পেটিট সেরাইল
পেটিট সিরাইল | |
---|---|
স্থানীয় নাম আরবি: السراي الصغير | |
![]() পেটিট সিরাইল | |
অবস্থান | বৈরুত, লেবানন |
নির্মিত | ১৮৮১ |
নির্মাণের কারণ | উসমানীয় প্রশাসন |
স্থপতি | বেশারা এফেন্দি, ইউসুফ খায়াত |
স্থাপত্যশৈলী | অটোমান নতুন শৈলী |
পেটিট সেরাল ( আরবি: السراي الصغير / ALA-LC : আস-সারায়ে আস-সাগির ; আক্ষরিক অর্থে "ছোট সারায় ") ছিল বৈরুতের একটি ঐতিহাসিক প্রশাসনিক অটোমান ভবন যেখানে সিরিয়া এবং বৈরুতের ওয়ালিদের আসন ছিল। এটি বৈরুত কেন্দ্রীয় জেলার প্রাণকেন্দ্রে শহীদ স্কয়ারের উত্তর দিকে অবস্থিত ছিল। ভবনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার দৃশ্য ছিল কিন্তু বৈরুতের প্রধান চত্বর সম্প্রসারণের পরিকল্পনার ফলে ১৯৫০ সালে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। এটি ছিল অটোমান যুগের বেশ কয়েকটি নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে একটি যা বৈরুতে লেবাননের স্থাপত্যকে রূপ দিয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
[সম্পাদনা]১৮৮৪ সালে উদ্বোধন করা পেটিট সেরাইল ১৮৮৮ সালে বৈরুতের গভর্নর জেনারেলের আসন হয়ে ওঠে। ফরাসি ম্যান্ডেটের সময় লেবাননের সরকার এবং রাষ্ট্রপতির আতিথেয়তা করত। ১৯৫০ সালে এটি ধ্বংস করা হয়, তবে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি এর ভিত্তি আবিষ্কৃত ও সংরক্ষিত হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে, বৈরুত কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ আমির আসাফ সারায় বা দার আল-ওয়িলায়া (ভিলায়েতের ভবন) থেকে গভর্নরের আসন স্থানান্তরের কথা ভাবেন। এই মধ্যযুগীয় কাঠামোটি ১৫৭২ সালে তুর্কমেন এমির মনসুর আসাফের পুত্র মোহাম্মদ আসাফ নির্মাণ করেছিলেন।[১][২][৩]
১৮৪০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রিটিশ নৌবহর ইব্রাহিম পাশার সৈন্যদের শহর থেকে তাড়াতে বৈরুতে বোমাবর্ষণ করে। এ্তে পুরাতন সারে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৪][৫] ১৮৪৩ সালে বৈরুতের ওয়ালি আসাদ মুখলেস পাশা ভবনটি পুনরুদ্ধার করেন।
১৮৮২ সালে বৈরুতের সানজাকের প্রশাসনিক বোর্ড একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ আমির আসফ সারা ভবনটি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৮৮২ সালের এপ্রিলে ভবনটি মোহাম্মদ আয়াসের কাছে বিক্রি হয়। এবং পরে সুরসক ও তুয়েইনি পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরিত হয়। পুরোনো সারায়টি ধ্বংস করে সুরসক সুক নির্মাণ করা হয়। নতুন সারায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরে এটি "পেটিট সেরাইল" নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি কিশলা-ই হুমায়ুন (অটোমান ব্যারাক) বা গ্র্যান্ড সেরাইল থেকে আলাদা করার জন্য এই নাম দেওয়া হয়।[৩]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৮৭৮ সালের বৈরুত পৌরসভা প্রকল্প অনুসারে এবং তানজিমাত সংস্কারের পর পেটিট সেরাইলকে একটি নাগরিক কেন্দ্র হিসেবে বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সাহেত আল-বুর্জের উত্তর দিকটি কৌশলগতভাবে নির্বাচিত হয়েছিল, কারণ এটি নতুন বহির্মুখী শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল। বৈরুতের মেয়র ইব্রাহিম ফাখরি বে এই নতুন কাঠামোর দায়িত্ব নেন এবং ১৮৮১ সালে নির্মাণ শুরু হয়।[৬][৭] সিরিয়ার ভিলায়েতের প্রধান প্রকৌশলী বেচারা এফেন্দি আবেদিসিয়ান এবং বৈরুত শহরের প্রকৌশলী ইউসুফ এফেন্দি খায়াত[৩][৭] এ ভবনটি নির্মাণ করেন। তবে প্রকল্পটি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। হামদি পাশা উসমানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। জনসাধারণের ভবনগুলো বন্ধক রাখেন এবং নতুন সেরাইলের অফিস সজ্জিত করার জন্য নতুন কর আরোপ করেন। ১৮৮৩ সালে, সেরাইলের সামনের স্কোয়ারে একটি উদ্যান উদ্বোধন করা হয়। সুলতান আব্দুল হামিদ দ্বিতীয়-এর সম্মানে এর নাম "হামিদিয়ে" রাখা হয়। তবে এটি সাধারণত "মেনশিয়ে উদ্যান" নামে পরিচিত ছিল। [৮] ১৮৮৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার তিন বছর পর পেটিট সেরাইল উদ্বোধন করা হয়।[৬][৯]
ফরাসি ম্যান্ডেটের সময়, নগর পরিকল্পনাবিদ ডি লা হালে, আল-বুর্জ স্কোয়ারের সম্প্রসারণ এবং একটি নতুন সরকারি অফিস কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি স্কোয়ারটিকে সমুদ্রতীরের সাথে সংযুক্ত করতে এবং সাজানো টেরেসের মাধ্যমে খোলার জন্য সেরাইল ধ্বংসের প্রস্তাব দেন। তবে লেবানন স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫০ সালে পেটিট সেরাইল ধ্বংস করা হয়। ১৯৫৩ সালে সেরাইলের জায়গায় রিজেন্ট হোটেল এবং রিভোলি ভবন নির্মিত হয়।[৭] ১৯৯০-এর দশকে সলিডিয়ার রিভোলি এবং রিজেন্ট হোটেল ভবন ধ্বংস করে।[৭] খননকার্যের ফলে পেটিট সেরাইলের ভিত্তি উন্মোচিত হয় যা পরিকল্পিত ভূগর্ভস্থ বৈরুত নগর ইতিহাস জাদুঘরের ভিতরে সংরক্ষণ করা হবে।[১০][১১]
স্থাপত্য
[সম্পাদনা]
পেটিট সেরাইল একটি মিশ্র পাশ্চাত্য শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল। যেখানে বারোক স্থাপত্যের উপাদানগুলোর সাথে উসমানীয় স্থাপনার বৈশিষ্ট্য মিশ্রিত ছিল।[৬][৭] দোতলা ভবনটির মূল কাঠামো একটি উঁচু ভিত্তির ওপর নির্মিত হয়েছিল। আয়তাকার সম্মুখভাগ বেলেপাথরে নির্মিত এবং নিও-বারোক জানালা ও উপাদানে সজ্জিত ছিল। প্রধান প্রবেশদ্বারটি একটি বিশাল মার্বেল ফটক দ্বারা বেষ্টিত ছিল। ছাদের পুরো পৃষ্ঠে একটি দাঁতযুক্ত কর্নিস ছিল। কোণায় ছোট ছোট বুরুজ (বার্টিজান) দ্বারা ঘেরা ছিল। এটি দেখলে মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় দুর্গের কথা মনে পড়ে। সম্মুখভাগের কেন্দ্রীয় অক্ষে একটি বড় অলংকৃত গ্যাবল ছিল। এটি ঘূর্ণায়মান নকশা এবং একটি ঘড়ি দিয়ে সজ্জিত ছিল। কাঠামোটির আয়তন ছিল ৩৫০০ বর্গ কিউবিট এবং এতে প্রায় ৮০টি কক্ষ ছিল।[৩]
সময়রেখা
[সম্পাদনা]১৮৭৮: বৈরুত পৌরসভা কর্তৃক সাহাত আল-বুর্জ (পরে শহীদ স্কোয়ার) আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা।
১৮৮১: সেরাইল নির্মাণের জন্য অটোমান কর্তৃপক্ষের অনুমোদন।
১৮৮৮: সেরাইল ওলিদের আবাসস্থলে পরিণত হয়।
ফরাসি ম্যান্ডেট: কর্তৃপক্ষের আসন গ্র্যান্ড সেরাইলে স্থানান্তরিত হয় যখন পেটিট সেরাইলে লেবাননের রাষ্ট্রপতি এবং সরকার থাকত।
১৯৫০: শহীদ স্কয়ারকে সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্যে পেটিট সেরাইল ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
১৯৫০ এর দশক: রিভোলি সিনেমা নির্মিত হয়েছিল।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি: পেটিট সেরাইলের ভিত্তি আবিষ্কৃত ও সংরক্ষিত হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Abu Husayn, Abdul Rahim (২০০৪)। The View from Istanbul: Ottoman Lebanon and the Druze Emirate। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 92। আইএসবিএন 978-1-86064-856-4।
- ↑ Hallak, Hassan (২০১০)। الجذور الأولى للواقع الإسلامي القائمة على التفقّه والتديّن والتعبّد الجوامع والمساجد في باطن بيروت منذ موقعة اليرموك (আরবি ভাষায়)। حزب الحوار الوطني। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২০।
- ↑ ক খ গ ঘ Fakhoury, Abdellatif (২০১২-১২-২২)। سرايات بيروت: السر في السكان (আরবি ভাষায়)। aliwaa.com। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৭।
- ↑ Kassir, Samir; M. B. DeBevoise (২০১০)। Beirut। University of California Press। পৃষ্ঠা 89, 102। আইএসবিএন 978-0-520-25668-2।
- ↑ Fakhoury, Adellatif (২০১২-১২-২১)। سـرايات بيروت: السر في السكان 1/2। اللواء। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২০।
- ↑ ক খ গ Hanssen, Jens (২০০৫)। Fin de Siècle Beirut: The Making of an Ottoman Provincial Capital। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 243। আইএসবিএন 978-0-19-928163-3।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Yacoub, Gebran (২০০৩)। Dictionnaire de l'architecture au Liban au XXème siècle। alphamedia।
- ↑ Jidejian, Nina। "Place des Canons"। Old Beirut। almashriq। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১২।
- ↑ Hallak, Hassaan। المؤسّسات والمنشآت الحكوميّة العثمانيّة في بيروت سرايات ومشافي وحدائق وثكنات لا تزال قائمة حتى اليوم (আরবি ভাষায়)। alhiwar.info। ৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৭।
- ↑ Volk, Lucia (২০১০)। Memorials and Martyrs in Modern Lebanon। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 109। আইএসবিএন 978-0-253-00492-5।
- ↑ Solidere (২০০৯)। "New real estate concepts" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩।