পারসিক স্তম্ভ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পার্সেপোলিস-এর একটি স্তম্ভের ঊর্ধ্বাংশ

পারসিক স্তম্ভ বা পারসেপলিটান স্তম্ভ প্রাচীন পারস্যের হাখমানেশি স্থাপত্যশৈলীর কলামের অনন্য রূপ, যা প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে প্রথম প্রচলিত হয়। মূলত পার্সেপোলিস নগর হতে এসব স্তম্ভের খোঁজ পাওয়া যায়, যেখানকার বেশিরভাগ স্তম্ভে একটি ভিত্তি, খাঁজযুক্ত দণ্ডাকার অংশ এবং দুটি প্রাণী (অধিকাংশ ক্ষেত্রে বলদ) সংবলিত চূড়া থাকে।[১] হাখমানেশি প্রাসাদসমূহে হাইপোস্টাইল হলঘর অপদন দেখা যায়, যেগুলোয় অসংখ্য স্তম্ভের সারি থাকে। হাখমানেশি সম্রাট আর্তাক্সেরক্সেস ১ পার্সেপোলিস নগরে ৭০x৭০ মিটার আয়তনের সিংহাসন বা "শত স্তম্ভের হল" নির্মাণ করেন। তবে হাখমানেশি হল এর চেয়েও বৃহৎ হয়ে থাকে। এরকম সভাগৃহে সাধারণত রাজার জন্য একটি সিংহাসন বিদ্যমান থাকত; যা বৃহৎ আনুষ্ঠানিক সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হত। পার্সেপোলিস ও সুসা নগরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সভাগৃহে একসাথে দশ হাজার লোক অংশ নিতে পারত।[২]

হাখমানেশিয়দের পাথুরে স্থাপত্যকলায় সামান্য অভিজ্ঞতা ছিল, তবে গ্রীক, মেসোপটেমিয়া, মিসর, আনাতোলিয়ার লিডিয়া, ইলম প্রভৃতি স্থানের স্থাপত্যে প্রভাবিত হয়ে অন্যান্য পার্শ্ববর্তী দেশ হতে শিল্পী ও কারিগর পারস্যে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল। এই স্থাপত্যরীতি সম্ভবত সুসায় দারিয়াশের প্রাসাদে বিকশিত হয়, তবে অধিকাংশ টিকে থাকা স্তম্ভ এখন পার্সেপোলিসে র‍য়েছে।[১] ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান আলেকজান্ডারের আক্রমণে পার্সেপোলিস ধ্বংস হওয়ার পর এমন স্থাপত্যরীতির চর্চা বন্ধ হয়ে যায়।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

একটি আদর্শ পারস্য স্তম্ভের সম্মুখদৃশ্য, পার্শ্বদৃশ্য ও উপরিদৃশ্য

বিভিন্ন দালানে স্তম্ভ ও চূড়ার মধ্যে রকমফের দেখা যায়। সাধারণত স্তম্ভের চূড়ায় দুটি সুসজ্জিত বিপরীতমুখী প্রাণীর প্রতিকৃতি থাকে যা স্তম্ভের বাহিরের দিকে মুখ করে থাকে। এ অংশটি বন্ধনীর মত কাজ করে যা মাথাল বা ছাদ কাঠ ধরে রাখে, তাছাড়া প্রাণীর পৃষ্ঠদেশ উল্লম্বভাবে স্থাপিত কাঠ ধরে রাখতে পারে (নিচে লুভ্‌রের পুনর্গঠন দেখুন)। প্রাণীর শিরোভাগ থাকায় একে প্রোটোম ধরনের শিল্প বলা যায়। প্রাণীদের মধ্যে ষাঁড় অধিক প্রচলিত, তবে সিংহ, মানুষের মুখযুক্ত বৃষ আসিরীয় লামাসু[৩] এবং ঈগলের মুখওয়ালা সিংহশরীরযুক্ত গ্রিফিনও দেখা যায়।[৪]

বৃষ এবং সিংহ সম্ভবত বাসন্ত বিষুবের সময় পারস্য নববর্ষ নওরোজ-এর প্রতীক। এক্ষেত্রে যুদ্ধরত বৃষ চন্দ্রের এবং সিংহ সূর্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এই দিনে করদাতাগণ রাজার প্রতি তাদের বার্ষিক প্রদেয় নিবেদন করতেন এবং পার্সেপোলিসের সোপানে খোদাইকৃত চিত্রানুযায়ী পার্সেপোলিসকে বিশেষভাবে নওরোজ উদযাপনের জন্য নির্মিত বলে মনে করা হতো।[৫]

পারস্য স্তম্ভের চূড়া অন্যান্য স্তম্ভের তুলনায় দৈর্ঘ্যে বড়। মনে করা হয় পাথরের পূর্বে কাঠ দিয়ে স্তম্ভ বানানো হত।[৪] যখন বড় বড় ভবনের জন্য যথেষ্ট উঁচু গাছের স্বল্পতা দেখা দেয়, তখন থেকে পাথরের স্তম্ভ বানানো শুরু হয়। স্তম্ভের দণ্ডাকার অংশ ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। স্তম্ভ কাঠের হলেও ভিত্তি সর্বদা পাথরের হয়, যেখানে প্রায়ই নির্মাণকর্তা রাজার নাম খোদাই করা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিত্তি গোলাকার হয়, তবে বর্গাকারও হতে পারে।[৪]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

টিকা[সম্পাদনা]

  1. Curtis, 52–54; Boardman, 13–14
  2. Schmitt
  3. Examples are in Chicago and Teheran (links to images).
  4. Curtis, 51
  5. Mousavi, Ali, Persepolis: Discovery and Afterlife of a World Wonder, p. 53, 2012, Walter de Gruyter, আইএসবিএন ১৬১৪৫১০৩৩৪, 9781614510338, google books; Schmitt
  6. Grigor, 64

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]