।
- Hallyn, Fernand (২০০০)। Metaphor and Analogy in the Sciences। Springer। আইএসবিএন 978-0-7923-6560-0। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৬, ২০১১।
- IllusionWorks (১৯৯৭)। "Impossible Staircase"। জুন ৩০, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৬, ২০১১।
- Penrose, L.S.; Penrose, R. (১৯৫৮)। "Impossible objects: A special type of visual illusion"। British Journal of Psychology। 49 (1): 31–33। ডিওআই:10.1111/j.2044-8295.1958.tb00634.x। পিএমআইডি 13536303।