পবিত্রোৎসবম্‌

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পবিত্রোৎসবম্‌ হল ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের তিরুমালা শহরের বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের একটি বাৎসরিক অনুষ্ঠান।[১][২] ‘পবিত্রোৎসবম্‌’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পবিত্র’ (পুণ্য) ও ‘উৎসবম্‌’ (উৎসব) শব্দদু-টি থেকে। এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য সারা বছর মন্দিরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘটিত দোষ ও অমঙ্গল থেকে মুক্তিলাভ। এই উৎসবকে ‘দোষনিবারণ’ (ভ্রম সংশোধন), ‘সর্বযজ্ঞফলপ্রদ’ (সারা বছর আয়োজিত সকল পবিত্র অনুষ্ঠানের সমতুল্য ফলপ্রদানকারী), ‘সর্বদোষোপশমন’ (সকল দোষ দূরকারী), ‘সর্বতুষ্টিকর’, ‘সর্বকামপ্রদ’ ও ‘সর্বলোকশান্তিদা’ও বলা হয়।[৩]

শাস্ত্রীয় উল্লেখ[সম্পাদনা]

জয়াখ্য সংহিতা মতে, ‘পবিত্র’ (শুদ্ধিকৃত উপবীতের মালা) একজন ব্যক্তিকে অমঙ্গল থেকে রক্ষা করে। পুরাণ অনুসারে, ‘পবিত্র আরোপণ’ বিষ্ণুপূজার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অগ্নিপুরাণ অনুসারে, আষাঢ় মাসের শুরুতে বা কার্তিক মাসের শেষে শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে পবিত্রোৎসব আয়োজন করা উচিত। গরুড়পুরাণ অনুসারে, শুক্লাদ্বাদশী তিথিতে এই উৎসব আয়োজন করা উচিত।

অনুষ্ঠান[সম্পাদনা]

তিরুমালায় পবিত্রোৎসবম্‌ আয়োজিত হয় শ্রাবণ মাসের শুদ্ধ (শুক্লা) দশমী তিথিতে।[৪]

উৎসবের আগের দিন একটি মাটির পাত্রে নয় রকম বীজ পুঁতে ‘অঙ্কুরার্পণম্‌’ অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই মন্দিরে পবিত্রোৎসবম্‌ শুরু হয়। এরপর ‘মৃৎসংগ্রহণ’ নামে একটি অনুষ্ঠানে বেদ পাঠ করা হয়। ব্রহ্মোৎসবম্‌ অনুষ্ঠানে যেমন ভাবে অঙ্কুরার্পণ ও মৃৎসংগ্রহণ করা হয়, এই উৎসবেও ঠিক সেইভাবেই এই দুই আচার পালিত হয়। মৃৎসংগ্রহণ অনুষ্ঠানে শুরু হওয়া বেদপাঠ শেষ হয় উৎসবের তৃতীয় দিনে। বেদপাঠের মাধ্যমে বিষ্ণুকে ‘প্রধান কুম্ভে’ (প্রথম পবিত্র ঘট) ‘আবাহন’ করা হয়। প্রধান কুম্ভকে ঘিরে থাকে ১৬টি অন্য কুম্ভ। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বিভিন্ন মন্ত্র উচ্চারণের সময় যে শব্দকম্পন সৃষ্টি হয় তার ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শক্তি প্রচণ্ড। উৎসবের শেষ দিনে প্রধান কুম্ভটি মন্দিরের প্রধান দেবতার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। মনে করা হয়, এই সময় মূল বিগ্রহে আরও অধিক আধ্যাত্মিক শক্তি স্থানান্তরিত হয়। (কুম্ভ আবাহনম)।[২] তিন দিনের উৎসবে প্রধান দেবতা ও বেঙ্কটেশ্বরের অন্যান্য বিগ্রহের ‘তিরুমাঞ্জনম্‌’ ও ‘হোমম্‌’ (যজ্ঞ) অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে।

‘পবিত্র’ বা বিশেষ উপবীত দিয়ে গ্রথিত মালাগুলি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শোভাযাত্রায় বার করা হয় এবং মালায়াপ্পা স্বামী ও তার পত্নীদের পরানো হয়। এই দিন সন্ধ্যায় এই বিগ্রহগুলিকে মন্দিরের চার পাশের চারটি প্রধান রাস্তায় শোভাযাত্রায় বার করা হয়।

উৎসবের তৃতীয় দিন শুধুমাত্র সকালের দৈনন্দিন অনুষ্ঠানগুলি পালিত হয়। এই দিন ‘কল্যাণোৎসবম্‌’, ‘অর্জিত ব্রহ্মোৎসবম্‌’, ‘অর্জিত বসন্তোৎসবম্‌’, ‘সহস্র দীপালংকরণ সেবা’ ও ‘দোলোৎসবম্‌’ প্রভৃতি অর্জিত সেবাগুলি বাতিল করা হয়।[৫]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তিরুমালায় পবিত্রোৎসবম্‌ শুরু হয় ১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে। তিরুমালা বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের প্রথম প্রাকারের বাগাপাডি বারান্দার উত্তরের দেওয়ালে গাঁথা একটি শিলালিপিতে একটি বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।[২] সালুবা নরসিংহের আমলে সালুবা মাল্লিয়াহ দেব রাজ কর্তৃক এই অনুষ্ঠান চালু হয়।[৪] এই শিলালিপিতে ‘পবিত্র তিরুনাল’ উপলক্ষে খরচের দ্রব্যগুলির তালিকাও দেওয়া আছে।[২]

১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পবিত্রোৎসবম্‌ নিয়মিত উদযাপিত হয়েছে। এর পর এই অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তার কারণ সঠিক জানা যায় না। পরে তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম্‌ সিদ্ধান্ত নেয় যে, সকল বিষ্ণু মন্দিরে অনুসৃত উৎসবগুলি বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরেও পালিত হবে। এরপর ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আবার এই উৎসব চালু হয়।

ভক্তসমাগম[সম্পাদনা]

পবিত্রোৎসবম্‌ হল একটি ‘অর্জিত সেবা’। এই সেবায় বেঙ্কটেশ্বরকে অর্থ দিয়ে যোগদান করতে হয়। তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম্‌ দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের সেবার জন্য টিকিট বিক্রি করে। প্রত্যেকটি টিকিটে দু-জন ব্যক্তিকে অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয়। যিনি প্রথম টিকিটটি পান, তাকে দ্বিতীয় দিনে ১০টি দোসা ও পোঙ্গল এবং তৃতীয় দিনে ১০টি দোসা ও পোঙ্গল, ৬টি বড়া ও বস্ত্রম্‌ (একটি রেশমের অঙ্গবস্ত্রম্‌ ও একটি সূতির উড়নি) দেওয়া হয়।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Pavitrotsavam"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  2. "`Pavitrotsavam' at Tirumala from August 28"The Hindu। ২০০৪-০৮-২২। ২০০৪-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-১২ 
  3. "Srivenkatesa.org"srivenkatesa.org। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  4. The Tirumala TempleTirumala: Tirumala Tirupati Devasthanams। ১৯৮১।  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  5. "The `Pavitrotsavam' at Tirumala"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  6. "TTD Periodic Sevas"। ২০০৭-০৫-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-১২