পটাসিয়াম ফেরিসায়ানাইড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড
পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড এর কেলাস
নামসমূহ
ইউপ্যাক নামs
পটাশিয়াম হেক্সাসায়ানোফেরেট (III)
Potassium hexacyanoferrate (III)
অন্যান্য নাম
পটাশ এর লাল প্রুশীয়েট,
প্রুশীয় লাল,
পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড
শনাক্তকারী
ত্রিমাত্রিক মডেল (জেমল)
সিএইচইবিআই
কেমস্পাইডার
ইসিএইচএ ইনফোকার্ড ১০০.০৩৩.৯১৬
ইসি-নম্বর
  • 237-323-3
মেলিন রেফারেন্স 21683
আরটিইসিএস নম্বর
  • LJ8225000
ইউএনআইআই
  • InChI=1S/6CN.Fe.3K/c6*1-2;;;;/q6*-1;+3;3*+1 ☒না
    চাবি: BYGOPQKDHGXNCD-UHFFFAOYSA-N ☒না
  • InChI=1S/6CN.Fe.3K/c6*1-2;;;;/q6*-1;+3;3*+1
    চাবি: BYGOPQKDHGXNCD-UHFFFAOYAG
  • [K+].[K+].N#C[Fe-3](C#N)(C#N)(C#N)(C#N)C#N.[K+]
বৈশিষ্ট্য
K3[Fe(CN)6]
আণবিক ভর ৩২৯.২৪ গ্রাম/মোল
বর্ণ গাঢ় লাল স্ফটিক, কখনো কখনো ছোট বড়ির মত, কমলা হতে গাঢ় লাল বর্ণের গুঁড়া
ঘনত্ব ১.৮৯ গ্রাম/সেমি, কঠিন
গলনাঙ্ক ৩০০ °সে (৫৭২ °ফা; ৫৭৩ K)
স্ফুটনাঙ্ক বিযোজিত হয়
৩৩০ গ্রাম/লিটার ("ঠাণ্ডা পানি")
৪৬৪ গ্রাম/লিটার (২০ °সে)
৭৭৫ গ্রাম/লিটার ("গরম পানি")[১]
দ্রাব্যতা অ্যালকোহল এ মৃদু মাত্রায় দ্রবণীয়
অম্লে
পানিতে দ্রবণীয়
+২২৯০.০×১০-৬ সেমি/মোল
গঠন
স্ফটিক গঠন মনোক্লিনিক
Coordination
geometry
Fe কেন্দ্রিক অষ্টতলকীয়
ঝুঁকি প্রবণতা
নিরাপত্তা তথ্য শীট MSDS
জিএইচএস চিত্রলিপি The exclamation-mark pictogram in the Globally Harmonized System of Classification and Labelling of Chemicals (GHS)
জিএইচএস সাংকেতিক শব্দ সতর্কতা
জিএইচএস বিপত্তি বিবৃতি H302, H315, H319, H332, H335
জিএইচএস সতর্কতামূলক বিবৃতি P261, P264, P270, P271, P280, P301+312, P302+352, P304+312, P304+340, P305+351+338, P312, P321, P330, P332+313
এনএফপিএ ৭০৪
ফ্ল্যাশ পয়েন্ট অদাহ্য
প্রাণঘাতী ডোজ বা একাগ্রতা (LD, LC):
2970 mg/kg (mouse, oral)
সম্পর্কিত যৌগ
পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড
প্রুশীয় নীল
সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়া, পদার্থসমূহের সকল তথ্য-উপাত্তসমূহ তাদের প্রমাণ অবস্থা (২৫ °সে (৭৭ °ফা), ১০০ kPa) অনুসারে দেওয়া হয়েছে।
☒না যাচাই করুন (এটি কি YesY☒না ?)
তথ্যছক তথ্যসূত্র

পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড বা পটাশিয়াম হেক্সাসায়ানোফেরেট (III) (ইংরেজি: Potassium ferricyanide বা Potassium hexacyanoferrate (III)) হচ্ছে একটি রাসায়নিক যৌগ, যার সংকেত । এটি আয়ন দ্বারা অষ্টতলকীয়ভাবে সন্নিবেশিত উজ্জ্বল লাল বর্ণের একটি লবণ[২] এটি পানিতে দ্রবণীয় এবং এর দ্রবণ কিছুটা সবুজ-হলুদ প্রতিপ্রভা প্রদর্শন করে থাকে। ১৮২২ সালে জার্মান রসায়নবিদ লিওপোল্ড গেমেলিন (Leopold Gmelin) কর্তৃক এই যৌগ আবিষ্কৃত হয়[৩][৪], এবং প্রাথমিকভাবে তা গাঢ় নীল (ultramarine) বর্ণের রঞ্জক তৈরির কাজে ব্যবহৃত হত।

প্রস্তুতি[সম্পাদনা]

পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড দ্রবণের মধ্য দিয়ে ক্লোরিন গ্যাস চালনা করে পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড প্রস্তুত করা হয়। পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড দ্রবণ থেকে পৃথক হয়ে যায়:

গাঠনিক কাঠামো[সম্পাদনা]

অন্যান্য ধাতব সায়ানাইড যৌগের মত কঠিন পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড এরও একটি জটিল পলিমারীয় গঠন রয়েছে। লিগ্যান্ডের সাথে আবদ্ধ আয়নের সাথে, আড়াআড়িভাবে সংযুক্ত (cross-linked), অষ্টতলকীয় কেন্দ্র নিয়ে এই পলিমার গঠিত।[৫] পানিতে দ্রবীভূত করা হলে, সংযোগগুলো ভেঙে যায়।

ব্যবহার[সম্পাদনা]

নীলনকশা অঙ্কন এবং আলোকচিত্রশিল্পে (সায়ানোটাইপ প্রক্রিয়া) পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বেশ কতগুলো মুদ্রিত আলোকচিত্র বর্ণায়ন (Photographic print toning) প্রক্রিয়ায় এর ব্যবহার বিদ্যমান। রঙিন ছবির নেগেটিভ ও পজিটিভ হতে রূপা দূরীকরণের জন্য পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড ব্যবহার করা হত, যা ধৌতকরণ বা ব্লিচিং নামে পরিচিত ছিল। পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড পরিষ্কারকসমূহ (ব্লিচ) স্বল্পস্থায়ী, পরিবেশবান্ধব নয়, এবং অম্লের সাথে মেশানো হলে বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস বিমুক্ত করতে পারে বলে, ১৯৭২ সালে কোডাক সি-৪১ প্রক্রিয়ার সূচনার সময়কাল থেকে রঙিন ছবির পরিষ্কারক হিসেবে ফেরিক ইডিটিএ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রঙিন লিথোগ্রাফিতে, পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড ব্যবহার করে রঙিন বিন্দুসমূহের সংখ্যা না কমিয়েই তাদের আকার কমানো হত; এটি এক ধরনের হস্তসাধিত রং সংশোধন প্রক্রিয়া, যা বিন্দু খোদাইকরণ (dot etching) নামে পরিচিত। সাদা-কালো আলোকচিত্রশিল্পেও এই যৌগ সোডিয়াম থায়োসালফেট দ্রবণের (হাইপো) সাথে একত্রে ব্যবহৃত হয়, ছবির নেগেটিভ বা জেলাটিন রৌপ্য মুদ্রণের (Gelatine Silver Print) ঘনত্ব কমানোর জন্য, যেখানে মিশ্রণটি ফারমার্স রিডিউসার নামে পরিচিত। এটি ছবির নেগেটিভ এর অতি-আলোকসম্পাত (overexposure) জনিত সমস্যা হ্রাস করতে কিংবা ছবির উজ্জ্বলতম স্থানসমূহের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।[৬]

লোহা এবং ইস্পাতের পৃষ্ঠ কঠিনীকরণ (surface hardening) প্রক্রিয়ায়, তড়িৎ প্রলেপণে, পশম রঞ্জনে, গবেষণাগার বিকারক হিসেবে, এবং জৈব রসায়নে মৃদু জারক হিসেবে এই যৌগের ব্যবহার দেখা যায়।

ফেরক্সিল নির্দেশক দ্রবণে, ফেনোল্‌ফথ্যালিন (phenolphthalein) এর সাথে পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড-ও উপস্থিত থাকে; যা আয়নের উপস্থিতিতে গাঢ় নীল (প্রুশীয় নীল) বর্ণ ধারণ করে, যা ধাতুতে মরিচা গঠনকারী জারণ প্রক্রিয়া শনাক্তকরণে সহায়তা করে। প্রুশীয় নীল রঙের এর গাঢ়ত্বের কারণে, কালারিমিটার ব্যবহার করে আয়নের মোল সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব।

শারীরতাত্ত্বিক পরীক্ষা–নিরীক্ষায় অনেক সময় পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড ব্যবহৃত হয়, দ্রবণের রিডক্স বিভব (বিজারণ-জারণ বিভব) বাড়ানোর জন্য (E°' ~ ৪৩৬ mV; pH ৭.০)। অক্ষত বিচ্ছিন্ন মাইটোকন্ড্রিয়ায় বিজারিত সাইটোক্রোম (E°' ~ ২৪৭ mV; pH ৭.০) কে জারিত করতে পারে এই যৌগ। এসব পরীক্ষণে বিজারক পদার্থ হিসেবে সাধারণত সোডিয়াম ডাইথায়োনাইট (সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইট নামেও পরিচিত) ব্যবহার করা হয়।

পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড দ্বারা কোন নমুনার (নির্যাস, রাসায়নিক যৌগ ইত্যাদি)[৭] ফেরিক বিজারণকারী ক্ষমতা বিভব নির্ণয় করা হয়। এই পরিমাপ দ্বারা কোন নমুনার জারণ-রোধক (antioxidant; অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট) বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

কোন উৎসেচকের (যেমন – গ্লুকোজ অক্সিডেজ উৎসেচক) প্রাকৃতিক ইলেকট্রন পরিবহনকারী উপাদান, যেমন– অক্সিজেনকে প্রতিস্থাপন করে অনেক অ্যাম্পিরোমেট্রিক বায়োসেন্সর (amperometric[৮] biosensor) এ, ইলেকট্রন পরিবহনকারী হিসেবে পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড ব্যবহার করা হয়। বহুমূত্র রোগীদের জন্য ব্যবহৃত, বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য রক্তের গ্লুকোজমাপক যন্ত্রের একটি উপাদান হিসেবে এই যৌগ ব্যবহৃত হয়।

পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইডের সাথে পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (অথবা এর স্থলে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড) এবং পানির বিক্রিয়ার মাধ্যমে মুরাকামি বিকারক (Murakami's reagent/etchant) প্রস্তুত করা হয়। দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত কার্বাইডের বাইন্ডার এবং কার্বাইড দশার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য, আণুবীক্ষণিক ধাতববীক্ষণবিদ বা মেটালোগ্রাফারগণ এই বিকারক ব্যবহার করেন।

প্রুশীয় নীল[সম্পাদনা]

প্রুশীয় নীল, যা নীল রঙের মুদ্রণে গাঢ় নীল রঞ্জক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তা এর সাথে ফেরাস () আয়নের বিক্রিয়ায়, অথবা এর সাথে ফেরিক () আয়নের বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়।[৯]

কলাস্থানবিদ্যায়, পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড ব্যবহার করে জৈবিক কলাসমূহে ফেরাস () আয়ন শনাক্ত করা হয়। অম্লীয় দ্রবণে, পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড এর সাথে ফেরাস আয়নের বিক্রিয়ায় অদ্রবণীয় নীল রঞ্জক উৎপন্ন হয়, যা প্রচলিতভাবে টার্নবুল এর নীল অথবা প্রুশীয় নীল নামে পরিচিত। ফেরিক () আয়ন শনাক্তকরণের জন্য, পার্ল এর প্রুশীয় নীল রঞ্জন পদ্ধতিতে ফেরিসায়ানাইড এর স্থলে পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড ব্যবহার করা হয়।[১০] টার্নবুল এর নীল এবং প্রুশীয় নীল প্রস্তুতির বিক্রিয়ায় উৎপন্ন যৌগ একই।[১১][১২]

নিরাপত্তা[সম্পাদনা]

পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড এর বিষাক্ততার মাত্রা স্বল্প, এর প্রধান ঝুঁকি হচ্ছে এটি চোখত্বকে মৃদু প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। তবে, তীব্র অম্লীয় মাধ্যমে এই যৌগ থেকে অতি মাত্রায় বিষাক্ত হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়; বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

[১৩]

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এর সাথে এর বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kwong, H.-L. (২০০৪)। "Potassium Ferricyanide"। Paquette, L.। Encyclopedia of Reagents for Organic Synthesis। New York: J. Wiley & Sons। ডিওআই:10.1002/047084289X 
  2. Sharpe, A. G. (১৯৭৬)। The Chemistry of Cyano Complexes of the Transition Metals। London: Academic Press। 
  3. Gmelin, Leopold (১৮২২)। "Ueber ein besonderes Cyaneisenkalium, and über eine neue Reihe von blausauren Eisensalzen" [On a particular potassium iron cyanate, and on a new series of iron salts of cyanic acid]। Journal für Chemie und Physik (German ভাষায়)। 34: 325–346। 
  4. Ihde, A.J. (১৯৮৪)। The Development of Modern Chemistry (2nd সংস্করণ)। New York: Dover Publications। পৃষ্ঠা 153। 
  5. Figgis, B.N.; Gerloch, M.; Mason, R. "The crystallography and paramagnetic anisotropy of potassium ferricyanide" Proceedings of the Royal Society of London, Series A: Mathematical and Physical Sciences 1969, vol. 309, p91-118. ডিওআই:10.1098/rspa.1969.0031
  6. Stroebel, L.; Zakia, R. D. (১৯৯৩)। "Farmer's Reducer"The Focal Encyclopedia of Photography। Focal Press। পৃষ্ঠা 297। আইএসবিএন 978-0-240-51417-8 
  7. Nakajima, Y., Sato, Y., & Konishi, T. (2007). Antioxidant Small Phenolic Ingredients in Inonotus obliquus (persoon) Pilat (Chaga). Chemical & Pharmaceutical Bulletin, 55(8), 1222–1276.
  8. "Definition of AMPEROMETRIC"www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪ 
  9. Dunbar, K. R.; Heintz, R. A. (১৯৯৭)। "Chemistry of Transition Metal Cyanide Compounds: Modern Perspectives"। Progress in Inorganic Chemistry। Progress in Inorganic Chemistry। 45। পৃষ্ঠা 283–391। আইএসবিএন 9780470166468ডিওআই:10.1002/9780470166468.ch4 
  10. Carson, F. L. (১৯৯৭)। Histotechnology: A Self-Instructional Text (2nd সংস্করণ)। Chicago: American Society of Clinical Pathologists। পৃষ্ঠা 209–211। আইএসবিএন 978-0-89189-411-7 
  11. Tafesse, F. (২০০৩)। "Comparative Studies on Prussian Blue or Diaquatetraamine-Cobalt(III) Promoted Hydrolysis of 4-Nitrophenylphosphate in Microemulsions" (পিডিএফ)International Journal of Molecular Sciences4 (6): 362–370। ডিওআই:10.3390/i4060362 
  12. Verdaguer, M.; Galvez, N.; Garde, R.; Desplanches, C. (২০০২)। "Electrons at Work in Prussian Blue Analogues" (পিডিএফ)Electrochemical Society Interface11 (3): 28–32। ডিওআই:10.1002/chin.200304218 
  13. "MSDS for potassium ferricyanide" (পিডিএফ)। ১৮ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]