নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি | |
---|---|
![]() | |
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরির (Naegleria fowleri) জীবনচক্র (উপরের বাম থেকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে): ফ্ল্যাজেলেট দশা, ট্রফোজয়েট দশা ও সিস্ট দশা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ![]() | |
পর্ব: | Percolozoa |
শ্রেণি: | Heterolobosea |
বর্গ: | Schizopyrenida |
পরিবার: | Vahlkampfiidae |
গণ: | Naegleria কার্টার (১৯৭০) |
প্রজাতি: | N. fowleri |
দ্বিপদী নাম | |
Naegleria fowleri কার্টার (১৯৭০) |
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি (বৈজ্ঞানিক নাম: Naegleria fowleri), ব্যাপকভাবে “মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা” নামে পরিচিত,[টীকা ১] হলো পারকোলোজোয়া পর্বের নিগ্লেরিয়া গণের একটি প্রজাতি। এদের কার্যত প্রকৃত অ্যামিবা হিসেবে ধরা হয় না, বরং অ্যামিবার মতো আকৃতি পরিবর্তনকারী ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট এক্সকাভেট হিসেবে গণ্য করা হয়।[১] এরা একটি মুক্তজীবী, ব্যাকটেরিয়া-ভোজী অণুজীব, যা কখনো কখনো সংক্রামক হতে পারে। এরা মস্তিষ্কে অকস্মাৎ বর্ধনশীল (হঠাৎ রোগ লক্ষণ দেখা যায় এবং পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে) এবং মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যা নিগ্লেরিয়াসিস নামে পরিচিত। এ রোগকে অনেক সময় প্রাথমিক অ্যামিবাঘটিত ম্যামিনজোঅ্যানসেফালাইটিস-ও বলা হয়।[২] এই অণুজীবটি মিঠাপানির উষ্ণ জলাধার,[৩] যেমন পুকুর, হ্রদ,[৪] নদী, উষ্ণ প্রস্রবণ,[৫] শিল্প কারখানা বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত উষ্ণ পানি,[৬] উত্তপ্ত ভূগর্ভস্থ পানির উৎস,[৭] দুর্বলভাবে রক্ষিত বা নির্ধারিত মাত্রার কম ক্লোরিনযুক্ত (০.৫ মিলিগ্রাম/মিটার৩ এর কম) সুইমিং পুল,[৮] পানি উত্তাপক (ওয়াটার হিটার),[৯] এমনকি মাটিতেও এদের পাওয়া যায়। এদের অ্যামিবয়েড অথবা স্থায়ী ফ্ল্যাজেলেট দশায় পাওয়া যায়।[১০]
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরিয়াজনিত দূষণ যদিও খুব কম, তবুও যুক্তরাষ্ট্রে ২০১১, ২০১৩ ও ২০২০ সালে এই অণুজীবঘটিত মৃত্যু এবং ২০০৩ ও ২০২০ সালে দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্বের অন্যত্র দূষণের ক্ষেত্রে, ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০০৮ সালে পাকিস্তানে এদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।[২] ভারতের কেরলে জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত ৬ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।[১১]
নামের ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শিশু হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ম্যালকম ফাউলারের নামে এই অণুজীবের নামকরণ করা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম "প্রাথমিক অ্যামিবাঘটিত ম্যানিনজোঅ্যানসেফালাইটিস"-এ আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবেদন করেছিলেন।[১২][১৩]
জীবনচক্র
[সম্পাদনা]নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি তাপপ্রিয় মুক্তজীবী অ্যামিবা। এদের উষ্ণ মিঠাপানির পুকুর, হ্রদ ও নদী এবং অত্যুষ্ণ পানি বা উষ্ণ প্রস্রবণে পাওয়া যায়।[১৪] পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই অ্যামিবা ১৯৬৯ এর দশকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এদের জৈবিক বিবর্তন ঘটে বলে মনে করা হয়।[১৫] নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি মূলত তিনটি দশায় বিদ্যমান থাকে – সিস্ট, ট্রফোজয়েট (অ্যামিবয়েড; অ্যামিবার মতো) এবং বাইফ্ল্যাজেলেট। মানবদেহের টিস্যু বা কলায় অবস্থানকালে এরা সিস্ট গঠন করে না, বরং শুধুমাত্র অ্যামিবয়েড ট্রফোজয়েট দশায় বিদ্যমান থাকে। তবে সেরিব্রোস্পাইনাল তরলে এরা ফ্ল্যাজেলেট দশায় বিদ্যামান থাকতে পারে।
সিস্ট দশা
[সম্পাদনা]সিস্ট দশায় এরা অনেকটা গোলাকার এবং প্রায় ৭–১৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট। সিস্ট দশায় অণুজীবটি অনেকটা মসৃণ এবং একস্তরী প্রাচীরবেষ্টিত কোষে একটিমাত্র কেন্দ্রিকা (নিউক্লিয়াস) থাকে। সাধারণ অবস্থায় সিস্ট প্রতিকূল পরিবেশের প্রতি সহনশীল, যার কারণে এরা অনুকূল পরিবেশ ফিরে আসা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। ট্রফোজয়েট প্রতিকূল পরিবেশে সিস্ট দশা ধারণ করে। যে সমস্ত ঘটনার কারণে সিস্ট দশা ধারণ করে, সেগুলোর মধ্যে খাদ্যের অভাব, জনবাহুল্য, পানির অভাব, সঞ্চিত বর্জ্যের আধিক্য এবং নিম্ন তাপমাত্রা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।[১৬] অনুকূল পরিবেশের প্রত্যাবর্তন সাপেক্ষে অ্যামিবাগুলো সিস্টের মাঝ বরাবর অস্টিওল বা ছিদ্রপথে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। নিগ্লেরিয়া ফাউলেরিকে সাধারণত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রার নিচে সিস্ট দশা ধারণ করতে দেখা যায়।[১৭]
ট্রফোজয়েট দশা
[সম্পাদনা]ট্রফোজয়েট হলো অ্যামিবার খাদ্যগ্রহণ, বিভাজন ও মানবদেহের সংক্রামক দশা। এ দশায় অ্যামিবাগুলো অলফ্যাক্টরি আবরণীতে সংযুক্ত হয় এবং অলফ্যাক্টরি স্নায়ুকোষের অ্যাক্সনকে অনুসরণ করে নাসাগহ্বরের ক্রাইব্রিফর্ম পাতের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। ২৫ °সে (৭৭ °ফা) তাপমাত্রায় এরা ট্রফোজয়েট দশা লাভ করে এবং ৪২ °সে (১০৬.৭ °ফা) তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো বৃদ্ধি পায়। এই প্রোটোজোয়ান অণুজীব ট্রফোজয়েট দশায় দ্বিভাজন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে। একটিমাত্র নিউক্লিয়াস এবং এর আশেপাশের বলয় দ্বারা ট্রফোজয়েট দশা শনাক্ত করা যায়। এরা ছদ্মপদ বা সিউডোপোডিয়া দ্বারা চলাচল করে। অর্থাৎ এরা দেহের কোষঝিল্লিকে প্রসারিত করে (ছদ্মপদ) এবং পরবর্তীতে কোষের প্রোটোপ্লাজমকে সেদিকে ধাবিত করে স্থানান্তরিত হয়। কোষের যেকোনো দিকে ছদ্মপদ তৈরি হতে পারে, যার ফলে ট্রফোজয়েট যেকোনো দিকে চলাচল করতে সক্ষম। মুক্তজীবী অবস্থায় ট্রফোজয়েটগুলো ব্যাক্টেরিয়া ভক্ষণ করে বেঁচে থাকে। কোষকলা বা টিস্যুতে এরা লোহিত রক্তকণিকাকে ফ্যাটোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় (চারদিক থেকে কোষকে ঘিরে ফেলে এবং শিকারকে অন্তঃকোষীয় প্রক্রিয়ায় হজম করে) কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় এবং সাইটোলাইটিক (কোষবিধ্বংসী) উপাদান ক্ষরণের মাধ্যমে ধ্বংস করে বলে প্রতীয়মান হয়।[১৬]
ফ্ল্যাজেলেট দশা
[সম্পাদনা]ফ্ল্যাজেলেট দশা নাশপাতি-আকার এবং দ্বি-ফ্ল্যাজেলেট; অর্থাৎ এরা দুই ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট। এই দশায় অণুজীব সাঁতার কিংবা পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার সময় নাসারন্ধ্র দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। এই দ্বি-ফ্ল্যাজেলেট দশা তখনই দেখা যায় যখন ট্রফোজয়েটের বাহ্যিক পরিবেশে আয়ন ঘনত্বের তারতম্য ঘটে, যেমন পাতিত পানিতে স্থানান্তর। এই দশায় জীবাণু মানব কোষকলা বা টিস্যুতে দেখা যায় না, বরং সেরিব্রোস্পাইনাল তরলে এরা এ দশায় থাকতে পারে। নাসাগহ্বরে একবার প্রবেশ করলেই এরা ফ্ল্যাজেলেট দশা থেকে ট্রফোজয়েট দশায় রূপ নেয়। ফ্ল্যাজেলেট থেকে ট্রফোজয়েটে রূপান্তর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটতে পারে।[১৬]
বাস্তুতন্ত্র
[সম্পাদনা]নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি এক ধরনের অ্যাক্সকাভেট অণুজীব, যারা মাটি ও পানিতে বাস করে। এরা শুষ্কতা এবং অ্যাসিডের (অম্ল) প্রতি সংবেদনশীল। এরা সমুদ্রের লোনাপানিতে বাঁচতে পারে না। গ্রীষ্মকালে সাধারণত তাপমাত্রা বেড়ে যে মাত্রায় পৌঁছায়, সে তাপমাত্রায় এরা খুব ভালো বেড়ে ওঠতে পারে। তবুও এরা উষ্ণতাপ্রিয়, এমনকি ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায়ও এরা বেড়ে উঠতে পারে।[১৮] উষ্ণ, মিঠাপানিতে ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি ভালো হওয়ায়, তা অ্যামিবাদের খাদ্যের যথেষ্ট জোগান দেয়। মনুষ্যনির্মিত জলাধার, মনুষ্য সমাগমপূর্ণ প্রাকৃতিক অ্যামিবিক বসতি, মাটি এবং ক্লোরিনবিহীন বা অপর্যাপ্ত-পরিশোধিত জলো পরিবেশে অধিক সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি আবাসস্থলের বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও টিকে থাকতে সক্ষম বলে মনে করা হয়। ফ্ল্যাজেলেট-শূন্য অনুকল্প অনুসারে স্বাভাবিক, তাপসংবেদী প্রোটোজোয়ান প্রাণিদের সংখ্যাহ্রাসের কারণে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ায় নিগ্লেরিয়া এই সুবিধা পায় বলে মনে করা হয়। অন্য কথায়, একই ধরনের খাদ্য ভক্ষণকারী অণুজীবের সংখ্যা হ্রাসপ্রাপ্তি সাপেক্ষে নিগ্লেরিয়া ফাউলেরির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অনুকল্প অনুসারে অণুজীবসমূহের মানবসৃষ্ট বাসস্থান সমস্যা, যেমন পানির তাপ দূষণ প্রভৃতি কারণে বাসস্থান ও খাদ্যজনিত বাস্তুতান্ত্রিক প্রতিযোগী হ্রাস পাওয়ায় নিগ্লেরিয়া ফাউলেরির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে থাকে। অ্যামিবোফ্ল্যাজেলেট দশা হলো একটি সচল ফ্ল্যাজেলাযুক্ত দশা যা অণুজীবকে ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করে। বাস্তুতান্ত্রিক প্রতিযোগী অন্যান্য অণুজীবের সংখ্যা কমে যাওয়া সাপেক্ষে অ্যামিবাদের বিশেষ সুবিধা দেয়।
রোগ সংক্রমণ
[সম্পাদনা]
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি মস্তিষ্কের মারাত্মক ব্যাধি নিগ্লেরিয়াসিস ঘটাতে পারে, যা “প্রাথমিক অ্যামিবাঘটিত অ্যানসেফালাইটিস/ম্যানিনজাইটিস” বা সাধারণভাবে “নিগ্লেরিয়ার সংক্রমণ” নামে পরিচিত। নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি দ্বারা দূষিত পানি নাসারন্ধ্র দিয়ে নাকে (নাসাগহ্বরে) প্রবেশ করে এবং অলফ্যাক্টরি স্নায়ুকলার মাধ্যমে ক্রাইব্রিফর্ম পাতের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।[১৯] নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি সাধারণত ব্যাক্টেরিয়া খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু মানবদেহে সংক্রমণের সময় এদের ট্রফোজয়েট মস্তিষ্কের অ্যাস্ট্রোসাইট ও স্নায়ুকোষ ভক্ষণ করে। মস্তিষ্কে গমনপথ হিসেবে নিগ্লেরিয়ার ক্রাইব্রিওফর্ম পাত ব্যবহারের কারণ এখনও অজানা। তবে নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে অ্যাসিটাইলকোলিনের উপস্থিতি এই অণুজীবকে উদ্দীপিত করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এমনকি নিগ্লেরিয়া ও অ্যাকান্থামিবায় গাঠনিক সমসংস্থ প্রাণির অ্যাসিটাইলকোলিন গ্রাহক সিএইচআরএম১ উপস্থিত বলে প্রমাণিত হয়।[২০]
নাকের মাধ্যমে নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি ফ্ল্যাজেলেট প্রবেশের এক থেকে নয় দিনের মধ্যে (গড়ে পাঁচ দিন) সংক্রমণের উপসর্গ দেখা যায়।[২১] প্রাথমিক সংক্রমণের উপসর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাথাব্যথা, জ্বর এবং বমিভাব। পরবর্তী উপসর্গগুলোর মধ্যে ঘাড়ের দৃঢ়তা, বিভ্রান্তি, মনোযোগের অভাব, ভারসাম্যে সমস্যা, আকস্মিক ভারসাম্যহীনতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হ্যালুসিনেশন প্রভৃতি। সাধারণত লক্ষণ দেখা যাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে রোগী মারা যায়। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে অন্য ব্যক্তিতে এই রোগ সংক্রমিত হয় না। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪টি সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়।[২২]
প্রাণিদেহেও নিগ্লেরিয়া ফাউলেরির সংক্রমণ হতে পারে; যদিও এ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ খুবই কম। দক্ষিণ আমেরিকায় টাপির ও গবাদি পশুতে নিগ্লেরিয়াসিস হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার পরীক্ষামূলকভাবে ইঁদুর, গিনিপিগ ও ভেড়ার শরীরে অণুজীবের প্রবেশ ঘটিয়ে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। যদি অধিকাংশ সংক্রমণ অপর্যবেক্ষণকৃত বা অজ্ঞাত হয়ে থাকে, তবে প্রাণিতে সংক্রমণের হার প্রতিবেদনের তুলনায় অত্যধিক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।[২৩]
চিকিৎসা
[সম্পাদনা]নিগ্লেরিয়া সংক্রমণের মূল চিকিৎসার জন্য অ্যামফোটেরিসিন বি-যুক্ত ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।[২৪] এটি সংক্রামকের কোষঝিল্লির স্টেরলের সাথে যুক্ত হয়ে কোষঝিল্লিকে বিনষ্ট করে এবং অণুজীবের মৃত্যু ঘটিয়ে সংক্রমণ হ্রাস করে।[২৫] এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও নিগ্লেরিয়া সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৯৫% এরও বেশি।[২৬] এ ব্যবস্থায় নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থার খোঁজ করা হচ্ছে।[২৭] এছাড়াও মিল্টেফোসিন নামক একটি পরজীবীরোধী ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা পরজীবী কোষের বেঁচে থাকার সংকেতপথ পিআই৩কে/একেটি/এমটর-এর কার্যে বিঘ্ন ঘটায়।[২৮] তবে এই ওষুধ প্রয়োগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।[২৯]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- অ্যাকান্থামিবা – মানবদেহে অ্যামিবাঘটিত কেরাটাইটিস এবং অ্যানসেফালাইটিস সৃষ্টিকারী অ্যামিবা
- ব্যালামুথিয়া ম্যান্ড্রিলারিস – অ্যামিবাঘটিত গ্র্যানুলোমেটাস ম্যানিনজোঅ্যানসেফালাইটিস সৃষ্টিকারী (প্রায়শই প্রাণঘাতী) সৃষ্টিকারী অ্যামিবা
- এন্টামিবা হিস্টোলিকা – অ্যামিবায়াসিস বা অ্যামিবাঘটিত উদরাময় সৃষ্টিকারী অ্যামিবা
- লেপ্টোস্পাইরা – লেপ্টোস্পাইরোসিস সৃষ্টিকারী জুনোটিক ব্যাক্টেরিয়া
- মেসিথিলিন-প্রতিরোধী স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস (এমআরএসএ)
- টক্সোপ্লাজমা গন্ডি – টক্সোপ্লাজমোসিস সৃষ্টিকারী প্রাণিবাহিত প্রোটোজোয়া
- ভিব্রিও ভালনিফাইকাস – উষ্ণ লোনাপানিতে বসবাসকারী ব্যাক্টেরিয়া
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ বেলামুথিয়া ম্যানড্রিলারিস (Balamuthia mandrillaris) নামের একটি বিসদৃশ এবং আরও প্রাণঘাতী স্নায়ুরোগ সৃষ্টিকারী প্রোটিস্টানকে সাধারণভাবে মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা বলা হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ শাস্টার, ফ্রেডেরিক এল এবং গোবিন্দ এস বিশ্বেশ্বর। "Free-living Amoebae as Opportunistic and Non-opportunistic Pathogens of Humans and Animals." ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ফর প্যারাসাইটোলজি ৩৪.৯ (২০০৪): ১০০১–১০২৭। ওয়েব।
- ↑ ক খ "Texas residents warned of tap water tainted with brain-eating microbe" [মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবায় দূষিত ট্যাপের পানি ব্যবহারে টেক্সাসে সতর্কতা জারি]। দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। গার্ডিয়ান মিডিয়া গ্রুপ। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ ম্যাক্লিন, রেবেকা সি; রিচার্ডসন, ডেনিস জে; লেপার্ডো, রবিন; মার্সিয়ানো-স্যাব্রাল, ফ্র্যাঙ্কাইন (২০০৪)। "The identification of Naegleria fowleri from water and soil samples by nested PCR"। প্যারাসাইটোলজি রিসার্চ। ৯৩ (৩)। আইএসএসএন 0932-0113। ডিওআই:10.1007/s00436-004-1104-x।
- ↑ ওয়েলিংস এফ এম, আমুসো পিটি, চ্যাং এস এল, লেউইস এ এল (১৯৭৭)। "Isolation and identification of pathogenic Naegleria from Florida lakes."। Appl Environ Microbiol। 34 (6): 661–7। পিএমআইডি 596870। পিএমসি 242727
।
- ↑ Sheehan, Kathy B.; Fagg, Jennifer A.; Ferris, Michael J.; Henson, Joan M. (২০০৩)। "PCR Detection and Analysis of the Free-Living Amoeba Naegleria in Hot Springs in Yellowstone and Grand Teton National Parks"। Applied and Environmental Microbiology। 69 (10): 5914–5918। আইএসএসএন 0099-2240। ডিওআই:10.1128/AEM.69.10.5914-5918.2003
।
- ↑ Sykora JL, Keleti G, Martinez AJ (১৯৮৩)। "Occurrence and pathogenicity of Naegleria fowleri in artificially heated waters."। Appl Environ Microbiol। 45 (3): 974–9। পিএমআইডি 6847189। পিএমসি 242399
।
- ↑ Marciano-Cabral, Francine; MacLean, Rebecca; Mensah, Alex; LaPat-Polasko, Laurie (২০০৩)। "Identification of Naegleria fowleri in Domestic Water Sources by Nested PCR"। Applied and Environmental Microbiology। 69 (10): 5864–5869। আইএসএসএন 0099-2240। ডিওআই:10.1128/AEM.69.10.5864-5869.2003
।
- ↑ Yoder, J. S.; Eddy, B. A.; Visvesvara, G. S.; Capewell, L.; Beach, M. J. (২০০৯)। "The epidemiology of primary amoebic meningoencephalitis in the USA, 1962–2008"। Epidemiology and Infection। 138 (7): 968–975। আইএসএসএন 0950-2688। ডিওআই:10.1017/S0950268809991014।
- ↑ Yoder, J. S.; Straif-Bourgeois, S.; Roy, S. L.; Moore, T. A.; Visvesvara, G. S.; Ratard, R. C.; Hill, V. R.; Wilson, J. D.; Linscott, A. J.; Crager, R.; Kozak, N. A.; Sriram, R.; Narayanan, J.; Mull, B.; Kahler, A. M.; Schneeberger, C.; da Silva, A. J.; Poudel, M.; Baumgarten, K. L.; Xiao, L.; Beach, M. J. (২০১২)। "Primary Amebic Meningoencephalitis Deaths Associated With Sinus Irrigation Using Contaminated Tap Water"। Clinical Infectious Diseases। 55 (9): e79–e85। আইএসএসএন 1058-4838। ডিওআই:10.1093/cid/cis626
।
- ↑ "General Information: Naegleria fowleri" (ইংরেজি ভাষায়)। Centers for Disease Control and Prevention (CDC)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-১৪।
- ↑ দূষিত জল থেকে সংক্রমণ, ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা-র আক্রমণে ভারতের কেরলে মৃত ছয়, ভয়েজ অব আমেরিকা, ১১ জুলাই ২০২৩
- ↑ Fowler, M.; Carter, R.F. (সেপ্টেম্বর ২৫, ১৯৬৫)। "Acute Pyogenic Meningitis Probably due to Acanthamoeba sp.: a Preliminary Report"। British Medical Journal। 5464 (2): 740–742। ডিওআই:10.1136/bmj.2.5464.734-a। পিএমআইডি 5825411। পিএমসি 1846173
।
- ↑ "The discovery of amoebic meningitis in Northern Spencer Gulf towns"। samhs.org। South Australian Medical Heritage Society Inc। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৫, ২০১৯।
- ↑ Laseke I, Korte J, Lamendella R, Kaneshiro ES, Marciano-Cabral F, Oerther DB (জানুয়ারি ২০১০)। "Identification of Naegleria fowler in warm ground water aquifers"। Journal of Environmental Quality। 39 (1): 147–153। ডিওআই:10.2134/jeq2009.0062। পিএমআইডি 20048302। পিএমসি 6844256
।
- ↑ "Brain-eating-amoeba"। WebMD। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৫।
- ↑ ক খ গ Marciano-Cabral, F (১৯৮৮)। "Biology of Naegleria spp"। Microbiological Reviews। 52 (1): 114–133। ডিওআই:10.1128/MMBR.52.1.114-133.1988। পিএমআইডি 3280964। পিএমসি 372708
।
- ↑ Chang, SL (১৯৭৮)। "Resistance of pathogenic Naegleria to some common physical and chemical agents"। Applied and Environmental Microbiology। 35 (2): 368–375। ডিওআই:10.1128/AEM.35.2.368-375.1978। পিএমআইডি 637538। পিএমসি 242840
।
- ↑ "General Information | Naegleria fowleri | CDC"। www.cdc.gov (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৭-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৩।
- ↑ Baig, AM (আগস্ট ২০১৫)। "Pathogenesis of amoebic encephalitis: Are the amoebae being credited to an 'inside job' done by the host immune response?"। Acta Trop.। 148: 72–76। ডিওআই:10.1016/j.actatropica.2015.04.022। পিএমআইডি 25930186।
- ↑ Baig, AM (আগস্ট ২০১৬)। "Primary Amoebic Meningoencephalitis: Neurochemotaxis and Neurotropic Preferences of Naegleria fowleri"। ACS Chem Neurosci। 7 (8): 1026–1029। ডিওআই:10.1021/acschemneuro.6b00197
। পিএমআইডি 27447543।
- ↑ "Naegleria fowleri – Primary Amebic Meningoencephalitis (PAM) – Amebic Encephalitis: Illness & Symptoms"। Centers for Disease Control and Prevention (CDC)। মে ১১, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "General Information - Naegleria fowleri - CDC"। CDC.gov। Centers for Disease Control and Prevention (CDC)। মে ১৩, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৭, ২০২০।
30 people were infected by recreational water, 3 people were infected after performing Nasal irrigation using contaminated tap water, and 1 person was infected by contaminated tap water used on a backyard slip-n-slide.
- ↑ "Naegleria Fowleri in Animals". Louisiana Dept of Health & Hospitals, 25 September 2013.
- ↑ Subhash Chandra Parija (নভে ২৩, ২০১৫)। "Naegleria Infection Treatment & Management"। Medscape। নভেম্বর ১৩, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Asbill, Scott, and Kris Virga. "Naegleria Fowleri: Pathogenesis, Diagnosis, and Treatment Options." Antimicrobial Agents and Chemotherapy, American Society for Microbiology Journals, 1 Nov. 2015, aac.asm.org/content/59/11/6677.
- ↑ Cetin, N; Blackall, D (এপ্রিল ২০১২)। "Naegleria fowleri meningoencephalitis"। Blood। 119 (16): 3658। ডিওআই:10.1182/blood-2011-06-353136। পিএমআইডি 22645743।
- ↑ Wessel, Lindzi (২২ জুলাই ২০১৬)। "Scientists scour the globe for a drug to kill deadly brain-eating amoeba"। STAT। ৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০২০।
- ↑ Asbill, Scott; Virga, Kris (২০১৫)। "Naegleria Fowleri: Pathogenesis, Diagnosis, and Treatment Options"। Antimicrobial Agents and Chemotherapy। 59: 6677।
- ↑ Wessel, Linda (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "A life-saving drug that treats a rare infection is almost impossible to find"। Business Insider। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
- নিগ্লেরিয়া সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র
- নিগ্লেরিয়া ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে, ট্রি অব লাইফ ওয়েব প্রজেক্ট
- নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ আগস্ট ২০২০ তারিখে, প্যারাসাইট (২০০৪), স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়