পিটার ইনগ্রাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পিটার ইনগ্রাম
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামপিটার জন ইনগ্রাম
জন্ম (1978-10-25) ২৫ অক্টোবর ১৯৭৮ (বয়স ৪৫)
হয়েরা, তারানাকি, নিউজিল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৪৫)
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বনাম বাংলাদেশ
শেষ টেস্ট১৯ মার্চ ২০১০ বনাম বাংলাদেশ
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৫৮)
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বনাম বাংলাদেশ
শেষ ওডিআই১৯ আগস্ট ২০১০ বনাম শ্রীলঙ্কা
টি২০আই অভিষেক
(ক্যাপ ৪২)
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বনাম বাংলাদেশ
শেষ টি২০আই২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০১ - ২০১১সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই টি২০আই এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৭২
রানের সংখ্যা ৬১ ১৯৩ ২২ ৪,৭১১
ব্যাটিং গড় ১৫.২৫ ২৭.৫৭ ১১.০০ ৩৭.৯৯
১০০/৫০ ০/০ ০/১ ০/০ ১৩/১৮
সর্বোচ্চ রান ৪২ ৬৯ ২০* ২৪৭
বল করেছে ৯৬
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/– ৩/– ১/– ৪৪/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

পিটার জন ইনগ্রাম (ইংরেজি: Peter Ingram; জন্ম: ২৫ অক্টোবর, ১৯৭৮) তারানাকির হয়েরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১০-এর দশকের সূচনালগ্নে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন পিটার ইনগ্রাম

ঘরোয়া ক্রিকেট[সম্পাদনা]

ক্রিকেটে সফলতা লাভের পাশাপাশি রাগবি খেলায় নিজ শহরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে, যাচাইবাছাইয়ের খেলায় তার চোয়াল ভেঙ্গে গেলে তিনি রাগবি খেলা ছেড়ে দেন।[১] ২০০১ সাল থেকে সেন্ট্রাল স্ট্যাগসের পক্ষে খেলছেন। জেমি হাউয়ের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন।

২০০৯-১০ মৌসুমের এইচআরভি কাপের চূড়ান্ত খেলায় দূর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। নিউ প্লাইমাউথে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের সদস্যরূপে ৩৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। অকল্যান্ডের বিপক্ষে ঐ খেলায় তার দল জয়লাভ করে ও শিরোপা জয় করে।[২]

সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের পক্ষে এইচআরভি কাপ টি২০ প্রতিযোগিতায় নিজস্ব শেষ খেলায় পিটার ইনগ্রাম ৫৪ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করেন। নিউ প্লাইমাউথে অকল্যান্ডের বিপক্ষে ঐ খেলায় জেমি হাউয়ের (১০২) সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ২০১ রান তুলেন।[৩] তাদের সংগৃহীত ২০১ রানের উদ্বোধনী জুটি ঐ সময়ে টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ছিল।[৪][৫]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

তার ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই বীরেন্দ্র শেওয়াগের অনুরূপ ছিল। খুব কমই পা নড়াচড়া করতেন। তার ব্যাটিংয়ের উত্তরণে বীরেন্দ্র শেওয়াগ যথেষ্ট সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন বলে তিনি জানান।[৬] ২০০১-০২ মৌসুম থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পিটার ইনগ্রামের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান পিটার ইনগ্রাম ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রায় এক দশক সরব ছিলেন। পরিচ্ছন্ন ব্যাটিংয়ের অধিকারী হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ব্যাপক রান সংগ্রহ করেন। কয়েক বছর সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের পক্ষে খেলেন।

২০০৬-০৭ মৌসুমে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। ছয় শতাধিক রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তিনি। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ৬৩.৮০ গড়ে ৯৬৩ রান তুলেন। এ সংগ্রহটিই তার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সংগ্রহ হিসেবে চিত্রিত হয়। পরের মৌসুমে প্লাঙ্কেট শীল্ডে ৭৫.৭১ গড়ে ৫৩০ রান তুলেন। একটি খেলায় সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস ৪৪৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয়। প্রথম উইকেটে জেমি হাউয়ের সাথে বিস্ময়করভাবে ৪২৮ রান তুলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ২৪৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।

মার্চ, ২০০৯ সালের শেষদিকে পিটার ইনগ্রাম ১৬৬ রানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে জেমি হাউয়ের সাথে ১৫৯ ও জর্জ ওয়াকারের সাথে ১১৫ রানের জুটি গড়েন। এরফলে, ক্যান্টারবারির বিপক্ষে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের জয়ে ভূমিকা পালন করেন। তার দল স্টেট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় অবতীর্ণ হয় ও অকল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা জয়ী হয়।[৭][৮] এরপর তিনি ২৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। জেমি হাউয়ের সাথে ৪২৮ রানের জুটি গড়েন। এ সংগ্রহটি নিউজিল্যান্ডে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের উদ্বোধনী জুটিতে নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি করে। এরফলে, ওয়েলিংটনের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিতভাবে জয়ী হয় তার দল।[৯]

ঘরোয়া ক্রিকেটে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে সীমিত ওভারের খেলায় তাকে নিউজিল্যান্ড দলে রাখা হয়। এ পর্যায়ে তার বয়স ছিল ৩১।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্ট, আটটিমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিক ও তিনটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন পিটার ইনগ্রাম। সবগুলো টেস্টই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে হ্যামিল্টনে সফরকারী বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ১৯ মার্চ, ২০১০ তারিখে ওয়েলিংটনে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

নিউজিল্যান্ড এ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন পিটার ইনগ্রাম। জানুয়ারি, ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০/২০ ও ওডিআই সিরিজ খেলার জন্যে ব্ল্যাক ক্যাপসদের সদস্যরূপে মনোনীত হন। তন্মধ্যে, অভিষেক ওডিআইয়ে ৬৯ রান সংগ্রহ করেন তিনি। পরবর্তীতে, এ সংগ্রহটিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ সংগ্রহরূপে চিত্রিত হয়ে যায়। পরের মাসে টেস্ট দলে ঠাঁই হয় তার। দূর্বলতর ক্রীড়া প্রদর্শনকারী ড্যানিয়েল ফ্লিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।[১০] অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যেও তাকে দলে রাখা হয়। তবে, তিনি কোন প্রভাব রাখতে পারেননি তিনি। দলে ফিরে আসা ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দলীয় সঙ্গী ম্যাথু সিনক্লেয়ারকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে ত্রি-দেশীয় সিরিজ খেলার জন্যে তাকে পুনরায় নিউজিল্যান্ড দলে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। এ পর্যায়ে দলে জেসি রাইডারের কনুঁইয়ে আঘাতপ্রাপ্তি ও আরন রেডমন্ডের অনুপস্থিতি ছিল।[১১] এটিই তার শেষবারের মতো কোন আন্তর্জাতিক সিরিজে অংশগ্রহণ ছিল। এ সিরিজের পর তাকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়।

অবসর[সম্পাদনা]

২০১১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। বিশ্বকাপের দলে তাকে রাখা হয়নি ও এরপর আর কোন আমন্ত্রণ না জানানোর কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। এ সময়ে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে তৃতীয় সর্বোচ্চ গড় রানের অধিকারী ছিলেন।[১২] ৯ মার্চ, ২০১২ তারিখে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন পিটার ইনগ্রাম। ক্রমাগত আঘাত ও স্বীয় পরিবারকে সঙ্গ দেয়ার উদ্দেশ্যেই তার এ অবসর গ্রহণ।[১৩] তাসত্ত্বেও, তিনি হক কাপে তারানাকি দলের পক্ষে খেলছেন। নিয়মিতভাবে বোলিং কর্মে অগ্রসর হওয়াসহ মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। তার দুই পুত্র রয়েছে। নিউ প্লাইমাউথের ফ্রান্সিস ডগলাস মেমোরিয়াল কলেজে টেকনোলজি বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে ওয়াইতারা হাই স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। ২০১৪ সালে ট্রাক্টর দূর্ঘটনায় পতিত হন। এক সপ্তাহ তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন।[১৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Staff, ESPNCricinfo (৯ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "The dark horses of Champions League 2010"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  2. Staff, ESPNCricinfo (৩১ জানুয়ারি ২০১০)। "HRV Cup, Final: Central Districts v Auckland at New Plymouth, Jan 31, 2010"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  3. Staff, ESPNCricinfo (৩১ জানুয়ারি ২০১০)। "HRV Cup, Final: Central Districts v Auckland at New Plymouth, Jan 31, 2010"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  4. "How, Ingram maul Wellington in big win"Cricinfo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-০৪ 
  5. "Records | Twenty20 matches | Partnership records | Highest partnerships by wicket | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-০৪ 
  6. Ravindran, Siddarth (২২ আগস্ট ২০১০)। "Peter Ingram credits Virender Sehwag for turnaround"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  7. Staff, ESPNCricinfo (২৪ মার্চ ২০০৯)। "State Championship, Central Districts v Canterbury at New Plymouth, Mar 21–24, 2009"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  8. Staff, ESPNCricinfo (১০ এপ্রিল ২০০৯)। "State Championship, Final: Auckland v Central Districts at Lincoln, Apr 6–10, 2009"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  9. Staff, ESPNCricinfo (১৫ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Ingram and How make history"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  10. Staff, ESPNCricinfo (১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Three uncapped players in New Zealand Test squad"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  11. Staff, ESPNCricinfo (২২ জুলাই ২০১০)। "Ingram given another chance by New Zealand"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  12. Staff, ESPNCricinfo (৪ জানুয়ারি ২০১১)। "Peter Ingram believes international career is over"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  13. Staff, ESPNCricinfo (৯ মার্চ ২০১২)। "Peter Ingram retires from first-class cricket"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 
  14. Bird, Tony (১১ ডিসেম্বর ২০১৪)। "Peter Ingram bowled over by his tractor"Stuff। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৫ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]