নেট আয়
ব্যবসা এবং হিসাববিদ্যায় নেট আয় (Net Income)—যাকে নেট মুনাফা, নেট উপার্জন, সম্পূর্ণ আয়, চূড়ান্ত লাভ বা বিক্রয় মুনাফা নামেও ডাকা হয়—হল একটি প্রতিষ্ঠানের মোট আয় থেকে পণ্য বিক্রয়ের খরচ, অন্যান্য ব্যয়, মূল্যহ্রাস (depreciation), অমরায়ন (amortization), সুদ, কর ও অন্যান্য খরচ বাদ দিলে যে পরিমাণ অর্থ থাকে।
এই পরিমাণটি হিসাব করা হয় নির্দিষ্ট একটি হিসাব সময়সীমার জন্য।[১][ভালো উৎস প্রয়োজন]
নেট আয় হলো সেই পরিমাণ অর্থ, যা একটি প্রতিষ্ঠান তার আয় ও লাভ থেকে সব ব্যয় ও ক্ষতি বাদ দেওয়ার পর পায়।[২] এটিকে শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানায় (equity) নিট বৃদ্ধি হিসেবেও ধরা হয়, যা কোম্পানির কার্যক্রম থেকে অর্জিত হয়।[৩]
এটি মোট আয় (Gross Income) থেকে আলাদা, কারণ মোট আয়ে শুধু পণ্য বিক্রয়ের খরচ বাদ দেওয়া হয়, অন্য খরচ নয়।
পরিবার বা ব্যক্তিগত অর্থে, নেট আয় বলতে বোঝায় মোট আয় থেকে কর ও বাধ্যতামূলক কর্তন (যেমন: পেনশন চাঁদা) বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে।
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]নেট আয় প্রতিষ্ঠান চাইলে সাধারণ শেয়ারের মালিকদের মধ্যে লাভ হিসেবে বিতরণ করতে পারে, অথবা সংরক্ষিত আয় হিসেবে সংরক্ষণ করতেও পারে। যেহেতু লাভ ও উপার্জন শব্দ দুটি অনেক সময় আয় বোঝাতে সমার্থকভাবে ব্যবহৃত হয় (যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে), তাই নেট উপার্জন ও নেট লাভ শব্দদ্বয়কেও প্রায়শই নেট আয়ের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় আয় শব্দটি দিয়ে সরাসরি নেট আয় বোঝানো হয়, তবে এটি স্পষ্ট নয় বলেই এমন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়। 'নেট আয়'কে প্রচলিতভাবে শেষ লাইন (Bottom Line) বলা হয়, কারণ এটি সাধারণত কোনো কোম্পানির আয় বিবরণীর সর্বশেষ লাইনে থাকে। এর বিপরীতে শীর্ষ লাইন (Top Line) বলতে রাজস্ব বোঝানো হয়, যা বিবরণীর প্রথম লাইনে উল্লেখ থাকে।
সরল ভাষায়, নেট লাভ হচ্ছে কোনো উদ্যোগের সব খরচ মেটানোর পর অবশিষ্ট অর্থ। তবে বাস্তবে বড় প্রতিষ্ঠানে এটি অনেক জটিল হয়ে উঠতে পারে। হিসাবরক্ষক বা হিসাববিদকে যথাযথভাবে আয় ও ব্যয়কে নির্দিষ্ট কার্যপরিসর ও প্রেক্ষাপটে বিভাজন ও বরাদ্দ করতে হয়।
নেট আয় সাধারণত বার্ষিক হিসাবে গণনা করা হয়, প্রতিটি আর্থিক বছরের জন্য। যেসব আইটেম বাদ দেওয়া হয়, তার মধ্যে সাধারণত থাকে কর ব্যয়, অর্থায়ন ব্যয় (সুদ ব্যয়), ও সংখ্যালঘু অংশীদারের অংশ। এ ছাড়া প্রাধান্যপ্রাপ্ত শেয়ারের লভ্যাংশও বাদ দেওয়া হয়, যদিও এটি ব্যয় হিসেবে গণ্য হয় না। বিক্রয়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাদ পড়া খরচের মধ্যে থাকতে পারে পণ্য উৎপাদনের খরচ, বিক্রয় ছাড়, এবং বিক্রয় ফেরত ও ছাড় অনুমোদন। পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপন, উৎপাদন, নকশা ও উন্নয়ন খরচও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিকল্পভাবে, কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালন আয়র সঙ্গে অ-পরিচালন আয় যোগ করে এবং তারপরে কর বাদ দিয়ে নেট আয় হিসাব করা যায়।[৪]
নেট লাভের মার্জিন শতাংশ একটি সম্পর্কিত অনুপাত, যা নেট লাভকে রাজস্ব বা মোট বিক্রয় দ্বারা ভাগ করে হিসাব করা হয় এবং এটি একটি প্রতিষ্ঠানের লাভজনকতা শতকরা হারে প্রকাশ করে।
নেট আয়ের সমীকরণ
[সম্পাদনা]নেট লাভ (Net Profit) নির্ণয় করতে হলে কোনো উদ্যোগের (যেমন—একটি কোম্পানি, বিভাগ বা প্রকল্প) মোট বিক্রয় রাজস্ব বা টার্নওভার থেকে সব ধরনের খরচ বাদ দিতে হয়। এই খরচগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের মোট ওভারহেডের ন্যায্য অংশও অন্তর্ভুক্ত থাকে।[৫]নেট আয় গণনার একটি বিস্তারিত সূত্র নিচে দেওয়া হলো:
নেট লাভ হলো একটি উদ্যোগ কতটা লাভজনক, তার মৌলিক সূচক। এটি মূলত আয় থেকে খরচ বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়। তবে বড় প্রতিষ্ঠানে এটি জটিল হতে পারে, কারণ ওভারহেড খরচ (যেমন—সদর দপ্তরের কর্মীদের বেতন) নির্দিষ্ট কোনো পণ্য বা প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকে না। ফলে, এগুলো কীভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বা বিভাগে ভাগ করা হবে, সে বিষয়ে দ্বিধা থাকে। এই কারণেই ওভারহেড বণ্টন একটি নিখুঁত প্রক্রিয়া নয় এবং এটি প্রায়শই অনুমানের ওপর নির্ভরশীল।[৬]
উদাহরণ
[সম্পাদনা]নেট লাভ কীভাবে লাভ-ক্ষতির হিসাব (Profit & Loss account) অনুযায়ী ধাপে ধাপে নির্ণয় করা হয়, তা নিচে দেখানো হলো:
- বিক্রয় রাজস্ব = পণ্যের মূল্য × বিক্রিত পরিমাণ
- স্থূল মুনাফা = বিক্রয় রাজস্ব − উৎপাদন ও প্রত্যক্ষ খরচ
- পরিচালন মুনাফা = স্থূল মুনাফা − ওভারহেড ও পরোক্ষ খরচ
- সুদ ও করের আগে আয় (EBIT) = পরিচালন মুনাফা + সুদের আয় + অন্যান্য অ-পরিচালন আয়
- কর পূর্ব আয় (EBT) = EBIT − সুদের খরচ − অন্যান্য অ-পরিচালন ব্যয়
- নেট মুনাফা = EBT − কর
- সংরক্ষিত আয় = নেট মুনাফা − লভ্যাংশ
আরেকটি প্রয়োগযোগ্য ধাপে ধাপে সূত্র নিচে দেওয়া হলো:
নেট বিক্রয় − পণ্য উৎপাদনের খরচ = স্থূল মুনাফা → স্থূল মুনাফা − এসজিএন্ডএ ব্যয় (বিক্রয়, সাধারণ ও প্রশাসনিক ব্যয়) − গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় = EBITDA → EBITDA − মূল্যহ্রাস ও অমরায়ন = EBIT → EBIT − সুদ ব্যয় = EBT → EBT − কর ব্যয় = নেট আয় (EAT)
অন্যান্য পরিভাষা
[সম্পাদনা]- নেট বিক্রয় = মোট বিক্রয় − (গ্রাহক ছাড়, ফেরত ও ভর্তুকি)
- স্থূল মুনাফা = নেট বিক্রয় − পণ্য উৎপাদনের খরচ
- পরিচালন মুনাফা = স্থূল মুনাফা − মোট পরিচালন ব্যয়
- নেট মুনাফা = পরিচালন মুনাফা − কর − সুদ
- নেট মুনাফা = নেট বিক্রয় − পণ্য উৎপাদনের খরচ − পরিচালন ব্যয় − কর − সুদ
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- (বিক্রয় মূল্য ও উৎপাদন খরচের পার্থক্য)
- (নেট আয় ও নেট বিক্রয়ের অনুপাত)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "IAS 1 Presentation of Financial Statements" (পিডিএফ)। IFRS Foundation। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৪, ২০১২।
- ↑ Weil, Schipper, Francis. (2009) Financial Accounting: An Introduction to Concepts, Methods, and Uses. Cengage Learning
- ↑ Weil, Schipper, Francis. (2010) Financial Accounting. Cengage Learning.
- ↑ "Net Income Formula"। New Business Playbook। ২০১৩-১০-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Gross Profit vs. Net Income: What's the Difference?"। Investopedia।
- ↑ Farris, Paul W.; Neil T. Bendle; Phillip E. Pfeifer; David J. Reibstein (2010). Marketing Metrics: The Definitive Guide to Measuring Marketing Performance. ...