পার্থ ঘোষ (আবৃত্তিকার)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পার্থ ঘোষ
জন্ম
পার্থ ঘোষ

(১৯৪০-১২-৩১)৩১ ডিসেম্বর ১৯৪০
মৃত্যু৭ মে ২০২২(2022-05-07) (বয়স ৮১)
পেশাআবৃত্তিকার, বাচিক শিল্পী
কর্মজীবন১৯৬৪ - ২০২২
দাম্পত্য সঙ্গীগৌরী ঘোষ
সন্তানঅয়ন ঘোষ (পুত্র)
পুরস্কারবঙ্গভূষণ (২০১৮)

পার্থ ঘোষ (৩১ ডিসেম্বর ১৯৪০ [১] - ৭ মে ২০২২) ছিলেন একজন খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি আবৃত্তিকার তথা বাচিক শিল্পী। তিনি ও তার স্ত্রী গৌরী ঘোষ বাংলা আবৃত্তি জগতে ছিলেন অন্যতম জুটি।[২] বাংলা কবিতা আবৃত্তিতে এক অন্য ধারা এনেছিলেন তিনি। রবীন্দ্র কবিতা পাঠে তার কণ্ঠ ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আবৃত্তিশিল্পী হিসাবে সমাদৃত হয়েছেন দেশে বিদেশে সর্বত্র। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের "বঙ্গভূষণ"সম্মাননা লাভ করেন।[৩]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

পার্থ ঘোষের জন্ম ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর বৃটিশ ভারতের কলকাতায়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বাংলা কবিতা আবৃত্তি তার প্রধান আগ্রহের বিষয় হয়ে যায়।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে উপস্থাপক-ঘোষক হিসাবে যোগদানের পর ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের পয়লা জানুয়ারি তিনি স্থায়ী কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হন। নিয়মিত অন্যান্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি শিশু ও কিশোরদের জন্য "গল্পদাদুর আসর" পরিচালনা করতেন। দীর্ঘ সময় তিনি ছিলেন শিশু ও কিশোরদের 'গল্পদাদু'।[১] ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আকাশবাণীরই উপস্থাপিকা-ঘোষক আবৃত্তিকার গৌরী মজুমদারকে বিবাহ করেন।১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আকাশবাণীর "বিবিধ ভারতী" বিভাগে যোগদান করেন এবং ২০০০ খ্রিস্টাব্দে অবসরের আগে পর্যন্ত ওই বিভাগে কর্মরত ছিলেন।[৩] প্রায় তিন দশকের বেশী সময় ধরে কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত আকাশবাণীর অনেক অনুষ্ঠানে বাংলার শ্রোতারা শুনেছেন সুস্নাত ব্যক্তির কণ্ঠে সুরম্য উপস্থাপনা। ১৯৭৩-৭৪ খ্রিস্টাব্দ হতেই তিনি ও তার স্ত্রী গৌরী ঘোষ আবৃত্তিচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। জনপ্রিয় জুটি দীর্ঘ কয়েকদশক ধরে দেশে বিদেশে সুনামের সঙ্গে আবৃত্তি পরিবেশন করেছেন। তারা আবৃত্তি ও শ্রুতিনাটককে এক অনন্য মাত্রায় পৌছে দেন। তাঁদের যৌথ শ্রুতি নাটক ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ’ জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে সেসময়। [৪] পার্থ ঘোষের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের 'শেষ বসন্ত' যেমন সমাদৃত হয়েছিল তেমনই জনপ্রিয় হয়েছিল 'দেবতার গ্রাস'। স্ত্রী গৌরীর সঙ্গে তার শ্রুতিনাটক 'প্রেম', 'স্বর্গ থেকে নীল পাখি', 'জীবনবৃত্ত' বাংলার শ্রোতাদের হৃদয়ে অম্লান। বাংলা কবিতা নিয়ে তাদের একাধিক সিডি-ক্যাসেট রয়েছে।[৫] তিনি পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও ছিলেন।

রবীন্দ্র গবেষণায় তার আগ্রহ ছিল। সম্পাদনা করেছেন কবিতা বিষয়ক গ্রন্থ। এছাড়া পার্থ ঘোষের শখ ছিল পুতুল সংগ্রহের। দেশ বিদেশের নানান পুতুল ছিল তার সংগ্রহে।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

তার অনবদ্য আবৃত্তি বাংলার শ্রোতাদের হৃদয়ে যে অনুভূতি জাগ্রত করে তারই স্বীকৃতি স্বরূপ পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে "বঙ্গভূষণ" সম্মাননা প্রদান করে।[৩]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট তার স্ত্রী প্রয়াত হলে প্রায়শই অসুস্থতার মধ্যেই ছিলেন। কয়েকদিন আগে অসুস্থতার কারণেই হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন, গলায় অস্ত্রোপচার হয় এবং সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু অকস্মাৎ ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে'র ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [৬]

পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষের জীবন আধারিত তথ্যচিত্র - এমন তরণী বাওয়া মুক্তি পায় গৌরী ঘোষের জন্মদিন উপলক্ষ করে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতার মধুসূদন মঞ্চে। [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]