নাসির মুহাম্মাদ
নাসির মুহাম্মাদ الناصر محمد | |||||
---|---|---|---|---|---|
মিশর ও সিরিয়ার সুলতান (প্রথম শাসন) | |||||
রাজত্ব | ডিসেম্বর ১২৯৩ - ডিসেম্বর ১২৯৪ | ||||
পূর্বসূরি | আশরাফ খলিল | ||||
উত্তরসূরি | কিতবুগা | ||||
রাজপ্রতিভূ | কিতবুগা | ||||
দ্বিতীয় শাসন | |||||
রাজত্ব | ১৬ জানুয়ারি ১২৯৯ – মার্চ ১৩০৯ | ||||
পূর্বসূরি | লাজিন | ||||
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় বাইবার্স | ||||
রাজপ্রতিভূ | দ্বিতীয় বাইবার্স ও সাইফুদ্দিন সালার | ||||
তৃতীয় শাসন | |||||
রাজত্ব | ৫ মার্চ ১৩১০ – ৭ জুন ১৩৪১ | ||||
পূর্বসূরি | দ্বিতীয় বাইবার্স | ||||
উত্তরসূরি | সাইফুদ্দিন আবু বকর | ||||
জন্ম | ১৬ মুহাররম ৬৮৪ হি. (২৪ মার্চ ১২৮৫) কায়রো, মামলুক মিশর | ||||
মৃত্যু | ২১ জিলহজ্জ ৭৪১ হি. (৭ জুন ১৩৪১) (বয়স ৫৬)[১] | ||||
স্ত্রী |
| ||||
বংশধর | |||||
| |||||
রাজবংশ | কালাউনি | ||||
রাজবংশ | বাহরি | ||||
পিতা | কালাউন | ||||
মাতা | আশলুন বিনত শাকতায় |
মালিকুন নাসির নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে কালাউন (আরবি: الملك الناصر ناصر الدين محمد بن قلاوون; ১২৮৫ – ১৩৪১) ছিলেন মিশরের নবম বাহরি মামলুক সুলতান। তিনি সাধারণত নাসির মুহাম্মদ (আরবি: الناصر محمد) নামে পরিচিত। অথবা তার কুনিয়া আবুল মাআলি (মিশরীয় আরবি: أبو المعالى) বা ইবনে কালাউন নামেও তাকে সম্বোধন করা হয়। তিনি তিনবার মিশর ও সিরিয়া শাসন করেছিলেন: প্রথমবার ডিসেম্বর ১২৯৩ — ডিসেম্বর ১২৯৪ পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার ১২৯৯ — ১৩০৯ পর্যন্ত। এবং সর্বশেষ ১৩১০ — ১৩৪১ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত।
জীবন
[সম্পাদনা]নাসির মুহাম্মাদ ছিলেন সুলতান কালাউনের কনিষ্ঠ পুত্র এবং সুলতান আশরাফ খলিলের ভাই। তিনি কায়রোতে কালআতুল জাবালে (পর্বতের দুর্গ) জন্মগ্রহণ করেন।[২][৩] তার পিতা কিপচাক উপজাতির তুর্কি বংশোদ্ভূত এবং মাতা মঙ্গোল বংশোদ্ভূত ছিলেন।
নাসির মুহাম্মাদ একজন তুর্কি মহিলা খাওয়ান্দ তোগাইকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি প্রথমে তাঁর দাসী ছিলেন কিন্তু তিনি তাকে মুক্ত করে বিয়ে করেন। তিনি রাজকুমার অনুকের জন্ম দেন।[৪][৫]
তাঁর শাসনকাল তিনটি পর্যায়ে ছিল, কারণ তিনি একবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন এবং একবার নিজেই পদত্যাগ করেছিলেন।
প্রথম শাসন
[সম্পাদনা]১২৯৩ সালের ডিসেম্বরে আশরাফ খলিলের হত্যার পর নাসির মুহাম্মাদকে সুলতান বানানো হয়। যাইনুদ্দিন কিতবুগাকে সহশাসক এবং নায়েবে সুলতান আর আমির 'আলমুদ্দিন সানজার শুজায়ী মানসুরি' (عَلَمُ الدِّينِ سَنْجَرُ الشُّجَاعِيُّ المَنْصُورِيُّ)-কে উজির হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন নাসির মুহাম্মাদের বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর, তিনি কেবল নামেই সুলতান ছিলেন। কিতবুগা এবং সানজার শুজায়ী ছিলেন মিশরের প্রকৃত শাসক। মঙ্গোল বংশোদ্ভূত কিতবুগা এবং তুর্কি বংশোদ্ভূত শুজায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এবং একে অপরের সাথে মিলিত হননি। শুজায়ী বুর্জি মামলুকদের সমর্থনে কিতবুগাকে গ্রেপ্তার করার এবং তার আমিরদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কিতবুগা দুর্গ অবরোধ করেন। তিনি শুজায়ীকে হত্যা করেন এবং বুর্জিদের অপসারণের মধ্য দিয়ে সংঘর্ষের অবসান ঘটে।
আশরাফ খলিলকে হত্যার পর আমির হুসামুদ্দিন লাজিন যখন কায়রোতে ফিরে আসেন, তখন বুর্জি মামলুকরা; যারা মামালিকুল আশরাফিয়াহ খলিল (আশরাফ খলিলের মামলুক) নামে পরিচিত ছিল এবং যাদেরকে কিতবুগা দুর্গ থেকে অপসারণ করেছিলেন- বিদ্রোহ করেছিলেন এবং কায়রোতে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন। কারণ লাজিন তাদের হিতৈষী সুলতান আশরাফ খলিলের হত্যায় জড়িত থাকার পরও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং শাস্তি দেওয়া হয়নি। আশরাফিয়াহরা পরাজিত হয় এবং তাদের অনেককে হত্যা করা হয় এবং ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। লাজিন কিতবুগাকে নাসির মুহম্মাদকে পদচ্যুত করতে প্ররোচিত করেন। আর আশরাফিয়াহ এবং নাসির মুহাম্মাদ আশরাফ খলিলের হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে কিতবুগা হতে প্রতিশোধ নেবে বলে বিশ্বাস করান। যার ফলে কিতবুগা নিজেকে সুলতান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে রাজি হন। কিতবুগা নাসিরকে পদচ্যুত করে নিজেই সালতানাতের দাবি করেন এবং লাজিনকে নায়েবে সুলতান হিসেবে নিয়োগ দেন। নাসিরের বয়স তখন মাত্র দশ বছর। তাকে তার মায়ের সাথে প্রাসাদের অন্য একটি প্রদেশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল যেখানে তারা কারাকে পাঠানোর আগ পর্যন্ত সেখানে থেকেছিলেন। এভাবে নাসিরের প্রথম রাজত্বের সমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয় শাসন
[সম্পাদনা]১২৯৬ সালে কিতবুগাকে তার নায়েবে সুলতান লাজিন ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং কিতবুগাকে সিরিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করেন। ১২৯৭ সালে হামার গভর্নরের পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন সময়ে কিতবুগা মারা যান। ১২৯৯ সালে সাইফুদ্দিন কিরজির নেতৃত্বে একদল আমির তাকে ও তার নায়েবে সুলতান মাঙ্গু-তেমুরকে হত্যা না করা পর্যন্ত লাজিন সুলতান হিসেবে শাসন করেছিলেন। লাজিন এবং তার নায়েবে সুলতানকে হত্যার পর, বাইবার্স জাশনাকিরসহ আমিররা একত্রিত হন এবং কারাক থেকে নাসির মুহাম্মাদকে ডেকে পুনরায় সুলতান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার এবং আমির তাগজিকে নায়েবে সুলতান হিসাবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নাসিরের ফিরতে কিছু সময় বিলম্বিত হয়েছিল। কারণ আমির কিরজি, যিনি লাজিনকে হত্যা করেছিলেন এবং আশরাফিয়া আমিররা জোর দিয়েছিলেন যে তাগজিকে সুলতান এবং কিরজিকে নায়েবে সুলতান হতে হবে। অবশেষে, নাসিরকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল এবং জনগণের ব্যাপক উদযাপনের মধ্যে তিনি তার মায়ের সাথে কায়রোতে পৌঁছেছিলেন। নাসিরের বয়স তখন ১৪ বছর ছিল। সাইফুদ্দিন সালারকে নায়েবে সুলতান বানানো হয়েছিল, যিনি একজন ওরাত মঙ্গোল ছিলেন। আর বাইবার্স জাশনাকিরকে ওস্তাদার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যিনি একজন সার্কাসিয়ান ছিলেন।[৬] নাসির আবারও একজন নামমাত্র সুলতান ছিলেন, প্রকৃত শাসক ছিলেন সালার ও দ্বিতীয় বাইবার্স।
নাসিরের দ্বিতীয় শাসনামলে বুর্জি মামলুকরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারা এমন লোকদের উপর কর আরোপ করেছিল যাদের তাদের পরিষেবা বা তাদের সুরক্ষার প্রয়োজন ছিল। এই সরকারী ঘুষকে "হিমায়া" বলা হত। বুর্জিদের প্রতিদ্বন্দ্বী, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন বাইবার্স আল-জাশনাকির, তারা ছিলেন সালারের নেতৃত্বে সালিহিয়া এবং মানসুরিয়া আমির এবং আমির বারলঘির নেতৃত্বে আল-আশরাফি।[৭]
নাসিরের দ্বিতীয় রাজত্বের প্রথম দিকে, উচ্চ মিশরে একটি বেদুঈন বিদ্রোহ প্রতিহত করা হয়েছিল এবং সেনাবাহিনী "দেশের প্রতিটি বেদুঈনকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছিল এবং তাদের মহিলাদের বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল"।[৮] সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আমির সালার ও বাইবার্স।[৯]
ওয়াদিউল খাজানদারের যুদ্ধ
[সম্পাদনা]কায়রোতে খবর পৌঁছে যে গাজান একটি বড় সৈন্য নিয়ে লেভান্ত আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং প্রায় ৩০টি ক্রুসেড জাহাজ বৈরুতে পৌঁছেছে। আমিররা মিশর থেকে সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। ক্রুসেডাররা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই ক্রুসেডার জাহাজগুলো একটি ঝড়ের আঘাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আবার তখন গাজান বাগদাদে পৌঁছানোর পর সোলামিশ বিন আফাল নামে তার এক সেনাপতি মিশরে পালিয়ে গিয়ে তার সাথে লড়াই করার জন্য সাহায্য চাওয়ার পর তাকে তার পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়েছিল।[১০]
১২৯৯ সালে নাসির মিশরীয় সেনাবাহিনীকে সিরিয়ায় গাজানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। সুলতান যখন সিরিয়ায় যাচ্ছিলেন, তখন কিছু ওরাত সুলতানের মামলুকের সাথে বাইবার্স জাশনাকির এবং সালারকে হত্যা করে হামাতে থাকা কিতবুগাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে ষড়যন্ত্র করে। সুলতানের মামলুক বাইবার্সকে আক্রমণ করে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করলেও সে নিজেই নিহত হয়। ওরাতরা সুলতানের দিহলিজে আক্রমণ করেছিল কিন্তু তাদের এমনভাবে থামানো হয়েছিল যে, সালার এবং বাইবার্স মনে করে যে- সুলতান ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। ওরাতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হয় এবং জড়িত মামলুকদের কারাক পাঠানো হয়।[১১][১২]
নাসিরের সেনাবাহিনী (প্রায় ২০,০০০ সৈন্য) গাজানের সেনাবাহিনীর (প্রায় ১২,০০০ সৈন্য) সাথে একটি যুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় যা ওয়াদিউল খাজানদারের যুদ্ধ নামে পরিচিত। গাজানের সেনাবাহিনীর (প্রায় ২৫০০ জন হতাহত) ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নাসিরের সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে কম হতাহতের (২০০ থেকে ১০০০ জন লোক) পরও পরাজিত হয়েছিল। নাসিরের বাহিনী হিমসে পশ্চাদপসরণ করে এবং গাজানের সেনাবাহিনী পিছু করে।[১৩] নাসির মিশর চলে যান এবং গাজান হিমস দখল করেন। দামেস্কের অধিকাংশ জনসংখ্যা মিশরের দিকে পালিয়ে যায়। দামেস্কের নেতারা গাজানের কাছে শহরের অবশিষ্ট জনসংখ্যাকে হত্যা না করার জন্য আবেদন করেছিলেন।[১৪] গাজান দামেস্কের উপকণ্ঠে এসে পৌঁছায় এবং তার সৈন্যরা শহর লুট করে। দামেস্কের দুর্গ বাদ দিয়ে পুরো দামেস্ক মঙ্গোল সেনাপতি কুবজুকের কাছে অর্পণ করা হয়েছিল এবং দামেস্কের প্রধান মসজিদে জুমার নামাজের সময় গাজানের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল: সুলতানুল আযম সুলতানুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুযাফফরুদ্দুনিয়া ওয়াদ্দিন মাহমুদ গাজান ("সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান, ইসলাম ও মুসলমানদের সুলতান, জীবনে ও বিশ্বাসে বিজয়ী, মাহমুদ গাজান")। মঙ্গোলরা সিরিয়ার গ্রাম, শহর এবং দামেস্ককে লুট করতে থাকে।
মিশরে নাসিরের পরাজিত সৈন্যরা বিশৃঙ্খলভাবে আগমন করতে থাকে। সিরিয়ায় থাকা ক্ষমতাচ্যুত সুলতান কিতবুগাও মিশরে পালিয়ে যান। অনেক সিরীয় শরণার্থী সেখানে পালিয়ে যাওয়ায় কায়রো উপচে পড়ে।[১৫] নাসির এবং আমিররা লেভান্তে একটি নতুন অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সমস্ত মিশর থেকে অর্থ, ঘোড়া এবং অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। সুলতান কুতুযের শাসনামলে জারি করা একটি পুরানো ফতোয়া পুনঃব্যবহারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যাতে সেনাবাহিনীকে সমর্থন করার জন্য প্রতিটি মিশরীয়কে এক দিনার দিতে বাধ্য করেছিল। অতএব, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে মিশরীয় জনগণ স্বেচ্ছায় অর্থ প্রদান করবে, আইনের জোরে নয়।[১৬] কিন্তু হঠাৎ করেই কায়রোতে খবর আসে যে গাজান লেভান্ত ত্যাগ করেছে এবং সেখানে তার দুইজন কমান্ডারকে নায়েব হিসেবে রেখে গিয়েছে। নাসির গাজানের নায়েব্দের কাছে চিঠি পাঠান যাতে তারা তার কাছে সিরিয়া অর্পণ করে এবং তারা সম্মত হয়। কিতবুগাকে হামার গভর্নরের পদ দেওয়া হয়েছিল এবং সালার এবং বাইবার্স গাজানের অবশিষ্ট বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করতে লেভান্তে সেনাবাহিনী নিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন। দ্রুজ যারা মিশরে পশ্চাদপসরণ করার সময় আন-নাসিরের সৈন্যদের আক্রমণ ও লুট করেছিল তাদের শক্তিশালী ঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়েছিল এবং তারা পশ্চাদপসরণকারী সৈন্যদের কাছ থেকে যে অস্ত্র এবং সম্পত্তি নিয়েছিল তা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল।[১৭] আত্মসমর্পণকারী নায়েবরা মিশরে আসেন এবং নাসির অভ্যর্থনা জানান। সিরিয়ার মসজিদগুলোতে আবারও সুলতান নাসিরের নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি আবার লেভান্তের সার্বভৌম হন।
লেভান্তে মঙ্গোলীয় হুমকির পাশাপাশি নাসিরের দ্বিতীয় শাসন মিশরের অভ্যন্তরে অশান্তির স্বাক্ষী ছিল। কায়রোতে ধর্মীয় দাঙ্গা এবং উচ্চ মিশরে বিদ্রোহ হয়েছিল যা কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল।[১৮] ১৩০১ সালে আর্মেনীয় সিলিসিয়ার কিছু অংশ লুট করা হয় এবং সিসে নাসিরের বাহিনীর আমিরদের দ্বারা আক্রমণ করা হয় কারণ আর্মেনীয়রা গাজানকে সমর্থন করার চেষ্টা করেছিল।[১৯] ১৩০২ সালে ক্রুসেডারদের দখলে থাকা আরওয়াদ দ্বীপটি আক্রমণ করা হয়েছিল এবং লুটপাট করা হয়েছিল কারণ ক্রুসেডাররা এটিকে মুসলিম জাহাজের উপর আক্রমণের জন্য একটি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করেছিল।[২০]
১৩০৮ সালে নাসির জর্জীয়দের ক্যালভারিতে উদযাপন করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং সম্ভবত সেই বছরেই তাদের দুজনকে হলি সেপুলচারের চার্চে বন্ধ থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন।[২১]
মারজুস সাফফার যুদ্ধ
[সম্পাদনা]১৩০৩ সালে গাজানের সেনাবাহিনী ইউফ্রেটিস নদী অতিক্রম করে সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। সিরীয়রা আলেপ্পো ও হামা থেকে দামেস্কে পালিয়ে যায়। বাইবার্স জাশনাকিরের নেতৃত্বে একটি মিশরীয় বাহিনী দামেস্কে পৌঁছে। দামেস্কের জনগণ পালাতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের সতর্ক করা হয়েছিল যে তারা যদি তা করার চেষ্টা করে তবে তাদের হত্যা করা হবে এবং তাদের অর্থ জব্দ করা হবে।[২২] গাজানের সৈন্যরা তুরকোমান গ্রাম আক্রমণ করে এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করে নেয় কিন্তু সুলতানের বাহিনী তার আমিরদের নেতৃত্বে মঙ্গোলদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং মঙ্গোল বাহিনীকে ধ্বংস করার পর প্রায় ৬০০০ তুর্কমেনকে মুক্ত করে।
২০ এপ্রিল নাসির এবং খলিফা[২৩] মিশর থেকে সিরিয়ায় আসেন এবং আমিররা যখন তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল, তখন তাদের কাছে খবর আসে যে গাজানের নায়েব কুতলুগ শাহের নেতৃত্বে ৫০,০০০ সৈন্যের একটি মঙ্গোল সেনা এগিয়ে আসছে। নাসির এবং আমিররা মারজুস সাফফারে মঙ্গোল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। সৈন্যদের হৃদয়ে সুলতানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খলিফা সৈন্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন: "যোদ্ধারা, তোমাদের সুলতানের জন্য চিন্তা করো না, বরং তোমাদের নারীদের এবং তোমাদের নবীর ধর্মের জন্য চিন্তা করো।"[২৪] কুতলুগ শাহের নেতৃত্বে প্রায় ১০,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী নাসিরের সেনাবাহিনীর ডানদিকে আক্রমণ করেছিল কিন্তু বাইবার্স এবং সালারের নেতৃত্বে ইউনিটগুলো তাদের সমর্থন দেয় এবং কুতলুগ শাহকে পিছনে ঠেলে দেয়। যুদ্ধের ময়দানে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিল যে নাসিরের সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছে যখন তারা মঙ্গোলরা নাসিরের সেনাবাহিনীর ডান দিক দিয়ে যেতে দেখেছিল। কুতলুগ শাহ একটি পাহাড়ে ফিরে যান এবং বিশ্বাস করেন যে তিনি জয়ী হয়েছেন। কিন্তু পাহাড়ের অবস্থান থেকে তিনি দেখতে পান নাসিরের বাহিনী বাম দিকে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার সৈন্যরা মাঠ ভরাট করছে। কুতলুগ শাহ বিস্মিত হয়েছিলেন এবং একজন বন্দী করে আনা মিশরীয় আমিরকে তিনি যে সেনাবাহিনী দেখছিলেন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। আমির তাকে উত্তর দেন যে এটি মিশরের সুলতানের সেনাবাহিনী। কুতলুগ শাহ হতবাক হন। কারণ তিনি জানতেন না যে নাসির মিশরীয় সেনাবাহিনী নিয়ে এসেছেন। কুতলুগ শাহ যখন তার বাহিনীকে পরাজিত ও পলায়ন করতে দেখেন তখন তিনিও সূর্যাস্তের সময় পালিয়ে যান।[২৫] পরদিন সকালে কুতলুগ শাহ যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসেন কিন্তু তিনি আবার পরাজিত হন। তৃতীয় দিনের ভোরে তার তৃতীয় আক্রমণটি ঘটেছিল কিন্তু তার সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। মাত্র অল্পসংখ্যক মঙ্গোল বেঁচে ছিল। গাজান যখন তার সেনাবাহিনীর পরাজয়ের কথা শুনেছিলেন তখন বলা হয়েছিল যে তিনি এতটাই বিচলিত হয়েছিলেন যে তিনি গুরুতর রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন এবং এক বছর পরে (১১ মে ১৩০৪) তিনি মারা যান। নাসির মহা উদযাপনে মিশরে ফিরে আসেন। কায়রোর বাবুন নাসর (বিজয় দ্বার) থেকে কালাআতুল জাবাল পর্যন্ত সজ্জিত করা হয়েছিল।[২৬] বিশিষ্ট মিশরীয় মামলুক ঐতিহাসিক বাইবার্স দাওয়াদার মারজুস সাফফারের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন।
অর্জন এবং পদত্যাগ
[সম্পাদনা]১৩০৪ সালে নাসিরের আমিরদের দ্বারা সিসিলির সিসে আবার আক্রমণ করা হয় এবং বদরুদ্দিন আলবাবা নামে একজন বিশিষ্ট সেনাপতির নেতৃত্বে মঙ্গোলদের একটি দলকে মিশরে আনা হয় এবং কায়রোতে নাসির তাকে স্বাগত জানায়। মাদ্রাসা নাসিরিয়াহ আক্কার ক্যাথেড্রালের গেট স্থাপন করেছিল যা আশরাফ খলিল ১২৯১ সালে আক্কা পুনরুদ্ধার করার পরে মিশরে নিয়ে এসেছিলেন। ১৩০৪ সালে আন-নাসিরের পুত্র আলীর জন্ম হয়।[২৭]
১৩০৯ সাল নাগাদ নাসির আর সালার এবং বাইবার্স জাশনাকিরের আধিপত্য বিস্তার করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তিনি তাদের জানিয়েছিলেন যে তিনি তীর্থযাত্রার জন্য মক্কায় যাচ্ছেন। কিন্তু আসলে তিনি কারকে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তাঁর দ্বিতীয় রাজত্বের অবসান ঘটিয়েছিলেন। নাসির আসলে পদত্যাগ করতে চাননি। কিন্তু তিনি জানতেন যে বাইবার্স এবং সালার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি শাসন করতে পারবেন না যত তাড়াতাড়ি বা পরে তারা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। হয়ত তারা তাকে হত্যাও করবে। নাসির বাইবার্স এবং সালারকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেছিলেন[২৮] কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলে তিনি হিসেব করেছিলেন যে তিনি লেভান্তে সুলতানি নায়েবদের সাথে নতুন জোট করতে সক্ষম হবেন যারা পরবর্তীতে মিশরে ফিরে আসার জন্য তাকে দুই আমিরের বিরুদ্ধে সমর্থন দিতে পারে।[২৯][৩০] নাসির মিশরে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে, বাইবার্স নিজেকে মিশরের সুলতান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং সালারকে তার নায়েবে সুলতান হিসেবে নিয়োগ করেন।[৩১]
তৃতীয় শাসন
[সম্পাদনা]বাইবার্স জাশনাকির দশ মাস ২৪ দিন মিশর শাসন করেছিলেন। তার রাজত্বকালে ছিল সামাজিক অস্থিরতা বিরাজমান ছিল আর মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের হুমকি দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। মিশরের জনগণ তাকে ঘৃণা করা শুরু করেছিল। তারা তাদের প্রিয় সুলতান নাসির মুহাম্মাদের প্রত্যাবর্তনের দাবি করেছিল। বাইবার্স বিক্ষুব্ধ জনতার কারণে পদত্যাগ করতে এবং পালাতে বাধ্য হন।
নাসির মিশরে ফিরে আসেন। তার প্রথম শাসনামলে তিনি কিতবুগা এবং শুজায়ীর আধিপত্যে ছিলেন। আর তার দ্বিতীয় শাসনামলে বাইবার্স এবং সালারের আধিপত্যে ছিলেন। তৃতীয় শাসন শুরুর সময় নাসিরের বয়স ছিল ২৪ বছর। এবার তিনি কোন আমির দ্বারা সুলতান হিসাবে তার পূর্ণ অধিকার থেকে আধিপত্য বা বঞ্চিত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। নাসির বাইবার্সকে মৃত্যুদণ্ড দেন[৩২] এবং নায়েবে সুলতানের পদে থাকা সালারের পদত্যাগ গ্রহণ করেন এবং বাকতমার জুকন্দারকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন। তারপর এক বছর পর তিনি সালারকে গ্রেফতার করেন এবং কিছুদিন পরেই সালার কারাগারে মারা যান।[৩৩] বাইবার্স ও সালার উভয়ের দাসদাসী ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
১৩১০ সালে নায়েবে সুলতান বাকতমার জুকন্দার ও আমির বিখতাস নাসিরকে উৎখাত করার এবং কালাউনের পুত্র সালিহ আলীর পুত্র আমির মুসাকে তার স্থলাভিষিক্ত করার ষড়যন্ত্র করেন। মুসা ষড়যন্ত্রে অংশ নিতে রাজি হন, কিন্তু ষড়যন্ত্রটি একজন আমীর নাসিরের কাছে প্রকাশ করে এবং বিখতাস ও মুসা উভয়কেই গ্রেফতার করা হয়। আনাসিরকে উৎখাত করে নিজের জন্য সিংহাসন দখল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এক বছর পর নায়েবে সুলতান বাকতমারকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাইবার্স দাওয়াদার নতুন নায়েবে সুলতান হন।[৩৪] [৩৫] আমির এবং তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অভিজ্ঞতার কারণে নাসির মুহাম্মাদ অত্যন্ত সন্দেহজনক এবং সমালোচনার প্রতি খুব সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন। এমনকি ১৩৩৮ সালে তিনি খলিফাকে কুসে নির্বাসিত করেন।[৩৬]
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দমন
[সম্পাদনা]ধীরে ধীরে কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকভাবে নাসির সুলতান হিসেবে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন এবং অতীতে তার সাথে দুর্ব্যবহারকারী আমিরদের এবং মিশরে ফিরে আসার পর তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী আমিরদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেন। তিনি কয়েকটি সরকারী পদ বিলুপ্ত করেন, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সম্পদ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন, ওরাত মঙ্গোলদের রাজকীয় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন এবং ব্যতিক্রমী কর ও সারচার্জ (মিকোস) বাতিল করেন[৩৭] যা সাধারণ মানুষের উপর কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরোপিত হয় এবং যা কর্মকর্তাদের সমৃদ্ধ করে এবং আমিরদের আরও শক্তিশালী করে তোলে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হিসেবে পরিচিত আমির ইবন ওয়াজিরিকে দারুল আদলের (বিচার আদালত) প্রধান হিসাবে নিয়োগ করেন।[৩৮] প্রতি সোমবার সুলতান কর্মকর্তা ও আমিরগণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতেন। তিনি তার গভর্নরদের তার অনুমতি ছাড়া দোষীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বা শারীরিকভাবে শাস্তি দিতে নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং তিনি দুর্গের কাছে একটি কুখ্যাত কারাগার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৩১৪ সালে তিনি নায়েবে সুলতানের পদ বাতিল করেন। ১৩১৫ সালে তিনি একটি ভূমি জরিপ করেছিলেন যাতে করের পরিমাণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় যা জমির মালিক এবং জমির মালিকদের রাষ্ট্রকে দিতে হয়।[৩৯]
অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি
[সম্পাদনা]নাসির মুহাম্মাদের তৃতীয় শাসনামলে মিশর কোনো বড় বাহ্যিক হুমকির সাক্ষী হয়নি কারণ ক্রুসেডার এবং মঙ্গোল উভয়ই যুদ্ধে ক্ষতি এবং তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যাইহোক, মঙ্গোল শাসক ওলজিতু মামলুক দুর্গগুলি অবরোধ করেছিলেন কিন্তু ১৩১২-১৩১৩ সালে মারাত্মক গ্রীষ্মের তাপের কারণে প্রত্যাহার করেছিলেন। ১৩১৪ সালে মালটায়া শহরটি লেভান্টের নাসিরের ডেপুটি তুনকুজ দ্বারা দখল করা হয়েছিল।[৪০] সিস এবং অন্যান্য শহরগুলোতে নাসিরের বাহিনী আক্রমণ করেছিল। মিশরের অভ্যন্তরে আরব উপজাতিদের দ্বারা আইন ভঙ্গের কার্যকলাপের কারণে উচ্চ মিশরে কয়েকটি বিদ্রোহ ছিল যা সহজেই প্রতিরোধ করা হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারী ১৩২১ সালে মিশরীয় মুসলিম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গুরুতর গোলযোগ দেখা দেয়, যা মিশরের বিভিন্ন অংশে একযোগে কয়েকটি খ্রিস্টান গীর্জা ধ্বংস হওয়ার পরে শুরু হয়। এর পর কায়রোতে মসজিদ ও অন্যান্য ভবনে একের পর এক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঝামেলার ফলে কয়েকজন খ্রিস্টানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[৪১]
যদিও নাসিরের তৃতীয় শাসনামলে মিশরের অর্থনীতির উন্নতি হয়েছিল, তবে কম ওজনের এবং মিশ্রিত মুদ্রার প্রচলনের কারণে আর্থিক সমস্যা এবং মূল্যবৃদ্ধি ছিল। নাসির জাল মুদ্রা প্রতিস্থাপনের জন্য কয়েক হাজার নতুন মুদ্রা তৈরি করেন।[৪২]
নাসিরের অধীনে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মিশরের অবস্থান বৃদ্ধি পায়। বিদেশী প্রতিনিধিদল এবং রাজাদের দূতরা উপহার নিয়ে কায়রোতে অনেক বেশি সাহায্য এবং নাসিরের বন্ধুত্ব কামনা করতেন। এই সফরকারীদের মধ্যে পোপ দ্বাবিংশতি জন এবং ফ্রান্সের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপের দূতও ছিলেন। পোপের দূতরা ১৩২৭ সালের জুন মাসে একটি উপহার এবং পোপের একটি চিঠি নিয়ে কায়রোতে এসেছিলেন যিনি খ্রিস্টানদের সাথে ভাল আচরণ করতে এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থানগুলোকে রক্ষা করতে এবং সিসের বিরুদ্ধে তার আক্রমণ বন্ধ করার জন্য নাসিরের কাছে আবেদন করেছিলেন। সুলতান সালিহ আইয়ুবের সময় থেকে তারাই প্রথম কোনো পোপের দূত, যারা মিশরে এসেছিলেন।[৪৩] ১৩৩০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ ১২০ জন লোকের একটি প্রতিনিধি দল পাঠান। তারা ফিলিপকে জেরুসালেম শহর এবং লেভান্তের উপকূল বরাবর আশেপাশের এলাকা দেওয়ার জন্য নাসিরের কাছে আবেদন করেছিলেন। নাসির ফরাসি দূত এবং তাদের রাজাকে অপমান করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং তাদের মিশর ত্যাগ করার নির্দেশ দেন।[৪৪]
গণপূর্ত
[সম্পাদনা]নাসির মুহাম্মদের দীর্ঘ শাসনামল টলেমাইক আলেকজান্দ্রিয়া থেকে মিশরের মামলুক শক্তি এবং সংস্কৃতির উচ্চ জলের চিহ্ন হিসাবে চিহ্নিত। অসামান্য জনসাধারণের কাজ চলমান ছিল। তিনি নীল নদের সাথে আলেকজান্দ্রিয়াকে সংযুক্তকারী খালটিকে আবারও কমিয়ে দেন। এটি ১৩১১ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং এই কাজের জন্য ফারাওনিক যুগের ন্যায় অনেক সংখ্যার কর্মীদের প্রয়োজন হয়। কায়রোতে তার কিছু বড় কাজের মধ্যে ছিল বিশাল চত্বর তৈরি, যেটিকে মাইদানুন নাসিরি বলা হত।[৪৫] তিনি কাসরুল আবলাক (স্ট্রাইপড প্যালেস), গ্রেট ইওয়ান,[৪৬] একটি নতুন জামে মসজিদ এবং দূর্গের জলজ ব্যবস্থাসহ দুর্গের উল্লেখযোগ্য নির্মাণ ও সম্প্রসারণও সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি বাইনুল কাসরাইনে তার মাজারের জন্য স্থাপত্য ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। উন্মুক্ত গোসলখানা নির্মাণ করেন এবং ত্রিশটিরও বেশি মসজিদ সংস্কার করেন,[৪৭] যা কায়রোর ইসলামী স্থাপত্যের সমৃদ্ধ ফ্যাব্রিকে যোগ করে। দূর্গে তার নিজের মসজিদ যা আজ অবধি দাঁড়িয়ে আছে তা আক্কার ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্যাথেড্রাল থেকে বিজয়ের জন্য আনা পাথর দিয়ে সজ্জিত ছিল। তিনি তার পিতার কায়রোর প্রথম সাবিল গঠনের কমপ্লেক্সে যোগ করেছিলেন, যা সকলের ব্যবহারের জন্য একটি ঝর্ণা ছিল। এটি বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য উন্মুক্ত ছিল, যাদের হয়ত একটি কূপে প্রবেশাধিকার নেই।
ইবনে বতুতার বইয়ে মালিকুন নাসিরের বিবরণ
[সম্পাদনা]মালিকুন নাসিরের শাসনামলে বিখ্যাত পর্যটক ইবন বতুতা কায়রোতে গিয়েছিলেন। তিনি নিম্নলিখিত বর্ণনা লিখেন:
আমার প্রবেশের সময় মিশরের সুলতান ছিলেন মালিকুল মানসুর সাইফুদ্দিন কালাউন সালিহির ছেলে মালিকুন নাসির আবুল ফাতহ মুহাম্মদ। কালাউন আলফি ['হাজার-মানুষ'] নামে পরিচিত ছিলেন, কারণ মালিকুস সালিহ তাকে এক হাজার দিনার সোনা দিয়ে কিনেছিলেন। তিনি মূলত কিফজাক [কিপচাক] থেকে এসেছেন। মালিকুন নাসির (তাঁর উপর ঈশ্বরের রহমত) একজন উদার চরিত্র এবং মহান গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর আভিজাত্যের যথেষ্ট প্রমাণ দুটি পবিত্র স্থান [মক্কা ও মদিনার] সেবা এবং কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠার দ্বারা সজ্জিত। কল্যাণের যা তিনি প্রতি বছর তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করার জন্য করেন, অসহায় ও অসহায়দের জন্য খাবার ও পানি বোঝাই উট সজ্জিত করার জন্য এবং যারা কাফেলার সাথে চলতে পারে না বা পায়ে হেঁটে চলার পক্ষে খুব দুর্বল তাদের বহন করার জন্য। মিশরীয় তীর্থযাত্রী-সড়ক এবং দামেস্ক থেকে। তিনি কায়রোর উপকণ্ঠে সিরিয়াকুসে একটি বড় কনভেন্টও তৈরি করেছিলেন।
— ইবন বতুতা
পরিবার
[সম্পাদনা]নাসিরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন খাওয়ান্দ আরদুকিন।[৪৮][৪৯][৫০] তিনি ছিলেন একজন মঙ্গোল আমীর সাইফুদ্দিন নুকিহ ইবনে বায়ানের কন্যা এবং নাসিরের ভাই সুলতান আশরাফ খলিলের বিধবা স্ত্রী।[৪৮] তিনি মালিকুল মানসুর আলী এবং মালিকুল মুজাফফরসহ তার তিন পুত্রের মা ছিলেন। ১৩১৭ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।[৪৮] ১৩২০ সালে তিনি কায়রোর হাইরাত জুওয়ালায় দার খাওয়ান্দ নামে একটি বাসভবনে বসবাসের জন্য দূর্গ ছেড়ে যান।[৫০] তিনি ২১ জানুয়ারী ১৩২৪ সালে মারা যান,[৫১] এবং তাকে তার মাজারে সমাহিত করা হয়, যা মৃতের শহর নামে বিখ্যাত দক্ষিণ কবরস্থানের তুরবাতুস সিত্ত নামে পরিচিত।[৫০][৫২] আরেক স্ত্রী ছিলেন তুলুনবে বা দুলানবিয়া। তিনি ওজ বেগ খানের ভাগ্নি ছিলেন। ১৩২০ সালের ১২ মে তারা বিয়ে করেন।[৪৮] তিনি কোন সন্তান ধারণ করেননি এবং ১৩২৮ সালে তারা পৃথক হন। তিনি পর্যায়ক্রমে নাসিরের পর তার তিনজন আমিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৪৮][৫৩] তিনি ১৩৪০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। ১৩২১ সালে তিনি খাওয়ান্দ তোগাইকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন একজন তুর্কি দাস-কন্যা, যাকে তিনি সিরিয়ায় তার গভর্নর তানকিজ হুসামির কাছ থেকে কিনেছিলেন।[৪৮] আমির আকবুগা নামে তার এক ভাই ছিল।[৫৪] তিনি নাসিরের পুত্র অনুকের জন্ম দেন। তিনি ছিলেন তার প্রিয় স্ত্রী।[৪৮] তিনি ১৩৪৮ সালের ডিসেম্বর বা ১৩৪৯ সালের জানুয়ারিতে মারা যান এবং[৫৩] [৫১] তাকে উত্তরীয় কবরস্থানে, মৃতের শহরে তার নিজের মাজারে সমাহিত করা হয়।[৫২] ১৩৩৪ সালে তিনি তানকিজ হুসামির কন্যা এবং আহমদ ইবনে বক্তামুর সাকির বিধবা স্ত্রী কুতলুঘ মালিককে বিয়ে করেন।[৫৪][৪৮] তিনি ছিলেন সুলতান সালিহ সালিহ ও একটি কন্যার মা। [৪৮] আরেক স্ত্রী ছিলেন খাওয়ান্দ জাদু। তিনি ইয়ালবুঘা ইয়াহয়াভির স্ত্রী সিত্ত তুলুকারতাকার বোন ছিলেন।[৫৫] আরেক স্ত্রী ছিলেন কাওসুনের বোন।[৪৮]
নাসিরের একজন উপপত্নী ছিলেন নারগিস।[৪৮] তিনি ছিলেন সুলতান মানসুর আবু বকর, রমজান এবং ইউসুফের মা। পরে নাসির তাকে তুকুজদামুর হামাভির সাথে বিয়ে দেন।[৪৮] ১৩৪৫ সালে হামাভির মৃত্যুর পর তিনি আরঘুন ইসমাইলির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৪৮] তাকে মৃতের শহরে তার নিজের মাজারে সমাহিত করা হয়।[৫৩] আরেক উপপত্নী ছিল বায়দ।[৪৮] তিনি ছিলেন সুলতান নাসির আহমদের মা। তিনি ছিলেন একজন গায়িকা, রা-এর নওবাহ বাহাদুর আসের দাসী ছিলেন।[৪৮] পরে তিনি মালিকতামুর সারজুওয়ানির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৪৮] তিনি ১৩৩০-৩১ সালে মারা যান।[৪৮] আরেক উপপত্নী ছিলেন আরদু।[৪৮] তিনি ছিলেন একজন তাতার এবং সুলতান আশরাফ কুজুকের মা। নাসিরের মৃত্যুর পর চিঠিতে করা অনুরোধে ১৩৪৩ সালে আকসুনকুর নাসিরির সাথে এবং শেষে কামিল শাবানের সাথে তার বিয়ে হয়।[৪৮] আরেক উপপত্নী ছিলেন কুদা।[৪৮] তিনি ছিলেন একজন তাতার এবং সুলতান নাসির হাসান, তাতারুল হিজাজিয়া এবং আরেক কন্যা যিনি তানকিজবুঘা মারিদানিকে বিয়ে করেছিলেন; মাতা। তিনি ১৩৪১ সালে মারা যান,[৫৩][৪৮] এবং তাকে তার নিজের সমাধিতে দাফন করা হয় যা সুলতানিয়া সমাধি নামে পরিচিত, দক্ষিণ কবরস্থান, মৃতের শহর।[৫৬] তার মৃত্যুর পর আরদু তার ছেলে হাসানকে দত্তক নেন।[৫৭] তার আরেক উপপত্নী ছিলেন সুলতান সালিহ ইসমাইল, সুলতান কামিল শাবান, জাহরা এবং অন্য একটি (বাহাদুর দামুরদাশিকে বিয়ে করেছিলেন) কন্যার মাতা।[৫৩] পরে তাকে নাসির আরগুন আলাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।[৪৮] ইসমাইলের শাসনামলে কুজুককে তার এবং তার ছেলে সিংহাসনের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেছিল[৫৮] ১৩৪২ সালের সেপ্টেম্বরে[৫৯] তিনি কুজুকের মা আরদুকে ইসমাইলের অসুস্থতার জন্য যাদুবিদ্যা ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।[৫৮] ১৩৪৬ সালে[৬০] সুলতান মুজাফফর হাজ্জি তাকে দূর্গ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন।[৬১] অপর এক উপপত্নী সুলতান মুজাফফর হাজ্জির জন্ম দেন। (তার নাম পাওয়া যায়না।) পরে তিনি লাজিন আলাইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সুলতানুল কামিল শাবান তার শাসনামলে তাকে তালাক দিতে বাধ্য করেন।[৪৮] তাকে বাব মাহরুকের বাইরে রুদা দ্বীপে তার মাজারে সমাহিত করা হয়।[৫৩]
তার এক কন্যা তাতারুল হিজাযিয়াহ ৫ জুন ১৩২৮ সালে সাইফুদ্দিন তুগাইতামুর উমরি নাসিরিকে বিয়ে করেন। ১৩৩৩ সালে তার মৃত্যুর পর তিনি মালিকতামুর হিজাজিকে বিয়ে করেন এবং ১৩৪৭ সালে তার মৃত্যুর পর তিনি তানকিজবুঘাকে বিয়ে করেন, যার সাথে তার একটি কন্যা ছিল, যিনি সুলতান আশরাফ শাবানকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি[৫৩] অক্টোবর ১৩৯৯ তারিখে মারা যান এবং ১৩৬০ সালে তার দ্বারা নির্মিত সমাধিতে তাকে সমাহিত করা হয়। আরেক কন্যা জাহরা আকসুনকুর নাসিরির সাথে বিয়ে করেছিলেন। ১৩৪৭ সালে তার মৃত্যুর পর, তিনি ৩ জুন ১৩৫১ তারিখে তাজকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি তার বোনকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি ১৩৪৯-৫০ সালে মারা যান। তার সাথে তার একটি কন্যা ছিল, যিনি সুলতান আশরাফ শাবানকে বিয়ে করেছিলেন।[৫৩] আরেক কন্যা ছিলেন আয়েশা কুরদুমিয়া। তিনি কুরদুম নাসিরি হামাভিকে বিয়ে করেছিলেন।[৫৩] ১৩৯৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী[৫৩][৬২] দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি মারা যান। আরেক কন্যা ফাতিমা, যার একটি পুত্র ছিল যার নাম ছিল আবদুর রব।[৬৩] আরেকটি মেয়ের বিয়ে হয়েছিল তানকিজবুঘা মারিদানির সাথে। তিনি ১৩৯৯ সালের[৫৩] অক্টোবর মারা যান। আরেকটি কন্যা ১৩২২ সালের[৫৩] আগস্ট আরগুন নাসিরি নায়েবের ছেলে আবু বকরকে বিয়ে করেন। আরেকটি কন্যা ২৬ এপ্রিল ১৩২৭ সালে কাওসুনকে বিয়ে করেন। ১৩২৭ সালের ৩ অক্টোবর বিবাহ সম্পন্ন হয়। তাদের এক ছেলে খলিল। ১৩৪২ সালে তার মৃত্যুর পর তিনি শায়খুকে বিয়ে করেন। যার সাথে তার একটি পুত্র ছিল, ১৩৫৫ সালের ১৮ জুন জন্মগ্রহণ করে এবং ১৩৫৫ সালের[৫৩] জুন মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্মের সময়েই সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।[৬৪] আর একটি কন্যা ছিল ক্বুমারীর স্ত্রী।[৫৩] তার দুই মেয়ে ১৩৩৯ সালের[৫৩] জানুয়ারী মাসে তানকিজ হুসামির ছেলে মুহাম্মদ ও আহমেদকে বিয়ে করেন। আর একটি কন্যা ছিলেন তুকুজদামুর হামাভির স্ত্রী।[৫৩]
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]বিশিষ্ট মামলুক ইতিহাসবিদ ইবনে আইয়াস নাসির মুহাম্মাদ সম্পর্কে নিম্নলিখিত লিখেছেন: "তার নাম অন্য কোন রাজার নামের মত সর্বত্র উল্লেখ করা হয়েছিল। সমস্ত রাজারা তাকে চিঠি লিখতেন, তাকে উপহার পাঠাতেন এবং তাকে ভয় করতেন। সমগ্র মিশর তার দখলে ছিল।"
নাসিরের পিতা ও ভাই উভয়েই খ্যাতিমান সুলতান ছিলেন। তার উত্তরসূরীদের মধ্যে আট পুত্র এবং তার চার নাতি মিশরের সুলতান হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
পুত্রগণ (১৩৪১ থেকে ১৩৬১ সাল পর্যন্ত মিশরের সুলতান):
- মানসুর আবু বকর
- আশরাফ কুজুক
- নাসির আহমদ
- সালিহ ইসমাইল
- কামিল শাবান
- মুজাফফর হাজ্জি
- নাসির হাসান
- সালিহ সালিহ
প্রপৌত্রগণ (১৩৬৩ থেকে ১৩৮২ সাল পর্যন্ত মিশরের সুলতান):
- মানসুর মুহাম্মাদ
- আশরাফ নাসিরুদ্দিন শাবান
- মানসুর আলাউদ্দিন আলি
- সালিহ হাজ্জি
প্রতীক ও মুদ্রা
[সম্পাদনা]তার প্রতীক ছিল যথাক্রমে ঈগল, ফুল, শাপলা, বুন্ডেল (জমদারের প্রতীক যিনি সুলতানের পোশাকে বিভাগের একজন কর্মকর্তা ছিলেন)।
প্রথম রাজত্বের মুদ্রা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। দ্বিতীয় রাজত্বের সময়ে মুদ্রায় নাসিরের নাম সুলতানুল মালিকুন নাসির নাসিরিদ্দুনয়া ওয়াদ্দিন লেখা ছিল। এছাড়াও তার মুদ্রায় তার পিতা কালাউনের উপাধিটি খোদিত ছিল: মালিকুল মানসুর।
তৃতীয় শাসনামলে নাসিরের মুদ্রায় নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য উপাধি ছিল যা মামলুকের ইতিহাসে অনন্য: al-Sultan al-Malik al-Nasir Nasir al-Din wa al-Donia (সুলতান বাদশাহ আনাসির বিশ্বাস ও অস্থায়ী বিশ্বে বিজয়ী), al-Sultan al-Malik al-Azam (সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান রাজা), al-Sultan al-Malik Nasir al-Donya wa al-Din Qasim Amir al-Mu'amimin ("সুলতান রাজা অস্থায়ী বিশ্বে এবং বিশ্বাসে বিজয়ী, যিনি বিশ্বস্তদের আমিরের সাথে ভাগ করেন" (খলিফা))। তার মুদ্রায় খোদাই করা অনন্য প্রার্থনামূলক বাক্যাংশগুলি ছিল: Azz Nasroh ("তাঁর বিজয় মহিমান্বিত হোক") এবং khalad Allah Mulkoh wa Sultanoh ("ঈশ্বর তার রাজ্য এবং তার সালতানাতকে চিরস্থায়ী করুন")।[৬৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "al-Nāṣir Muḥammad ibn Qalāwūn"।
- ↑ Al-Maqrizi, p.189/vol.2
- ↑ Qal'at al-Jabal (Citadel of the Mountain), the abode and court of the sultan in Cairo.
- ↑ Famous Muslim Women, EternalEgypt.org
- ↑ Waddy, Charis (১৯৮০)। Women in Muslim History। Longman। পৃষ্ঠা 103। আইএসবিএন 978-0582780842। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Ostadar ( أستادار ), supervisor of the royal kitchen and everything connected to the food and drink of the Sultan.
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, p. 313
- ↑ Murray, G. W. (১৯৩৫)। Sons of Ishmael: A Study of the Egyptian Bedouin। George Routledge & Sons। পৃষ্ঠা 29।
- ↑ Muir, Sir William (১৮৯৬)। The Mameluke। Smith, Elder & Co.। পৃষ্ঠা 57।
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, pp. 312–313
- ↑ Al-Maqrizi, pp.317–318
- ↑ About fifty Oirats were hanged.
- ↑ Al-Maqrizi, pp. 319–320
- ↑ A few prominent figures from Damascus, among them the supreme judge (Qadi al-Qudah) Badr ad-Din Muhammed, went to Ghazan and pleaded for the lives of the remaining population of Damascus.
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, pp. 326–327
- ↑ The objection to use the fatwa from Qutuz' reign was based on the fact that the Emirs of Qutuz have donated part of their properties and wealth before issuing the Fatwa which obliged ordinary Egyptians to pay a Dinar each.
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, p.331
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, pp. 335–347
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, p. 348
- ↑ Al-Maqrizi,vol. 2, pp.348, 354
- ↑ "3 – The Church of the Holy Sepulchre"। ২০১২-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৮।
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, p. 355
- ↑ The Abbasid Caliph al-Mustakfi Billah (Solayman ben Ahmad ben Ali) he succeeded his father al-Hakim Bi'amr-Ellah in 1302 and stayed a Caliph for 39 years (Al-Maqrizi, vol. 2, p. 346).
- ↑ Many women accompanied an-Nasir's army.
- ↑ al-Maqrizi, vol. 2, pp. 356–357
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, pp.359–360
- ↑ The mother of Ali (al-Malik al-Mansur) was Khatun Ordkin al-Ashrafiyah.
- ↑ Ibn Taghri, vol. 8, p. 170
- ↑ Shayyal,vol. 2, p. 183
- ↑ During his stay in al-Karak, an-Nasir corresponded with the deputies in the Levant and the Egyptian Emirs whom he trusted and explained to them why he left Egypt and he could have their support.
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, pp. 421–423
- ↑ When Baibars al-Jashnakir stood in chains before an-Nasir after his arrest, an-Nasir was rough on him and he recalled the bad deeds which Baibars committed against him including depriving him once from eating sweet with almond and another time from eating grilled goose.
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, p. 464
- ↑ Al-Maqrizi, vol..2, p. 469
- ↑ See above note on Baibars al-Dewadar.
- ↑ Ibn Iyas
- ↑ Mikoos were exceptional taxes imposed by the authorities on the common people.
- ↑ The Mamluks also had Mahkamat al-Mazalim (Court of Complaint) which was a court that heard cases of complaints of people against state officials and Emirs.
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, pp. 488, 504
- ↑ Ibn Iyas, vol. 1, p.446
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 3, pp. 38–42
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 2, pp. 205–206, 253
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 3, p. 100
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 3, p. 129
- ↑ al-Midan al-Nasiri (Nasiri Square) was used for horse racing.
- ↑ The Iwan was situated on the ground which the Mosque of Muhammad Ali stands now.
- ↑ Al-Maqrizi, vol. 3, p.317
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব Bauden 2009।
- ↑ Northrup, Linda (১৯৯৮)। From Slave to Sultan: The Career of Al-Manṣūr Qalāwūn and the Consolidation of Mamluk Rule in Egypt and Syria (678-689 A.H./1279-1290 A.D.)। Franz Steiner Verlag। পৃষ্ঠা 117। আইএসবিএন 9783515068611।
- ↑ ক খ গ Harvard Middle Eastern and Islamic Review। Center for Middle Eastern Studies, Harvard University। ১৯৯৪। পৃষ্ঠা 158। আইএসএসএন 1074-5408।
- ↑ ক খ Yiğit 2016।
- ↑ ক খ Williams, C. (২০০৮)। Islamic Monuments in Cairo: The Practical Guide। American University in Cairo Press। পৃষ্ঠা 128। আইএসবিএন 978-977-416-205-3।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত Bauden, Frédéric। "The Qalawunids: A Pedigree" (পিডিএফ)। University of Chicago। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ Gülru Necipoğlu (১ আগস্ট ১৯৯৪)। Muqarnas: An Annual on Islamic Art and Architecture। BRILL। পৃষ্ঠা 61। আইএসবিএন 90-04-10070-9।
- ↑ Sonbol, A.E.A. (২০০৫)। Beyond the Exotic: Women's Histories in Islamic Societies। Gender, Culture, and Politics in the Middle East। Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 322। আইএসবিএন 978-0-8156-3055-5।
- ↑ Kadi, G. E.; Bonnamy, A. (২০০৭)। Architecture for the Dead: Cairo's Medieval Necropolis। American University in Cairo Press Series। Amercain University in Cairo Prees। পৃষ্ঠা 101। আইএসবিএন 978-977-416-074-5।
- ↑ Abouseif, D. (২০০৭)। Cairo of the Mamluks: A History of Architecture and Its Culture। Bloomsbury Academic। পৃষ্ঠা 214। আইএসবিএন 978-1-84511-549-4।
- ↑ ক খ Holt, Peter Malcolm (১৯৮৬)। The Age of the Crusades: The Near East from the Eleventh Century to 151। Addison Wesley Longman Limited। পৃষ্ঠা 122। আইএসবিএন 9781317871521।
- ↑ "Ardū"। Home। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "Wife 1 zawjat al-Malik al-Nāsir Muḥammad"। Home। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "Sources"। Home। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "ʿĀʾisha al-Qurdumiyya bint al-Malik al-Nāṣir Muḥammad"। Home। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "Fāṭima"। Home। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ "Daughter 2 bint al-Malik al-Nāṣir Muḥammad"। Home। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৮।
- ↑ Mahdi, pp. 98, 106 & 112
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Abu al-Fida, The Concise History of Humanity
- Al-Maqrizi, Al Selouk Leme'refatt Dewall al-Melouk, Dar al-kotob, 1997.
- Idem in English: Bohn, Henry G., The Road to Knowledge of the Return of Kings, Chronicles of the Crusades, AMS Press, 1969.
- Al-Maqrizi, al-Mawaiz wa al-'i'tibar bi dhikr al-khitat wa al-'athar,Matabat aladab,Cairo 1996, আইএসবিএন ৯৭৭-২৪১-১৭৫-X.
- Bauden, Frédéric (২০০৯)। "The Sons of al-Nāṣir Muḥammad and the Politics of Puppets: Where Did It All Start?" (পিডিএফ)। Mamluk Studies Review। Middle East Documentation Center, The University of Chicago। 13 (1): 53–81।
- Akkuş Yiğit, Fatma (২০১৬-০৪-২০)। "Memlûk Sarayında Tek Eşlilik ve Çok Eşlilik Üzerine Bir İnceleme"। Journal of International Social Research। The Journal of International Social Research। 9 (43): 556। আইএসএসএন 1307-9581। ডিওআই:10.17719/jisr.20164317631।
- Idem in French: Bouriant, Urbain, Description topographique et historique de l'Egypte,Paris 1895
- Ibn Iyas, Badai Alzuhur Fi Wakayi Alduhur, Almisriya Lilkitab, Cairo 2007
- Ibn Taghri, al-Nujum al-Zahirah Fi Milook Misr wa al-Qahirah, al-Hay'ah al-Misreyah 1968
- History of Egypt, 1382-1469 A.D. by Yusef. William Popper, translator Abu L-Mahasin ibn Taghri Birdi, University of California Press 1954
- Mahdi, Dr. Shafik, Mamalik Misr wa Alsham ( Mamluks of Egypt and the Levant), Aldar Alarabiya, Beirut 2008
- Shayyal, Jamal, Prof. of Islamic history, Tarikh Misr al-Islamiyah (History of Islamic Egypt), dar al-Maref, Cairo 1266, আইএসবিএন ৯৭৭-০২-৫৯৭৫-৬
- Reuven Amitai-Preiss, Mamluks and Mongols: an overview, Chapter 10 of his Mongols and Mamluks: The Mamluk-Ilkhanid War, 1260–1281, Cambridge University Press, 1995.
- Gibb, H.A.R., The Travels of Ibn Battuta A.D. 1325-1354
- Stewart, Desmond, Great Cairo: Mother of the World
- Levanoni, Amalia. A Turning Point in Mamluk History, The Third Reign of al-Nasir Muhammad Ibn Qalawun
নাসির মুহাম্মাদ মামলুক সালতানাত এর ক্যাডেট শাখা জন্ম: ২৪ মার্চ ১২৮৫ মৃত্যু: ৭ জুন ১৩৪১
| ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী আশরাফ খলিল |
মিশর ও শামের সুলতান ডিসেম্বর ১২৯৩ – ডিসেম্বর ১২৯৫ সহশাসন: আদিল কিতবুগা |
উত্তরসূরী আদিল কিতবুগা |
পূর্বসূরী হুসামুদ্দিন লাজিন |
মিশর ও শামের সুলতান ১৬ জানুয়ারি ১১৯৯ — মার্চ ১৩০৯ সহশাসন: বাইবার্স জাশনকির সাইফুদ্দিন সালার |
উত্তরসূরী বাইবার্স জাশনকির |
পূর্বসূরী বাইবার্স জাশনকির |
মিশর ও শামের সুলতান ৫ মার্চ ১৩১০ — ৭ জুন ১৩৪১ |
উত্তরসূরী সাইফুদ্দিন আবু বকর |