নিয়াজ আহমেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিয়াজ আহমেদ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামনিয়াজ আহমেদ সিদ্দিকী
জন্ম(১৯৪৫-১১-১১)১১ নভেম্বর ১৯৪৫
বারাণসী, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমানে ভারত)
মৃত্যু১২ এপ্রিল ২০০০(2000-04-12) (বয়স ৫৪)
করাচী, পাকিস্তান
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার
সম্পর্করিয়াজ আহমেদ (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৫)
১০ আগস্ট ১৯৬৭ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৬৪/৬৫ঢাকা
১৯৬৫/৬৬ - ১৯৬৯/৭০, ১৯৭১/৭২ - ১৯৭৩/৭৪পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট
১৯৬৬/৬৭ - ১৯৬৮/৬৯পূর্ব পাকিস্তান
১৯৭০/৭১পাকিস্তান রেলওয়েজ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৯
রানের সংখ্যা ১৭ ৪৬৬
ব্যাটিং গড় ১৪.৫৬
১০০/৫০ -/- -/৩
সর্বোচ্চ রান ১৬* ৭১*
বল করেছে ২৯৪ ৫১৮৫
উইকেট ৬২
বোলিং গড় ৩১.৩৩ ৩৮.৪৫
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ২/৭২ ৫/৮৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/- ৩১/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৫ অক্টোবর ২০২০

নিয়াজ আহমেদ সিদ্দিকী (জন্ম: ১১ নভেম্বর, ১৯৪৫ - মৃত্যু: ১২ এপ্রিল, ২০০০) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বারাণসী এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পাকিস্তানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬০-এর দশকের শেষার্ধ্বে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানি ক্রিকেটে ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তান রেলওয়েজ ও পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন নিয়াজ আহমেদ

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে ১৯৭৩-৭৪ মৌসুম পর্যন্ত নিয়াজ আহমেদের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বারাণসীতে নিয়াজ আহমেদের জন্ম। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় চলে আসেন।[১] ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার ও নিচেরসারির ব্যাটসহ হিসেবে মার্চ, ১৯৬৫ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে ঢাকার সদস্যরূপে করাচী হোয়াইটসের বিপক্ষে খেলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে তিনটি ক্যাচ ও তিনটি উইকেট লাভ করেন।[২]

পাকিস্তান পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।[১] মে, ১৯৬৬ সালে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে মেরিলেবোন অনূর্ধ্ব-২৫ ক্রিকেট দল পাকিস্তান গমনে আসে। দলটি পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-২৫ দলের বিপক্ষে তিনটি খেলায় অংশ নেন। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় খেলায় অংশ নেন। এক উইকেট লাভ করেন তিনি।[৩]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন নিয়াজ আহমেদ। সবগুলো টেস্টই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি। ১০ আগস্ট, ১৯৬৭ তারিখে নটিংহামে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে ঢাকায় একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

প্রথম পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় তিনি মাত্র ৮৪ ওভার বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ পর্যায়ে সাত উইকেট লাভ করেন তিনি।[৪] ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাকে পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে রাখা হয়। দলীয় সঙ্গীদের আঘাতের কারণে ১৭টি প্রথম-শ্রেণীর খেলার মধ্যে তিনি ১১টি খেলায় অংশ নেন। এরফলে, অন্য যে-কোন পেস বোলারের তুলনায় অধিক ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পান। ৩৪.৫২ গড়ে ২৫ উইকেট পেয়েছিলেন। এ সফর সম্পর্কে উইজডেনে কামারুদ্দিন বাট উল্লেখ করেছিলেন যে, দলের অন্যতম অর্জন ছিলেন তিনি।[৫]

ঐ সফরে নিজস্ব প্রথম খেলায় তিনি কেন্টের বিপক্ষে ৫/৮৬ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। এটিই তার পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ী জীবনে ইনিংসে তিনের অধিক উইকেট পেয়েছিলেন।[৬] মাইনর কাউন্টিজের বিপক্ষে খেলায় দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি যখন মাঠে নামেন তখন দলের সংগ্রহ ছিল ৯৪/৯ ও পাকিস্তান একাদশ মাত্র ৭২ রানে এগিয়েছিল। পূর্বে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ১৫ হলেও এ পর্যায়ে তিনি ৬৯ রান তুলেন। ভীতিহীন অবস্থায় ড্রাইভ ও সৌভাগ্যবশতঃ স্নিকিং করেন। সালাহউদ্দীনের সাথে শেষ উইকেট জুটিতে ১২৪ রান যুক্ত করেন। এরপর, শুরুরদিকে দুই উইকেট নিয়ে দলকে নাটকীয়ভাবে বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।[৭]

টেস্ট অভিষেক[সম্পাদনা]

সেলিম আলতাফের আঘাতপ্রাপ্তি ও আরিফ বাটের দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্যে তাকে দলে রাখা হয়। প্রথম ইনিংসে ৩৭ ওভার বোলিং করে ২/৭২ পান।[৮] নটিংহামে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে পাকিস্তান পরাজয়বরণ করে। সেলিম আফতাফ সুস্থ হলে তৃতীয় টেস্টে যোগ দেন ও তাকে দলের বাইরে রাখা হয়।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে সফররত আন্তর্জাতিক একাদশের বিপক্ষে বিসিসিপি একাদশের সদস্যরূপে খেলেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর সফররত কমনওয়েলথ একাদশের বিপক্ষে শক্তিধর সভাপতি একাদশের সদস্য হিসেবে খেললেও উল্লেখ করার মতো সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি তিনি। এছাড়াও, ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে এমসিসি’র বিপক্ষে আরেকটি বিসিসিপি একাদশের সদস্য হিসেবে খেলেন।[৯] ফলশ্রুতিতে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলার সুযোগ পান। তিনি পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় পেস বোলার আসিফ মাসুদের স্থলাভিষিক্ত হন। নিজের খেলার মান কিংবা মাসুদের খেলার ছন্দ হারানোর চেয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিবাদের কারণে বিসিসিপি পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাকে মনোনীত করতে বাধ্য হয়েছিল।[১] ড্র হওয়া ঐ খেলায় তিনি ১২ ওভার বোলিং করে একটিমাত্র উইকেটের সন্ধান পান।[১০] করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে আসিফ মাসুদকে দলে ফিরিয়ে আনা হলে তাকে দলের বাইরে রাখা হয়।

শাহরিয়ার খান এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, নিয়াজ আহমেদকে শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবেই ব্যবহার করা হয়নি। ঢাকার ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেটার নিয়াজ আহমেদকে কিছু সময় ধরে পাকিস্তানের দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে - পাকিস্তান সরকার কিংবা ক্রিকেট বোর্ড থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলা প্রসারণে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।[১১]

অবসর[সম্পাদনা]

১৯৬৮-৬৯ মৌসুমের পর তিনি আরও ১৪টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১২] এ পর্যায়ে তিনি আর মাত্র ১১টি উইকেট নিজের নামের সাথে যুক্ত করতে পেরেছিলেন।[৪] ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের পক্ষে নিজস্ব সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ অপরাজিত ৭১ রান তুলেন। দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বাহাওয়ালপুরের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে স্বল্প ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যান।[১৩]

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তিনি করাচীতে চলে যান।[১] ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের পক্ষে নিজস্ব শেষ দুই খেলায় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। শেষ খেলায় জয়লাভ করলেও অবৈধ খেলোয়াড়ের অন্তর্ভূক্তির প্রশ্নে তাকে প্যাট্রন্স ট্রফি থেকে বাদ দেয়া হয়।[১৪]

১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত অনেকগুলো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও লিস্ট এ খেলায় রেফারির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[১৫] ১২ এপ্রিল, ২০০০ তারিখে ৫৪ বছর বয়সে সিন্ধু প্রদেশের করাচী এলাকায় নিয়াজ আহমেদের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]