নিখিল চক্রবর্তী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিখিল চক্রবর্তী
জন্ম৩ নভেম্বর, ১৮১৩
মৃত্যু২৭ জুন, ১৯৯৮ (বয়স ৮৫)
মাতৃশিক্ষায়তনপ্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা
মার্টন কলেজ, অক্সফোর্ড
পেশাখ্যাতনামা সাংবাদিক
রাজনৈতিক ভাষ্যকার
দাম্পত্য সঙ্গীরেণু চক্রবর্তী
সন্তানসুমিত চক্রবর্তী
পিতা-মাতানরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (পিতা)
শৈলজাদেবী (মাতা)
পুরস্কারপদ্মভূষণ (প্রত্যাখ্যাত)

নিখিল চক্রবর্তী (ইংরেজি: Nikhil Chakravarty) ( জন্ম ৩ নভেম্বর , ১৯১৩ - মৃত্যু ২৭ জুন, ১৯৯৮) খ্যাতনামা সাংবাদিক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার। [১]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

নিখিল চক্রবর্তীর জন্ম অসমের শিলচরে। পিতা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজির অধ্যাপক । মাতা শৈলজা দেবী ছিলে বিদুষী । কলকাতার বেথুন কলেজের প্রথম দিকের স্নাতক । নিখিল কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের কৃতি ছাত্র ছিলেন। সেখান থেকে ইতিহাসে বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম. এ পাশ করেন । পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টন কলেজে পড়ার সময় তিনি অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন । কেননা তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের 'সিপাহী বিদ্রোহ' কে ভারতের 'স্বাধীনতার যুদ্ধ' হিসাবে অভিহিত করেন। লণ্ডনে থাকার সময়ই অন্য অনেক সতীর্থের মতো মার্কসবাদী আদর্শে দীক্ষিত হন। লণ্ডনে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে আলোচনা সময়ই ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ভ্রাতুষ্পুত্রী সাধন রায়ের কন্যা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রেণু রায়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ও স্বদেশে ফিরে তারা বিবাহ করেন ।

সাংবাদিক জীবন[সম্পাদনা]

লণ্ডন থেকে কলকাতায় ফিরে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। কিছু দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করার পর পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র 'পিপল্স এজ' পত্রিকায় যোগ দেন। তার স্ত্রী রেণু চক্রবর্তী ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে দিল্লি গেলে নিখিল চক্রবর্তীও দিল্লিতে গিয়ে সেখানেই তার কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলেন । প্রথমে ফ্রিলান্স সাংবাদিক ও পরে অরুণা আসফ আলীর 'পেট্রিয়ট ' পত্রিকা শুরু হলে তিনি সেখানে যোগ দেন । ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'দ্য ইণ্ডিয়ান প্রেস এজেন্সি' নামে একটি সংবাদ সংস্থা গঠন করেন। নিজের মত ধারণা বক্তব্য নিয়ে 'মেইনস্ট্রিম' নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকেন ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে । ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হলে তিনি সি.পি.আই-তে থেকে যান। যদিও বরাবরই তিনি বাম রাজনীতি, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থক ছিলেন, তবে বেশি দিন পার্টির সদস্য থাকেননি । তিনিই সম্ভবত একমাত্র সাংবাদিক যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন আফগানিস্তানে নাজিমুল্লা সরকার গঠিত হলে সেখানে যান এবং পরে তার পুত্র সুমিতকেও পাঠান। সাংবাদিকতা সূত্রে পাকিস্তানেও গিয়েছেন কয়েকবার । তিনি একমাত্র ভারতীয় সাংবাদিক যিনি চীন-পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে গিলগিট অঞ্চলে গঠিত কোরম হাইওয়েতে গিয়েছিলেন।

দেশে জরুরি অবস্থার দিনে[সম্পাদনা]

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তার 'মেইনস্ট্রিম' পত্রিকায় প্রথমেই জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা টি মুদ্রিত হয় । সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের প্রতিবাদে সম্ভবত ঠিক তার পরের সংখ্যাতেই প্রচ্ছদে মুদ্রিত হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা "হোয়ার দি মাইন্ড ইজ উইদাউট ফিয়ার" আর ফর্মাটের ভিতর সব পৃষ্ঠা সাদা । ইন্দিরা গান্ধী যখন পুত্র সঞ্জয়কে তার উত্তরসূরি হিসাবে স্থান দিতে চলেছেন, তখন তীব্র ব্যঙ্গ করে পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে লেখেন "স্প্রিং চিকেন" শিরোনামে এক রচনা । জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে তার লড়াই তাঁকে বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল । আর নিজে দৃঢ় প্রত্যয়েই কলম ধরেছেন । ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে "পদ্মভূষণ" এ সম্মানিত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তার বক্তব্য ছিল কোনো সাংবাদিকের সরকারি খেতাব নেওয়া উচিত নয়।

সরকারী প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা দিয়ে যখন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রসার-ভারতী গঠিত হয়, তার পর্ষদে তিনি সর্বপ্রথম "চেয়ারম্যান" পদে বৃত হন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন । জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির সাংবাদিকদের সংগঠন "নামোডিয়া ফাউন্ডেশনের" ও প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি ।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

নিখিল চক্রবর্তী ৮৫ বৎসর বয়সে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে জুন পরলোক গমন করেন ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৯২,১৯৩ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬