পাকিস্তান মুসলিম লীগ (১৯৬২–১৯৮৫)
পাকিস্তান মুসলিম লীগ پاکستان مسلم لیگ | |
---|---|
ঐতিহাসিক নেতৃবৃন্দ | নুরুল আমিন সৈয়দ শাহ মর্দান শাহ-২য় আব্দুল কাইয়ুম খান |
প্রতিষ্ঠা | ৮ জুন ১৯৬২ |
ভাঙ্গন | ১৫ মার্চ ১৯৭১ |
পূর্ববর্তী | মুসলিম লীগ |
ভাবাদর্শ | সংখ্যাগরিষ্ঠতা রক্ষণশীলতা অর্থনৈতিক উদারতাবাদ রাজস্ব রক্ষণশীলতা জাতীয়তাবাদী মধ্যপন্থী Pro-presidency Pro-Parliament |
পাকিস্তানের রাজনীতি |
সংবিধান |
---|
পাকিস্তান মুসলিম লীগ (উর্দু: پاکستان مسلم لیگ; পিএমএল হিসাবে পরিচিত), পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম যারা ১৯৬০ এর দশক থেকে পাকিস্তানে রক্ষণশীল-ডানপন্থী রাজনীতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। ১৯৬২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান মূল মুসলিম লীগের উত্তরসূরি হিসাবে প্রথম "পাকিস্তান" মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের পরেই দলটি কনভেনশন মুসলিম লীগ এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ নামে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। কনভেনশন মুসলিম লীগ রাষ্ট্রপতি হিসেবে জেনারেল আইয়ুব খান এবং নতুন সংবিধানকে সমর্থন করে। অন্যদিকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নতুন সংবিধানকে বিরোধিতা তথা জেনারেল আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করে।[১] রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের পদত্যাগের পরে মুসলিম লীগের প্রবীণ ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতা নুরুল আমিন পাকিস্তান মুসলিম লীগের দলগুলিকে পুনরায় একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কেউ কেউ তার এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন হলেও অনেকেই এর বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে কাউন্সিল মুসলিম লীগের সিনিয়র নেতা আবদুল কাইয়ুম খান কাইয়ুম মুসলিম লীগ নামে তার নিজস্ব ধারার একটি মুসলিম লীগ গঠন করেন। তিনি এবং তার দল কোনো না কোনো সময়ে স্বৈরতন্ত্র তথা একনায়কতন্ত্রকে সমর্থনকারী দলের সাথে সহযোগিতা কিংবা একসাথে কাজ করার বিরোধিতা করে। পাকিস্তানের ভাঙ্গনের (বাংলাদেশের স্বাধীনতা) পর ১৯৭৩ সালে নুরুল আমিনের প্রচেষ্টা সফল হয় এবং ফাংশনাল মুসলিম লীগ (পিএমএল-এফ) প্রতিষ্ঠিত হয়।
পিএমএল-এফ এবং আব্দুল কাইয়ুম খান নেতৃত্বাধীন পিএমএল-কাইয়ুম উভয় দলই ভুট্টো প্রশাসনের অধীনে সংঘবদ্ধ হয় এবং এর অনেক সদস্য বামপন্থী পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগদান করে।
১৯৭৭ সালে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হলে অন্যান্য দলের মত পাকিস্তান মুসলিম লীগও আনুষ্ঠানিকভাবে বিলীন হয়ে যায়। যদিও পাকিস্তান মুসলিম লীগ সামরিক আইন জারির প্রতি সমর্থন করেছিল।
তবে ১৯৮৫ সালে জেনারেল জিয়া-উল-হক মুহাম্মদ খান জুনজোর নেতৃত্বে তার সমর্থকদের একটি আনুষ্ঠানিক দলে সংগঠিত করার পর দলটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে জিয়া-উল-হক জুনেজোকে বরখাস্ত করলে এবং দলটি পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগের (জে)-এর মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়।
একই বছর জিয়া-উল-হকের মৃত্যুর পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বে আসে এবং দলটি ইসলামী গণতান্ত্রিক জোটে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে জোটের ভাঙ্গন এবং ১৯৯৯-এর অভ্যুত্থানের পরে, পিএমএল-এন একটি অস্থায়ী পতনের দিকে যায়। ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ভেঙ্গে তিনটি নতুন উপদলের (পরবর্তীতে দল) সৃষ্টি হয়। এগুলো হল মোশাররফ-বিরোধী পিএমএল (জিয়া), মোশাররফপন্থী-রক্ষণশীল আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং মোশাররফপন্থী-উদারপন্থী পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কিউ) (পিএমএল-কিউ)।
২০০৪ সালে পিএমএল-কিউ এবং পিএমএল-এফ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পাকিস্তান মুসলিম লীগ হিসাবে পুনরায় একত্রিত হয়েছিল। যদিও তাদের এই পুনর্মিলনী পুরোপুরি ভাবেই ব্যর্থ হয়েছিল কারণ কয়েকদিনের মধ্যেই উভয় দল আবার পৃথক যাত্রা শুরু করে।
মূল দল
[সম্পাদনা]প্রথম পর্ব (১৯৬২-১৯৬৯)
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় পর্ব (১৯৬৯-১৯৭৭)
[সম্পাদনা]রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খানের পদত্যাগের পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ আবারও রক্ষণশীল প্রবীণ বাঙালি নেতা নুরুল আমিনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। যদিও উপদলগুলো আদর্শগতভাবে অনেক নিকটে এসেছিল কিন্তু তারা একে অপরের আধিপত্য মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে উপদলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। নুরুল আমিনের মৃত্যুর পরে পাকিস্তান মুসলিম লীগ রাজনৈতিক পাতালে চলে গিয়েছিল। তবে ভুট্টো প্রশাসনের অধীনে দেশে জাতীয়করণ এবং দেশে বামপন্থার প্রসারের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হিসাবে দলটি পুনরায় প্রত্যাবর্তন করে।
১৯৭০ এর দশকে পীর পাগরার নেতৃত্বাধীন পিএমএল নওয়াজ শরীফ এবং সুজাত হুসেন সহ শিল্পপতি এবং ফিদা মোহাম্মদ এবং জাভেদ হাশমির মতো বুদ্ধিজীবীদের আর্থিক এবং অন্যান্য সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় লাভবান হয়েছিল।
১৯৮০-এর দশকে বামপন্থী পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) তীব্র বিরোধিতা করার দলে পীর পাগরার প্রচেষ্টায় পাকিস্তান মুসলিম লীগের বেশিরভাগ দল-উপদলকেই একীভূত করেছিল। তবে লক্ষণীয় যে সব দলই তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় অব্যাহত রেখে পাকিস্তান মুসলিম লীগকে (পিএমএল) তাদের একত্রিত হওয়ার মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেছিল।
তৃতীয় পর্ব (১৯৭৭–১৯৮৫)
[সম্পাদনা]১৯৭৭ সালে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে জেনারেল জিয়া-উল-হক ভুট্টো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে নির্বাচনের পর জিয়া-উল-হক মুহাম্মদ খান জুনেজোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। মুহাম্মদ খান জুনেজো জিয়াপন্থী রক্ষণশীলদের একটি বিশাল অংশ নিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন। জুনেজো অবশ্য শীঘ্রই জিয়ার বিরোধিতার কারণে দলের সমর্থন হারাতে শুরু করেছিলেন। এরমধ্যে নওয়াজ শরীফ এবং ফিদা মোহাম্মদ খানের মতো অন্যান্য প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও ক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করেছিলেন।
১৯৮৮ সালে জিয়া-উল-হকের মৃত্যুর পর গণতন্ত্র ফিরে আসে এবং একই বছর পাকিস্তানের নতুন সাধারণ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। মুহাম্মদ খান জুনেজো দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (জে) গঠন করেন। অন্যদিকে ফিদা মূল দলের চেয়ারম্যান এবং নওয়াজ শরীফ সাধারণ সম্পাদক হন। পাকিস্তান মুসলিম লীগ তখন জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ডানপন্থী দলগুলির সাথে জোটবদ্ধভাবে বামপন্থী পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিরুদ্ধে ইসলামী গণতান্ত্রিক জোট গঠন করে। এই ঘটনাটি পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Burki, Shahid Javed। Historical Dictionary of Pakistan। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 148। আইএসবিএন 9781442241480।