নুরুল ইসলাম অনু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এ এম নুরুল ইসলাম (১৯৩৯-২০১৭), যিনি নুরুল ইসলাম অনু নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং আমলা। তিনি ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরিবর্তে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকারে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের (১৯৭২ থেকে ১৯৭৩) একান্ত সচিব ছিলেন। নূরুল ইসলাম অনু যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী সভাপতি ছিলেন (১৯৮৮-২০০২)।

জীবনের প্রথমার্ধ[সম্পাদনা]

নুরুল ইসলাম অনু ১৯৩৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার কোর্টগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা মোসাম্মৎ ঈদ্দুনেসা বেগম একজন গৃহিনী ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর (এম.এ.) সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে যোগদান পর্যন্ত লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। [১] তার ছোট ভাই এ জে ইনামুল ইসলাম (বাবুল) একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশের কমনওয়েলথ সোসাইটি অফ বাংলাদেশের মহাসচিব।

পেশা[সম্পাদনা]

সরকারি চাকরি[সম্পাদনা]

তিনি পাকিস্তান (১৯৬৩-১৯৭১) এবং বাংলাদেশ সরকারের (১৯৭২-১৯৭৫) অধীনে জেলা ও সিভিল প্রশাসনের বিভিন্ন সক্ষমতা নিয়ে কাজ করেছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে থাকা সত্ত্বেও তিনি নির্বাসিত মুজিবনগর সরকারকে প্রশাসনের ভিতরে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। [২] ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পরে বঙ্গভবনের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো পুর্নগঠন জন্য আনুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়; মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নির্বাসিত নেতাদের আগমনের আগে ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো ঠিক এবং বঙ্গভবনের কর্মীদের একত্রিত করেন। [৩] গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রতিষ্ঠার পরে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীরর যুগ্ম-সচিব হিসাবে নুরুল ইসলাম অনু প্রশাসনে যোগদান করেছিলেন। শীঘ্রই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের (১৯৭২-১৯৭৩) ব্যাক্তিগত সচিব হিসাবে নিযুক্ত হন। [৪] ১৯৭৩ সালে অনু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানান্তর হয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। [৫]

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত কূটনীতিক হিসাবে কর্মজীবন চালিয়ে যান। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে নুরুল ইসলাম অনু তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করে এবং খোন্দকার মোশতাক আহমদের নতুন সরকারে যোগ দিতে অস্বীকৃতি দেন। [৬] বাংলাদেশের নাগরিক প্রশাসন গঠনে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ২০১০ সালে মাদার তেরেসা গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। [৭]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে সরকারী চাকরি থেকে পদত্যাগ করা অবধি তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। চাকরি থেকেপদত্যাগ করার পরে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৮২ সালে দলের মার্কিন অধ্যায় (যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ) গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং উত্তর আমেরিকায় দলের ইউনিটের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৮৮-২০০২)। [৮]

বেসরকারি ক্ষেত্র এবং প্রিন্ট মিডিয়া[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের হাই কমিশন থেকে পদত্যাগের পরে, অনু ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে স্থায়ী হন। তিনি একটি আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্য ও পরামর্শ সংস্থা, ট্রান্সকন্টিনেন্টাল আইএমএক্স পিএলসি প্রতিষ্ঠা করেন ও ২০ বছর এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং দেশের ব্যাংকিং খাতে যুক্ত হন। তিনি ২০০৩-২০০৮ সাল পর্যন্ত একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন এবং ২০০৭ - ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন। [৯]

২০০৮ সালে, তিনি আরও একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের পরিচালক হিসাবে যোগদান করেছিল। ২০০৯ সালে, তিনি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হন, এবং ১৮ ই অক্টোবর ২০১৭ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। এই সময়ে তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাংকের নিরীক্ষা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া নুরুল ইসলাম অনু ২০১৩ শাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ওপেক্স-সিনহা গ্রুপে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত ছিলেন । [১০]

২০০৯ থেকে ২০১৩ অবধি, তিনি বাংলা পত্রিকা দৈনিক সকালের খবর প্রথমে সম্পাদক ও পরবর্তীতে প্রকাশক হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে নিয়মিত কলাম লিখতেন সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে। [১১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ সালে ঢাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা মারা যান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবদানের কথা স্মরণ করে পৃথক শোকবার্তা জারি করেন। [১২]

নিউ ইয়র্ক সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও কানাডায় বিভিন্ন স্থানে নুরুল ইসলাম অনুর স্মরণে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলি দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও স্মারক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। [১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Bank Asia » Management"www.bankasia-bd.com। ৭ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২০ 
  2. "Silent soldier from the swirling '60s"New Age (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৮ 
  3. "Independence Day Special"The Daily Star। ১৬ ডিসেম্বর ২০০৪। ২৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৮ 
  4. "PM mourns death of Bangabandhu's PS Anu"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৮ 
  5. "Nurul Islam Anu as I knew him"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৮ 
  6. "Silent soldier from the swirling '60s"New Age (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৮ 
  7. "20 receive Mother Teresa Gold Medal"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৮ 
  8. "About of Bangladesh Awami league – US Awami League"usawamileague.org। ২৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৮ 
  9. "Bank Asia re-elects vice chairmen"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৮ 
  10. "Obituary"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৮ 
  11. Anu, Nurul Islam (১৪ মার্চ ২০১১)। "Impartial bureaucracy: A fading dream"The Daily Star। ২৭ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৮ 
  12. "News Brief"। Government of Bangladesh। Press Information Department। ১৯ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৮ 
  13. আ.লীগ নেতা অনুর মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে শোক সমাবেশbdnews24.com। ১৯ অক্টোবর ২০১৭। ২৭ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৮