নাহি সূর্য, নাহি জ্যোতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নাহি সূর্য, নাহি জ্যোতি 
স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক রচিত
১৮৮৭ সালে মাদ্রাজে বিবেকানন্দ
দেশভারত
ভাষাবাংলা

নাহি সূর্য, নাহি জ্যোতি বা প্রলয় হল স্বামী বিবেকানন্দের লেখা একটি বাংলা গান। গানটি পরবর্তীকালে দ্য হিম অফ সমাধি (ইংরেজি: The Hymn of Samadhi) শিরোনামে ইংরেজিতে অনুদিত হয়।[১][২]

এই গানটিতে বিবেকানন্দ "নির্বিকল্প সমাধি" এবং হিন্দু দর্শনে উক্ত "আত্মা" ধারণাটি বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন।[১][৩] একাধিক শিল্পী বিভিন্ন সময় এই গানটি গেয়েছেন।

গান[সম্পাদনা]

ইংরেজি বাংলা
The Hymn of Samadhi (অংশবিশেষ)

Lo! The sun is not, nor the comely moon,
All light extinct; in the great void of space
Floats shadow-like the image-universe.

In the void of mind involute, there floats
The fleeting universe, rises and floats,
Sinks again, ceaseless, in the current "I".

নাহি সূর্য নাহি জ্যোতিঃ নাহি শশাঙ্ক সুন্দর।
ভাসে ব্যোমে ছায়া-সম ছবি বিশ্ব-চরাচর॥
অস্ফুট মন আকাশে, জগত সংসার ভাসে,
ওঠে ভাসে ডুবে পুনঃ অহং-স্রোতে নিরন্তর॥
ধীরে ধীরে ছায়া-দল, মহালয়ে প্রবেশিল,
বহে মাত্র ‘আমি আমি’ — এই ধারা অনুক্ষণ॥
সে ধারাও বদ্ধ হল, শূন্যে শূন্য মিলাইল,
‘অবাঙমনসোগোচরম্’, বোঝে — প্রাণ বোঝে যার॥[৪]

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

এই গানে বিবেকানন্দ "নির্বিকল্প সমাধির" অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন।[৪] এই বর্ণনায় তিনি বলেছেন, নির্বিকল্প সমাধি অবস্থায় তিনি এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, যেখানে সূর্য, চাঁদ বা কোনো ধরনের আলোই ছিল না। তিনি দেখছিলেন, সমগ্র মহাবিশ্ব আকাশে একটি ছায়ার মতো ভাসছিল। মহাবিশ্ব উত্থিত হচ্ছিল, ভাসছিল এবং ডুবে যাচ্ছিল। এই প্রক্রিয়া নিরন্তর চলছিল। আস্তে আস্তে এই ছায়াগুলি একটি বিরাট গর্ভে প্রবেশ করছিল। 'আমি', 'আমি' এই ধারা বয়ে যাচ্ছিল। তারপর সেই ধারাও বন্ধ হয়ে শূন্যে মহাশূন্য মিলিয়ে গেল। তিনি সমাধি অবস্থায় প্রবেশ করলেন। এই সমাধি অবস্থা মন ও বাক্যের অগোচর।[৩]

অন্যত্র বিবেকানন্দ "নির্বিকল্প সমাধি" সম্পর্কে বলেছেন—[৫]

যদি জগৎ মিথ্যা হয়, তবে তুমি জীবের নির্বিকল্প সমাধি ও তার ফলে উত্থিত রূপগুলিকে আপাত-কল্পনা ভাবতে পারো। জীব স্বরূপত ব্রহ্ম। তাঁর বন্ধন কীভাবে সম্ভব? তুমি যে ব্রহ্ম সেই সত্য উপলব্ধি করার তোমার যে ইচ্ছা তাও এক্ষেত্রে মনের কল্পনা-- কারণ শাস্ত্রে বলেছে "তুমিই সেই" (তত্ত্বমসি)। তাই "(সংস্কৃত)—তুমি যে সমাধি অবস্থায় যাওয়ার চেষ্টা করছ, এটাই তোমার বন্ধন।"

গীতিরূপ[সম্পাদনা]

এই গানটি বাগেশ্রী রাগ ও আড়া ঠেকা তালে নিবদ্ধ।

ব্যবহার[সম্পাদনা]

অজয় চক্রবর্তী, শ্রীকান্ত আচার্য, অনুপ জালোটা প্রমুখ শিল্পীরা এই গানটি রেকর্ড করেছেন। রামকৃষ্ণ মিশন প্রকাশিত বীরবাণী কম্প্যাক্ট ডিস্কেও স্বামী সর্বগানন্দের কণ্ঠে গানটি প্রকাশিত হয়েছে।[৬]

২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য লাইট: স্বামী বিবেকানন্দ চলচ্চিত্রেও এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই ছবিতে নচিকেতা চক্রবর্তী গানটি গেয়েছেন।

সূত্র[সম্পাদনা]

পাদটীকা
  1. Chakrabarti 1998, পৃ. 47–48
  2. Surath Chandra Chakravarti (১৯৮৪)। Mysterious samadhi। Firma KLM। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১৩ 
  3. Vivekananda 1975, পৃ. 57
  4. "A Song on Samadhi"। Vedanta Centre Greater Washington। ২৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৩ 
  5. "Conversations And Dialogues/VI"। Wikisource। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৩ 
  6. "Veer Vani"। Ramakrishna Mission 
তথ্যসূত্র