পায়রা সেতু

স্থানাঙ্ক: ২২°২৭′৫৯″ উত্তর ৯০°২০′১৯″ পূর্ব / ২২.৪৬৬৩৯° উত্তর ৯০.৩৩৮৬৩° পূর্ব / 22.46639; 90.33863
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পায়রা সেতু
স্থানাঙ্ক ২২°২৭′৫৯″ উত্তর ৯০°২০′১৯″ পূর্ব / ২২.৪৬৬৩৯° উত্তর ৯০.৩৩৮৬৩° পূর্ব / 22.46639; 90.33863
বহন করেপণ্যবাহী গাড়ি, মটর বাইক, বাস, চার চাকার গাড়ি
অতিক্রম করেপায়রা নদী
স্থানলেবুখালী-পটুয়াখালী, বরিশাল বিভাগ
দাপ্তরিক নামপায়রা সেতু
অন্য নামলেবুখালী সেতু
বৈশিষ্ট্য
নকশাবক্স গার্ডার সেতু (একস্ট্রাডোজ সেতু)
উপাদানকংক্রিট, ইস্পাত, দড়ি
মোট দৈর্ঘ্য১,৪৭০ মিটার (৪,৮২০ ফু)
প্রস্থ১৯.৭৬ মিটার (৬৪.৮ ফু)
উচ্চতা১৮.৩০ মিটার (৬০.০ ফু)
দীর্ঘতম স্প্যান২০০ মিটার (৬৬০ ফু)
ইতিহাস
নির্মাণ শুরুজুলাই ২০১৬
নির্মাণ শেষঅক্টোবর ২০২১
চালু২৪ অক্টোবর ২০২১
অবস্থান
মানচিত্র

পায়রা সেতু বাংলাদেশের একটি সড়ক সেতু যা পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১,৪৭০ মিটার (৪,৮২০ ফুট)। এ সেতু নির্মাণের পর থেকে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১১১.৫ কিলোমিটার যাত্রাপথে ফেরি পারাপারের প্রয়োজন সমাপ্ত হয়।

ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় পায়রা সেতু। এ সেতু দ্বারা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল জেলাপটুয়াখালী জেলা যুক্ত হয়। পটুয়াখালী ও রাজধানী ঢাকার মধ্যে সড়ক সংযোগে এই সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হয়।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কটি কুয়াকাটা অবধি বিস্তৃত। ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে এটি। ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত বিভিন্ন নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে সড়ক পথে যেতে কোথাও জনগণকে ফেরিতে পারাপার হতে হয় না। কিন্তু পায়রা নদীতে ফেরি ছাড়া পটুয়াখালী যাওয়া অসম্ভব ছিলো। এতে সময়ের সঙ্গে অর্থেরও অপচয় হতো। তাই বাংলাদেশ সরকারের সড়ক ও জনপথ অধিদফতর পায়রা সেতু নির্মাণের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করে। এ প্রকল্পে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে বাকেরগঞ্জদুমকী উপজেলার লেবুখালী নামক স্থানে পায়রা নদীর ওপর এ সেতুটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১২ সালের ৮ মে একনেক সভায় প্রকল্পটি সরকারের অনুমোন লাভ করে। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা অর্থাৎ কুয়েত ফান্ড থেকে ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকার জোগাবে ৭৭ কোটি ৩ লাখ টাকা।

প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে ২০১৫ সালের ৩১ মে ব্যয় প্রাাক্কলন বাড়িয়ে ৪১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১৭ সালে আবার এই সেতু নির্মাণে গতি আসে সেতু নির্মাণ সংস্থার দরপত্র গ্রহণের মাধ্যমে। সরকার থেকে বলা হয় এই সেতু নির্মাণ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। সেতু নির্মাতা ঠিকাদার ‍নিযুক্ত হলে সেতু নির্মাণের প্রকৃত কাজ শুরু হবে। তবে আবারও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। দ্বিতীয় দফা সংশোধিত ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ব্যয় বাড়ে ৮৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সময় বাড়ানো হয় ৪ বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।

নির্মাণ[সম্পাদনা]

২০১৮ সালে নির্মাণাধীন পায়রা সেতু

২০১৩ সালের ১৯শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী সফরে এসে লেবুখালীতে পায়রা নদীর দক্ষিণ পারে ফেরিঘাটে চার সড়কবিশিষ্ট পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে এরপর দীর্ঘ কাল সেতু নির্মাণের কাজে অগ্রগতি হয় নি। ২০১৭ সালে আবার এই সেতু নির্মাণে গতি আসে সেতু নির্মাণ সংস্থার দরপত্র গ্রহণের মাধ্যমে। [২]

নির্মাণ ব্যয়[সম্পাদনা]

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৪৪৭ দশমিক ২৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়, যা মূল ব্যয়ের চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ বেশি। নির্মাণে অর্থায়ন করেছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। নির্মাণকাজ করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন। এ ছাড়া, প্রকল্পটি শেষ করতে নির্ধারিত সময়সীমার চেয়ে ৫ বছর বেশি সময় লাগে।[৩]

বিবরণ[সম্পাদনা]

বুড়িশ্বর-পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১৪৭০ মিটার অর্থাৎ দেড় কিলোমিটারের কিছু কম। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা যুক্তকারী এ সেতু চার সড়কবিশিষ্ট। নদীর পানির উপরিতল থেকে সেতুর অবস্থান ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে। কর্ণফুলি সেতুর মতোই পায়রায় ২০০ মিটার স্প্যান ব্যবহৃত হয়। এই স্প্যান দৈর্ঘে পদ্মা সেতুর স্প্যানের চেয়েও লম্বা। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়। ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের পাইল ১৩০ মিটার গভীর। এটি দেশের নদীতে গভীরতম পাইল। উভয় পাড়ে ৭ কিলোমিটার জুড়ে নির্মাণ করা হয় সংযোগ সড়ক। পিলারের পাশে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপত্তা পিলার। উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সেতুতে ‘সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণব্যবস্থা’ স্থাপন করা হয়। এতে বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হলে আগেভাগেই সংকেত পাওয়া যাবে।[৪]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]