বিষয়বস্তুতে চলুন

নিখুঁত সংখ্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অনেক নিখুঁত সংখ্যা আছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ৪৯৬

সংখ্যাতত্ত্বে নিখুঁত সংখ্যা (ইংরেজি: Perfect number) হল সেই সমস্ত পূর্ণ সংখ্যা, যাদের প্রকৃত ধনাত্মক গুণনীয়কগুলি যোগ করলে সেই সংখ্যাটিই পাওয়া যায়, অর্থাৎ ঐ সংখ্যাটি বাদে সংখ্যাটির অন্যান্য ধনাত্মক উৎপাদকগুলির সমষ্টি সংখ্যাটির সমান হয়। অন্যভাবে, নিঁখুত সংখ্যা হল এর সকল ধনাত্মক বিভাজকসমূহের যোগফলের অর্ধেক (ঐ সংখ্যাটি সহ), অথবা σ(n) = 2n

সংজ্ঞাটি অনেক পুরোনো, যেটা দেখা গিয়েছিল ইউক্লিডের উপাদান এ যেখানে একে বলা হয় τέλειος αριθμός (নিখুঁত, আদর্শ অথবা সম্পূর্ণ সংখ্যা)। ইউক্লিড একটি গাঠনিক নিয়মও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যেখানে P(P+1)÷2 হল একটি জোড় নিখুঁত সংখ্যা, এখানে P হল একটি মার্সেন মৌলিক সংখ্যা। অনেক পরে অয়লার প্রমাণ করেন সকল জোড় নিখুঁত সংখ্যাই এই গঠনের। এটি এখনও জানা যায়নি আদৌ কোনো বিজোড় নিখুঁত সংখ্যা আছে কিনা।

উদাহরণ

[সম্পাদনা]

প্রথম নিখুঁত সংখ্যাটি হল ৬ কারণ ১,২,৩ এটির প্রকৃত ধনাত্মক গুণনীয়ক এবং ১+২+৩ = ৬। একইভাবে ৬ হচ্ছে এর সকল ধনাত্মক গুণনীয়কগুলোর যোগফলের অর্ধেক (১+২+৩+৬)÷২ = ৬। পরবর্তী নিখুঁত সংখ্যা হচ্ছে ২৮ = ১+২+৪+৭+১৪। তার পরে আছে ৪৯৬ এবং ৮১২৮।

আবিষ্কার

[সম্পাদনা]

প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদরা কেবল প্রথম ৪টি নিখুঁত সংখ্যার কথাই জানতেন এবং গণিতবিদ নিকমাকুস ৮,১২৮ নিবন্ধন করেছিলেন ১০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে। একজন নাম না জানা গণিতবিদ এক নথিতে সবচেয়ে আগে পঞ্চম নিখুঁত সংখ্যা ৩,৩৫,৫০,৩৩৬ উল্লেখ করেন যেটা লেখা হয়েছিল ১৪৫৬ থেকে ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, এবং সেখানেই প্রথম পঞ্চম নিখুঁত সংখ্যাটি সঠিকভাবে পাওয়া যায়। ১৫৮৮ সালে একজন ইতালীয় গণিতবিদ পেত্র কাতালদি ষষ্ঠ (৮৫৮, ৯৮,৬৯,০৫৬) এবং সপ্তম (১৩,৭৪৩,৮৬,৯১,৩২৮) নিখুঁত সংখ্যা আবিষ্কার করেন।

জোড় নিখুঁত সংখ্যা

[সম্পাদনা]

ইউক্লিড প্রমাণ করেন p-১(২p-১) একটি জোড় নিখুঁত সংখ্যা যেখানে p-১ একটি মৌলিক সংখ্যা (Euclid, Prop. IX.36)।

উদাহরণস্বরূপ , p-১(২p-১), যেখানে p একটি মৌলিক সংখ্যা, সূত্র দ্বারা উৎপন্ন প্রথম চারটি নিখুঁত সংখ্যা হল:

p = ২ এর জন্য -১(২-১) = ৬
p = ৩ এর জন্য -১(২-১) = ২৮
p = ৫ এর জন্য -১(২-১) = ৪৯৬
p = ৭ এর জন্য -১(২-১) = ৮১২৮

p-১ এই গঠনের মৌলিক সংখ্যাগুলোকে বলা হয় মার্সেন মৌলিক সংখ্যা। এদের নাম রাখা হয় সপ্তদশ শতকের একজন সন্ন্যাসী মারাঁ মের্সেন এর নাম অনুসারে, যিনি সংখ্যাতত্ত্ব এবং নিখুঁত সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। p-১ মৌলিক সংখ্যা হতে হলে অবশ্যই p মৌলিক সংখ্যা হতে হবে। তবে, p মৌলিক হলেও p-১ গঠনের সব সংখ্যা মৌলিক নয়। যেমন ১১-১ = ২০৪৭ = ২৩ × ৮৯, যা মৌলিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মের্সেন মৌলিক সংখ্যা খুবই দুর্লভ। ১ থেকে ২৫,৯৬৪,৯৫১ এর মধ্যে ১,৬২২,৪৪১ গুলো মৌলিক সংখ্যার জন্য, অর্থাৎ p এর মানের জন্য মাত্র ৪২ টি p-১ গঠনের মৌলিক সংখ্যা।

ইউক্লিডের পর প্রায় হাজার বছর পর, ১০০০ খ্রিস্টাব্দে আল- হেজেন (ইংরেজি: Ibn al-Haytham) অনুমান করেন জোড় মৌলিক সংখ্যাগুলো p-১(২p-১) গঠনের, যেখানে p-১ মৌলিক সংখ্যা। কিন্তু তিনি সেটি প্রমাণ করতে সক্ষম হননি। ১৮ শতকে এসে লিওনার্ট অয়লার প্রমাণ করেন p-১(২p-১) সূত্রটি সব জোড় নিখুঁত সংখ্যা দেবে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]