পর্তুগালে ইসলাম

৯০–১০০% | |
৭০–৮০% | কাজাখস্তান |
৫০–৭০% | |
৩০–৫০% | উত্তর মেসেডোনিয়া |
১০–২০% | |
৫–১০% | |
৪–৫% | |
২–৪% | |
১–২% | |
< ১% |
পর্তুগাল একটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে ইসলামের অনুসারীরা একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, এর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৪% মুসলমান। [২] তবে কয়েক শতাব্দী আগে আধুনিক পর্তুগাল ভূখণ্ডে ইসলাম একটি প্রধান ধর্ম ছিল, যার সূচনা হয়েছিল ইবেরিয়া উপদ্বীপে ইসলামি বিজয়ের মাধ্যমে। তবে বর্তমান পর্তুগিজ সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার কারণে অমুসলিমরা ধর্মান্তরিত হতে এবং মুসলিমরা তাদের ধর্ম পালন ও মসজিদ নির্মাণ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা উপভোগ করে।
পর্তুগালের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা দ্বারা নথিভুক্ত ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, পর্তুগালে মোট ৯,১৩৪ জন মুসলমান ছিল, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.০৯%। [৩] দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সুন্নি: তাদের বাইরে প্রায় ২০,০০০ থেকে ২২,০০০ জন শিয়া মুসলিম বসবাস করে এবং শিয়াদের মধ্যে ৬৫% ইসমাইলি। [৪] ১৯৯০-এর দশকে অধিকাংশ মুসলিম প্রাক্তন বিদেশী পর্তুগিজ প্রদেশ পর্তুগিজ গিনি ও পর্তুগিজ মোজাম্বিক থেকে এসেছিল। তবে বর্তমান পর্তুগালে বসবাসকারী বেশিরভাগ মুসলিম মধ্যপ্রাচ্য ( সিরিয়াসহ), মাগরেব, মোজাম্বিক ও বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। [৫]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]৭১১ থেকে ৭২২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বর্তমান পর্তুগালের বেশিরভাগ অঞ্চল ইসলামি শাসনের নিয়ন্ত্রণে আসে; বিশেষ করে মোন্দেগো নদীর দক্ষিণে। তখন পর্তুগাল অঞ্চল ও তৎকালীন ভিসিগোথিক রাজ্য সম্পূর্ণভাবে উমাইয়া খেলাফত ও পরবর্তী মুর সুলতানরা আক্রমণ করে ও দখল করেছিল। এই মুর শাসকগোষ্ঠী আরব ও বার্বার জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ছিল। পরবর্তী কয়েক দশকে এটি আধুনিক পর্তুগালের আলেন্তেজো ও আলগার্ভে অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। ইসলামি বিজয়ের সময় পশ্চিম ইবেরীয় উপদ্বীপকে গারবুল আন্দালুস (আন্দালুসের পশ্চিম অংশ) বলা হতো। পর্তুগিজ রিকনকুইস্তা (পুনরুদ্ধার) চলাকালীন খ্রিস্টান সেনাবাহিনী প্রায় সম্পূর্ণ লুস্তানিয়া অঞ্চল দখল করে এবং ১৩ শতকের মধ্যে আরব ও বার্বাররা আলগার্ভে অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পরাজিত হয়। তবে প্রতিবেশী স্পেনের আন্দালুসে তাদের শাসন আরো ২৫০ বছর স্থায়ী ছিল। মুসলিম শাসনের এই দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পর্তুগালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে আলামত রেখে গেছে; যার মধ্যে রয়েছে ইসলামি শিল্প, আরবি উৎসের স্থান-নাম ও কিছু আরবি শব্দ। আলেন্তেজো অঞ্চলের মের্তোলা শহরে এখনো এাকটি মধ্যযুগীয় মসজিদের আংশিক ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা রিকনকোয়েস্টার পর নোসা সেওরো দে আন্নুসিয়াসাও চার্চ নামে একটি ক্যাথলিক গির্জায় রূপান্তরিত করা হয়। [৬]

১৯৬৮ সালের মার্চে পর্তুগিজ রাজধানীতে অধ্যয়নরত মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি দল লিসবনে একটি মুসলিম কমিউনিটি গঠন করে। ১৯৬৬ সালে মুসলিম কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার আগেই পাঁচজন মুসলিম ও পাঁচজন খ্রিস্টানের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি লিসবন সিটি কাউন্সিলের কাছে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমির আবেদন করেছিল। মুসলিম কমিউনিটির অধিকাংশ সদস্য ছিল মোজাম্বিক এবং গিনি-বিসাউ থেকে আসা পরিবার, যারা ১৯৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল কার্নেশন বিপ্লবের পর পর্তুগালে চলে আসে। এছাড়া উত্তর আফ্রিকার মরক্কো ও আলজেরিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও পর্তুগালে নিযুক্ত বিভিন্ন আরব দেশের দূতাবাসের সদস্যদেরও এই সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অবশেষে ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাভেনিডা জোসে মালহোয়াতে একটি জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয়।

এর প্রথম পাথর স্থাপন ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে করা হয়েছিল এবং নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ২৯ মার্চ। তখন সম্প্রদায়টিতে প্রায় চার হাজারেরও অধিক লোক ( ১৯৮১ সালের জনশুমারি) ছিল, যাদের অধিকাংশই প্রাক্তন পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে এসেছিলেন। পর্তুগালের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা কর্তৃক নথিভুক্ত ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, পর্তুগালে মোট ৯,১৩৪ জন মুসলমান ছিল, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.০৯%। [৩] ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, মুসলিম সম্প্রদায়ের আনুমানিক সংখ্যা ৬৫ হাজার ( যাদের অধিকাংশই মাগরেব ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছিলেন; বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাক থেকে) এবং তারা পর্তুগালের বিভিন্ন অংশে বিস্তৃত; বিশেষত লিসবন মেট্রোপলিটন, পোর্তো মেট্রোপলিটন এলাকা ও আলগারভে। [৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Religious Composition by Country, 2010-2050"। পিউ রিসার্চ সেন্টার। ১২ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ "Indicador"।
- ↑ ক খ "Statistics Portugal - Web Portal"। www.ine.pt। ২০১৭-০১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১১।
- ↑ Shireen Hunter (২০০২)। Islam, Europe's Second Religion: The New Social, Cultural, and Political Landscapes। Praeger Publishers। পৃষ্ঠা 193। আইএসবিএন 0-275-97608-4। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৪।
- ↑ "President for opening new missions in potentials countries"। Bangladesh Sangbad Sangstha। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "The Islamic heritage in Portugal's past"। Public Radio International (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১১।
- ↑ Comunidade islâmica portuguesa nasceu há 50 anos em Lisboa (Diário de Notícias) https://www.dn.pt/lusa/comunidade-islamica-portuguesa-nasceu-ha-50-anos-em-lisboa-9190076.html